পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪০-[১৯] মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করা হয় কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সে মৃতকে এ মাতমের জন্য শাস্তি দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «من نِيحَ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ يُعَذَّبُ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ يَوْم الْقِيَامَة»

عن المغيرة بن شعبة قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من نيح عليه فانه يعذب بما نيح عليه يوم القيامة

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে নিষেধ করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদলে তার ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা হলে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে শাস্তি প্রদান করা হবে। আলোচ্য হাদীসে এ কথার দলীল যে, মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করা হারাম। কেননা সে কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। আর এরূপ শাস্তি হবে সেক্ষেত্রে যখন মৃত ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় এরূপ কান্নাকাটি ও বিলাপের জন্য ওয়াসিয়্যাত করে গিয়ে থাকে বা অপছন্দ করে না থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪১-[২০] ’আমরাহ্ বিনতু ’আবদুর রহমান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তাকে বলা হল যে, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেছেন, জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহ আবূ ’আবদুর রহমানকে (ইবনু ’উমারের উপনাম নাম) মাফ করুন। তিনি মিথ্যা কথা বলেননি। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন অথবা ইজতিহাদী ভুল করেছেন। (ব্যাপার হলো) একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ইয়াহূদী মহিলার কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, দেখলেন তার কবরের পাশে লোকজন কাঁদছে। এ দৃশ্য দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর আত্মীয়-স্বজনরা তার জন্য কাঁদছে, আর এ মহিলাকে তার কবরে ’আযাব দেয়া হচ্ছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ عَائِشَةَ وَذُكِرَ لَهَا أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ يَقُولُ: إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ عَلَيْهِ تَقُولُ: يَغْفِرُ اللَّهُ لِأَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَمَا إِنَّهُ لَمْ يَكْذِبْ وَلَكِنَّهُ نَسِيَ أَوْ أَخْطَأَ إِنَّمَا مَرَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى يَهُودِيَّةٍ يُبْكَى عَلَيْهَا فَقَالَ: «إِنَّهُمْ لَيَبْكُونَ عَلَيْهَا وَإِنَّهَا لتعذب فِي قبرها»

وعن عمرة بنت عبد الرحمن انها قالت سمعت عاىشة وذكر لها ان عبد الله بن عمر يقول ان الميت ليعذب ببكاء الحي عليه تقول يغفر الله لابي عبد الرحمن اما انه لم يكذب ولكنه نسي او اخطا انما مر رسول الله صلى الله عليه وسلم على يهودية يبكى عليها فقال انهم ليبكون عليها وانها لتعذب في قبرها

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন না করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আলোচ্য হাদীস থেকে এ কথা বুঝা যাচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তির যে কেউ কাঁদলে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। চাই সে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য হোক বা না হোক। সুতরাং হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এখানে কান্নার বিষয়টি শুধু পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট রাখা হয়নি। অপর বর্ণনায় আছে যে, তার শাস্তি হয় তার পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে। কেননা, সাধারণত মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিবারের লোকেরাই ক্রন্দন করে।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, ইমাম নাবাবী (রহঃ) ‘উলামায়ে কিরামের মতামত উল্লেখ করে বলেন, এখানে মৃত ব্যক্তিকে যে কান্নার কারণে শাস্তি দেয়া হয় তা হল, বিলাপসহ উচ্চৈঃস্বরে কান্না। কেউ যদি শুধু চোখের পানি ছেড়ে বিনা আওয়াজে কাঁদে তাহলে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয় না।

এ হাদীসের শেষ অংশে বলা হচ্ছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ইয়াহূদী মহিলার ক্ববরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং দেখলেন যে, তার জন্য কান্না করা হচ্ছে, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ক্ববরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এখানে মূলত তাকে তার কুফরীর জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে। জীবিতদের কান্নার কারণে নয়। কেননা সে এমনিতেই শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪২-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উসমান ইবনু ’আফফান-এর কন্যা মক্কায় মৃত্যুবরণ করলেন। আমরা তার জানাযাহ্ ও দাফনের কাজে যোগ দিতে মক্কায় এলাম। ইবনু ’উমার (রাঃ) ও ইবনু ’আব্বাসও এখানে আসলেন। আমি এ দু’জনের মধ্যে বসেছিলাম। এমন সময় ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ), ’আমর ইবনু ’উসমান (রাঃ) কে বললেন, আর তিনি তখন তাঁর মুখোমুখি বসেছিলেন। তুমি (পরিবারের লোকজনকে আওয়াজ করে) কান্নাকাটি করতে কেন নিষেধ করছ না? অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য ’আযাব দেয়া হয়। তখন ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন, ’উমার (রাঃ) এ ধরনের কথা বলতেন। তারপর তিনি ঘটনা বর্ণনা করলেন, ’’আমি যখন ’উমার (রাঃ)-এর সাথে মক্কা হতে ফেরার পথে ’বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছলাম, হঠাৎ করে ’উমার (রাঃ) একটি কাঁকর গাছের ছায়ার নীচে এক কাফেলা দেখতে পেলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি ওখানে গিয়ে দেখো কাফেলায় কে কে আছে। আমি সুহায়বকে দেখতে পাই। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি ফিরে এসে ’উমার (রাঃ) কে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ডেকে আনো।

আমি আবার সুহায়ব-এর নিকট গেলাম। তাকে বললাম, ’চলুন, আমীরুল মু’মিনীন ’উমারের সাথে দেখা করুন।’ এরপর যখন মদীনায় ’উমার (রাঃ) কে আহত করা হলো, সুহায়ব কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে এলেন এবং বলতে থাকলেন, হায় আমার ভাই, হায় আমার বন্ধু! (এটা কি হলো!) সে অবস্থায়ই ’উমার (রাঃ) বললেন, সুহায়ব! তুমি আমার জন্য কাঁদছ অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন’আযাব দেয়া হয়। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন ’উমার (রাঃ) ইন্তিকাল করলেন, আমি এ কথা ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে বললাম। তিনি শুনে বলতে লাগলেন, আল্লাহ তা’আলা ’উমারের উপর দয়া করুন। কথা এটা নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেননি যে, পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য মৃত ব্যক্তিকে ’আযাব দেয়া হয়। বরং আল্লাহ তা’আলা পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য কাফিরের ’আযাব বাড়িয়ে দেন। তারপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, কুরআনের এ আয়াতই দলীল হিসেবে তোমাদের জন্য যথেষ্ট, অর্থাৎ ’’কোন ব্যক্তি অন্য কারো বোঝা বহন করবে না’’- (সূরাহ্ ইসরা ১৭: ১৫)। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াতের মর্মবাণীও প্রায় এ রকমই, অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলাই হাসান ও কাঁদান। ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) এসব কথা শুনার পর কিছুই বললেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ قَالَ: تُوُفِّيَتْ بِنْتٌ لِعُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ بِمَكَّةَ فَجِئْنَا لِنَشْهَدَهَا وَحَضَرَهَا ابْنُ عُمَرَ وَابْنُ عَبَّاسٍ فَإِنِّي لَجَالِسٌ بَيْنَهُمَا فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بن عمر لعَمْرو بْنِ عُثْمَانَ وَهُوَ مُوَاجِهُهُ: أَلَا تَنْهَى عَنِ الْبُكَاءِ؟ فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ» . فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: قَدْ كَانَ عُمَرُ يَقُولُ بَعْضَ ذَلِكَ. ثُمَّ حَدَّثَ فَقَالَ: صَدَرْتُ مَعَ عُمَرَ مِنْ مَكَّةَ حَتَّى إِذَا كُنَّا بِالْبَيْدَاءِ فَإِذَا هُوَ بِرَكْبٍ تَحْتَ ظِلِّ سَمُرَةٍ فَقَالَ: اذْهَبْ فَانْظُرْ مَنْ هَؤُلَاءِ الرَّكْبُ؟ فَنَظَرْتُ فَإِذَا هُوَ صُهَيْبٌ. قَالَ: فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ: ادْعُهُ فَرَجَعْتُ إِلَى صُهَيْبٍ فَقُلْتُ: ارْتَحِلْ فَالْحَقْ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ فَلَمَّا أَنْ أُصِيبَ عُمَرُ دَخَلَ صُهَيْبٌ يبكي يَقُول: وَا أَخَاهُ واصاحباه. فَقَالَ عُمَرُ: يَا صُهَيْبُ أَتَبْكِي عَلَيَّ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبَعْضِ بُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ؟» فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَلَمَّا مَاتَ عُمَرُ ذَكَرْتُ ذَلِك لعَائِشَة فَقَالَت: يَرْحَمُ اللَّهُ عُمَرَ لَا وَاللَّهِ مَا حَدَّثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ وَلَكِنْ: إِنَّ اللَّهَ يَزِيدُ الْكَافِرَ عَذَابًا بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ. وَقَالَتْ عَائِشَةُ: حَسْبُكُمُ الْقُرْآنُ: (وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وزر أُخْرَى)
قَالَ ابْن عَبَّاس عِنْد ذَلِك: وَالله أضح وأبكي. قَالَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ: فَمَا قَالَ ابْنُ عمر شَيْئا

وعن عبد الله بن ابي مليكة قال توفيت بنت لعثمان بن عفان بمكة فجىنا لنشهدها وحضرها ابن عمر وابن عباس فاني لجالس بينهما فقال عبد الله بن عمر لعمرو بن عثمان وهو مواجهه الا تنهى عن البكاء فان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الميت ليعذب ببكاء اهله عليه فقال ابن عباس قد كان عمر يقول بعض ذلك ثم حدث فقال صدرت مع عمر من مكة حتى اذا كنا بالبيداء فاذا هو بركب تحت ظل سمرة فقال اذهب فانظر من هولاء الركب فنظرت فاذا هو صهيب قال فاخبرته فقال ادعه فرجعت الى صهيب فقلت ارتحل فالحق امير المومنين فلما ان اصيب عمر دخل صهيب يبكي يقول وا اخاه واصاحباه فقال عمر يا صهيب اتبكي علي وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الميت ليعذب ببعض بكاء اهله عليه فقال ابن عباس فلما مات عمر ذكرت ذلك لعاىشة فقالت يرحم الله عمر لا والله ما حدث رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الميت ليعذب ببكاء اهله عليه ولكن ان الله يزيد الكافر عذابا ببكاء اهله عليه وقالت عاىشة حسبكم القران ولا تزر وازرة وزر اخرىقال ابن عباس عند ذلك والله اضح وابكي قال ابن ابي مليكة فما قال ابن عمر شيىا

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করলে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। আর কোন কাফিরের জন্য কাঁদলে তার শাস্তিকে বাড়িয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ কোন মু’মিন ব্যক্তির মৃত্যুতে যদি তার পরিবারের লোকেরা উচ্চ আওয়াজে বিলাপ সহকারে কাঁদে, তবে তাকে শাস্তি দেয়া হয়।

এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যাচ্ছে যে, যদি কেউ মু’মিন ব্যক্তির মৃত্যুতে উচ্চ আওয়াজে বিলাপসহ কাঁদে তবে তাকে নিষেধ করতে হবে। হাদীসের শেষাংশে দেখা যাচ্ছে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, মৃত মু’মিন ব্যক্তির পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হয় না। আর কাফিরের পরিবারের কান্নার কারণে তার শাস্তি বাড়িয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ কাফির তো এমনিতেই শাস্তি ভোগ করে আর তার পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে তার চলমান শাস্তি বাড়িয়ে দেয়া হয়।

সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন ব্যক্তিকে তার পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে শাস্তি দেন। কাফিরদের শাস্তি বাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে প্রমাণ পাওয়া যায়। সূরাহ্ আন্ নাহল-এ ৮৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আমি তাদের ওপর ‘আযাবের উপর আমার বৃদ্ধি করে দেব।

সূরাহ্ আন্ নাবা’র ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তাদের ‘আযাব ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করা হয় না। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, কাফিরদের শাস্তির উপর শস্তি বাড়িয়ে দেয়া হবে।

আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, বান্দার কান্না-হাসি, আনন্দ-দুঃখ এ সবই আল্লাহ পক্ষ থেকে। তাই এগুলোর দ্বারা কোন প্রভাব পড়বে না। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির জন্য কেউ কাঁদলে তকে শাস্তি দেয়া ও না দেয়া সবই তাঁর হাতে।

আবার কেউ কেউ বলেন, এ হাদীস মানুষের সাধারণ কান্নাকে জায়িয করেছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪৩-[২২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মূতার যুদ্ধে) ইবনু হারিসাহ্, জা’ফার ও ইবনু রাওয়াহার শাহাদাতের খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছালে তিনি (মসজিদে নাবাবীতে) বসে পড়লেন। তাঁর চেহারায় শোক-দুঃখের ছায়া পরিস্ফুট হয়ে উঠল। আমি দরজার ফোকর দিয়ে তাঁর অবস্থা দেখছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর খিদমাতে বলতে লাগল, জা’ফারের পরিবারের মেয়েরা এরূপ এরূপ করছে (অর্থাৎ তাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করল)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ওদের কাছে গিয়ে কাঁদতে নিষেধ করার হুকুম দিলেন। লোকটি চলে গেল। (কিছুক্ষণ পর) দ্বিতীয়বার এসে বলল, মহিলারা কোন কথা মানছে না। আবারও তিনি তাদেরকে কাঁদতে নিষেধ করে তাকে পাঠালেন। লোকটি চলে গেল। তাদেরকে নিষেধ করল। (কিছুক্ষণ পর) সে তৃতীয়বার ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তারা আমার ওপর বিজয়ী হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমার কথা মানছে না। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমার ধারণা হলো, এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেনঃ তাদের মুখে মাটি ঢেলে দাও। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি মনে মনে (ওই ব্যক্তিকে) বললাম, তোমার মুখে ছাই পড়ুক, তুমি কেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হুকুম দিচ্ছেন তা পালন করলে না? আর তুমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুঃখ দেয়া হতে বিরত হচ্ছ না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: لَمَّا جَاءَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَتْلُ ابْنِ حَارِثَةَ وَجَعْفَرٍ وَابْنِ رَوَاحَةَ جَلَسَ يُعْرَفُ فِيهِ الْحُزْنُ وَأَنَا أَنْظُرُ مِنْ صَائِرِ الْبَابِ تَعْنِي شَقَّ الْبَابِ فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ: إِنَّ نِسَاءَ جَعْفَرٍ وَذَكَرَ بُكَاءَهُنَّ فَأَمَرَهُ أَنْ يَنْهَاهُنَّ فَذَهَبَ ثُمَّ أَتَاهُ الثَّانِيَةَ لَمْ يُطِعْنَهُ فَقَالَ: انْهَهُنَّ فَأَتَاهُ الثَّالِثَةَ قَالَ: وَاللَّهِ غَلَبْنَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَزَعَمْتُ أَنَّهُ قَالَ: «فَاحْثُ فِي أَفْوَاهِهِنَّ التُّرَابَ» . فَقُلْتُ: أَرْغَمَ اللَّهُ أَنْفَكَ لَمْ تَفْعَلْ مَا أَمَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ تَتْرُكْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ العناء

وعن عاىشة قالت لما جاء النبي صلى الله عليه وسلم قتل ابن حارثة وجعفر وابن رواحة جلس يعرف فيه الحزن وانا انظر من صاىر الباب تعني شق الباب فاتاه رجل فقال ان نساء جعفر وذكر بكاءهن فامره ان ينهاهن فذهب ثم اتاه الثانية لم يطعنه فقال انههن فاتاه الثالثة قال والله غلبننا يا رسول الله فزعمت انه قال فاحث في افواههن التراب فقلت ارغم الله انفك لم تفعل ما امرك رسول الله صلى الله عليه وسلم ولم تترك رسول الله صلى الله عليه وسلم من العناء

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে মূতার যুদ্ধের বর্ণনার পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে ক্রন্দন করার হুকুম সম্পর্কে আলোকপাত করা হযেছে।

৮ম হিজরীতে মূতার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনজন সেনাপতি নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তারা হলেন, যায়দ ইবনু হারিস (রাঃ), জা‘ফার ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্ (রাঃ)। তারা সকলে মূতার যুদ্ধে শাহীদ হন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের মধ্যে সেনাপতি হিসেবে যায়দ ইবনু হারিস (রাঃ)-কে মনোনীত করেন। এরপর বলেন, যদি যায়দ শাহীদ হয় তাহলে জা‘ফার সেনাপতি হবে। যদি সেও শাহীদ হয় তাহলে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সেনাপতি হবে। সে শহীদ হলে মুসলিমরা পরামর্শের মাধ্যমে সেনাপতি নির্ধারণ করবে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা থেকে বুঝা যায়, তারা তিনজন মূতার যুদ্ধে শাহীদ হবেন। আর হয়েছিলেনও তাই।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যখন এ তিন সেনাপতির শাহীদ হওয়ার কথা জিবরীল (আঃ) মারফত পৌঁছল, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের মিম্বারে বসলেন এবং শাহীদদের সম্পর্কে সাহাবীদের খবর দিলেন।

জা‘ফার (রাঃ)-এর দু’টি হাত শত্রুরা কেটে নেয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা জা‘ফারকে দু’ হাতের পরিবার্তে দু’টি ডানা দিয়েছেন, যা দ্বারা সে জান্নাত ঘুরে বেড়াবে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদের সম্পর্কে কথা বলছিলেন, তখন তাকে চিন্তান্বিত দেখাচ্ছিল।

জা‘ফার (রাঃ)-এর শাহাদাতের কথা শুনে স্ত্রী কান্না করতে লাগলেন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, তাকে কাঁদতে নিষেধ কর। এ কথা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে কান্না করা যাবে না। সর্বাবস্থায় ধৈর্যের সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪৪-[২৩] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামাহ্ মৃত্যুবরণ করলে আমি বললাম, আবূ সালামাহ্ মুসাফির ছিলেন, মুসাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেন। অর্থাৎ মক্কার লোক মদীনায় মৃত্যুবরণ করলেন। আমি তাঁর জন্য এমনভাবে কাঁদব যে, আমার কান্নাকাটি সম্পর্কে লোকেরা আলোচনা করবে। আমি কান্নাকাটি করার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ একজন মহিলা এসে আমার সাথে কাঁদতে চাইল। এমন সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন। তিনি বললেন, এই ঘর হতে আল্লাহ দু’বার শায়ত্বন (শয়তান) কে বহিষ্কার করেছেন। তোমরা তাকে পুনরায় এখানে আনতে চাও? উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, তাঁর এ হুঁশিয়ারী শুনে আমি (কান্নাকাটি) করা হতে চুপ হয়ে গেলাম। অতঃপর আমি আর কাঁদিনি। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: لَمَّا مَاتَ أَبُو سَلَمَةَ قُلْتُ غَرِيبٌ وَفِي أَرْضِ غُرْبَةٍ لَأَبْكِيَنَّهُ بُكَاءً يُتَحَدَّثُ عَنْهُ فَكُنْتُ قَدْ تَهَيَّأْتُ لِلْبُكَاءِ عَلَيْهِ إِذْ أَقْبَلَتِ امْرَأَةٌ تُرِيدُ أَنْ تُسْعِدَنِي فَاسْتَقْبَلَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَتُرِيدِينَ أَنْ تُدْخُلِي الشَّيْطَانَ بَيْتًا أَخْرَجَهُ اللَّهُ مِنْهُ؟» مَرَّتَيْنِ وَكَفَفْتُ عَنِ الْبُكَاءِ فَلَمْ أبك. رَوَاهُ مُسلم

وعن ام سلمة قالت لما مات ابو سلمة قلت غريب وفي ارض غربة لابكينه بكاء يتحدث عنه فكنت قد تهيات للبكاء عليه اذ اقبلت امراة تريد ان تسعدني فاستقبلها رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اتريدين ان تدخلي الشيطان بيتا اخرجه الله منه مرتين وكففت عن البكاء فلم ابك رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসে আবূ সালামাহ্ বলতে উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর প্রথম স্বামীর কথা বলা হয়েছে।

আবূ সালামার ক্ষেত্রে غريبغريب শব্দ প্রয়োগের কারণ হল, তিনি ছিলেন মক্কার লোক। কিন্তু তিনি মৃত্যুবরণ করেন মদীনাতে।

হাদীসের ভাষ্য মতে দেখা যাচ্ছে যে, উম্মু সালামার প্রথম স্বামী মারা গেলে তিনি অত্যধিক ক্রন্দন করতে ইচ্ছা করেছিলেন এবং একজন নারী তাকে কান্নার ব্যাপারে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত মহিলার কাছে আসলেন এবং বললেন, তুমি কি ঘরের মধ্যে শায়ত্বন (শয়তান)কে প্রবেশ করাতে চাও। আল্লাহ তা‘আলা তাকে তো ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। এ কথা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার বললেন। এ কথার দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে যে ঘরে বিলাপ করে কান্না করা হয়, সে ঘরে শায়ত্বন (শয়তান) প্রবেশ করে।

আল্লাহ শায়ত্বনকে বের করে দিয়েছেন এর অর্থ হল, এ ঘরের অধিবাসীকে শায়ত্বনের কুমন্ত্রণা থেকে হিফাযাত করেছেন এবং শায়ত্বনকে এ ঘর থেকে দূর করে দিয়েছেন।

এরপর উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) কান্না বন্ধ করে দিলেন। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, কোন বিষয়ে পূর্ব জ্ঞান থাকলে সে বিষয়ে শারী‘আতের কোন বিধান অবগত হলে সাথে সাথে তা মেনে নিতে হবে।

একজন নারী উম্মু সালামাকে কান্নার সময় সাহায্য করতে চাইল। অর্থাৎ উম্মু সালামাহ্ উক্ত নারীকে কাঁদাতে চাইলেন। যে কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে শায়ত্বনের (শয়তানের) প্রবেশ করার কথা বললেন। সুতরাং এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে কান্নার সময় ক্রন্দনকারীকে সহযোগিতা করা যাবে না। বরং তাকে না কাঁদার জন্য উপদেশ দিতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪৫-[২৪] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ’আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্, (কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে) জ্ঞান হারালেন। তাঁর বোন ’আমরাহ্ কেঁদে কেটে বলতে লাগল, হে পর্বতসম ভাই! হে আমার এমন ভাই! তেমন ভাই! অর্থাৎ এভাবে তাঁর ভাইয়ের খ্যাতির বর্ণনা করতে লাগল। ’আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহার জ্ঞান ফিরলে বোনকে বললেন, তুমি আমাকে নিয়ে যখন যা বলেছ, আমাকে তখনই জিজ্ঞেস করা হয়েছে, এসব গুণে গুণী আমি কিনা? অন্য এক বর্ণনায় অতিরিক্ত বর্ণনা এসেছে, যখন ’আবদুল্লাহ (মূতার যুদ্ধে) তখন তার বোন ’আমরাহ্ আর তাঁর জন্য কাঁদেননি। (বুখারী)[1]

وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: أُغْمِيَ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ رَوَاحَةَ فَجَعَلَتْ أُخْتُهُ عَمْرَةُ تبْكي: واجبلاه واكذا واكذا تُعَدِّدُ عَلَيْهِ فَقَالَ حِينَ أَفَاقَ: مَا قُلْتِ شَيْئًا إِلَّا قِيلَ لِي: أَنْتَ كَذَلِكَ؟ زَادَ فِي رِوَايَةٍ فَلَمَّا مَاتَ لَمْ تَبْكِ عَلَيْهِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن النعمان بن بشير قال اغمي على عبد الله بن رواحة فجعلت اخته عمرة تبكي واجبلاه واكذا واكذا تعدد عليه فقال حين افاق ما قلت شيىا الا قيل لي انت كذلك زاد في رواية فلما مات لم تبك عليه رواه البخاري

ব্যাখ্যা: এ হাদীস মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করতে নিরুৎসাহিত করেছে। এ হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তার জন্য ক্রন্দন করা যাবে। তবে কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে, তবে তার জন্য বিলাপ সহকারে উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করা যাবে না। আব্দুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্ (রাঃ) একবার অসুস্থতার কারণে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তখন তার বোন অত্যধিক ক্রন্দন করেন এবং বিলাপ করতে থাকেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্ (রাঃ) এ রোগে মারা যায়নি বরং তিনি ৮ম হিজরীতে মূতার যুদ্ধে শাহীদ হন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪৬-[২৫] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায় এবং তার আপন ক্রন্দনকারীরা এ কথা বলে কাঁদে, হে আমার পাহাড়তুল্য অমুক! হে সরদার! ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন আল্লাহ তা’আলা ঐ মৃত ব্যক্তির নিকট দু’জন মালাক (ফেরেশতা) প্রেরণ করেন, যারা তার বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা মারে আর জিজ্ঞেস করে, তুমি কি এমনই ছিলে? (তিরমিযী; এবং তিনি বলেন, এ হাদীসটি গরীব ও হাসান)[1]

وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَا من ميت يَمُوت فَيقوم باكيهم فيقولك: واجبلاه واسيداه وَنَحْوَ ذَلِكَ إِلَّا وَكَّلَ اللَّهُ بِهِ مَلَكَيْنِ يَلْهَزَانِهِ وَيَقُولَانِ: أَهَكَذَا كُنْتَ؟ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ حَسَنٌ

وعن ابي موسى قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ما من ميت يموت فيقوم باكيهم فيقولك واجبلاه واسيداه ونحو ذلك الا وكل الله به ملكين يلهزانه ويقولان اهكذا كنت رواه الترمذي وقال هذا حديث غريب حسن

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে মৃত ব্যক্তি উদ্দেশে তার জীবিত সময়ের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বকে উল্লেখ করে বিলাপ করে ক্রন্দন করার ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে যে, যখন কারো মৃত্যুকে মানুষ পাহাড়সম বিপদের সাথে তুলনা করে এবং তার মৃত্যুর পূর্বের কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করে ক্রন্দন করে তখন ‘আযাবের মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) তাকে শাস্তি দিতে থাকে। আর তাকে তিরস্কার ও ভৎর্সনা করতে থাকে। সুতরাং আমাদের উচিত এ সকল কাজ থেকে বিরত থাকা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য নীরবে চোখের পানি ফেলে মাগফিরাত কামনা করা।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪৭-[২৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের কোন একজন (যায়নাব) মারা গেলেন। তখন কয়েকজন মহিলা একত্রিত হয়ে তাঁর জন্য কাঁদতে লাগল। এ অবস্থায় ’উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি তাদেরকে কাঁদতে নিষেধ করলেন, আর ভাগিয়ে দিতে লাগলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থা দেখে বললেন, ’উমার! এদেরকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও। কারণ এদের চোখ কাঁদছে, হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত, আর মৃত্যুর সময়ও নিকটবর্তী। (আহমাদ, নাসায়ী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: مَاتَ مَيِّتٌ مِنْ آلِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاجْتَمَعَ النِّسَاءُ يَبْكِينَ عَلَيْهِ فَقَامَ عُمَرُ يَنْهَاهُنَّ وَيَطْرُدُهُنَّ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْهُنَّ فَإِنَّ الْعَيْنَ دَامِعَةٌ وَالْقَلْبَ مُصَابٌ وَالْعَهْدَ قَرِيبٌ» . رَوَاهُ أَحْمد وَالنَّسَائِيّ

وعن ابي هريرة قال مات ميت من ال رسول الله صلى الله عليه وسلم فاجتمع النساء يبكين عليه فقام عمر ينهاهن ويطردهن فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم دعهن فان العين دامعة والقلب مصاب والعهد قريب رواه احمد والنساىي

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তির জন্য নীরবে কান্না করা জায়িয আছে। এখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের লোক বলে তাঁর কন্যা যায়নাব (রাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। তার মৃত্যুতে মহিলারা একত্রিত হয়ে ক্রন্দন করতে লাগলে ‘উমার (রাঃ) তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমার (রাঃ) কে বললেন, তাদেরকে কান্নার সুযোগ দাও।

দেখা যাচ্ছে, এ হাদীসটি এ অধ্যায়ের অন্যান্য হাদীসের বিরোধী। আসলে তা নয়। এর সমাধানে মুহাদ্দিসীনগণ বিভিন্ন মতামত পেশ করেছেন। যেমন, আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেন, তাদের কান্না ছিল নীরবে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে, যাতে কোন উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ ছিল না। আর এ ধরনের কান্নার ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মাতকে ছাড় দিয়েছেন।

আল্লামা ক্বারী (রহঃ) বলেন, তারা শব্দ করে কাঁদছিলেন। তবে তা উচ্চৈঃস্বরে ছিল না।

এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যাচ্ছে যে, অন্তরের মধ্যে দুঃখ উপলব্ধি হয় এবং এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে চোখের পানি বিসর্জনের মাধ্যমে। বিপদের সময়ের নিকটবর্তী হলো। সুতরাং বিপদের সময় ধৈর্যধারণ করা খুবই কঠিন কাজ। তারপরও মু’মিনকে সকল বিপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে। তাহলে আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান পাওয়া যাবে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪৮-[২৭] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা যায়নাব (রাঃ)মারা গেলে মহিলারা কাঁদতে লাগল। ’উমার (রাঃ) হাতের কোড়া দিয়ে তাদেরকে আঘাত করলেন। এ অবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’উমার (রাঃ) কে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, ’উমার! কোমল হও। আর মহিলাদের বললেন, তোমরা তোমাদের গলার আওয়াজ শায়ত্বন (শয়তান) থেকে দূরে রাখো (অর্থাৎ চিৎকার করে ইনিয়ে বিনিয়ে কেঁদ না।) তারপর বললেন, যা কিছু চোখ (অশ্রু) ও হৃদয় (দুঃখ বেদনা ও শোক-তাপ) বের হয় তা আল্লাহর তরফ থেকেই বের হয়। এটা হয় রহমতের কারণে। আর যা কিছু হাত ও মুখ হতে বের হয় তা হয় শায়ত্বনের (শয়তানের) তরফ হতে। (আহমাদ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مَاتَتْ زَيْنَبُ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَكَتِ النِّسَاء فَجعل عُمَرُ يَضْرِبُهُنَّ بِسَوْطِهِ فَأَخَّرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ وَقَالَ: «مهلا يَا عمر» ثُمَّ قَالَ: «إِيَّاكُنَّ وَنَعِيقَ الشَّيْطَانِ» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّهُ مَهْمَا كَانَ مِنَ الْعَيْنِ وَمِنَ الْقَلْبِ فَمِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمِنَ الرَّحْمَةِ وَمَا كَانَ مِنَ الْيَدِ وَمِنَ اللِّسَانِ فَمِنَ الشَّيْطَانِ» . رَوَاهُ أَحْمد

وعن ابن عباس قال ماتت زينب بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم فبكت النساء فجعل عمر يضربهن بسوطه فاخره رسول الله صلى الله عليه وسلم بيده وقال مهلا يا عمر ثم قال اياكن ونعيق الشيطان ثم قال انه مهما كان من العين ومن القلب فمن الله عز وجل ومن الرحمة وما كان من اليد ومن اللسان فمن الشيطان رواه احمد

ব্যাখ্যা: যায়নাব (রাঃ) ছিলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বড় মেয়ে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবূওয়্যাতের পূর্বে যায়নাবের প্রথম বিবাহ হয়, তখন তার বয়স ছিল দশ বছর। তার খালাত ভাই আবুল ‘আস ইবনু রাবী তাকে বিবাহ করেন। যায়নাব (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন এবং বাদ্‌র (বদর) যুদ্ধের পরে তিনি হিজরত করে মদীনায় চলে আসেন। অষ্টম হিজরীর শুরুর দিকে তিনি ইন্তিকাল করেন। তার একটি পুত্র সন্তান ও একটি কন্যা সন্তান ছিল। পুত্রের নাম ‘আলী এবং মেয়ের নাম উমামাহ্। ‘আলী (রাঃ) পরিণত বয়সে তার পিতার জীবদ্দশায় ইন্তিকাল করেন। আর উমামাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত স্নেহ করেন। ফাত্বিমাহ্ (রাঃ)-এর ইন্তিকালের পরে ‘আলী (রাঃ) উমামাকে বিবাহ করেন।

এ হাদীসে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে মুখ চাপড়ানো কাপড় ছিঁড়ে ফেলা ও শোক গাঁথা কবিতা আবৃতি করা এবং বিলাপ সহ ক্রন্দন করাকে শায়ত্বনের (শয়তানের) সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। উল্লেখিত বিষয় ব্যতীত শুধু অন্তরের দুঃখ-কষ্ট ফুটিয়ে তোলার জন্য যে চোখের পানি প্রবাহিত হয় তা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমাত।

এখানে যেসব কাজ হাত দ্বারা সংঘটিত হয় তা হল, মুখ চাপড়ানো, গলায় আঘাত করা, কাপড় ছিঁড়ে ফেলা ও চুল ছিঁড়ে ফেলা। এ কাজগুলো শায়ত্বনের (শয়তানের) পক্ষ থেকে হয়ে থাকে এবং শারী‘আতে এগুলো নিষিদ্ধ মুখ দিয়ে যে সকল কাজ হয়ে থাকে তা হল, উচ্চৈঃস্বরে কাঁদা, বিলাপ করা ও এমন সব কথা বলা, যাতে আল্লাহ অখুশী হন। এ সব শায়ত্বনের (শয়তানের) পক্ষ থেকে এবং শারী‘আতে এসব কাজ নিষিদ্ধ।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪৯-[২৮] ইমাম বুখারী সানাদবিহীন তা’লীক্ব পদ্ধতিতে উল্লেখ করেন যে, যখন হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) এর ছেলে (ইমাম) হাসান মারা যান, তখন তাঁর স্ত্রী তাঁর কবরের উপর এক বছর পর্যন্ত তাঁবু খাটিয়ে রেখেছিলেন। তাঁবু ভাঙার পর অদৃশ্য হতে শুনতে পেলেন, ’’এ তাঁবু খাটিয়ে কি তারা হারানো ধন ফিরে পেলো?’’ এ কথার জবাবে আবার (অদৃশ্য হতেই) অন্য একজন বলল, না! বরং নিরাশ হয়ে ফিরে গিয়েছে।[1]

وَعَنِ الْبُخَارِيِّ تَعْلِيقًا قَالَ: لَمَّا مَاتَ الْحَسَنُ بن الْحسن بن عَليّ ضَرَبَتِ امْرَأَتُهُ الْقُبَّةَ عَلَى قَبْرِهِ سَنَةً ثُمَّ رَفَعَتْ فَسَمِعَتْ صَائِحًا يَقُولُ: أَلَا هَلْ وَجَدُوا مَا فَقَدُوا؟ فَأَجَابَهُ آخَرُ: بَلْ يَئِسُوا فَانْقَلَبُوا

وعن البخاري تعليقا قال لما مات الحسن بن الحسن بن علي ضربت امراته القبة على قبره سنة ثم رفعت فسمعت صاىحا يقول الا هل وجدوا ما فقدوا فاجابه اخر بل يىسوا فانقلبوا

ব্যাখ্যা: তা‘লীক্ব বলা হয় সানাদবিহীন হাদীসকে। এ হাদীসে ক্ববরের উপর তাঁবু বা সামিয়ানা তৈরি করে রাখাকে তিরস্কার করা হয়েছে। এখানে হাসান ইবনু হাসান অর্থাৎ হাসানের ছেলে হাসান আর তার স্ত্রী ফাত্বিমাহ্ বিনতে হুসায়ন। তারা একদিকে যেমন স্বামী-স্ত্রী, অপরদিকে চাচাত ভাই-বোন। যখন হাসান ইবনু হাসান মারা যায় তখন তার স্ত্রী ফাত্বিমাহ্ বিনতু হুসায়ন তার ক্ববরের উপর এক বছর তাঁবু তৈরি করে রাখেন। অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নেন। উঠিয়ে নেয়ার পর তিনি শুনতে পান দু’জন লোক একজন আরেক জনকে বলছে যে, সে যা হারিয়েছে তা কি ফিরে পেয়েছে? তখন অপরজন বলল, না বরং নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। এখানে দু’জন চিৎকারকারী হলেন, কোন মু’মিন জিন্ অথবা মালাক (ফেরেশতা)।

এ হাদীসের আলোকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, ক্ববরের উপর তাঁবু তৈরি করা মাকরূহ। আর ইমাম আহমাদ (রহঃ) এ কথার উপরই রায় দিয়েছেন। আর এটাই সত্য।

ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) ক্ববরের উপর তাঁবু বা সামিয়ানা তৈরি করাকে মাকরূহ বলেছেন। সাহাবী আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে তিনি ওয়াসিয়াত করে যান যে, তার ক্ববরে যেন কোন তাঁবু টানানো না হয়।

ইমাম বুখারী (রহঃ) স্বীয় কিতাব বুখারীতে এ হাদীসটিকে ‘‘ক্ববরের উপর মাসজিদ বানানো ঘৃণিত কাজ’’ নামক অধ্যায়ে বর্ণনা করে প্রমাণ করেছেন যে, তার কাছেও ক্ববরে তাঁবু টানানো মাকরূহ। সুতরাং কোন ভাবেই ক্ববরের উপর তাঁবু টানানো যাবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫০-[২৯] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন ও আবূ বারযাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, আমরা একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক জানাযায় গিয়েছিলাম। ওখানে এমন কিছু লোককে দেখা গেল, যারা শোকের চিহ্নের জন্য তাদের গায়ের চাদর খুলে রেখে শুধু জামা পরে হাঁটছে। (এ অবস্থা দেখে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জাহিলিয়্যাতের কার্যক্রমের (মূর্খতা ও অজ্ঞতার) উপর ’আমল করছ অথবা জাহিলিয়্যাতের কার্যক্রমের মতো কার্যক্রম অবলম্বন করছ? তারপর তিনি বললেন, আমার ইচ্ছা হচ্ছে এমন বদ্দু’আ করতে যাতে তোমরা ভিন্ন আকৃতি নিয়ে (অর্থাৎ বানর বা শুয়োরের আকৃতিতে) ঘরে ফিরে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে তারা তাদের চাদরগুলো গায়ে পড়ল। এরপর কখনো তারা এমনটি করেনি। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ وَأَبِي بَرْزَةَ قَالَا: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ فَرَأَى قَوْمًا قَدْ طَرَحُوا أَرْدَيْتَهُمْ يَمْشُونَ فِي قُمُصٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبِفِعْلِ الْجَاهِلِيَّةِ تَأْخُذُونَ؟ أَوْ بِصَنِيعِ الْجَاهِلِيَّةِ تَشَبَّهُونَ؟ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَدْعُوَ عَلَيْكُمْ دَعْوَةً تَرْجِعُونَ فِي غَيْرِ صُوَرِكُمْ» قَالَ: فَأخذُوا أرديتهم وَلم يعودوا لذَلِك. رَوَاهُ ابْن مَاجَه

وعن عمران بن حصين وابي برزة قالا خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم في جنازة فراى قوما قد طرحوا ارديتهم يمشون في قمص فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ابفعل الجاهلية تاخذون او بصنيع الجاهلية تشبهون لقد هممت ان ادعو عليكم دعوة ترجعون في غير صوركم قال فاخذوا ارديتهم ولم يعودوا لذلك رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে শোক প্রকাশের জন্য প্রচলিত পোশাকের পরিচর্যা করে লাশের সাথে হাঁটতে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এ জাতীয় কাজ জাহিলী যুগের লোকদের কাজের সাথে সাদৃশ্য রাখে। কেননা তাদের প্রচলিত পোশাক ছিল জামার উপর চাদর পরা। শোক প্রদর্শনের জন্য তারা জামার উপর চাদর তুলে রাখতো। যারা এ জাতীয় কাজ করবে তাদের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সতর্ক বাণী হল, আমার ইচ্ছা হয় যে, তোমাদের চেহারা বিকৃতির জন্য বদ্দু‘আ করি।

এ ব্যাখ্যায় আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এটা চেহারা বিকৃত হয়ে ফিরে যাওয়া সম্ভাবনা রাখে।

মীরাক বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তোমরা এমন অবস্থায় তোমাদের বাড়ীতে ফিরবে যে, তোমাদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাবে। অথবা তোমরা যে অবস্থায় আছ তা পরিবর্তন হয়ে যাবে।

মূলত এ কথা দ্বারা সতর্ক করা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির সাথে তথা লাশের সাথে উলঙ্গ শরীরে হাটা যাবে না। এ হাদীসটি দুর্বল সানাদে ইবনু মাজাতে বর্ণিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫১-[৩০] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সে জানাযায় শরীক হতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন যে জানাযার সাথে মাতমকারী মহিলা থাকে। (আহমাদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُتْبَعَ جَنَازَةٌ مَعهَا رانة. رَوَاهُ أَحْمد وَابْن مَاجَه

وعن ابن عمر قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان تتبع جنازة معها رانة رواه احمد وابن ماجه

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে এমন জানাযার সাথে চলতে নিষেধ করা হয়েছে, যে জানাযার সাথে বিলাপ করে ক্রনদনকারী মহিলা আছে।

হাদীসে رانه শব্দের অর্থ কামুস গ্রন্থের আলোকে উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ সহ ক্রন্দনকারিণী মহিলা। অর্থাৎ জানাযার পেছনে কোন মহিলার উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করাকে বুঝানো হয়েছে। এরই সাথে এ হাদীসটি এমন জানাযার সাথে হাঁটার ক্ষেত্রে হারামের দলীল, যার সাথে উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দনকারী মহিলা রয়েছে।

ক্বারী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হল, যখন জানাযার সাথে কোন খারাপ কিছু থাকবে তখন এ বিধান।

ইবনু মাজাহ ও ইমাম আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু মাজাহয় এ হাদীসের সানাদে ইয়াহ্ইয়া আবূ ইয়াহ্ইয়া কাত্তাত নামে একজন রাবী আছেন। ইসরাঈল আবূ ইয়াহ্ইয়া কাত্তাত থেকে অনেক মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইবনু মু‘ঈন বলেন, এর সানাদ দুর্বল।

ইয়া‘কূব ইবনু সুফ্ইয়ান এবং বাযযার বলেন, এতে কোন সমস্যা নেই।

হাফিয ইরাক্বী বলেন, হাদীসটি সহীহ-এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা নুহা তথা বিলাপ হারাম হওয়ার হাদীসগুলো দ্বারা তার সমর্থন পাওয়া যায়।

সর্বোপরি কথা হল, এ হাদীসের সমর্থনে আরো অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে, যা মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ সহ উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করার হারাম হওয়ার প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ ভাল জানেন।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫২-[৩১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেছে, যার জন্য আমি শোকাহত। আপনি কি আপনার বন্ধু (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এমন কোন কথা শুনেছেন যা আমাদের হৃদয়কে খুশী করতে পারে? আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মুসলিমদের শিশুরা জান্নাতে সাগরের মাছের মতো সাঁতার কাটতে থাকবে। যখন তারা তাদের পিতাকে পাবে তখন পিতার কাপড়ের কোণা টেনে ধরবে। পিতাকে জান্নাতে না পৌঁছানো পর্যন্ত ছাড়বে না। (মুসলিম, আহমাদ; ভাষা ইমাম আহমাদের)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ لَهُ: مَاتَ ابْنٌ لِي فَوَجَدْتُ عَلَيْهِ هَلْ سَمِعْتَ مِنْ خَلِيلِكَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِ شَيْئًا يَطَيِّبُ بِأَنْفُسِنَا عَنْ مَوْتَانَا؟ قَالَ: نَعَمْ سَمِعْتُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «صِغَارُهُمْ دَعَامِيصُ الْجَنَّةِ يلقى أحدهم أَبَاهُ فَيَأْخُذ بِنَاحِيَةِ ثَوْبِهِ فَلَا يُفَارِقُهُ حَتَّى يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ» . رَوَاهُ مُسلم وَأحمد وَاللَّفْظ لَهُ

وعن ابي هريرة ان رجلا قال له مات ابن لي فوجدت عليه هل سمعت من خليلك صلوات الله عليه شيىا يطيب بانفسنا عن موتانا قال نعم سمعته صلى الله عليه وسلم قال صغارهم دعاميص الجنة يلقى احدهم اباه فياخذ بناحية ثوبه فلا يفارقه حتى يدخله الجنة رواه مسلم واحمد واللفظ له

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে সে সকল মু’মিন পিতা-মাতার ফাযীলাত ও গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে, যাদের ছোট ছোট সন্তান মৃত্যুবরণ করেছে। হাদীসে رجال বলে আবূ হাসান আল কায়সীকে বুঝানো হয়েছে। এর স্বপক্ষে সহীহ মুসলিমে রিওয়ায়াত রয়েছে।

যখন আবূ হাসান-এর ছোট একটি সন্তান যারা যায়, তখন তিনি অত্যন্ত দুঃখ পান। অতঃপর তিনি আবূ হুরায়রার কাছে জানতে চান যে, এ ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে কোন সুসংবাদ আছে কিনা। তখন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, এ ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে সকল মু’মিনদের ছোট ছোট সন্তান মারা যায় তারা জান্নাতের মধ্যে অবস্থান করবে। পিতা-মাতার ইন্তিকালের পরে তারা তাদের কাপড়ের পার্শ্ব শক্ত করে ধরবে এবং তাদেরকে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

এ হাদীসে পিতার কথা উল্লেখ থাকলেও মুসলিমের অপর হাদীসে পিতা-মাতার উভয়ের কথা উল্লেখ আছে। এ হাদীসে জামার কথা থাকলেও মুসলিমের অপর হাদীসে হাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ ছোট সন্তানরা পিতা-মাতাকে হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে। এ হাদীস এ কথারও দলীল যে, মু’মিনদের যে সকল ছোট ছোট সন্তান মারা যাবে, তারা জান্নাতের অধিবাসী। আর পিতা-মাতা যদি নেককার হয় এবং এ কারণে সাওয়াবের আশা করে তাহলে পিতা-মাতাও সন্তানের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫৩-[৩২] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একজন মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! পুরুষ আপনার বাণী শুনে উপকৃত হচ্ছে, (এ অবস্থায়) আপনি আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যেদিন আমরা আপনার খিদমাতে উপস্থিত হব। আপনি আমাদেরকে ওসব কথা শুনাবেন, যা আল্লাহ আপনাকে বলেছেন। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দিন ও স্থান নির্ধারণ করে উপস্থিত থাকতে বললেন। সে মতে মহিলাগণ সেখানে একত্রিত হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ওসব কথাই শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান তার আগে মৃত্যুবরণ করেছে, সে তার ও জাহান্নামের মধ্যে আড়াল হবে। এ কথা শুনে তাদের একজন জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! যদি আগে দু’ সন্তান মৃত্যুবরণ করে এবং সে কথাটি দু’বার পুনরাবৃত্তি করল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- যদি দু’জনও হয়, দু’জন হয়, দু’জন হয়। (বুখারী)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَهَبَ الرِّجَالُ بِحَدِيثِكَ فَاجْعَلْ لَنَا مِنْ نَفْسِكَ يَوْمًا نَأْتِيكَ فِيهِ تُعَلِّمُنَا مِمَّا عَلَّمَكَ اللَّهُ. فَقَالَ: «اجْتَمِعْنَ فِي يَوْمِ كَذَا وَكَذَا فِي مَكَانِ كَذَا وَكَذَا» فَاجْتَمَعْنَ فَأَتَاهُنَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَّمَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ ثُمَّ قَالَ: «مَا مِنْكُنَّ امْرَأَةٌ تُقَدِّمَ بَيْنَ يَدَيْهَا من وَلَدهَا ثَلَاثَة إِلَّا كَانَ لَهَا حِجَابا ن النَّارِ» فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَوِ اثْنَيْنِ؟ فَأَعَادَتْهَا مَرَّتَيْنِ. ثُمَّ قَالَ: «وَاثْنَيْنِ وَاثْنَيْنِ وَاثْنَيْنِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي سعيد قال جاءت امراة الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت يا رسول الله ذهب الرجال بحديثك فاجعل لنا من نفسك يوما ناتيك فيه تعلمنا مما علمك الله فقال اجتمعن في يوم كذا وكذا في مكان كذا وكذا فاجتمعن فاتاهن رسول الله صلى الله عليه وسلم فعلمهن مما علمه الله ثم قال ما منكن امراة تقدم بين يديها من ولدها ثلاثة الا كان لها حجابا ن النار فقالت امراة منهن يا رسول الله او اثنين فاعادتها مرتين ثم قال واثنين واثنين واثنين رواه البخاري

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে কয়েকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদীসে ‘ইলমের গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও জ্ঞান অর্জন করবে। যিনি ‘ইলম শিক্ষা দেবেন তিনি নারীদের জন্য নির্দিষ্ট দিন ও স্থান ঠিক করে তাদেরকে শারী‘আতের জ্ঞান শিক্ষা দেবেন। তারপর মহিলাদেরকে একটি বিষয়ে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, যদি কোন নারীর দু’টি বা তিনটি সন্তান তার জীবদ্দশায় অপ্রাপ্ত বয়সে মারা যায় তাহলে উক্ত মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করবে।

হাদীসে যে মহিলার আসার কথা বলা হয়েছে তার নাম হল, আসমা বিনতু ইয়াযীদ ইবনু সাকান (রাঃ)। আসমা (রাঃ)-এর কথা ‘‘পুরুষরা হাদীস নিয়ে চলে গেছে’’ এর মর্মার্থ সম্পর্কে আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, পুরুষরা তাদের অংশগ্রহণ করেছ এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে উপদেশ নিয়ে ফিরে গেছে।

মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হল পুরুষরা সফলতা নিয়ে ফিরে গেছে। আর আমরা নারীরা এসব থেকে বঞ্চিত রয়েছি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫৪-[৩৩] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দু’জন মুসলিম ব্যক্তির অর্থাৎ মাতা-পিতার তিনটি সন্তান (তাদের আগে) মারা যাবে, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর বিশেষ রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! দু’জন মারা গেলেও কী? তিনি বললেন, হ্যাঁ, দু’জন মারা গেলেও। সাহাবীগণ আবারো বললেন, একজন মারা গেলেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, একজন মারা গেলেও। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাঁর হাতের মুঠোয় আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, যদি কোন মহিলার গর্ভপাত হয়ে যায় সেই মা ধৈর্য ধরে সাওয়াবের আশা করে, তাহলে সে সন্তানও তার নাড়ী ধরে টেনে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (আহমাদ, আর ইবনু মাজাহ এ বর্ণনা ’’আল্লাহর কসম’’ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত উদ্ধৃত করেছেন।)[1]

وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يُتَوَفَّى لَهُمَا ثَلَاثَةٌ إِلَّا أَدْخَلَهُمَا اللَّهُ الْجَنَّةَ بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إِيَّاهُمَا» . فَقَالُوا: يَا رَسُولَ الله أَو اثْنَان؟ قَالَ: «أواثنان» . قَالُوا: أَوْ وَاحِدٌ؟ قَالَ: «أَوْ وَاحِدٌ» . ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ السِّقْطَ لَيَجُرُّ أُمَّهُ بِسَرَرِهِ إِلَى الْجَنَّةِ إِذَا احْتَسَبَتْهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ مِنْ قَوْلِهِ: «وَالَّذِي نَفسِي بِيَدِهِ»

وعن معاذ بن جبل قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من مسلمين يتوفى لهما ثلاثة الا ادخلهما الله الجنة بفضل رحمته اياهما فقالوا يا رسول الله او اثنان قال اواثنان قالوا او واحد قال او واحد ثم قال والذي نفسي بيده ان السقط ليجر امه بسرره الى الجنة اذا احتسبته رواه احمد وروى ابن ماجه من قوله والذي نفسي بيده

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে গর্ভপাতজনিত কারণে যে সকল সন্তান মারা যায় তাদের গুরুত্ব ও ফাযীলাতের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়াও যে সকল মুসলিমের এক বা একাধিক সন্তান নাবালেগ অবস্থায় মারা যায়, তাদের কথাও বলা হয়েছে।

এ হাদীসে সন্তান বলতে ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই বুঝানো হয়েছে। আর তাদের দুই জনকে বলতে মুসলিম পিতা-মাতাকে বুঝানো হয়েছে। হাদীসের মধ্যে اياهما বলে পিতা-মাতাকে বুঝানো হয়েছে, সন্তানকে নয়। আল্লাহ তা‘আলা পিতা-মাতাকে স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আরো অনেক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, সন্তানের কারণে পিতা-মাতার উপর দয়া ও অনুগ্রহ করা হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যে সকল মুসলিম পিতা-মাতার এক বা একাধিক সন্তান নাবালেগ অবস্থায় মারা যাবে আল্লাহ তা‘আলা সে সকল পিতা-মাতাকে নিজ অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

سقط বলা হয়, এমন সন্তানকে যে পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই মায়ের গর্ভ থেকে পড়ে যায়। যদি কোন মায়ের গর্ভ থেকে সন্তান নষ্ট হয়ে পড়ে যায়। আর মা সাওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করে তাহলে এ সন্তান তাকে জান্নাতে টেনে নিয়ে যাবে।

এখানে সাওয়াবের আশা বলতে বুঝানো হয়েছে যে, এর উপর ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং আল্লাহর পক্ষ হতে এর পুরস্কার পাওয়ার আশা রাখতে হবে। গর্ভপাতজনিত কারণে যে সকল সন্তান পড়ে যাবে তারা তাদের রবের সাথে বাদানুবাদ করবে। তখন আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমরা তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাতে নিয়ে যাও। তখন তারা পিতা-মাতাকে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫৫-[৩৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির জীবদ্দশায় তার তিনটি অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান মারা যাবে, তারা তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাবার জন্য অত্যন্ত মজবুত আশ্রয়স্থল হয়ে যাবে। (এ কথা শুনে) আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমি তো দু’টি শিশু সন্তান হারিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ দু’টি হলেও হবে। কারীদের ইমাম উবাই ইবনু কা’ব, যার ডাকনাম ছিল ’আবুল মুনযির, তিনি বললেন, আমিও তো একজন পাঠিয়েছি। অর্থাৎ আমার একটি সন্তান মারা গেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ একটি হলেও এমন অবস্থা। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব।)[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: من قَدَّمَ ثَلَاثَةً مِنَ الْوَلَدِ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ: كَانُوا لَهُ حِصْنًا حَصِينًا مِنَ النَّارِ فَقَالَ أَبُو ذَرٍّ: قَدَّمْتُ اثْنَيْنِ. قَالَ: «وَاثْنَيْنِ» . قَالَ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ أَبُو الْمُنْذِرِ سَيِّدُ الْقُرَّاءِ: قدمت وَاحِد. قَالَ: «وَوَاحِد» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب

وعن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قدم ثلاثة من الولد لم يبلغوا الحنث كانوا له حصنا حصينا من النار فقال ابو ذر قدمت اثنين قال واثنين قال ابي بن كعب ابو المنذر سيد القراء قدمت واحد قال وواحد رواه الترمذي وابن ماجه وقال الترمذي هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি তিনটি সন্তানকে আগাম পাঠায় অর্থাৎ যদি তার পূর্বে তার তিনটি সন্তান মারা যায়, যারা পাপ কাজ করার বয়সে পৌঁছেনি, তাহলে এ সন্তান ঢাল হয়ে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে।

হাদীসের الحنث এর অর্থ পাপ, এর দ্বারা উদ্দেশ্য প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া।

এ হাদীস থেকে আরো প্রমাণ হয় যে, যাদের দু’টি বা একটি সন্তান মারা যাবে তারাও পিতা-মাতার জন্য ঢাল স্বরূপ কাজ করবে। এখানে ঢাল বলতে শক্তিশালী পর্দাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তারা পিতা-মাতা ও জাহান্নামের মাঝ পথে পর্দা স্বরূপ অবস্থান করবে, যাতে করে তাদের পিতা-মাতাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো না হয়।

উবাই ইবনু কা‘বকে ‘‘সাইয়্যিদুল কুররা’’ বলার কারণ হল, সে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কুরআন শিক্ষা দেবে উবাই ইবনু কা‘ব। হাদীসটি ইবনু মাজাহ ও সুনানে তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি গরীব।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫৬-[৩৫] কুররাহ্ আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার ছেলেকে সঙ্গে করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি তোমার ছেলেকে বেশী ভালবাসো? সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে ভালবাসেন যেমনভাবে আমি তাকে ভালবাসি। (কিছু দিন পর একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে তার পিতার সাথে দেখতে পেলেন না।) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, অমুক ব্যক্তির সন্তানের কি হলো? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তার ছেলেটি মারা গেছে। (এরপর ওই ব্যক্তি উপস্থিত হলে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এ কথা পছন্দ করো না যে, তুমি (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) জান্নাতের যে দরজাতেই যাবে, সেখানেই তোমার সন্তানকে তোমার জন্য অপেক্ষারত দেখবে? এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! এ শুভসংবাদ কি শুধু এ ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট, না সকলের জন্য? তিনি বললেন, সকলের জন্য। (আহমাদ)[1]

وَعَنْ قُرَّةَ الْمُزَنِيِّ: أَنَّ رَجُلًا كَانَ يَأْتِي النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُ ابْنٌ لَهُ. فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتُحِبُّهُ؟» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبَّكَ اللَّهُ كَمَا أُحِبُّهُ. فَفَقَدَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَا فَعَلَ ابْنُ فُلَانٍ؟» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَاتَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَّا تحب أَلا تَأْتِيَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ إِلَّا وَجَدْتَهُ يَنْتَظِرُكَ؟» فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَهُ خَاصَّةً أَمْ لِكُلِّنَا؟ قَالَ: «بَلْ لِكُلِّكُمْ» . رَوَاهُ أَحْمد

وعن قرة المزني ان رجلا كان ياتي النبي صلى الله عليه وسلم ومعه ابن له فقال له النبي صلى الله عليه وسلم اتحبه فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم احبك الله كما احبه ففقده النبي صلى الله عليه وسلم فقال ما فعل ابن فلان قالوا يا رسول الله مات فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اما تحب الا تاتي بابا من ابواب الجنة الا وجدته ينتظرك فقال رجل يا رسول الله له خاصة ام لكلنا قال بل لكلكم رواه احمد

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস দ্বারা এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, কোন মু’মিন ব্যক্তির নাবালেগ সন্তান মারা গেলে সে সন্তান তার পিতা-মাতাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য জান্নাতের দরজায় অপেক্ষা করবে। অতঃপর সে তার পিতা-মাতার জন্য সুপারিশ করবে এবং সে পিতা-মাতার সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হল সে তার পিতা-মাতাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য চাবি হয়ে অপেক্ষমাণ থাকবে।

এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে। আল্লামা হায়সামী (রহঃ) বলেন, এর সানাদটি সহীহ। হাদীসটি সুনানে নাসায়ীতেও বর্ণিত হয়েছে।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, হাদীসটির সানাদ সহীহ। এ ছাড়াও মুসতাদরাকে হাকিম, বায়হাক্বী ও ইবনু আবী শায়বাহ্ প্রমুখ হাদীসের কিতাবেও সহীহ সানাদে বর্ণিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫৭-[৩৬] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গর্ভপাতে নষ্ট হওয়া সন্তানও তার পিতা-মাতাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর সময় তার ’রবের’ সাথে বিতর্ক করবে। এর ফলে তখন বলা হবে, হে গর্ভপাতে নষ্ট হওয়া সন্তান! তোমার মাতা-পিতাকে জান্নাতে নিয়ে যাও। তখন সে অপূর্ণাঙ্গ সন্তান তার মাতা-পিতাকে নিজের নাড়ী দিয়ে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِن السِّقْطَ لَيُرَاغِمُ رَبَّهُ إِذَا أَدْخَلَ أَبَوَيْهِ النَّارَ فَيُقَالُ: أَيُّهَا السِّقْطُ الْمُرَاغِمُ رَبَّهُ أَدْخِلْ أَبَوَيْكَ الْجَنَّةَ فَيَجُرُّهُمَا بِسَرَرِهِ حَتَّى يُدْخِلَهُمَا الْجَنَّةَ . رَوَاهُ ابْن مَاجَه

وعن علي رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان السقط ليراغم ربه اذا ادخل ابويه النار فيقال ايها السقط المراغم ربه ادخل ابويك الجنة فيجرهما بسرره حتى يدخلهما الجنة رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে গর্ভপাতজনিত কারণে পড়ে যাওয়া সন্তান প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। যে সকল সন্তান গর্ভপাতজনিত কারণে মারা যায় তারা তাদের পিতা-মাতার জন্য স্বীয় রবের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়বে। বাদানুবাদ করার দ্বারা উদ্দেশ্য হল যে, তারা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে এবং তাদেরকে জান্নাতে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। অতঃপর তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আর আল্লাহ বলবেন, হে বাদানুবাদকারী! তুমি তোমার পিতামাতাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। অতঃপর সে তার পিতা-মাতাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো পর্যন্ত টানতে থাকবে।

শিক্ষাঃ যদি কোন পিতা-মাতার কোন সন্তান গর্ভপাতজনিত কারণে পড়ে যায়, তাহলে তারা যেন নিরাশ না হয়। বরং এর উপর ধৈর্যধারণ করে। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এর মহান পুরস্কার দান করবেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫৮-[৩৭] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা’আলা (মানুষকে উদ্দেশ করে) বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যদি বিপদের প্রথম সময়ে ধৈর্যধারণ করো এবং আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা পোষণ করো, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কোন সাওয়াবে সন্তুষ্ট হব না। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: ابْنَ آدَمَ إِنْ صَبَرْتَ وَاحْتَسَبْتَ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُولَى لَمْ أَرْضَ لَكَ ثَوَابًا دُونَ الْجَنَّةِ . رَوَاهُ ابْن مَاجَه

وعن ابي امامة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال يقول الله تبارك وتعالى ابن ادم ان صبرت واحتسبت عند الصدمة الاولى لم ارض لك ثوابا دون الجنة رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বিপদে-আপদে ধৈর্যধারণ করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেন, বানী আদম তথা আদম সন্তান যদি বিপদের প্রাথমিক অবস্থায় ধৈর্যধারণ করে এবং ভাল আশা রাখে, তাহলে তার একমাত্র পুরস্কার হল জান্নাত। আশা করার অর্থ হল যে, এ বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কার ও সাওয়াব পাওয়ার আশা করা। আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেন, জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য তার ঈমান থাকতে হবে। হাদীসটি ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে।

যাওয়ায়িদ কিতাবে বলা হয়েছে যে, হাদীসের সানাদটি সহীহ এবং এর বর্ণনাকারীগণও বিশ্বস্ত।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৫৯-[৩৮] হুসায়ন ইবনু ’আলী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন যে, কোন মুসলিম নর-নারী কোন বিপদাপদে পড়ার যত দীর্ঘ সময় পর মনে জেগে ওঠে আর সে নতুনভাবে ’’ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি রা-জি’ঊন’’ পড়ে তাহলে আল্লাহ তাকে নতুনভাবে সে সাওয়াবই দিবেন যে সাওয়াব সে বিপদে পতিত হওয়ার প্রথম দিনই পেয়েছে। (আহমাদ, বায়হাক্বী’র শু’আবুল ঈমান)[1]

وَعَنِ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ وَلَا مُسْلِمَةٍ يُصَابُ بِمُصِيبَةٍ فَيَذْكُرُهَا وَإِنْ طَالَ عَهْدُهَا فَيُحْدِثُ لِذَلِكَ اسْتِرْجَاعًا إِلَّا جَدَّدَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَهُ عِنْدَ ذَلِكَ فَأَعْطَاهُ مِثْلَ أَجْرِهَا يَوْمَ أُصِيبَ بِهَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان

وعن الحسين بن علي عن النبي صلى الله عليه وسلم قال ما من مسلم ولا مسلمة يصاب بمصيبة فيذكرها وان طال عهدها فيحدث لذلك استرجاعا الا جدد الله تبارك وتعالى له عند ذلك فاعطاه مثل اجرها يوم اصيب بها رواه احمد والبيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বিপদে আপদে ধৈর্য ধারণ করার গুরুত্ব ও ফাযীলাত সম্পর্কে জানা যায়। যখন কোন মুসলিম নর-নারীর ওপর কোন বিপদ নেমে আসে, আর সে এ উপর ধৈর্য ধারণ করে এবং নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে, অতঃপর পাঠ করে انا لله وانا اليه راجعون অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। আল্লাহ তা‘আলা তার এ বিপদ দূর করে তাকে নতুন কোন সুসংবাদের ও খুশীর সম্মুখীন করে দেন। আর সে যে পরিমাণ বিপদের সম্মুখীন হয়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সে অনুপাতে বেশী পরিমাণে সাওয়াব দান করবেন। আর এ বিপদে ধৈর্য ধারণ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাকে অন্যান্য বিপদ থেকে নিরাপত্তা দান করবেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »