পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দান করে দান ফেরত না নেবার বর্ণনা

১৯৫৪-[১] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে সওয়ার হবার জন্য ঘোড়া দান করলাম। সে এ ঘোড়াটি নষ্ট করে ফেলল। (তখন) আমি ঘোড়াটিকে কিনে নেবার ইচ্ছা করলাম। আমার ধারণা ছিল, সে কম দামে ঘোড়াটি বিক্রি করবে। এ সম্পর্কে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তুমি ওটা কিনো না। আর দান করা জিনিস ফেরতও নিও না যদি তা তোমাকে এক দিরহামের বিনিময়েও দেয়। কারণ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিয়ে ফেরত নেয়া ব্যক্তি ঐ কুকুরের সমতুল্য, যে নিজের বমি নিজে চেটে খায়। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ দান করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ফেরত নেয়া ব্যক্তি তারই মতো, যে বমি করে এবং তা চেটে খায়। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَنْ لَا يَعُوْدُ فِي الصَّدَقَةِ

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: حَمَلْتُ عَلَى فَرَسٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَأَضَاعَهُ الَّذِي كَانَ عِنْدَهُ فَأَرَدْتُ أَنْ أَشْتَرِيَهُ وَظَنَنْتُ أَنَّهُ يَبِيعُهُ بِرُخْصٍ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «لَا تَشْتَرِهِ وَلَا تَعُدْ فِي صَدَقَتِكَ وَإِنْ أَعْطَاكَهُ بِدِرْهَمٍ فَإِنَّ الْعَائِدَ فِي صَدَقَتِهِ كَالْكَلْبِ يَعُودُ فِي قَيْئِهِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «لَا تَعُدْ فِي صَدَقَتِكَ فَإِنَّ الْعَائِدَ فِي صَدَقَتِهِ كالعائد فِي قيئه»

عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال حملت على فرس في سبيل الله فاضاعه الذي كان عنده فاردت ان اشتريه وظننت انه يبيعه برخص فسالت النبي صلى الله عليه وسلم فقال لا تشتره ولا تعد في صدقتك وان اعطاكه بدرهم فان العاىد في صدقته كالكلب يعود في قيىه وفي رواية لا تعد في صدقتك فان العاىد في صدقته كالعاىد في قيىه

ব্যাখ্যা: (عَلى فَرَسٍ) অর্থাৎ তাকে আমি সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করলাম যাতে করে সে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে।

(فِي سَبِيلِ اللّهِ) আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, আমি তাকে বোঝা বহনে সক্ষম একটি ঘোড়া দিলাম সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে আর সে মুজাহিদদের অন্তর্গত ছিল না। বাজীরা (রহঃ) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়ার উপর চড়ানোর দু’টি দৃষ্টিকোণ হতে পারে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন যে, ব্যক্তির ভিতরে ঘোড়া চালানোর শক্তি, বুদ্ধি দু’টিই বিদ্যমান, সুতরাং তার জানার প্রেক্ষক্ষতে তিনি তাকে ঘোড়াটি দান করে তাকে মালিক বানিয়ে দেন। সুতরাং সে ঘোড়ার মালিক হয়ে ঘোড়ার ক্ষেত্রে বেচা-কেনা করতেই পারে, যেহেতু ঘোড়ার মালিক সে।

 (وَإِنْ أَعْطَاكَه بِدِرْهَمٍ) এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সস্তার চূড়ান্ত পর্যায় বুঝিয়েছেন হয়তো বা সস্তার কারণে উমার (রাঃ) সেটা ক্রয় করতে পারেন কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যতই সস্তা হোক না কেন তুমি সেদিকে দৃষ্টি দিও না বরং তুমি যে সেটা তাকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে দিয়েছো এদিকে দৃষ্টি দাও। ইবনুল মালিক বলেন, এ হাদীসখানার বাহ্যিক অর্থ থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, সদাক্বাহকারী পরবর্তী কোন সময় তার সদাক্বাহকৃত বস্ত্ত কিনে নেয়া হারাম। আর অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরাম এটাকে মাকরূহে তানযীহী তথা এর থেকে বিরত থাকা ভাল বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সদাক্বাহকৃত পশুটিকে কমমূল্যে হলেও ক্রয় করাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাক্বাহকৃত বস্ত্তর দিকে ফিরে আসার সাথে তুলনা করেছেন যেটা হারাম এটা এভাবে হতে পারে যে, নিশ্চয় সদাক্বার মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য ছিল আখিরাতের সাওয়াব কিন্তু সে যখন আবার সেটা ক্রয় করে নিল তাহলে সে যেন এখানে আখিরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিল। যদিও এখানে কমমূল্যে পাওয়ার কারণে সেটা সকলেই ক্রয় করতে চায় আর সদাক্বাহকারী তো আরো বেশি উদগ্রীব থাকারই কথা।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (لَا تَشْتَرِه وَلَا تَعُدْ فِي صَدَقَتِكَ) তথা তুমি সেটা ক্রয় করো না এবং তোমার সদাক্বাহকৃত মালের দিকে ফিরে যেও না। এ কথাটির মধ্যে যে نهي তথা নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা মূলত نهي تنزيه, نهى تحريمي নয় তথা এমন হারাম নয় যাতে ঈমানের উপর চরম প্রভাব পড়তে পারে। তবে এর থেকে বিরত থাকাই ভাল যে কথা পূর্বেই বলা হয়েছে। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি কাউকে কোন কিছু সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে, যাকাত দেয়, কাফফারাহ্ দেয় অথবা মানৎ করে আর পরবর্তীতে তারই কাছ থেকে সেটা ক্রয় করে তাহলে এটা মাকরূহ তথা অপছন্দনীয় হবে। হ্যাঁ তবে যদি কেউ কাউকে কোন মালের ওয়ারিস বানায় তাহলে সে তার কাছ থেকে কিনলে অথবা সদাক্বাহকৃত ব্যক্তির নিকট থেকে কেউ কিনে নিলে তার পরে তার কাছ থেকে যদি সদাক্বাহকারী ক্রয় করে নেয় তাহলে মাকরূহ হবে না। এটাই জমহূরের তথা অধিকাংশ ‘আলিমদের মত। তবে ‘উলামায়ে কিরামের একটি দল এই نهي তথা নিষেধাজ্ঞাকে تحريم তথা হারাম সদাক্বার অর্থেও নিয়েছেন। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলবোঃ সুনানে তিরমিযীর ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ‘ইরাক্বী তৃতীয় ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রয় করলে مَكْرُوْهٌ তথা হারাম না হয়ে অপছন্দনীয় হওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - দান করে দান ফেরত না নেবার বর্ণনা

১৯৫৫-[২] বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে বসেছিলাম। তখন এক মহিলা তাঁর কাছে উপস্থিত হলো। সে নিবেদন করল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মা-কে আমার একটি বাঁদী সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে দান করেছিলাম। আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার সাওয়াব তো প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এখন মীরাস (আইন) তোমাকে বাঁদিটি ফেরত দিয়েছে। মহিলাটি আবার বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার মায়ের উপর এক মাসের সিয়াম (ফরয) ছিল। আমি কি তা’ তার পক্ষ থেকে আদায় করে দেব? তিনি বলেন, তার পক্ষ থেকে আদায় করবে। মহিলাটি পুনরায় বলল, আমার মা কখনো হাজ্জ (হজ/হজ্জ) পালন করেননি। আমি কি তার পক্ষে হাজ্জ (হজ/হজ্জ) আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তুমি তার হাজ্জ (হজ/হজ্জ) আদায় করে দাও। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَنْ لَا يَعُوْدُ فِي الصَّدَقَةِ

وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ أَتَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَت يَا رَسُول الله إِنِّي كنت تَصَدَّقْتُ عَلَى أُمِّي بِجَارِيَةٍ وَإِنَّهَا مَاتَتْ قَالَ: «وَجَبَ أَجَرُكِ وَرَدَّهَا عَلَيْكِ الْمِيرَاثُ» . قَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ كَانَ عَلَيْهَا صَوْمُ شَهْرٍ أفأصوم عَنْهَا قَالَ: «صومي عَنْهَا» . قَالَت يَا رَسُول الله إِنَّهَا لَمْ تَحُجَّ قَطُّ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ: «نعم حجي عَنْهَا» . رَوَاهُ مُسلم

وعن بريدة قال كنت جالسا عند النبي صلى الله عليه وسلم اذ اتته امراة فقالت يا رسول الله اني كنت تصدقت على امي بجارية وانها ماتت قال وجب اجرك وردها عليك الميراث قالت يا رسول الله انه كان عليها صوم شهر افاصوم عنها قال صومي عنها قالت يا رسول الله انها لم تحج قط افاحج عنها قال نعم حجي عنها رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ আল্লামা মুলা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এখানে নিসবতটি হয়েছে রূপক অর্থে অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তাকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দিবেন মীরাসের মাধ্যমে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, হাদিসটি থেকে বুঝা যায় যদি কোন ব্যাক্তি কোন সাদাকাহ করে তারপর সে ঐ ব্যাক্তি তাকে ঐ সম্পদের উত্তরাধিকারী বানায় তাহলে সেখান থেকে তার খরচ করা মাকরুহ হবে না।

ইবনু মালিক (রহঃ) বলেন, অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম বলেন, কোন ব্যাক্তি তার নিকট আত্মীয়কে কোন কিছু সাদাকাহ দিলে সে যদি তার ওয়ারিস হয় তাহলে সেটা তার জন্য বৈধ হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেছেন সেটা কোন ফকীরকে দেয়া বাঞ্ছনীয়।

قَالَ: صُوْمِىْ عَنْهَا অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি যখন কোন মানতের সিয়াম না রেখে মারা যাবে তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে তা আদায় কে দিবে এমনটিই মত দিয়েছেন আসহাবুল হাদীসের অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম।

আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেন, (عَلَيْهَا صَوْمُ) এখানে যেহেতু صوم শব্দটি কোন শর্ত ছাড়াই আছে, সুতরাং যে কোন صوم হতে পারে চাই সেটা ফারয (ফরজ) নাফ্‌ল যাই হোক না কেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে