১৭৪৩

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৪৩-[২২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মূতার যুদ্ধে) ইবনু হারিসাহ্, জা’ফার ও ইবনু রাওয়াহার শাহাদাতের খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছালে তিনি (মসজিদে নাবাবীতে) বসে পড়লেন। তাঁর চেহারায় শোক-দুঃখের ছায়া পরিস্ফুট হয়ে উঠল। আমি দরজার ফোকর দিয়ে তাঁর অবস্থা দেখছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর খিদমাতে বলতে লাগল, জা’ফারের পরিবারের মেয়েরা এরূপ এরূপ করছে (অর্থাৎ তাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করল)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ওদের কাছে গিয়ে কাঁদতে নিষেধ করার হুকুম দিলেন। লোকটি চলে গেল। (কিছুক্ষণ পর) দ্বিতীয়বার এসে বলল, মহিলারা কোন কথা মানছে না। আবারও তিনি তাদেরকে কাঁদতে নিষেধ করে তাকে পাঠালেন। লোকটি চলে গেল। তাদেরকে নিষেধ করল। (কিছুক্ষণ পর) সে তৃতীয়বার ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তারা আমার ওপর বিজয়ী হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমার কথা মানছে না। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমার ধারণা হলো, এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেনঃ তাদের মুখে মাটি ঢেলে দাও। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি মনে মনে (ওই ব্যক্তিকে) বললাম, তোমার মুখে ছাই পড়ুক, তুমি কেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হুকুম দিচ্ছেন তা পালন করলে না? আর তুমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুঃখ দেয়া হতে বিরত হচ্ছ না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: لَمَّا جَاءَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَتْلُ ابْنِ حَارِثَةَ وَجَعْفَرٍ وَابْنِ رَوَاحَةَ جَلَسَ يُعْرَفُ فِيهِ الْحُزْنُ وَأَنَا أَنْظُرُ مِنْ صَائِرِ الْبَابِ تَعْنِي شَقَّ الْبَابِ فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ: إِنَّ نِسَاءَ جَعْفَرٍ وَذَكَرَ بُكَاءَهُنَّ فَأَمَرَهُ أَنْ يَنْهَاهُنَّ فَذَهَبَ ثُمَّ أَتَاهُ الثَّانِيَةَ لَمْ يُطِعْنَهُ فَقَالَ: انْهَهُنَّ فَأَتَاهُ الثَّالِثَةَ قَالَ: وَاللَّهِ غَلَبْنَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَزَعَمْتُ أَنَّهُ قَالَ: «فَاحْثُ فِي أَفْوَاهِهِنَّ التُّرَابَ» . فَقُلْتُ: أَرْغَمَ اللَّهُ أَنْفَكَ لَمْ تَفْعَلْ مَا أَمَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ تَتْرُكْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ العناء

وعن عاىشة قالت لما جاء النبي صلى الله عليه وسلم قتل ابن حارثة وجعفر وابن رواحة جلس يعرف فيه الحزن وانا انظر من صاىر الباب تعني شق الباب فاتاه رجل فقال ان نساء جعفر وذكر بكاءهن فامره ان ينهاهن فذهب ثم اتاه الثانية لم يطعنه فقال انههن فاتاه الثالثة قال والله غلبننا يا رسول الله فزعمت انه قال فاحث في افواههن التراب فقلت ارغم الله انفك لم تفعل ما امرك رسول الله صلى الله عليه وسلم ولم تترك رسول الله صلى الله عليه وسلم من العناء

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে মূতার যুদ্ধের বর্ণনার পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে ক্রন্দন করার হুকুম সম্পর্কে আলোকপাত করা হযেছে।

৮ম হিজরীতে মূতার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনজন সেনাপতি নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তারা হলেন, যায়দ ইবনু হারিস (রাঃ), জা‘ফার ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্ (রাঃ)। তারা সকলে মূতার যুদ্ধে শাহীদ হন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের মধ্যে সেনাপতি হিসেবে যায়দ ইবনু হারিস (রাঃ)-কে মনোনীত করেন। এরপর বলেন, যদি যায়দ শাহীদ হয় তাহলে জা‘ফার সেনাপতি হবে। যদি সেও শাহীদ হয় তাহলে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সেনাপতি হবে। সে শহীদ হলে মুসলিমরা পরামর্শের মাধ্যমে সেনাপতি নির্ধারণ করবে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা থেকে বুঝা যায়, তারা তিনজন মূতার যুদ্ধে শাহীদ হবেন। আর হয়েছিলেনও তাই।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যখন এ তিন সেনাপতির শাহীদ হওয়ার কথা জিবরীল (আঃ) মারফত পৌঁছল, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের মিম্বারে বসলেন এবং শাহীদদের সম্পর্কে সাহাবীদের খবর দিলেন।

জা‘ফার (রাঃ)-এর দু’টি হাত শত্রুরা কেটে নেয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা জা‘ফারকে দু’ হাতের পরিবার্তে দু’টি ডানা দিয়েছেন, যা দ্বারা সে জান্নাত ঘুরে বেড়াবে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদের সম্পর্কে কথা বলছিলেন, তখন তাকে চিন্তান্বিত দেখাচ্ছিল।

জা‘ফার (রাঃ)-এর শাহাদাতের কথা শুনে স্ত্রী কান্না করতে লাগলেন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, তাকে কাঁদতে নিষেধ কর। এ কথা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে কান্না করা যাবে না। সর্বাবস্থায় ধৈর্যের সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز)