পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৭৫-[১৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কেউ কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের মধ্যে কে আপনার সাথে প্রথমে মিলিত হবেন (অর্থাৎ আপনার মৃত্যুর পর কে প্রথম মৃত্যুবরণ করবে)? তিনি বললেন, যার হাত সবচেয়ে বেশী লম্বা। [’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা শুনার পর] তাঁর স্ত্রীগণ বাঁশ অথবা কঞ্চির টুকরা দিয়ে নিজেদের হাত মাপতে লাগলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী সাওদা (রাঃ)-এর হাত সবচেয়ে লম্বা ছিল। কিন্তু এরপর আমরা জানতে পারলাম, হাত লম্বা অর্থ দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বেশী করে করা। আর আমাদের মধ্যে যিনি সবার আগে তাঁর সাথে মিলিত হলেন তিনি যায়নাব। দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) তিনি খুবই ভালবাসতেন।

বুখারী, মুসলিমের এক বর্ণনায় ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (স্ত্রীদের প্রশ্নের জবাবে) বলেন, তোমাদের মধ্যে যার হাত লম্বা সে আমার সাথে সকলের আগে মিলিত হবে। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) স্ত্রীগণ মেপে দেখতে লাগলেন, কার হাত বেশী লম্বা। প্রকৃতপক্ষে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হাত ছিল যায়নাব-এর। কেননা তিনি নিজ হাতে সব কাজ করতেন এবং বেশী বেশী দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতেন।[1]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْنَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّنَا أَسْرَعُ بِكَ لُحُوقًا؟ قَالَ: أَطْوَلُكُنَّ يَدًا فَأَخَذُوا قَصَبَةً يَذْرَعُونَهَا فَكَانَت سَوْدَة أَطْوَلهنَّ يدا فَعلمنَا بعد أَنما كَانَت طُولُ يَدِهَا الصَّدَقَةَ وَكَانَتْ أَسْرَعَنَا لُحُوقًا بِهِ زَيْنَبُ وَكَانَتْ تُحِبُّ الصَّدَقَةَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ. وَفِي رِوَايَةِ مُسْلِمٍ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «أَسْرَعكُنَّ لُحُوقا بَين أَطْوَلكُنَّ يَدًا» . قَالَتْ: فَكَانَتْ أَطْوَلَنَا يَدًا زَيْنَبُ؟ لِأَنَّهَا كَانَت تعْمل بِيَدِهَا وَتَتَصَدَّق

عن عاىشة رضي الله عنها ان بعض ازواج النبي صلى الله عليه وسلم قلن للنبي صلى الله عليه وسلم اينا اسرع بك لحوقا قال اطولكن يدا فاخذوا قصبة يذرعونها فكانت سودة اطولهن يدا فعلمنا بعد انما كانت طول يدها الصدقة وكانت اسرعنا لحوقا به زينب وكانت تحب الصدقة رواه البخاري وفي رواية مسلم قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اسرعكن لحوقا بين اطولكن يدا قالت فكانت اطولنا يدا زينب لانها كانت تعمل بيدها وتتصدق

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ এখানে হাত লম্বার মূল অর্থ উদ্দেশ্য করেছেন, অর্থাৎ শারীরিক গঠনের দিক থেকে যিনি সবচেয়ে লম্বা। আর সাওদা (রাঃ) সবচেয়ে লম্বা ছিলেন। অন্যদিকে যায়নাব (রাঃ) দান-খয়রাত এবং ভালো কর্মের দিক থেকে তাঁর হাত লম্বা ছিল। এতে তাঁরা বুঝতে পারলেন যে, এখানে লম্বা হাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে দানকারীর হাত।

বিঃ দ্রঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে যায়নাব (রাঃ)-ই প্রথমে মৃত্যুবরণ করেন। যদিও ইমাম বুখারী (রহঃ) সাওদা (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৭৬-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (বনী ইসরাঈলের) এক ব্যক্তি বলল, আমি (আজ রাতে) আল্লাহর পথে কিছু মাল খরচ করব। তাই সে কিছু মাল নিয়ে বের হলো এবং সে মাল (তার অজান্তে) এক চোরকে দিয়ে দিল। (কোনভাবে এ কথা জানতে পেরে) ভোরে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, আজ রাতে একজন চোরকে সদাক্বার মাল দেয়া হয়েছে। (সদাক্বাহ্ দানকারী এ কথা জানতে পেরে) বলতে লাগল, হে আল্লাহ! সদাক্বার মাল একজন চোরকে (দেয়া সত্ত্বেও) সব প্রশংসা তোমার। তারপর সে বলল, (আজ রাতেও) আবার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেব। তাই সে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেবার উদ্দেশে আবারও সদাক্বার মাল নিয়ে বের হলো। (এবার এ সদাক্বাহ্ ভুলবশতঃ) একজন ব্যভিচারিণীকে দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, আজও তো সদাক্বার মাল একজন ব্যভিচারিণীকে দেয়া হয়েছে। (এ কথা জানতে পেরে) লোকটি বলল, হে আল্লাহ! একজন ব্যভিচারিণীকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিবার জন্য সব প্রশংসা তোমার। এরপর সে বলল, (আজ রাতেও) আমি সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিব। সে আবারও কিছু মাল নিয়ে বের হলো। (এবারও ভুলবশতঃ) সে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) সে একজন ধনীকে দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা (এ নিয়ে) বলাবলি করতে লাগল, আজ রাতে একজন ধনী ব্যক্তিকে সদাক্বার মাল দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে সে ব্যক্তি বলতে লাগল, হে আল্লাহ! সব প্রশংসাই তোমার যদিও সদাক্বার মাল চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যক্তি পেয়ে গেছে। স্বপ্নে তাকে বলা হলো, সদাক্বার যে মাল তুমি চোরকে দিয়েছ, তা দিয়ে সম্ভবতঃ সে চুরি করা হতে বিরত থাকবে। তুমি ব্যভিচারিণীকে যা দিয়েছ তা দিয়ে সম্ভবত সে ব্যভিচার হতে ফিরবে। যে মাল তুমি ধনীকে দিয়েছ, সম্ভবত সে এ দান হতে শিক্ষাগ্রহণ করবে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে খরচ করবে। (বুখারী, মুসলিম; এ হাদীসের ভাষা হলো বুখারীর)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدِ سَارِقٍ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تصدق عَلَى سَارِقٍ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى سَارِقٍ لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدي زَانِيَةٍ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَ اللَّيْلَةَ عَلَى زَانِيَةٍ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى زَانِيَةٍ لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدقَة فَخرج بِصَدَقَتِهِ فوضعها فِي يَدي غَنِي فَأَصْبحُوا يتحدثون تصدق عَلَى غَنِيٍّ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى سَارِق وعَلى زَانِيَة وعَلى غَنِي فَأُتِيَ فَقِيلَ لَهُ أَمَّا صَدَقَتُكَ عَلَى سَارِقٍ فَلَعَلَّهُ أَنْ يَسْتَعِفَّ عَنْ سَرِقَتِهِ وَأَمَّا الزَّانِيَةُ فَلَعَلَّهَا أَنْ تَسْتَعِفَّ عَنْ زِنَاهَا وَأَمَّا الْغَنِيُّ فَلَعَلَّهُ يَعْتَبِرُ فَيُنْفِقَ مِمَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَلَفظه للْبُخَارِيّ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال قال رجل لاتصدقن بصدقة فخرج بصدقته فوضعها في يد سارق فاصبحوا يتحدثون تصدق على سارق فقال اللهم لك الحمد على سارق لاتصدقن بصدقة فخرج بصدقته فوضعها في يدي زانية فاصبحوا يتحدثون تصدق الليلة على زانية فقال اللهم لك الحمد على زانية لاتصدقن بصدقة فخرج بصدقته فوضعها في يدي غني فاصبحوا يتحدثون تصدق على غني فقال اللهم لك الحمد على سارق وعلى زانية وعلى غني فاتي فقيل له اما صدقتك على سارق فلعله ان يستعف عن سرقته واما الزانية فلعلها ان تستعف عن زناها واما الغني فلعله يعتبر فينفق مما اعطاه الله متفق عليه ولفظه للبخاري

ব্যাখ্যা: যে লোকটি বলেছিল, ‘আমি দান করব’; লোকটি ছিল বানী ইসরাঈলের মধ্যকার। এই হাদীসের দ্বারা একটি বিষয় প্রতীয়মান হয় যে, পূর্বেকার উম্মাতের দীন-শারী‘আত আমাদের জন্যেও প্রযোজ্য যতক্ষণ না তা রহিত করা হবে। হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, বানী ইসরাঈলের মাঝে কেবলমাত্র ভাল লোকের ভিতরে দান করা সীমাবদ্ধ ছিল। এজন্য হাদীসে বর্ণিত ব্যক্তিদের মাঝে দান করার কারণে তারা আশ্চর্যবোধ করেছিল। এ হাদীস দ্বারা আরো একটি বিষয় সম্পর্কে জানা যাচ্ছে যে, দানকারীর নিয়্যাত সৎ এবং ভালো হলে তার নফল দান কবূল করে নেয়া হয়, যদিও যথাস্থানে তার দান না করা হয়ে থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৭৭-[১৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি এক বিরাণ মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় মেঘমালার মধ্যে সে একটি আওয়াজ শুনতে পেল। কেউ মেঘমালাকে বলছে, ’অমুক ব্যক্তির বাগানে পানি বর্ষণ করো।’ মেঘমালাটি সেদিকে সরে গিয়ে একটি কংকরময় ভূমিতে পানি বর্ষণ করতে লাগল। তখন দেখা গেল, ওখানকার নালাগুলোর একটি সব পানি নিজের মধ্যে পুরে নিচ্ছে। তারপর ও ব্যক্তি ওই পানির পেছনে চলতে থাকল (যেন দেখতে পায় এসব পানি যার বাগানে গিয়ে পৌঁছে সে ব্যক্তি কে?) হঠাৎ করে সে এক লোককে দেখতে পেল, যে নিজের ক্ষেতে দাঁড়িয়ে সেচনী দিয়ে (বাগানে) পানি দিচ্ছে। সে লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কি? সে ব্যক্তি বলল, আমার নাম অমুক।

এ ব্যক্তি ওই নামই বলল, যে নাম সে মেঘমালা থেকে শুনেছিল। তারপর বাগানের লোকটি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমাকে নাম জিজ্ঞেস করছ কেন? সে বলল, এজন্য জিজ্ঞেস করছি যে, এ পানি যে মেঘমালার সে মেঘমালা থেকে আমি একটি আওয়াজ শুনেছি। কেউ বলছিল, অমুকের বাগানে পানি বর্ষণ করো। আর সেটি তোমার নাম। (এখন বলো), তুমি এ বাগান দিয়ে কি করেছ (যার দরুন তুমি এতো বড়ো মর্যাদায় অভিসিক্ত হয়েছ)। বাগানওয়ালা লোকটি বলল, ’’যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করছ, তাই আমি বলছি, এ বাগানে যা উৎপাদিত হয় আমি তার প্রতি লক্ষ্য রাখি। তারপর তা হতে এক-তৃতীয়াংশ আল্লাহর পথে খরচ করি, এক-তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার খাই, অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ এ বাগানেই লাগাই। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «بَيْنَا رَجُلٌ بِفَلَاةٍ مِنَ الْأَرْضِ فَسَمِعَ صَوْتًا فِي سَحَابَةٍ اسْقِ حَدِيقَةَ فُلَانٍ فَتَنَحَّى ذَلِكَ السَّحَابُ فَأَفْرَغَ مَاءَهُ فِي حَرَّةٍ فَإِذَا شَرْجَةٌ مِنْ تِلْكَ الشِّرَاجِ قَدِ اسْتَوْعَبَتْ ذَلِكَ الْمَاءَ كُلَّهُ فَتَتَبَّعَ الْمَاءَ فَإِذَا رَجُلٌ قَائِمٌ فِي حَدِيقَتِهِ يُحَوِّلُ الْمَاءَ بِمِسْحَاتِهِ فَقَالَ لَهُ يَا عَبْدَ اللَّهِ مَا اسْمُكَ فَقَالَ لَهُ يَا عَبْدَ اللَّهِ لِمَ تَسْأَلُنِي عَنِ اسْمِي فَقَالَ إِنِّي سَمِعْتُ صَوْتًا فِي السَّحَابِ الَّذِي هَذَا مَاؤُهُ يَقُول اسْقِ حَدِيقَةَ فُلَانٍ لِاسْمِكَ فَمَا تَصْنَعُ فِيهَا قَالَ أما إِذْ قُلْتَ هَذَا فَإِنِّي أَنْظُرُ إِلَى مَا يَخْرُجُ مِنْهَا فَأَتَصَدَّقُ بِثُلُثِهِ وَآكُلُ أَنَا وَعِيَالِي ثُلُثًا وأرد فِيهَا ثلثه» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال بينا رجل بفلاة من الارض فسمع صوتا في سحابة اسق حديقة فلان فتنحى ذلك السحاب فافرغ ماءه في حرة فاذا شرجة من تلك الشراج قد استوعبت ذلك الماء كله فتتبع الماء فاذا رجل قاىم في حديقته يحول الماء بمسحاته فقال له يا عبد الله ما اسمك فقال له يا عبد الله لم تسالني عن اسمي فقال اني سمعت صوتا في السحاب الذي هذا ماوه يقول اسق حديقة فلان لاسمك فما تصنع فيها قال اما اذ قلت هذا فاني انظر الى ما يخرج منها فاتصدق بثلثه واكل انا وعيالي ثلثا وارد فيها ثلثه رواه مسلم

ব্যাখ্যা: দান করা, মিসকীন ও পথিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, নিজ রোযগার থেকে খাওয়া এবং তা থেকে পরিবারের জন্য খরচ করার ফাযীলাতের কথা অত্র হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৭৮-[২০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। বনী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তির একজন কুষ্ঠরোগী, একজন টাকমাথা ও তৃতীয়জন অন্ধ ছিল। আল্লাহ তা’আলা এ তিন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তিনি তাদের কাছে একজন মালাক (ফেরেশতা) পাঠালেন। মালাক (প্রথমে) কুষ্ঠ রোগীর কাছে এলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ জিনিস তোমার কাছে বেশী প্রিয়? সে বলল, সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক। আর এ কুষ্ঠ রোগ থেকে আরোগ্য যার জন্য লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ফেরেশতা কুষ্ঠ রোগীর গায়ে হাত বুলালেন। তার রোগ ভাল হয়ে গেল। তাকে উত্তম রং ও উত্তম ত্বক দান করা হলো। তারপর মালাক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন কোন সম্পদ তোমার কাছে বেশী প্রিয়? সে ব্যক্তি জবাবে উট অথবা গরুর কথা বলল। (হাদীস বর্ণনাকারী একব্যক্তি) ইসহাক্বের সন্দেহ করেছেন, ’গরুর’ কথা কুষ্ঠ রোগী বলেছিল অথবা টাকমাথাওয়ালা। (মোটকথা) এদের একজন উট চেয়েছিল। আর দ্বিতীয়জন চেয়েছিল গরু। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ লোকটিকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী উট দান করা হলো। তারপর মালাক দু’আ করলেন, ’আল্লাহ তোমার ধন-সম্পদে প্রবৃদ্ধি দিন।’

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এরপর মালাক গেলেন টাকওয়ালার কাছে। জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ জিনিস তোমার কাছে প্রিয়তর? সে বলল, সুন্দর চুল। সেই সাথে এ টাক থেকে মুক্তি, যার জন্য লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মালাক তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তার টাক ভাল হয়ে গেল। তাকে সুন্দর চুল দান করা হলো। এরপর মালাক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন তোমার কাছে কোন্ ধন-সম্পদ অধিক প্রিয়? সে বলল, ’গরু’। তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হলো। মালাক বললেন, আল্লাহ তোমার ধন-সম্পদে বারাকাত দিন।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর মালাক অন্ধের কাছে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কোন্ জিনিস খুব প্রিয়? অন্ধ লোকটি বলল, আল্লাহ তা’আলা আমাকে আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলে আমি তা দিয়ে লোকজনকে দেখতে পাব। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (তখন) মালাক তার চোখের উপর হাত বুলিয়ে দিলে আল্লাহ তাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। তারপর মালাক জানতে চাইলেন, এখন তার কাছে কোন্ ধন-সম্পদ অত্যন্ত প্রিয়। সে বলল, ভেড়া-ছাগল তাকে একটি গর্ভবতী বকরী দান করা হলো।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (কিছু দিন পর) কুষ্ঠ রোগী ও টাকওয়ালা অনেক উট ও গাভী এবং অন্ধ লোকটি অনেক ছাগলের মালিক হয়ে গেল। এমনকি উটে একটি ময়দান, গরুতে একটি ময়দান এবং ছাগলে একটি ময়দান ভরে গেল।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (এরপর ওই) মালাক আবার ওই কুষ্ঠ রোগীকে পরীক্ষা করার জন্য আগের রূপ ধরে এলেন। বললেন, আমি একজন মিসকীন লোক। সফরে আমার সব সম্পদ শেষ হয়ে গেছে, তাই আজ (আমার গন্তব্যে) পৌঁছা সম্ভব হচ্ছে না। আল্লাহর রহমতে আমি তোমার কাছে সে আল্লাহর কসম দিয়ে একটি উট চাইছি, যিনি তোমার গায়ের রং ও চামড়া সুন্দর করে দিয়েছেন। তুমি আমাকে একটি উট দিলে আমি সফর শেষে গন্তব্যে পৌঁছতে পারি। কুষ্ঠ রোগীটি বলল, আমার অনেক দায়-দায়িত্ব মিসকীনরূপী, অর্থাৎ সে বাহানা করে মিসকীনটিকে (ফেরেশতাকে) এড়িয়ে যেতে চাইল। বলল, তুমি কোন উট পাবে না। মালাক বললেন, আমি তোমাকে যেন চিনেছি, তুমি কি সে কুষ্ঠ রোগী নও, যাকে লোকেরা ঘৃণা করত? তুমি মুখাপেক্ষী ও গরীব ছিলে। আল্লাহ তোমাকে (উত্তম রং ও রূপ দিয়ে) সুস্থতা দান করেছেন, মাল দিয়েছেন। কুষ্ঠরোগী বলল, তোমার কথা ঠিক নয়। এসব অর্থ-সম্পদ আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। মালাক বললেন, যদি তুমি মিথ্যা বলে থাকো তাহলে আল্লাহ তোমাকে তোমার সে অবস্থায় ফিরিয়ে দিন যে অবস্থায় তুমি প্রথমে ছিলে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারপর মালাক টাকওয়ালার কাছে স্বরূপে আবির্ভূত হলেন। আগের লোকটিকে যা বলেছিলেন তাকে তেমনটি বললেন। টাকওয়ালাও ওই জবাবই দিলো যে জবাব কুষ্ঠ রোগীটি দিয়েছিল। তারপর মালাক বললেন, তুমি মিথ্যা বলে থাকলে আল্লাহ তোমাকে যেন পূর্ব অবস্থা ফিরিয়ে দেন।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (এরপর) মালাক অন্ধ লোকটির কাছে আবির্ভূত হলেন। তাকে বললেন, আমি একজন মিসকীন ও পথিক। আমার সফরের সব মালসামান শেষ। গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কিছুই নেই। আমি তোমার কাছে ওই আল্লাহর দোহাই দিয়ে একটি বকরী চাই যিনি তোমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং অনেক বকরীর মালিক করেছেন। তাহলে আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারি। মালাকের কথা শুনেই লোকটি বলল, আমি অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমাকে আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তুমি যত চাও নিয়ে যাও, আর যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহর কসম! (তুমি যা নিবে) তা ফেরত দেবার মতো কষ্ট আমি তোমাকে দেব না। (অন্ধের এ জবাব শুনে) মালাক বললেন, তোমার মাল তোমার কাছে থাকুক, তাতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। তোমাকে শুধু পরীক্ষা করা হচ্ছিল (তুমি কামিয়াব হয়েছ)। আল্লাহ তোমার ওপর সন্তুষ্ট। আর তোমার অপর দু’ সাথীর ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। (বুখারী)[1]

وَعَن أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ ثَلَاثَة فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ أَبْرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمَى فَأَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَبْتَلِيَهُمْ فَبَعَثَ إِلَيْهِمْ مَلَكًا فَأَتَى الْأَبْرَصَ فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ لَوْنٌ حَسَنٌ وَجِلْدٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَنِّي الَّذِي قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ» قَالَ: «فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ قَذَرُهُ وَأُعْطِيَ لَوْنًا حَسَنًا وَجِلْدًا حَسَنًا قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ الْإِبِلُ - أَوْ قَالَ الْبَقر شكّ إِسْحَق - إِلَّا أَنَّ الْأَبْرَصَ أَوِ الْأَقْرَعَ قَالَ أَحَدُهُمَا الْإِبِلُ وَقَالَ الْآخَرُ الْبَقَرُ قَالَ فَأُعْطِيَ نَاقَةً عُشَرَاءَ فَقَالَ بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِيهَا» قَالَ: «فَأتى الْأَقْرَع فَقَالَ أَي شَيْء أحب إِلَيْك قَالَ شَعَرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَنِّي هَذَا الَّذِي قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ» . قَالَ: فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ وَأُعْطِيَ شَعَرًا حَسَنًا قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ الْبَقَرُ فَأُعْطِيَ بَقَرَةً حَامِلًا قَالَ: «بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِيهَا» قَالَ: «فَأَتَى الْأَعْمَى فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ أَنْ يَرُدَّ اللَّهُ إِلَيَّ بَصَرِي فَأُبْصِرَ بِهِ النَّاسَ» . قَالَ: «فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللَّهُ إِلَيْهِ بَصَرَهُ قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ الْغَنَمُ فَأُعْطِيَ شَاة والدا فأنتج هَذَانِ وَولد هَذَا قَالَ فَكَانَ لِهَذَا وَادٍ مِنِ الْإِبِلِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الْبَقَرِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الْغَنَمِ» . قَالَ: «ثُمَّ إِنَّهُ أَتَى الْأَبْرَصَ فِي صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ رَجُلٌ مِسْكِينٌ قَدِ انْقَطَعَتْ بِيَ الْحِبَالُ فِي سَفَرِي فَلَا بَلَاغَ لِيَ الْيَوْمَ إِلَّا بِاللَّهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذِي أَعْطَاكَ اللَّوْنَ الْحسن وَالْجَلد الْحسن وَالْمَال بَعِيرًا أتبلغ عَلَيْهِ فِي سَفَرِي فَقَالَ الْحُقُوق كَثِيرَة فَقَالَ لَهُ كَأَنِّي أَعْرِفُكَ أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ فَقِيرًا فَأَعْطَاكَ اللَّهُ مَالًا فَقَالَ إِنَّمَا وَرِثْتُ هَذَا الْمَالَ كَابِرًا عَنْ كَابِرٍ فَقَالَ إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللَّهُ إِلَى مَا كُنْتَ» . قَالَ: «وَأَتَى الْأَقْرَعَ فِي صُورَتِهِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذَا وَرَدَّ عَلَيْهِ مِثْلَ مَا رَدَّ عَلَى هَذَا فَقَالَ إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللَّهُ إِلَى مَا كُنْتَ» . قَالَ: «وَأَتَى الْأَعْمَى فِي صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ رَجُلٌ مِسْكِينٌ وَابْنُ سَبِيلٍ انْقَطَعَتْ بِيَ الْحِبَالُ فِي سَفَرِي فَلَا بَلَاغَ لِيَ الْيَوْمَ إِلَّا بِاللَّهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذِي رَدَّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا فِي سَفَرِي فَقَالَ قَدْ كُنْتُ أَعْمَى فَرَدَّ اللَّهُ إِلَيَّ بَصَرِي فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ فَوَاللَّهِ لَا أجهدك الْيَوْم شَيْئا أَخَذْتَهُ لِلَّهِ فَقَالَ أَمْسِكْ مَالَكَ فَإِنَّمَا ابْتُلِيتُمْ فقد رَضِي عَنْك وَسخط على صاحبيك»

وعن ابي هريرة انه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول ان ثلاثة في بني اسراىيل ابرص واقرع واعمى فاراد الله ان يبتليهم فبعث اليهم ملكا فاتى الابرص فقال اي شيء احب اليك قال لون حسن وجلد حسن ويذهب عني الذي قد قذرني الناس قال فمسحه فذهب عنه قذره واعطي لونا حسنا وجلدا حسنا قال فاي المال احب اليك قال الابل او قال البقر شك اسحق الا ان الابرص او الاقرع قال احدهما الابل وقال الاخر البقر قال فاعطي ناقة عشراء فقال بارك الله لك فيها قال فاتى الاقرع فقال اي شيء احب اليك قال شعر حسن ويذهب عني هذا الذي قد قذرني الناس قال فمسحه فذهب عنه واعطي شعرا حسنا قال فاي المال احب اليك قال البقر فاعطي بقرة حاملا قال بارك الله لك فيها قال فاتى الاعمى فقال اي شيء احب اليك قال ان يرد الله الي بصري فابصر به الناس قال فمسحه فرد الله اليه بصره قال فاي المال احب اليك قال الغنم فاعطي شاة والدا فانتج هذان وولد هذا قال فكان لهذا واد من الابل ولهذا واد من البقر ولهذا واد من الغنم قال ثم انه اتى الابرص في صورته وهيىته فقال رجل مسكين قد انقطعت بي الحبال في سفري فلا بلاغ لي اليوم الا بالله ثم بك اسالك بالذي اعطاك اللون الحسن والجلد الحسن والمال بعيرا اتبلغ عليه في سفري فقال الحقوق كثيرة فقال له كاني اعرفك الم تكن ابرص يقذرك الناس فقيرا فاعطاك الله مالا فقال انما ورثت هذا المال كابرا عن كابر فقال ان كنت كاذبا فصيرك الله الى ما كنت قال واتى الاقرع في صورته فقال له مثل ما قال لهذا ورد عليه مثل ما رد على هذا فقال ان كنت كاذبا فصيرك الله الى ما كنت قال واتى الاعمى في صورته وهيىته فقال رجل مسكين وابن سبيل انقطعت بي الحبال في سفري فلا بلاغ لي اليوم الا بالله ثم بك اسالك بالذي رد عليك بصرك شاة اتبلغ بها في سفري فقال قد كنت اعمى فرد الله الي بصري فخذ ما شىت ودع ما شىت فوالله لا اجهدك اليوم شيىا اخذته لله فقال امسك مالك فانما ابتليتم فقد رضي عنك وسخط على صاحبيك

ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা আল্লাহর নি‘আমাতের অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে ভীতিপ্রদর্শন তার শুকরিয়া জ্ঞাপনের প্রতি অনুপ্রেরণা, নি‘আমাতের স্বীকারোক্তি এবং সে জন্য আল্লাহর প্রশংসা করতে বলা হয়েছে। অতঃপর দানের ফাযীলাত, অসহায় ব্যক্তিদের প্রতি সদয় হওয়া এবং কৃপণতার ব্যাপারে সতর্কতামূলক বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৭৯-[২১] উম্মু বুজায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মিসকীন আমার দরজায় এসে দাঁড়ালে (এবং আমার কাছে কিছু চায়) তখন আমি খুবই লজ্জা পাই, কারণ তাকে দেবার মতো আমার ঘরে কিছু পাই না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার হাতে কিছু দিও, যদি তা আগুনে ঝলসানো একটি খুরও হয়। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]

وَعَن أم بجيد قَالَتْ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الْمِسْكِينَ لِيَقِفُ عَلَى بَابِي حَتَّى أَسْتَحْيِيَ فَلَا أَجِدُ فِي بَيْتِي مَا أَدْفَعُ فِي يَدِهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ادْفَعِي فِي يَدِهِ وَلَوْ ظِلْفًا مُحْرَقًا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ

وعن ام بجيد قالت قلت يا رسول الله ان المسكين ليقف على بابي حتى استحيي فلا اجد في بيتي ما ادفع في يده فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ادفعي في يده ولو ظلفا محرقا رواه احمد وابو داود والترمذي

ব্যাখ্যা: হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসকীনকে খালি হাতে ফেরত না দিয়ে একটি পোড়া খোর হলেও দিতে বলেছেন। এর অর্থ হচ্ছে সামান্য কিছু হলেও দিতে বলেছেন। কেউ এ ব্যাপারে বলেছেন যে, পোড়া খোরও তাদের নিকট মূল্যায়িত ছিল। আল্লামা বাজী বলেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীস দ্বারা মিসকীনকে মুক্ত হস্তে ফেরত না দিয়ে সামান্য কিছু হলেও (যেমন পোড়া খোর) হাতে দিয়ে বিদায় করতে মানুষদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৮০-[২২] ’উসমান (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর কাছে (রান্না করা) কিছু মাংসের টুকরা তুহফা হিসেবে এলো। এর মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খুব প্রিয় (খাবার) ছিল। তাই উম্মু সালামাহ্ তাঁর সেবিকাকে বললেন, এ মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) ঘরে রেখে দাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হয়ত খাবেন। সেবিকা তা রেখে দিলো। এ সময়ে একজন ভিক্ষুক দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলল, হে অন্তঃপুরবাসিনী! আল্লাহর পথে কিছু খরচ করো, আল্লাহ তোমাদের ধন-সম্পদে বারাকাত দেবেন। ঘরের লোকেরা বলল, আল্লাহ তোমাকে বারাকাত দান করুন (অর্থাৎ মাফ করো)। ভিক্ষুকটি (এ কথা শুনে) চলে গেল।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ফিরে এসে বললেন, উম্মু সালামাহ্! তোমার কাছে খাবার আছে? উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) জবাব দিলেন, হ্যাঁ আছে। (এরপর) তিনি সেবিকাকে বললেন, যাও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) নিয়ে এসো। সেবিকা আনতে গেল। কিন্তু সে তাদের কাছে গিয়ে হতবাক। (সে দেখল), তাদের মধ্যে একটি সাদা হাড় ছাড়া আর কিছু নেই। (এ অবস্থা দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা ভিক্ষুককে কিছুই দাওনি। তাই এ মাংস খন্ডই সাদা হাড় হয়ে গেছে। (বায়হাক্বী; এ বর্ণনাটি দালায়িলুন নুবূওয়্যাত গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন।)

وَعَن مولى لعُثْمَان رَضِي الله عَنهُ قَالَ: أُهْدِيَ لِأُمِّ سَلَمَةَ بُضْعَةٌ مِنْ لَحْمٍ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ اللَّحْمُ فَقَالَتْ لِلْخَادِمِ: ضَعِيهِ فِي الْبَيْتِ لَعَلَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُهُ فَوَضَعَتْهُ فِي كَوَّةِ الْبَيْتِ. وَجَاءَ سَائِلٌ فَقَامَ عَلَى الْبَابِ فَقَالَ: تَصَدَّقُوا بَارَكَ اللَّهُ فِيكُمْ. فَقَالُوا: بَارَكَ اللَّهُ فِيكَ. فَذَهَبَ السَّائِلُ فَدَخَلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا أَمَّ سَلَمَةَ هَلْ عِنْدَكُمْ شَيْءٌ أَطْعَمُهُ؟» . فَقَالَتْ: نَعَمْ. قَالَتْ لِلْخَادِمِ: اذْهَبِي فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِذَلِكِ اللَّحْمِ. فَذَهَبَتْ فَلَمْ تَجِدْ فِي الْكَوَّةِ إِلَّا قِطْعَةَ مَرْوَةٍ فَقَالَ النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «فَإِن ذَلِك اللَّحْمَ عَادَ مَرْوَةً لِمَا لَمْ تُعْطُوهُ السَّائِلَ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي دَلَائِل النُّبُوَّة

وعن مولى لعثمان رضي الله عنه قال اهدي لام سلمة بضعة من لحم وكان النبي صلى الله عليه وسلم يعجبه اللحم فقالت للخادم ضعيه في البيت لعل النبي صلى الله عليه وسلم ياكله فوضعته في كوة البيت وجاء ساىل فقام على الباب فقال تصدقوا بارك الله فيكم فقالوا بارك الله فيك فذهب الساىل فدخل النبي صلى الله عليه وسلم فقال يا ام سلمة هل عندكم شيء اطعمه فقالت نعم قالت للخادم اذهبي فاتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بذلك اللحم فذهبت فلم تجد في الكوة الا قطعة مروة فقال النبي صلى الله عليه وسلم فان ذلك اللحم عاد مروة لما لم تعطوه الساىل رواه البيهقي في دلاىل النبوة

হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৮১-[২৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতম ব্যক্তিকে আমি কি তোমাদেরকে চিনাব? সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, জী হ্যাঁ, আল্লাহর রসূল! অবশ্যই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর কসম দিয়ে কেউ কিছু চায়, আর সে তাকে কিছু দেয় না (সে সবচেয়ে নিকৃষ্ট)। (আহমাদ)[1]

وَعَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَتْ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِشَرِّ النَّاسِ مَنْزِلًا؟ قِيلَ: نَعَمْ قَالَ: الَّذِي يُسْأَلُ بِاللَّهِ وَلَا يُعْطِي بِهِ . رَوَاهُ أَحْمد

وعن ابن عباس رضي الله عنهما قالت قال النبي صلى الله عليه وسلم الا اخبركم بشر الناس منزلا قيل نعم قال الذي يسال بالله ولا يعطي به رواه احمد

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেছেন, যখন কোন সওয়ালকারী একজন ধনবান ব্যক্তিকে তার দিকে আকৃষ্ট করে কিছু পাওয়ার জন্য আল্লাহর কসম করে আল্লাহর নামে কিছু চাইবে এবং ধনবান ব্যক্তি সওয়ালকারীর দুরাবস্থার কথা জানে আর সে দান করতে সক্ষম, এরপরও ঐ ব্যক্তিকে কিছু না দিলে সে হবে সবচেয়ে মন্দ ব্যক্তি। এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন তা হলো সাওয়ালকারীকে কিছু না দেয়া যেমন ঠিক নয়, অনুরূপ আল্লাহর নাম নিয়ে কিছু চাওয়াও সঠিক নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৮২-[২৪] আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। (একবার) তিনি ’উসমানের কাছে আসার অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি। ’উসমান (রাঃ) (ওখানে উপস্থিত) কা’বকে বললেন, কা’ব! ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) অনেক ধন-সম্পদ রেখে ইন্তিকাল করেছেন। এ ব্যাপারে তোমার কী অভিমত? কা’ব (রাঃ) বললেন, তিনি যদি এসবে আল্লাহর হক (যাকাত) আদায় করে থাকেন, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। (এ কথা শুনেই) আবূ যার (রাঃ) হাতের লাঠি কা’ব-এর দিকে উঠিয়ে মারলেন এবং বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, (উহুদের) পাহাড় পরিমাণ সোনাও যদি আমার থাকে, আর আমি তা আল্লাহর পথে খরচ করি এবং তা কবূলও হয়, তারপরও আমি পছন্দ করব না আমার পরে ছয় উক্বিয়্যাহ্ (অর্থাৎ দু’শত চল্লিশ দিরহাম) আমার ঘরে সঞ্চিত থাকুক। এবার আবূ যার (রাঃ) (’উসমান (রাঃ কে উদ্দেশ করে বললেন,) আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, হে ’উসমান! আপনি কী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা শুনেননি? এ কথা তিনি তিনবার বললেন। ’উসমান (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ শুনেছি। (আহমাদ)[1]

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ أَنَّهُ اسْتَأْذَنَ عَلَى عُثْمَانَ فَأَذِنَ لَهُ وَبِيَدِهِ عَصَاهُ فَقَالَ عُثْمَانُ: يَا كَعْبُ إِنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ تُوُفِّيَ وَتَرَكَ مَالًا فَمَا تَرَى فِيهِ؟ فَقَالَ: إِنْ كَانَ يَصِلُ فِيهِ حَقَّ اللَّهِ فَلَا بَأْسَ عَلَيْهِ. فَرَفَعَ أَبُو ذَرٍّ عَصَاهُ فَضَرَبَ كَعْبًا وَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا أُحِبُّ لَوْ أَنَّ لِي هَذَا الْجَبَلَ ذَهَبًا أُنْفِقُهُ وَيُتَقَبَّلُ مِنِّي أَذَرُ خَلْفِي مِنْهُ سِتَّ أَوَاقِيَّ» . أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ يَا عُثْمَانُ أَسَمِعْتَهُ؟ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. قَالَ: نعم. رَوَاهُ أَحْمد

وعن ابي ذر انه استاذن على عثمان فاذن له وبيده عصاه فقال عثمان يا كعب ان عبد الرحمن توفي وترك مالا فما ترى فيه فقال ان كان يصل فيه حق الله فلا باس عليه فرفع ابو ذر عصاه فضرب كعبا وقال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ما احب لو ان لي هذا الجبل ذهبا انفقه ويتقبل مني اذر خلفي منه ست اواقي انشدك بالله يا عثمان اسمعته ثلاث مرات قال نعم رواه احمد

ব্যাখ্যা: আবূ যার (রাঃ) সাহাবীদের মধ্যে দরিদ্র এবং দুনিয়া বিমুখ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর মতাদর্শ ছিল যে, সম্পদ জমা করে নিজের কাছে রেখে না দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে দিতে হবে। এজন্যই তিনি কা‘ব (রাঃ)-কে প্রহার করেন। অথচ যে সম্পদের যাকাত প্রদান করা হয় তা كنز (কান্য)-এর (জমা করে রাখার) অন্তর্ভুক্ত নয় এবং এর জন্য কোন ভীতিও প্রদর্শন করা হয়নি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৮৩-[২৫] ’উক্ববাহ্ ইবনু হারিস (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদিন) আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলাম। সালাম ফিরার মাত্রই তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং মানুষের ঘাড় টপকিয়ে নিজের কোন স্ত্রীর হুজরার দিকে চলে গেলেন। তাঁর এ ব্যস্ততা দেখে সাহাবীগণ ঘাবড়ে গেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হুজরা হতে বেরিয়ে এলেন এবং সাহাবীগণকে তাঁর এ তাড়াহুড়ার জন্য বিস্মিত দেখে বললেন, আমার মনে পড়ল ঘরে কিছু সোনা রয়ে গেছে। এগুলো আমাকে (আল্লাহর নৈকট্য থেকে) দূরে রাখুক আমি পছন্দ করিনি। তাই তা বিলি-বণ্টন করে দিতে আমি বলে এসেছি। (বুখারী; বুখারীর অপর বর্ণনায় এসেছে, তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ আমি যাকাত হিসেবে পাওয়া একটি সোনার পোটলা ঘরে রেখে এসেছি। আমি চাইনি তা একরাত আমার কাছে থাকুক।)[1]

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ: صَلَّيْتُ وَرَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ الْعَصْرَ فَسَلَّمَ ثُمَّ قَامَ مُسْرِعًا فَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ إِلَى بَعْضِ حُجَرِ نِسَائِهِ فَفَزِعَ النَّاسُ مِنْ سُرْعَتِهِ فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ فَرَأَى أَنَّهُمْ قَدْ عَجِبُوا مِنْ سُرْعَتِهِ قَالَ: «ذَكَرْتُ شَيْئًا مِنْ تِبْرٍ عِنْدَنَا فَكَرِهْتُ أَنْ يَحْبِسَنِي فَأَمَرْتُ بِقِسْمَتِهِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ قَالَ: «كُنْتُ خَلَّفْتُ فِي الْبَيْتِ تِبْرًا مِنَ الصَّدَقَةِ فَكَرِهْتُ أَنْ أبيته»

وعن عقبة بن الحارث قال صليت وراء النبي صلى الله عليه وسلم بالمدينة العصر فسلم ثم قام مسرعا فتخطى رقاب الناس الى بعض حجر نساىه ففزع الناس من سرعته فخرج عليهم فراى انهم قد عجبوا من سرعته قال ذكرت شيىا من تبر عندنا فكرهت ان يحبسني فامرت بقسمته رواه البخاري وفي رواية له قال كنت خلفت في البيت تبرا من الصدقة فكرهت ان ابيته

ব্যাখ্যা: সালাম ফিরানোর পর সালাতের স্থানে বসে থাকা ওয়াজিব নয়, একজন মুসল্লী সালামের পর প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সেখান থেকে প্রস্থান করতে পারবে। সালাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এমন কোন বিষয়ের স্মরণ করলে (বিশেষ প্রয়োজনে) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল হয় না। বিশেষ করে কোন ভাল জিনিসের যদি ইচ্ছে পোষণ করে তাহলে সালাতের কোন ক্ষতি করে না। হাদীসটি থেকে আরো জানা যাচ্ছে যে, ভাল কাজ দ্রুত সম্পাদন করতে হয়। কারণ এই যে, কোন আপদ-বিপদের কারণে পরে সেই কাজটি নাও হতে পারে অথবা কাজটি করার পূর্বেই আর মৃত্যুও ঘটতে পারে। আর দ্রুত সম্পাদন করতে পারলেই যিম্মাদারী থেকে মুক্ত হওয়া যায়, আল্লাহ বেশি সন্তুষ্টি হন এবং পাপ মোচনের জন্য বেশি কার্যকরী হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৮৪-[২৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমার কাছে (’আরাবে তখনকার প্রচলিত) ছয় কি সাতটি দীনার রক্ষিত ছিল। (মৃত্যু শয্যায় থাকাকালে) তিনি আমাকে তা বণ্টন করে দেবার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তাঁর রোগের তীব্রতার কারণে আমি ব্যস্ত থাকাতে ভুলে গেছলাম। তিনি আমাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ছয় কি সাতটি দীনার তুমি কি করেছ? আমি বললাম, এখনো বণ্টন করা হয়নি। আল্লাহর কসম! আপনার রোগযন্ত্রণা আমাকে ব্যস্ত রেখেছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দীনারগুলো চেয়ে নিয়ে নিজের হাতে রেখে বললেন, এ কথা কি ভাবা যায় যে, আল্লাহর নবী আল্লাহর সাথে মিলিত হবেন অথচ সে সময় তাঁর হাতে এ দীনারগুলো থেকে যাবে! (আহমাদ)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدِي فِي مَرضه سِتَّةُ دَنَانِيرَ أَوْ سَبْعَةٌ فَأَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أُفَرِّقَهَا فَشَغَلَنِي وَجَعُ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ سَأَلَنِي عَنْهَا: «مَا فَعَلَتِ السِّتَّةُ أَوِ السَّبْعَة؟» قلت: لَا وَالله لقد كَانَ شَغَلَنِي وَجَعُكَ فَدَعَا بِهَا ثُمَّ وَضَعَهَا فِي كَفِّهِ فَقَالَ: «مَا ظَنُّ نَبِيِّ اللَّهِ لَوْ لَقِيَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَهَذِهِ عِنْدَهُ؟» . رَوَاهُ أَحْمد

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم عندي في مرضه ستة دنانير او سبعة فامرني رسول الله صلى الله عليه وسلم ان افرقها فشغلني وجع نبي الله صلى الله عليه وسلم ثم سالني عنها ما فعلت الستة او السبعة قلت لا والله لقد كان شغلني وجعك فدعا بها ثم وضعها في كفه فقال ما ظن نبي الله لو لقي الله عز وجل وهذه عنده رواه احمد

ব্যাখ্যা: আল্লাহর নাবীর নিকট দুনিয়ার সামগ্রী ছিল একান্তই তুচ্ছ বিষয়। সুতরাং দুনিয়ার কোন সামগ্রী অর্থ-সম্পদ তাঁর নিকট থাকবে আর সে অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হবে এটা ছিল তাঁর নিকটে নিতান্তই অপছন্দের।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৮৫-[২৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল-এর নিকট এলেন। তখন তাঁর কাছে খেজুরের বড় স্তূপ। তিনি বিলালকে জিজ্ঞেস করলেন, বিলাল এসব কী? বিলাল বললেন, এসব আমি (ভবিষ্যতের জন্য) জমা করে রেখেছি। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কাল কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন এতে তুমি জাহান্নামের তাপ অনুভবকে কী ভয় করছ না? বিলাল! এসব তুমি দান করে দাও। ’আরশের মালিক-এর কাছে ভূখা নাঙা থাকার ভয় করো না।[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى بِلَالٍ وَعِنْدَهُ صُبْرَةٌ مِنْ تَمْرٍ فَقَالَ: «مَا هَذَا يَا بِلَالُ؟» قَالَ: شَيْءٌ ادَّخَرْتُهُ لِغَدٍ. فَقَالَ: «أَمَا تَخْشَى أَنْ تَرَى لَهُ غَدًا بخارا فِي نَار جَهَنَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْفِقْ بِلَالُ وَلَا تَخْشَ من ذِي الْعَرْش إقلالا»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه ان النبي صلى الله عليه وسلم دخل على بلال وعنده صبرة من تمر فقال ما هذا يا بلال قال شيء ادخرته لغد فقال اما تخشى ان ترى له غدا بخارا في نار جهنم يوم القيامة انفق بلال ولا تخش من ذي العرش اقلالا

ব্যাখ্যা: পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি এবং অসহায় ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য কিছু সম্পদ আগামী দিনের জন্য সঞ্চয় করে রাখা একদম নাজায়িয নয়। কিন্তু অত্র হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  করীম বিলাল (রাঃ)-কে সবটুকু খরচের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে বিলাল (রাঃ) মানাবীয় গুণাবলীর সর্বোচ্য স্তরে পৌঁছতে পারে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৮৬-[২৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে ’সাখাওয়াত’ (দানশীলতা নামে) একটি বৃক্ষ আছে। (দুনিয়াতে) যে ব্যক্তি দানশীল হবে, সে (আখিরাতে) এ বৃক্ষের ডাল আঁকড়ে ধরবে। আর সে ডাল তাকে জান্নাতে প্রবেশ না করানো পর্যন্ত ছাড়বে না। জাহান্নামেও ’বুখালাত’ (কৃপণতা নামে) একটি গাছ আছে। যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) কৃপণ হবে, সে (আখিরাতে) সে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরবে। এ ডাল তাকে জাহান্নামে পৌঁছানো না পর্যন্ত ছেড়ে দেবে না। (এ দু’টি বর্ণনা ইমাম বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমানে উদ্ধৃত করেছেন)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّخَاءُ شَجَرَةٌ فِي الْجَنَّةِ فَمَنْ كَانَ سَخِيًّا أَخَذَ بِغُصْنٍ مِنْهَا فَلَمْ يَتْرُكْهُ الْغُصْنُ حَتَّى يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ. وَالشُّحُّ شَجَرَةٌ فِي النَّارِ فَمَنْ كَانَ شَحِيحًا أَخَذَ بِغُصْنٍ مِنْهَا فَلَمْ يَتْرُكْهُ الْغُصْنُ حَتَّى يُدْخِلَهُ النَّارَ» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم السخاء شجرة في الجنة فمن كان سخيا اخذ بغصن منها فلم يتركه الغصن حتى يدخله الجنة والشح شجرة في النار فمن كان شحيحا اخذ بغصن منها فلم يتركه الغصن حتى يدخله النار رواهما البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, দানশীলতা সবল ঈমানের প্রমাণ করে। আর তা এজন্য যে, দানকারী বিশ্বাস পোষণ করে যে, রিযক্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর যে এই মূলনীতিতে বিশ্বাসী আল্লাহ তাকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেন। অন্যদিকে কৃপণতা হচ্ছে দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক, রিযক্বের মালিক আল্লাহ এ ব্যাপারে আস্থাবান না হওয়ার কারণে, আর আস্থাশীল না হওয়াটাই তাকে অবমাননাকর স্থলে নিয়ে যায়। অত্রএব, হাদীসে দান ও দানকারীর ফাযীলাত বর্ণনা এবং কৃপণতা ও কৃপণের দোষারোপ করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দানের মর্যাদা ও কৃপণতার পরিণাম

১৮৮৭-[২৯] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে খরচ করার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবে (অর্থাৎ মৃত্যু অথবা রোগ-শোক হবার আগে)। কারণ দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করলে বালা-মুসীবাত বৃদ্ধি পায় না (অর্থাৎ দান সদাক্বায় বালা-মুসীবাত দূর হয়)। (রযীন)[1]

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَادِرُوا بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ الْبَلَاءَ لَا يَتَخَطَّاهَا» . رَوَاهُ رَزِينٌ

وعن علي رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بادروا بالصدقة فان البلاء لا يتخطاها رواه رزين

ব্যাখ্যা: আল্লামা ত্বীবী বলেছেনঃ দান-খয়রাতকে দানকারীর জন্য পর্দা বা আড় স্বরূপ করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দানের কারণে দানকারীর নিকট বিপদাপদ পৌঁছতে পারে না, দান তা প্রতিরোধ করে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে