পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল

১৮৪৬-[১০] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পরের কাছে হাত পাতা একটি রোগ, যার দ্বারা মানুষ নিজের মুখকে রোগাক্রান্ত করে। যে ব্যক্তি (নিজের মান সম্মান) অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় সে যেন (হাত পাততে) লজ্জা অনুভব করে, মান ইযযত রক্ষা করে। আর যে ব্যক্তি (মান ইযযত) অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় না সে মানুষের কাছে হাত পেতে নিজের মান সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করতে পারে। তবে মানুষ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হাত পাততে পারে। অথবা এমন সময়ে (কারো কাছে) কিছু চাইবে যা চাওয়া খুবই প্রয়োজন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী)[1]

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَسَائِلُ كُدُوحٌ يَكْدَحُ بِهَا الرَّجُلُ وَجْهَهُ فَمَنْ شَاءَ أَبْقَى عَلَى وَجْهِهِ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ إِلَّا أَنْ يَسْأَلَ الرَّجُلُ ذَا سُلْطَانٍ أَوْ فِي أَمْرٍ لَا يَجِدُ مِنْهُ بُدًّا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ

عن سمرة بن جندب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المساىل كدوح يكدح بها الرجل وجهه فمن شاء ابقى على وجهه ومن شاء تركه الا ان يسال الرجل ذا سلطان او في امر لا يجد منه بدا رواه ابو داود والترمذي والنساىي

ব্যাখ্যা: হাদীসে সাওয়ালকারীর (যিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে বা চায়) শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট সাওয়ালকারী এবং যে ব্যক্তির সাওয়াল করা ব্যতীত জীবিকা নির্বাহের অন্য কোন উপায় থাকবে না সে ঐ শাস্তির আওতামুক্ত থাকবে। রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট বায়তুল মাল তথা রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে সাধারণ কোন মানুষ সাওয়াল করতে পারে যে মালে সাধারণ মানুষের অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে কারোর একান্ত প্রয়োজন হলে তার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট সাওয়াল করা সম্পূর্ণ বৈধ হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল

১৮৪৭-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও মানুষের নিকট হাত পাতে, তাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন এ অবস্থায় উঠানো হবে যে, এ অভ্যাস তার মুখের উপর ’খুমূশ’ ’খুদূশ’ অথবা ’কুদূহ’রূপে প্রকাশ পাবে। নিবেদন করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কি পরিমাণ সম্পদ তাকে অমুখাপেক্ষী করবে? তিনি বললেন, পঞ্চাশ দিরহাম অথবা এ মূল্যের সোনা। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من سَأَلَ النَّاسَ وَلَهُ مَا يُغْنِيهِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَسْأَلَتُهُ فِي وَجْهِهِ خُمُوشٌ أَوْ خُدُوشٌ أَوْ كُدُوحٌ» . قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا يُغْنِيهِ؟ قَالَ: «خَمْسُونَ دِرْهَمًا أَوْ قِيمَتُهَا مِنَ الذَّهَبِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي

وعن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سال الناس وله ما يغنيه جاء يوم القيامة ومسالته في وجهه خموش او خدوش او كدوح قيل يا رسول الله وما يغنيه قال خمسون درهما او قيمتها من الذهب رواه ابو داود والترمذي والنساىي وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, যার নিকট ৫০ দিরহাম অথবা সমপরিমাণ মূল্যের স্বর্ণ থাকবে তার জন্য সাওয়াল (ভিক্ষাবৃত্তি করা বা চাওয়া) করা হারাম। অন্যান্য হাদীসে এর কমের কথা আছে, যেমন পরের দু’টোর একটিতে রয়েছে যার নিকট দু’বেলা খাবার পরিমাণ ব্যবস্থা আছে, অপরদিকে রয়েছে যার নিকট উক্বিয়্যাহ্ (৪০ দিরহাম) অথবা তার সমপরিমাণ সম্বল আছে তার জন্য অন্যের কাছে চাওয়া বৈধ নয়। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী তার গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’তে বলেন, উল্লেখিত হাদীসগুলোর মাঝে কোন বিরোধ নেই। কারণ মানুষ বিভিন্ন শ্রেণী বা পেশার হয়ে থাকে। যেমনঃ কেউ ব্যবসায়ী হয়ে থাকে কেউবা চাষাবাদ করে আবার কেউ দিনমজুরীর কাজ করে। এই প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীর জন্য ব্যবসা করার মতো পণ্যের প্রয়োজন হয়, চাষীর জন্য চাষাবাদের উপকরণের দরকার হয়। অনুরূপ দিনমজুরের জন্য দু’বেলার খাবারই যথেষ্ট হয়। সুতরাং সময়ের ব্যবধান এবং মানুষের শ্রেণীর পার্থক্যের কারণে ৫০ বা ৪০ দিরহাম অথবা দু’বেলার খাবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল

১৮৪৮-[১২] সাহল ইবনু হানযালিয়্যাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অমুখাপেক্ষী থাকার মতো সম্পদের মালিক হয়েও যে ব্যক্তি মানুষের কাছে হাত পাতে, সে মূলত বেশী আগুন চায়। এ হাদীসের এক বর্ণনাকারী নুফায়লী অন্য এক স্থানে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে অন্য কারো কাছে কিছু চাওয়া সমীচীন হবে না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সকাল সন্ধ্যার পরিমাণ খাদ্য মওজুদ থাকলে। নুফায়লী অন্য এক স্থানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বরাতে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তার কাছে একদিন অথবা একদিন এক রাতের পরিমাণ খাদ্য মওজুদ থাকলে। অথবা বর্ণনাকারীর সন্দেহ, তিনি শুধু একদিনের কথা বলেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ سَهْلِ بْنِ الْحَنْظَلِيَّةِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَأَلَ وَعِنْدَهُ مَا يُغْنِيهِ فَإِنَّمَا يَسْتَكْثِرُ مِنَ النَّارِ» . قَالَ النُّفَيْلِيُّ. وَهُوَ أَحَدُ رُوَاتِهِ فِي مَوْضِعٍ آخر: وَمَا الْغنى الَّذِي لَا يَنْبَغِي مَعَهُ الْمَسْأَلَةُ؟ قَالَ: «قَدْرُ مَا يُغَدِّيهِ وَيُعَشِّيهِ» . وَقَالَ فِي مَوْضِعٍ آخَرَ: «أَنْ يَكُونَ لَهُ شِبَعُ يَوْمٍ أَوْ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن سهل بن الحنظلية قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سال وعنده ما يغنيه فانما يستكثر من النار قال النفيلي وهو احد رواته في موضع اخر وما الغنى الذي لا ينبغي معه المسالة قال قدر ما يغديه ويعشيه وقال في موضع اخر ان يكون له شبع يوم او ليلة ويوم رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি প্রয়োজন ছাড়াই মানুষের থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে সম্পদ একত্রিত করে সে যেন তার নিজের জন্য জাহান্নামের আগুন একত্রিত করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন ধরা হল, কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা বৈধ নয়? উত্তরে তিনি বললেন, সকাল-সন্ধ্যার খাবার। অর্থাৎ যার নিকট একদিনের সকাল-সন্ধ্যার খাবার থাকবে তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা বৈধ নয়। ইমাম খাত্ত্বাবী (রহঃ) তাঁর ‘‘মা‘আলিম’’ গ্রন্থে বলেন, এর ব্যাখ্যায় মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, হাদীসের বাহ্যিক অর্থে বুঝা যায় যার একদিনের সকাল-সন্ধ্যার খাবার থাকবে তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি বৈধ নয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, ভিক্ষাবৃত্তি সেই ব্যক্তির জন্য অবৈধ যার নিকট দীর্ঘদিনের খাবার মওজুদ রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বরং এটি পঞ্চাশ দিরহাম এবং উক্বিয়্যার হাদীস দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল

১৮৪৯-[১৩] ’আত্বা ইবনু ইয়াসার বানী আসাদ গোত্রের এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি এক উক্বিয়্যাহ্ পরিমাণ (অর্থাৎ চল্লিশ দিরহাম) অথবা এর সমমূল্যের (সোনা ইত্যাদি) মালিক হবার পরও মানুষের কাছে হাত পাতে, সে যেন বিনা প্রয়োজনে (মানুষের কাছে) হাত পাতলো। (মালিক, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ رَجُلٍ مِنْ بَنِي أَسَدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَأَلَ مِنْكُمْ وَلَهُ أُوقِيَّةٌ أَوْ عَدْلُهَا فَقَدْ سَأَلَ إِلْحَافًا» . رَوَاهُ مَالك وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن عطاء بن يسار عن رجل من بني اسد قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سال منكم وله اوقية او عدلها فقد سال الحافا رواه مالك وابو داود والنساىي

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল

১৮৫০-[১৪] হুবশী ইবনু জুনাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কারো কাছে কিছু চাওয়া ধনী, সুস্থ সবল ও সুস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পন্ন লোকের জন্য হালাল নয়। তবে ওই ফকিরের জন্য তা হালাল, যে ক্ষুধা পিপাসার কারণে মাটিতে পড়ে গেছে। এভাবে ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্যও হাত পাতা হালাল যে ভারী ঋণের বোঝায় জর্জরিত। মনে রাখবে যে ব্যক্তি শুধু সম্পত্তি বাড়াবার জন্য মানুষের কাছে ঋণ চায়, তার এ চাওয়া কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আহতের চিহ্নরূপে তার মুখে ভেসে উঠবে। তাছাড়াও জাহান্নামে তার খাদ্য হিসেবে গরম পাথর দেয়া হবে। অতএব যার ইচ্ছা সে কম হাত পাতুক অথবা বেশী বেশী হাত পাতুক। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ حُبْشِيِّ بْنِ جُنَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَحِلُّ لِغَنِيٍّ وَلَا لِذِي مِرَّةٍ سَوِيٍّ إِلَّا لِذِي فَقْرٍ مُدْقِعٍ أَوْ غُرْمٍ مُفْظِعٍ وَمَنْ سَأَلَ النَّاسَ لِيُثْرِيَ بِهِ مَالَهُ: كَانَ خُمُوشًا فِي وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَرَضْفًا يَأْكُلُهُ مِنْ جَهَنَّمَ فَمَنْ شَاءَ فَلْيَقُلْ وَمَنْ شَاءَ فليكثر . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن حبشي بن جنادة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان المسالة لا تحل لغني ولا لذي مرة سوي الا لذي فقر مدقع او غرم مفظع ومن سال الناس ليثري به ماله كان خموشا في وجهه يوم القيامة ورضفا ياكله من جهنم فمن شاء فليقل ومن شاء فليكثر رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কঠিন অভাব অথবা দেনা পরিশোধের জন্য নয় বরং নিজের সম্পদকে বৃদ্ধি করার জন্য মানুষের নিকট সাওয়াল (ভিক্ষাবৃত্তি বা চাইবে) করবে তাকে হাদীসে বর্ণিত শাস্তি প্রদান করা হবে। এ শাস্তির কথা জানার পর যার ইচ্ছে হয় সাওয়াল কম করা সে কম করে করবে আর যার ইচ্ছে হয় বেশি সাওয়াল করার সে বেশি করবে। (সাওয়ালের অনুপাতে তার শাস্তি হবে)। এর দৃষ্টান্ত যেমন আল্লাহর বাণী, অর্থাৎ ‘‘যার ইচ্ছে হয় সে ঈমান আনবে আর যার ইচ্ছে হয় সে কুফরী করবে। আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছি আগুন’’- (সূরাহ্ আল কাহফ ১৮ : ২৯)।


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল

১৮৫১-[৫] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আনসারের এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি বললেন, ’তোমার ঘরে কি কোন জিনিস নেই?’ লোকটি বলল, একটি কমদামী কম্বল আছে। এটার একাংশ আমি গায়ে দেই, আর অপর অংশ বিছিয়ে নিই। এছাড়া কাঠের একটি পেয়ালা আছে। এ দিয়ে আমি পানি পান করি।’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দু’টো জিনিস আমার কাছে নিয়ে এসো। লোকটি এ জিনিস দু’টি নবীর কাছে নিয়ে এলো। জিনিসটি নিজের হাতে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দু’টি কে কিনবে? এক ব্যক্তি বলল, আমি এক দিরহামের বিনিময়ে কিনতে প্রস্তুত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এক দিরহামের বেশী দিয়ে কে কিনতে চাও? এ কথাটি তিনি ’দু’ কি তিনবার’ বললেন। (এ সময়) এক ব্যক্তি দু’ দিরহাম বললে তিনি দু’ দিরহাম নিয়ে আনসারীকে দিয়ে দিলেন। অতঃপর তাকে বললেন, এ এক দিরহাম দিয়ে খাদ্য কিনে পরিবারের লোকজনকে দিবে। দ্বিতীয় দিরহামটি দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে আসবে। সে ব্যক্তি কুঠার কিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলো। তিনি নিজ হাতে কুঠারের একটি মজবুত হাতল লাগিয়ে দিয়ে তাকে বললেন, এটা দিয়ে লাকড়ী কেটে বিক্রি করবে। এরপর আমি এখানে তোমাকে পনের দিন যেন দেখতে না পাই। লোকটি চলে গেল। বন থেকে লাকড়ী কেটে জমা করে (বাজারে) এনে বিক্রি করতে লাগল। (কিছু দিন পর) সে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এলো তখন সে দশ দিরহামের মালিক। এ দিরহামের কিছু দিয়ে সে কিছু কাপড়-চোপড় কিনল আর কিছু দিয়ে খাদ্যশস্য কিনল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার অবস্থার এ পরিবর্তন দেখে) বললেন, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন ভিক্ষাবৃত্তি তোমার চেহারায় ক্ষত চিহ্ন হয়ে ওঠার চেয়ে এ অবস্থা কি উত্তম নয়?

(মনে রাখবে), শুধু তিন ধরনের লোক হাত পাততে পারে, ভিক্ষা করতে পারে। প্রথমতঃ ফকীর যাকে কপর্দকহীনতা মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যে ভারী ঋণে লাঞ্ছিত হবার পর্যায়ে। তৃতীয়তঃ রক্তপণ আদায়কারী, যা তার যিম্মায় আছে (অথচ তার সামর্থ্য নেই)। (আবূ দাঊদ; ইবনু মাজাহ এ হাদীসটি ’ইলা- ইয়াওমিল ক্বিয়া-মাহ্’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।)[1]

وَعَن أنس بن مَالك: أَنَّ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُهُ فَقَالَ: «أَمَا فِي بَيْتك شَيْء؟» قَالَ بَلَى حِلْسٌ نَلْبَسُ بَعْضَهُ وَنَبْسُطُ بَعْضَهُ وَقَعْبٌ نَشْرَبُ فِيهِ مِنَ الْمَاءِ. قَالَ: «ائْتِنِي بِهِمَا» قَالَ فَأَتَاهُ بِهِمَا فَأَخَذَهُمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ وَقَالَ: «مَنْ يَشْتَرِي هَذَيْنِ؟» قَالَ رَجُلٌ أَنَا آخُذُهُمَا بِدِرْهَمٍ قَالَ: «مَنْ يَزِيدُ عَلَى دِرْهَمٍ؟» مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا قَالَ رجل أَنا آخذهما بِدِرْهَمَيْنِ فَأَعْطَاهُمَا إِيَّاه وَأخذ الدِّرْهَمَيْنِ فَأَعْطَاهُمَا الْأَنْصَارِيُّ وَقَالَ: «اشْتَرِ بِأَحَدِهِمَا طَعَامًا فانبذه إِلَى أهلك واشتر بِالْآخرِ قدومًا فأتني بِهِ» . فَأَتَاهُ بِهِ فَشَدَّ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُودًا بِيَدِهِ ثُمَّ قَالَ لَهُ اذْهَبْ فَاحْتَطِبْ وَبِعْ وَلَا أَرَيَنَّكَ خَمْسَةَ عَشَرَ يَوْمًا . فَذهب الرجل يحتطب وَيبِيع فجَاء وَقَدْ أَصَابَ عَشَرَةَ دَرَاهِمَ فَاشْتَرَى بِبَعْضِهَا ثَوْبًا وَبِبَعْضِهَا طَعَامًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تَجِيءَ الْمَسْأَلَةُ نُكْتَةً فِي وَجْهِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَصْلُحُ إِلَّا لِثَلَاثَةٍ لِذِي فَقْرٍ مُدْقِعٍ أَوْ لِذِي غُرْمٍ مُفْظِعٍ أَوْ لِذِي دَمٍ مُوجِعٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى ابْن مَاجَه إِلَى قَوْله: «يَوْم الْقِيَامَة»

وعن انس بن مالك ان رجلا من الانصار اتى النبي صلى الله عليه وسلم يساله فقال اما في بيتك شيء قال بلى حلس نلبس بعضه ونبسط بعضه وقعب نشرب فيه من الماء قال اىتني بهما قال فاتاه بهما فاخذهما رسول الله صلى الله عليه وسلم بيده وقال من يشتري هذين قال رجل انا اخذهما بدرهم قال من يزيد على درهم مرتين او ثلاثا قال رجل انا اخذهما بدرهمين فاعطاهما اياه واخذ الدرهمين فاعطاهما الانصاري وقال اشتر باحدهما طعاما فانبذه الى اهلك واشتر بالاخر قدوما فاتني به فاتاه به فشد فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم عودا بيده ثم قال له اذهب فاحتطب وبع ولا ارينك خمسة عشر يوما فذهب الرجل يحتطب ويبيع فجاء وقد اصاب عشرة دراهم فاشترى ببعضها ثوبا وببعضها طعاما فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا خير لك من ان تجيء المسالة نكتة في وجهك يوم القيامة ان المسالة لا تصلح الا لثلاثة لذي فقر مدقع او لذي غرم مفظع او لذي دم موجع رواه ابو داود وروى ابن ماجه الى قوله يوم القيامة

ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় সাব্যস্ত হয়-

১। ডাকের মাধ্যমে কোন জিনিস বিক্রয়ের সময় যে মূল্য বেশি দিবে তার নিকট বিক্রয় করা জায়িয। এ ধরনের বিক্রয় একজনের দাম করার উপরে অন্যজনের দাম করার (যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ) অন্তর্ভুক্ত হবে না।

২। বৈধ পন্থায় নিজের হাতে রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করা সওয়াল করার (ভিক্ষাবৃত্তি বা চাওয়ার) চেয়ে উত্তম।

৩। হাদীসে বর্ণিত তিন প্রকারের ব্যক্তি ছাড়া সওয়াল করা জায়িয নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল

১৮৫২-[১৬] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কঠিন অভাবে জর্জরিত, সে মানুষের সামনে প্রয়োজন পূরণের ইচ্ছা প্রকাশ করলে এ অভাব দূর হবে না। আর যে ব্যক্তি তার অভাবের কথা শুধু আল্লাহর কাছে বলে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। হয় তাকে তাড়াতাড়ি মৃত্যু দিয়ে অভাব থেকে মুক্তি দিবেন অথবা তাকে কিছু দিনের মধ্যে ধনী বানিয়ে দেবেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ. وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللَّه أوشك الله لَهُ بالغنى إِمَّا بِمَوْتٍ عَاجِلٍ أَوْ غِنًى آجِلٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ

وعن ابن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اصابته فاقة فانزلها بالناس لم تسد فاقته ومن انزلها بالله اوشك الله له بالغنى اما بموت عاجل او غنى اجل رواه ابو داود والترمذي

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হওয়ার পর তা মানুষের নিকট তুলে ধরবে বা মানুষের ওপরে ভরসা করবে, তার অভাব কোনদিনই দূর করা হবে না বরং অভাবের উপরই বিদ্যমান থাকবে। আর যদি কোন সময় কোন অভাব থেকে মুক্ত করা হয়, মানুষের ওপর নির্ভর করার কারণে তার চেয়েও কঠিন অভাবে তাকে পেয়ে বসবে। আর যে ব্যক্তি অভাবের বিষয়টি আল্লাহর নিকট তুলে ধরবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই অভাব মুক্ত করবেন দ্রুত তার মৃত্যুর দ্বারা অথবা সম্পদ দ্বারা। যেমন আল্লাহ বলেছেন, অর্থাৎ ‘‘তারা যদি দরিদ্র হয় তাহলে আল্লাহ স্বীয় প্রাচুর্য দ্বারা তাদেরকে অভাব মুক্ত করে দিবেন’’- (সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ৩২)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে