পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়াসিয়্যাত (অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ)

وَصَايَا শব্দটি বহুবচন, একবচনে وصيحة যা نصية বা উপদেশ অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন-

وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِيْنَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللهَ

’’আর আমি তোমাদের পূর্বে কিতাব যাদেরকে কিতাব দিয়েছি এবং তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৩১)


৩০৭০-[১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিমের এমন ধন-সম্পদ আছে যা ওয়াসিয়্যাত করা যায়; তার নিজের কাছে ওয়াসিয়্যাতনামা লেখে না রেখে দু’ রাত অতিবাহিত করারও তার অধিকার (সুযোগ) নেই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْوَصَايَا

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شَيْءٌ يُوصَى فِيهِ يَبِيتُ لَيْلَتَيْنِ إِلَّا وَوَصِيَّة مَكْتُوبَة عِنْده»

عن ابن عمر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما حق امرى مسلم له شيء يوصى فيه يبيت ليلتين الا ووصية مكتوبة عنده

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াসিয়্যাতযোগ্য সম্পদের লিখিত প্রমাণ রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয়, তার ওয়াসিয়্যাতযোগ্য সম্পদ রেখে সে দু’ রাত কাটাবে, অথচ তার কাছে তার ওয়াসিয়্যাত লিখিত থাকবে না। কেননা ওয়াসিয়্যাত জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মানুষ মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পদ ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টনের পূর্বে ওয়াসিয়্যাত পূর্ণ করতে হয়। আর ঐ ব্যক্তি যদি কোনো সম্পদ ওয়াসিয়্যাত করে লিখিত না রেখে মারা যায় তাহলে ওয়ারিসগণ ওয়াসিয়্যাত আদায়ে কোনো কারণে ভুলে গেলে সে জন্য ওয়াসিয়্যাতকারী দায়ী থাকবেন। তাইতো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অব্যশই ওয়াসিয়্যাতযোগ্য সম্পদ লিখিত রাখবে। এ ব্যাপারে জুমহূর ‘উয়ামায়ে কিরাম বলেন- ওয়াসিয়্যাতযোগ্য সম্পদ লিখিত রাখা মুস্তাহাব। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৩৮; শারহে মুসলিম ১১/১২ খন্ড, হাঃ ১৬২৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions

পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়াসিয়্যাত (অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ)

৩০৭১-[২] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বৎসর আমি এমন এক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলাম, যা আমি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলাম। এমনি সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার প্রচুর ধন-সম্পদ আছে, আর আমার একমাত্র কন্যা ছাড়া (ঔরসজাত) কোনো ওয়ারিস নেই। আমি কি আমার সমস্ত ধন-সম্পদ (অপর কারো জন্য) ওয়াসিয়্যাত করে যেতে পারব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে কি দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। আমি বললাম, তবে কি এক-তৃতীয়াংশ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, এক-তৃতীয়াংশ; আর এক-তৃতীয়াংশও অতিরিক্ত।

তুমি তোমার ওয়ারিসদেরকে দরিদ্র রেখে যাওয়া অপেক্ষা সচ্ছল রেখে যাওয়া তোমার জন্য উত্তম, যাতে তারা অন্যের নিকট যাচ্ঞা না করে (হাত না পাতে)। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে তোমার পরিবারের প্রতি যে খরচ করবে, নিশ্চয় এতেও তোমাকে সাওয়াব দেয়া হবে- এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে (খাদ্য) লোকমা উঠিয়ে দাও তাতেও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْوَصَايَا

وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: مَرِضْتُ عَامَ الْفَتْحِ مَرَضًا أَشْفَيْتُ عَلَى الْمَوْتِ فَأَتَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُنِي فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: إِنَّ لِي مَالًا كَثِيرًا وَلَيْسَ يَرِثُنِي إِلَّا ابْنَتِي أَفَأُوصِي بِمَالِي كُلِّهِ؟ قَالَ: «لَا» قُلْتُ: فَثُلُثَيْ مَالِي؟ قَالَ: «لَا» قُلْتُ: فَالشَّطْرِ؟ قَالَ: «لَا» قُلْتُ: فَالثُّلُثِ؟ قَالَ: «الثُّلُثُ وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ إِنَّكَ إِنْ تَذَرْ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ وَإِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ بِهَا حَتَّى اللُّقْمَةَ تَرْفَعُهَا إِلَى فِي امْرَأَتِكَ»

وعن سعد بن ابي وقاص قال مرضت عام الفتح مرضا اشفيت على الموت فاتاني رسول الله صلى الله عليه وسلم يعودني فقلت يا رسول الله ان لي مالا كثيرا وليس يرثني الا ابنتي افاوصي بمالي كله قال لا قلت فثلثي مالي قال لا قلت فالشطر قال لا قلت فالثلث قال الثلث والثلث كثير انك ان تذر ورثتك اغنياء خير من ان تذرهم عالة يتكففون الناس وانك لن تنفق نفقة تبتغي بها وجه الله الا اجرت بها حتى اللقمة ترفعها الى في امراتك

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে কী পরিমাণ সম্পদ ওয়াসিয়্যাত করা বৈধ তা বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে। সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) মৃত্যুশয্যায় শায়িত হলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে যান। তখন সে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার একমাত্র কন্যা ব্যতীত আর কোনো উত্তরাধিকারী নেই। আমার এই প্রচুর ধন-সম্পদ সবটুকু কি আমি ওয়াসিয়্যাত করে দিব আল্লাহর রাস্তায় দান করার জন্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দেননি, এভাবে সে দুই-তৃতীয়াংশ এবং পরে অর্ধাংশ ওয়াসিয়্যাত করতে চাইলেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দেননি। সর্বশেষ সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তার সমুদয় সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ওয়াসিয়্যাত করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, এটাও বেশি হয়ে যায়। এ থেকে বুঝা যায় এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ ওয়াসিয়্যাত বৈধ, তবে এর কম হওয়াটাই উত্তম। কেননা সন্তান-সন্ততিকে অভাবগ্রস্ত রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে স্বচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম। অন্যথায় তারা মানুষের নিকট হাত পেতে ভিক্ষা করবে। যে ব্যক্তি ওয়াসিয়্যাত করার মাধ্যমে প্রতিদান পেতে চায়, সে ব্যক্তির স্মরণ রাখা উচিত যে, পরিবার-পরিজনের জন্য যা কিছু ব্যয় করা হয় তার প্রতিদান তাকে দেয়া হবে। এমনকি ঐ লোকমাটির প্রতিদানও দেয়া হবে যা তার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে। সুবহানাল্লাহ! কেননা প্রতিটি ভালো কাজের সাওয়াব আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাকে নিয়্যাত অনুসারে দিয়ে থাকেন। যদি কাজটি দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। (ফাতহুল বারী ৩য় খন্ড, হাঃ ১২৯৫; শারহে মুসলিম ১১/১২ খন্ড, হাঃ ১৬২৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع) 12. Business Transactions
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে