পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৪৬-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জানাযার কার্যক্রম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তাড়াতাড়ি আদায় কর। কারণ মৃত ব্যক্তি যদি নেক মানুষ হয় তাহলে তার জন্য কল্যাণ। কাজেই তাকে কল্যাণের দিকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেবে। সে এরূপ না হলে খারাপ হবে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি নিজেদের ঘাড় থেকে নামিয়ে দাও। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَسْرِعُوا بِالْجَنَازَةِ فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا إِلَيْهِ وَإِنْ تَكُ سِوَى ذَلِكَ فشر تضعونه عَن رقابك»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اسرعوا بالجنازة فان تك صالحة فخير تقدمونها اليه وان تك سوى ذلك فشر تضعونه عن رقابك

ব্যাখ্যা: জানাযার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার ‘আমর’ বা নির্দেশটি মুস্তাহাব অর্থে, ওয়াজিব অর্থে নয়। এটা ‘উলামাদের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই। একমাত্র ইবনু হাযম এটাকে ওয়াজিব বলেছেন।

জানাযাহ্ নিয়ে দ্রুত চলার অর্থ এই নয় যে, লাশ কাঁধে নিয়ে দৌড়াবে। বরং মধ্যপন্থায় চলবে। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, দ্রুত চলার অর্থ হলো ধীরস্থির হাঁটার চেয়ে একটু বেশী, অর্থাৎ একটি ভারসাম্যপূর্ণ চলন।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, এটাই জমহূরের মত।

জানাযাহ্ কাঁধে নিয়ে একেবারে মন্থরগতিতে চলা অপছন্দনীয়। আবার এমন দ্রুতও চলবে না যাতে কারী এবং তার অনুগামীদের কষ্ট হয়। অন্যদিকে মাইয়্যিতেরও কোন ক্ষতি না হয়।

এ দ্রুততা কি শুধু লাশ বহনকালে না অন্য কাজেও?

এ প্রশ্নের জবাবে আল্লামা সিন্ধী বলেন, হাদীসের প্রকাশ্য অর্থে লাশ বহনের ক্ষেত্রেই এ নির্দেশ, তবে অন্যান্য কাজেও।

যেমন তাকে গোসল দান, কাফন পরানো ইত্যাদির ক্ষেত্রেও এ হুকুম প্রযোজ্য।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ প্রথম ব্যাপারেই হুকুম নির্দিষ্ট তবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৪৭-[২] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জানাযাহ্ খাটিয়ায় রাখার পর লোকেরা যখন তাকে কাঁধে নেয় সে জানাযাহ্ যদি নেক লোকের হয় তাহলে সে বলে আমাকে (আমার মঞ্জীলের দিকে) তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো। আর যদি বদ লোকের হয়, সে (তার নিজ লোকদেরকে) বলে, হায়! হায়! আমাকে কোথায় নিয়ে চলছ। মুর্দারের কথার এ আওয়াজ মানুষ ছাড়া সবাই শুনে। যদি মানুষ এ আওয়াজ শুনত তাহলে বেহুশ হয়ে পড়ে যেত। (বুখারী)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا وُضِعَتِ الْجَنَازَةُ فَاحْتَمَلَهَا الرِّجَالُ عَلَى أَعْنَاقِهِمْ فَإِنْ كَانَتْ صَالِحَةً قَالَتْ: قَدِّمُونِي وَإِنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ قَالَت لأَهْلهَا: يَا وَيْلَهَا أَيْن يذهبون بِهَا؟ يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلَّا الْإِنْسَانَ وَلَو سمع الْإِنْسَان لصعق . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا وضعت الجنازة فاحتملها الرجال على اعناقهم فان كانت صالحة قالت قدموني وان كانت غير صالحة قالت لاهلها يا ويلها اين يذهبون بها يسمع صوتها كل شيء الا الانسان ولو سمع الانسان لصعق رواه البخاري

ব্যাখ্যা: মৃত ব্যক্তিকে কাঁধে বহনকালে তার কথা বলার বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। কেউ কেউ বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তার মধ্যে বিশেষ বাকশক্তি সৃষ্টি করে দিবেন যার মাধ্যমে সে কথা বলবে। কেউ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তার দেহে রূহ প্রবিষ্ট করিয়ে কথা বলাবেন।

অনেকে বলেছেন, আল্লাহ ইচ্ছা করলে সর্বাবস্থায় তাকে কথা বলাতে পারেন।

মৃত ব্যক্তির এ কথা বলা যে, ‘‘তোমরা আমাকে দ্রুত নিয়ে চলো’’। এর অর্থ হলো তার নেককাজের সাওয়াব প্রাপ্তির জন্য দ্রুত চলার কথা। আর সে মনে করবে সে যেন সকলকে তা শুনাতে পারছে। অথবা আল্লাহ তা‘আলা তার মুখ দিয়ে এ কথা বের করে দিয়েছেন। যাতে তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার মানুষকে তা অবহিত করতে পারেন। অনুরূপভাবে বদকার তার ভয়াবহ পরিণতি জেনে বলবে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?

এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, লাশ বহনের দায়িত্ব পুরুষের ওপরই মহিলাদের ওপর নয়। তবে যদি পুরুষ পাওয়া না যায় তবে মহিলারা-ই বহন করবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৪৮-[৩] উল্লেখিত রাবী (আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন কোন লাশ দেখবে, দাঁড়িয়ে যাবে। যারা জানাযার সাথে থাকে তারা যেন (জানাযাহ্ লোকদের কাঁধ থেকে মাটিতে অথবা কবরে) রাখার আগে না বসে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا رَأَيْتُمُ الْجَنَازَةَ فَقُومُوا فَمَنْ تَبِعَهَا فَلَا يَقْعُدْ حَتَّى تُوضَعَ»

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رايتم الجنازة فقوموا فمن تبعها فلا يقعد حتى توضع

ব্যাখ্যা: জানাযাহ্ অতিক্রমকালে দাঁড়ানোর বিষয়টি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। এমনকি ইয়াহূদীর বা (অমুসলিমের) ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দাঁড়ানোর প্রমাণ রয়েছে। তবে এ দাঁড়ানো কি ওয়াজিব না মুস্তাহাব তা নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে।

ইবনু ‘আবদুল বার এটাকে ওয়াজিব বলে দাবী করেছেন। ইমাম আহমাদ এবং তার সমমনা কতিপয় ফকীহ এটাকে মুস্তাহাব বলে মনে করেন। ইমাম ইবনু হাযমও এ মতেরই সমর্থক। ইমাম নাবাবী বলেনঃ মুস্তাহাব হওয়াটাই পছন্দনীয় মত। সাহাবীদের মধ্যে ইবনু ‘উমার (রাঃ), আবূ মাস‘ঊদ, ক্বায়স ইবনু সা‘দ, সাহল ইবনু হুনায়ফ প্রমুখ এ মতেরই অনুসারী ছিলেন। পক্ষান্তরে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আবূ হানীফাহ্ ও তার সঙ্গীদয় (রহঃ) এ হুকুম মানসূখ বলে মনে করেন। ইমাম আহমাদ, ইসহাক প্রমুখ কতিপয় ইমাম মানসূখের দাবীকে নাকচ করে দিয়েছেন।

জানাযাহ্ অতিক্রমকালে না দাঁড়িয়ে বসে থাকার কথাও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং বুঝা যায় দাঁড়ানোর হুকুমটি মুস্তাহাব, ওয়াজিব বা আবশ্যক নয়। এ কথা ইবনু হাযম বলেছেন।

যারা জানাযার অনুগামী হবে তারা লাশ না রাখা পর্যন্ত বসবে না। এ রাখা খাটিয়া মাটিতে রাখাও হতে পারে, আবার লাশ ক্ববরে রাখাও হতে পারে।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ মাটিতে রাখার মতটিই প্রাধান্যযোগ্য। ইমাম বুখারী (রহঃ) অধ্যায় তৈরি করেছেনঃ ‘‘যারা জানাযার অনুগমন করবে তারা কাঁধ থেকে জানাযাহ্ নামানোর আগে বসবে না’’। ইমাম আবূ দাঊদও এ মতেরই পক্ষপাতি ছিলেন। হানাফীদের নিকট উত্তম হলোঃ লাশ মাটি দিয়ে শেষ করেই বসবে। তবে বাদায়ে, তাতার খানিয়া এবং ইনায়া গ্রন্থসমূহে তার বিরোধিতা করা হয়েছে। প্রত্যেকেই স্বীয় দলীল পেশ করেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাঃ ‘‘মানুষ যদি এ আওয়াজ শুনত তাহলে বেহুশ হয়ে যেত’’, এটা বদকার মৃত ব্যক্তির চিৎকার। নেক্কারের কথা হবে আশাব্যঞ্জক ও কোমল। কেউ কেউ বলেছেন, সকল মৃতের কথাই হবে ভয়ংকর। মানুষ তার কথা শুনবেন। এটা পৃথিবীর নেজাম ঠিক রাখার জন্য। ঈমানের বিষয়টিও এর সাথে সম্পৃক্ত, অর্থাৎ এর প্রতি ঈমান আনতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৪৯-[৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি জানাযাহ্ যাচ্ছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তার সাথে দাঁড়ালাম। তারপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো এক ইয়াহূদী মহিলার জানাযা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মৃত্যু একটি ভীতিকর বিষয়। অতএব যখনই তোমরা জানাযাহ্ দেখবে দাঁড়িয়ে যাবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: مَرَّتْ جَنَازَةٌ فَقَامَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقُمْنَا مَعَهُ فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهَا يَهُودِيَّةٌ فَقَالَ: «إِنَّ الْمَوْتَ فَزَعٌ فَإِذَا رَأَيْتُمْ الْجِنَازَة فَقومُوا»

وعن جابر قال مرت جنازة فقام لها رسول الله صلى الله عليه وسلم وقمنا معه فقلنا يا رسول الله انها يهودية فقال ان الموت فزع فاذا رايتم الجنازة فقوموا

ব্যাখ্যা: জানাযাহ্ অতিক্রমকালে দাঁড়ানোর কারণ জানাযার সম্মানে নয়, বরং মৃত্যু-জানাযাহ্ একটি ভীতিকর বিষয়, তা দর্শনে মানুষ যেন গাফেল জীবন থেকে সতর্ক হয়। এতে লাশ মুসলিম অমুসলিম হওয়ায় কোনকিছু আসে যায় না।

সুনানে নাসায়ী, হাকিম প্রভৃতি গ্রন্থে আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেনঃ আমরা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) সম্মানে দাঁড়াতাম। ইবনু হিব্বান-এর এক বর্ণনায় রূহ কবযকারী মালাকের সম্মানে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেনঃ দাঁড়ানো বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। তবে ইয়াহূদীর উদ্দেশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আহমাদ ও ত্ববারানীর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ঐ দাঁড়ানো ছিল (ধুপ বা ঐ জাতীয় কোন কিছুর) দুর্গন্ধযুক্ত বাতাসের কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য। (যেহেতু তারা মৃত লাশের সাথে ধুপ-লোবান ইত্যাদি বহন করে চলে)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫০-[৫] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানাযাহ্ দেখে দাঁড়াতে দেখলাম। আমরাও তার সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি বসলে আমরাও বসলাম। (মুসলিম; ইমাম মালিক ও আবূ দাঊদের বর্ণনার ভাষ্য হলো, তিনি জানাযাহ্ দেখে দাঁড়াতেন, তারপর বসতেন।)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَن عَليّ رَضِي الله عَنهُ قَالَ: رَأَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ فَقُمْنَا وَقَعَدَ فَقَعَدْنَا يَعْنِي فِي الْجَنَازَةِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةِ مَالِكٍ وَأَبِي دَاوُدَ: قَامَ فِي الْجَنَازَةِ ثُمَّ قَعَدَ بَعْدُ

وعن علي رضي الله عنه قال راينا رسول الله صلى الله عليه وسلم قام فقمنا وقعد فقعدنا يعني في الجنازة رواه مسلم وفي رواية مالك وابي داود قام في الجنازة ثم قعد بعد

ব্যাখ্যা: ‘আলী (রাঃ) বলেন, ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসলেন, আমরাও বসলাম’’, এর অর্থ সম্ভবত জানাযাহ্ অতিক্রম হয়ে দূরে চলে যাওয়ার পর তিনি বসেছিলেন, জানাযাহ্ নিকটে থাকতে নয়। অথবা ঐ সময়ে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, পরবর্তীতে তিনি আর দাঁড়াননি। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তার ‘আমর’ বা নির্দেশটি ওয়াজিব অর্থে নয় বরং মুস্তাহাব অর্থে। দাঁড়ানোর হুকুম মানসূখ বা রহিত বলার চেয়ে এ জাতীয় ব্যাখ্যা বেশী গ্রহণযোগ্য।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসটি নাসেখ হওয়ার স্পষ্ট দলীল হতে পারে না। কেননা বসার বিষয়টি বায়ানে জাওয়ায বা বৈধ প্রমাণের জন্যও হতে পারে। মানসূখ তো তখনই ধরতে হয় যখন দু’টি পরস্পর বিরোধী হাদীসের মধ্যে সমম্বয় সম্ভব হয় না। অথচ এ দু’টি হাদীসের মধ্যে সুন্দর সমম্বয় সাধিত হয়েছে।

শায়খুল হাদীস আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) এ বিষয়ের বিস্তারিত দলীল-প্রমাণ উপস্থাপনের পর বলেনঃ আমার নিকট প্রাধান্যযোগ্য কথা ওটাই যা ইমাম আহমাদ (রহঃ) গ্রহণ করেছেন। আর তা হলো প্রত্যেকের স্বাধীন ইচ্ছা, সে যদি দাঁড়ায় তাতে যেমন কোন দোষ নেই ঠিক তার বসে থাকাতেও কোন সমস্যা নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫১-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের জানাযায় ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে অংশগ্রহণ করে, এমনকি তার জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে কবরে দাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকে। এমন ব্যক্তি দু’ ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ঘরে ফেরে। প্রত্যেক ক্বীরাত্ব উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযার সালাত আদায় করে দাফন করার আগে ফিরে সে এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ফিরে এলো। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ مُسْلِمٍ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا وَكَانَ مَعَهُ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا وَيُفْرَغَ مِنْ دَفْنِهَا فَإِنَّهُ يَرْجِعُ مِنَ الْأَجْرِ بِقِيرَاطَيْنِ كُلُّ قِيرَاطٍ مِثْلُ أُحُدٍ وَمَنْ صَلَّى عَلَيْهَا ثُمَّ رَجَعَ قَبْلَ أَنْ تُدْفَنَ فَإِنَّهُ يَرْجِعُ بقيراط»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اتبع جنازة مسلم ايمانا واحتسابا وكان معه حتى يصلى عليها ويفرغ من دفنها فانه يرجع من الاجر بقيراطين كل قيراط مثل احد ومن صلى عليها ثم رجع قبل ان تدفن فانه يرجع بقيراط

ব্যাখ্যা: লাশের সাথে অনুগমন বলতে মুসলিম ব্যক্তির লাশের অনুগমনের কথাই বলা হয়েছে। সুতরাং কোন অমুসলিমের লাশের অনুগমনে কোন সাওয়াব নেই। যেহেতু এ অনুগমন ঈমানের ভিত্তিতে এবং ইহতিসাব বা সাওয়াবের আশায় করার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এতে ভয়ভীতি অথবা কোন পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হলেও তা চলবে না। পার্থিব কোন কিছুর বিনিময়ে অথবা কোন ভয়ভীতির কারণে কারো জানাযায় উপস্থিত হলে হাদীসে বর্ণিত ফাযীলাত পাওয়া যাবে না।

ক্বীরাতের পরিমাণ বলা হয়েছে উহুদ পাহাড়ের সমান। ক্বীরাত মূলতঃ বিভিন্ন দেশে মুদ্রা, বস্তু বা পরিমাপের একটি অংশ বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ অধিকাংশের মতে এখানে ‘ক্বীরাতের’ অর্থ হলো সুবিশাল পরিমাপ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে বুঝানোর জন্য সকলের নিকট অতীব প্রিয় ও সুপরিচিত পাহাড় উহুদের সাথে তার দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ ‘উহুদ পাহাড় সম’ কথাটি হলো উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা। উদ্দেশ্য হলো বিরাট সাওয়াবের অংশ নিয়ে ফেরা। যার পরিমাণ একমাত্র আল্লাহর ‘ইলমেই রয়েছে।

আবার এমনও হতে পারে যে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহ তা‘আলা বান্দার এ ‘আমলকে প্রকৃত অর্থেই উহুদ পাহাড়ের মতো বড় করে তা ওজনে আনবেন।

এ হাদীসের মাধ্যমে জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়, মাইয়্যিতকে দাফন ইত্যাদির প্রতি মু’মিনদের উৎসাহিত করা হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলার বড় অনুগ্রহের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫২-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবশার বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ তাঁর মৃত্যুর দিনই মানুষদেরকে জানিয়েছেন (অথচ তিনি মারা গিয়েছিলেন সুদূর হাবশায়)। তিনি সাহাবা (সাহাবা) কিরামকে নিয়ে ঈদগায় গেলেন। সেখানে সকলকে জানাযার সালাতের জন্য কাতারবদ্ধ করলেন এবং চার তাকবীর বললেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَى لِلنَّاسِ النَّجَاشِيَّ الْيَوْمَ الَّذِي مَاتَ فِيهِ وَخرج بِهِمْ إِلَى الْمُصَلَّى فَصَفَّ بِهِمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعَ تَكْبِيرَات

وعن ابي هريرة ان النبي صلى الله عليه وسلم نعى للناس النجاشي اليوم الذي مات فيه وخرج بهم الى المصلى فصف بهم وكبر اربع تكبيرات

ব্যাখ্যা: হাবশার বাদশাহর উপাধী হলো নাজাশী। তার ‘আসল নাম আসহামা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় থাকতে মুসলিমদের একটি দল তার রাজ্যে হিজরত করেছিলেন। এ বাদশাহ মুসলিম মুহাজিরদের খুব খাতির করেছিলেন। ৬ষ্ঠ অথবা ৭ম হিজরীতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নাজাশীর নিকট ইসলামের দা‘ওয়াত পত্র দিয়ে সাহাবী ‘আমর ইবনু ‘উমাইয়্যাহ্ আয যামিরীকে প্রেরণ করেন।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্র পেয়ে তিনি ভক্তি ভরে তা গ্রহণ করেন এবং তার চোখে মুখে লাগিয়ে চুম্বন করেন। পত্রের সম্মানে স্বীয় সিংহাসন অথবা খাটিয়া ছেড়ে সোজা মাটিতে বসে পরেন। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচাত ভাই জা‘ফার ইবনু আবূ ত্বালিব-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন।

ওয়াকিদী, ইবনু সা‘দ, ইবনু জারীর প্রমুখ নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকদের মতে তিনি নবম হিজরীর রজব মাসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাবূক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর স্বীয় রাজ্যেই ইন্তিকাল করেন।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর মাধ্যমে জানতে পেরে সাহাবীদের মধ্যে তার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করেন এবং তার জন্য গায়িবী জানাযাহ্ আদায় করেন।

এ হাদীস দ্বারা মৃত সংবাদ ঘোষণা বৈধ সাব্যস্ত হয়। ইমাম বুখারী অধ্যায় বেঁধেছেনঃ

(بَابٌ الرَّجُلُ يَنْعى إِلى أَهْلِ الْمَيِّتِ بِنَفْسِه) (অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের নিকট তার মৃত্যু সংবাদ পৌঁছানো)

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ এর দ্বারা প্রমাণিত, মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা পুরোটাই নিষিদ্ধ নয়। তবে জাহিলী যুগের রীতি পদ্ধতিতে মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা নিষেধ। সালাফদের একদল এ ব্যাপারে খুব বেশী কঠোরতা অবলম্বন করেছেন, এমনকি কেউ মৃত্যুবরণ করলে তা অন্যকে জানাতেও তারা অপ্রস্ত্তত। এ হাদীস দ্বারা দূরদেশে মৃত্যুবরণকারীর গায়িবী জানাযাহ্ আদায়ের বৈধতাও প্রমাণিত হয়।

তবে এতে মনীষীদের বেশ কয়েকটি মতামত রয়েছে। একদল বিনা শর্তে এটাকে বৈধ মনে করেন। ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ এবং জমহূর সালাফ এ মতের-ই প্রবক্তা। ইবনু হাযম এমনকি এ কথাও বলেছেন, কোন একজন সাহাবী থেকেও এর বিরোধিতা বা নিষেধাজ্ঞা আসেনি।

দ্বিতীয় আরেকদল কোন শর্তেই এটা বৈধ মনে করেন না। এটা হানাফী এবং মালিকীদের মত।

তৃতীয় দলের মতে মৃত্যুর দিন-ই কেবল গায়িবী জানাযাহ্ বৈধ, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলে তা বৈধ নয়।

চতুর্থ দলের বক্তব্য হলোঃ মৃত ব্যক্তি যদি ক্বিবলার দিকে থাকে তবে তার গায়িবী জানাযাহ্ বৈধ অন্যথায় নয়। ইবনু হিব্বান এ মতের অনুসারী।

পঞ্চম দলের মতে, মৃত ব্যক্তি যদি এমন দেশে থাকে যেখানে তার জানাযাহ্ আদায়ের কেউ নেই, যেমন নাজাশী, এ অবস্থায় তার গায়িবী জানাযাহ্ বৈধ অন্যথায় নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) এ মতটি গ্রহণ করেছেন।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর জন্য গায়িবী জানাযাহ্ আদায় করিয়েছিলেন, এর প্রকৃতি ও বাস্তবতা নিয়ে মনীষীদের বক্তব্য হলো- ঐ সময় তার লাশ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল, তিনি তা প্রত্যক্ষ করে জানাযাহ্ আদায় করেছেন, তবে লোকেরা দেখতে পায়নি। অথবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লাশের মাঝের দূরত্বের ব্যবধান অথবা পর্দা উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং তিনি তার লাশ প্রত্যক্ষ করেই জানাযাহ্ আদায় করেছিলেন। কেউ বলেছেন, গায়িবী জানাযাহ্ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল, অন্যের বেলায় বৈধ নয়।

এর প্রত্যুত্তরে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, এ খাসের কোন দলীল সাব্যস্ত হয়নি। এভাবে কথায় কথায় খাসের দাবী করলে শারী‘আতের অনেক আহকামের দ্বারই রুদ্ধ হয়ে যাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫৩-[৮] ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)সালাতুল জানাযায় চার তাকবীর বলতেন। এক জানাযায় তিনি পাঁচ তাকবীরও বললেন। আমরা তখন তাঁকে (এর কারণ) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ তাকবীরও দিয়েছেন। (মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى قَالَ: كَانَ زَيْدُ بْنُ أَرْقَمَ يُكَبِّرُ عَلَى جَنَائِزِنَا أَرْبَعًا وَأَنَّهُ كَبَّرَ عَلَى جَنَازَةٍ خَمْسًا فَسَأَلْنَاهُ فَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يكبرها. رَوَاهُ مُسلم

وعن عبد الرحمن بن ابي ليلى قال كان زيد بن ارقم يكبر على جناىزنا اربعا وانه كبر على جنازة خمسا فسالناه فقال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يكبرها رواه مسلم

ব্যাখ্যা : জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) চার তাকবীরে আদায় করতে হয়। এ হাদীসে পাঁচ তাকবীরের উল্লেখ রয়েছে। তাকবীরের সংখ্যা নিয়ে ইমাম ও ফকীহদের ইখতিলাফ বিদ্যমান।

ফাতহুল বারী, আল মুহাল্লা, মুগনী, মাসবূত প্রভৃতি গ্রন্থে ইমাম আবূ ইউসুফ ও আহলে জাওয়াহিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা পাঁচ তাকবীরের পক্ষপাতি ছিলেন।

কেউ কেউ বলেছেন, চারের অধিক তাকবীর বিশেষ মর্যাদাশীল ব্যক্তিদের সৌজন্যে। যেমন ‘আলী (রাঃ) সাহল ইবনু হুনায়ফ-এর জানাযায় ছয় তাকবীর প্রদান করে বললেন, তিনি একজন বাদরী সাহাবী। ত্বহাবী, ইবনু আবী শায়বাহ্, দারাকুত্বনী, বায়হাক্বী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন, ‘আলী (রাঃ) বাদরী সাহাবীদের জন্য ছয়, সাধারণ সাহাবীদের জন্য পাঁচ, অন্যান্য মুসলিমদের জন্য চার তাকবীর দিতেন।

অন্য আরেক শ্রেণীর ‘আলিম বলেন, এটা ইমাম সাহেবের ইখতিয়ার সে যে কয় তাকবীর ইচ্ছা দিতে পারবে। মুক্তাদীগণ ইমামের পূর্ণ ইত্তেবা করবে। মুনযিরী ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে নয়, সাত, পাঁচ ও চার তাকবীরের বিবরণ উল্লেখ করেছেন। ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের ইমাম যে কয় তাকবীর দেয় তোমরাও সে কয় তাকবীর দাও।

তিন ইমাম সহ জমহূর সাহাবী, তাবি‘ঈন পরবর্তী আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন তথা সালাফ ও খালাফগণ জানাযার সালাতে চার তাকবীরের পক্ষপাতি ছিলেন, এর বেশীও নয় কমও নয়। এরা চারের অধিক তাকবীর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা মানসূখ বা রহিত বলে মনে করেন; কিন্তু এ কথাও প্রশ্নাতীত নয়। আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেনঃ আমার নিকট অধিক গ্রহণীয় মত হলো চারের অধিক তাকবীর দিবে না।

কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এটাই ছিল সাধারণ ‘আমল ও রীতি। তবে ইমাম সাহেব যদি পাঁচ তাকবীর দিয়ে ফেলে তাহলে মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করবে। কেননা পাঁচ তাকবীরের হাদীসও রদ করার মতো নয়।

চারের কম তাকবীর মোটেও বৈধ নয়, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন মারফূ' হাদীসেই চারের কমের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫৪-[৯] ত্বলহাহ্ ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ’আব্বাস-এর পেছনে এক জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তিনি এতে সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়েছেন এবং বলেছেন, আমি (স্বরবে) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ এজন্য পড়েছি, যেন তোমরা জানতে পারো সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়া সুন্নাত। (বুখারী)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ فَقَالَ: لِتَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن طلحة بن عبد الله بن عوف قال صليت خلف ابن عباس على جنازة فقرا فاتحة الكتاب فقال لتعلموا انها سنة رواه البخاري

ব্যাখ্যা: জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ বা চিরাচরিত নিয়ম। এ শাশ্বত সুন্নাহর ‘আমলকে সার্বজনীন করার জন্য বা তার অবহতির জন্য ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) জানাযার সালাতে জোরে জোরে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করেছেন। এটা তার নিজের বক্তব্যেই প্রকাশ করেছেন। সুতরাং জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করতে হবে এ হাদীস তার প্রকৃষ্ঠ দলীল। (অসংখ্য সাহাবীদের মধ্যে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করলেন এবং সুন্নাত বলে দাবী করলেন এতে একজন সাহাবীও তার প্রতিবাদ অথবা বিরোধিতা করেননি, সুতরাং এটা ইজমায়ে সাহাবীর মর্যাদা রাখে)।

এছাড়াও বহু সাহাবী থেকে জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মুনযিরী এর বিস্তারিত তথ্যাদি পেশ করেছেন।

ইমামদের মধ্যে আয়িম্মায়ে সালাসা তথা ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাকসহ অসংখ্য ইমাম ও ফকীহ এ মতেরই অনুসারী ছিলেন।

ইমাম তুরকিমানী বলেনঃ হানাফীদের নিকট জানাযার সালাতের সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ ওয়াজিবও নয় মাকরূহও নয়। মালিকীদের মতে এটা মাকরূহ। ইমাম মালিক বলেছেনঃ আমাদের মদীনায় এ ‘আমল প্রচলিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ইমাম মালিক-এর এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, আবূ হুরায়রাহ্, আবূ ‘উমামাহ্, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব প্রমুখসহ মদীনার বড় বড় সাহাবী, তাবি‘ঈ ও ফকীহ থেকে (সূরাহ্ আল ফা-তিহার) ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠের ‘আমল পাওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বললেন, এটা মদীনাবাসীর ‘আমল নয়? এরপরও কথা হলো এই যে, মদীনাবাসীদের কোন ‘আমল শারী‘আতের দলীল নয়।

ইবনু ‘আব্বাস-এর কথা- ‘এটা সুন্নাত’, এ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চিরাচরিত সুন্নাহ বা নিয়ম। সুন্নাহ মানে ফারযের (ফরযের/ফরজের) বিপরীত এমনটি নয়, এটা ইস্তিলাহে উরফী বা স্বভাবসিদ্ধ পরিভাষা। আশরাফ বলেছেন, সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যা বিদ্‘আতের বিপরীত। আল্লামা কুসতুলানী বলেনঃ সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এটা শার‘ঈ প্রণেতার পথ ও পন্থা। সুন্নাহ বলা এটা ওয়াজিব হওয়াকে নিষেধ করে না। ইমাম শাফি‘ঈ বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমের নিকট কোন সাহাবীর সুন্নাহ দাবী এটা মারফূ' হাদীসের মর্যাদা রাখে। (ইবনু ‘আব্বাস-এর আরেকটি বর্ণনা ১৬৭৩ নং হাদীসে দেখুন)

জানাযার সালাতে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ কোথায় পাঠ করতে হবে? এ হাদীসে তার উল্লেখ নেই। কিন্তু ইমাম শাফি‘ঈর কিতাবুল উম্ম, বায়হাক্বী, নাসায়ী প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে জাবির (রাঃ) প্রমুখাত হাদীসে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে প্রথম তাকবীর দিয়েই সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে।

মুসন্নাফে ‘আবদুর রাযযাক্ব, নাসায়ী প্রভৃতি গ্রন্থে আবূ ‘উমামাহ্ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জানাযার সালাতে সুন্নাত হলো প্রথম তাকবীর দিয়ে উম্মুল কুরআন সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠ করবে। এরপর (তাকবীর দিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পড়বে..... প্রথম তাকবীর ছাড়া ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বেন।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) জানাযায় ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না মর্মে যে কথাটি রয়েছে এর উপর ভিত্তি করে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ বর্জন মোটেও সঠিক নয়। কেননা এটা ছিল তার ব্যক্তিগত ‘আমল। তাছাড়া তিনি ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাও পাঠ করতেন না বরং এর অর্থ হলো তিনি সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ ছাড়া অন্য কোন সূরাহ্ পাঠ করতেন না। উপরন্তু এটি নেতিবাচক কথা, আর সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের হাদীসটি হলো ইতিবাচক; উসূলে হাদীস তথা হাদীস বিজ্ঞানের মূলনীতি হলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’টি হাদীস পরস্পর সাংঘর্ষিক হলে ইতিবাচক হাদীসটি প্রাধান্য পাবে। সর্বোপরি সাহাবীর কোন কথা বা ‘আমল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাশ্বত সুন্নাহকে বর্জন কিংবা রহিত করতে পারে না।

সমস্ত উম্মাতের ইজমা বা ঐকমত্য হলো, জানাযার সালাতও সালাতের অন্তর্ভুক্ত। এতে রয়েছে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো, হাত বাঁধা, জামা‘আত হওয়া ইত্যাদি। সুতরাং অন্যান্য সালাতের ন্যায় এখানে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠও আবশ্যক। তাছাড়াও সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পাঠের নির্দেশ ও ‘আমল সংক্রান্ত সুস্পষ্ট হাদীস যেখানে বিদ্যমান সেখানে সংশয় সন্দেহ আর কি থাকতে পারে?

জানাযাহ্ আদায়কালে সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ অন্যান্য দু‘আগুলো স্বরবে না নীরবে পড়বে এ নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইবনু ‘আব্বাসের হাদীসের ভিত্তিতে কতিপয় ‘আলিম জোরে পাঠ করাকে মুস্তাহাব মনে করেন। কিন্তু জমহূর ইমাম ও মুহাদ্দিসের মতে নীরবে পাঠ করাটাই মুস্তাহাব। আরেকদল বলেন, জোরে আস্তে পড়া হলো ইমামের ইখতিয়ার সে জোরেও পড়তে পারে আস্তেও পড়তে পারে।

শাফি‘ঈ মাযহাবের কোন কোন ‘আলিম বলেছেনঃ জানাযাহ্ রাতে পড়লে জোরে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তে আর দিনে হলে আস্তে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বে।

‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস-এর জোরে পড়ার বিষয়টি ছিল শিক্ষার জন্য, জোরে পড়াই যে সুন্নাত এ উদ্দেশ্য নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫৫-[১০] ’আওফ ইবনু মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। জানাযায় যেসব দু’আ তিনি পড়েছেন তা আমি মুখস্থ করে রেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,

’’আল্ল-হুম্মাগফির লাহূ ওয়ারহামহু ওয়া ’আ-ফিহী ওয়া’ফু ’আনহু ওয়া আকরিম নুযুলাহূ ওয়া ওয়াসসি’ মুদখলাহূ ওয়াগসিলহু বিলমা-য়ি ওয়াসসালজি ওয়াল বারাদি ওয়ানাক্কিহী মিনাল খত্বা-ইয়া- কামা- নাক্কায়সাস্ সাওবাল আব্ইয়াযা মিনাদ্ দানাসি ওয়া আবদিলহু দা-রান খয়রাম্ মিন দা-রিহী ওয়া আহলান খয়রাম্ মিন আহলিহী ওয়া যাওজান খয়রাম্ মিন যাওজিহী ওয়া আদখিলহুল ওয়াআ ’ইযহু মিন ’আযা-বিল কবরি ওয়ামিন ’আযা-বান্ না-র’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও, তার উপর রহম করো, তাকে নিরাপদে রাখো। তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করো, তাকে উত্তম মেহমানদারী করো (জান্নাতে), তার কবরকে প্রশস্ত করে দাও। তাকে পানি, বরফ ও ঠান্ডা (পানি) দিয়ে গোসল করাও। গুনাহখাতা হতে তাকে পবিত্র করো, যেমন তুমি সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করো। তাকে (দুনিয়ার) তার ঘরের চেয়ে উত্তম ঘর (জান্নাতে) দান করো, তার পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবারও দান করো। (দুনিয়ার) স্ত্রীর চেয়ে উত্তম স্ত্রী (আখিরাতে) তাকে দিও। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও, তাকে কবরের ’আযাব এবং জাহান্নামের ’আযাব থেকে রক্ষা করো।’’)।

অপর এক বর্ণনার ভাষায়- ’’ওয়াক্বিহী ফিতনাতাল কবরি ওয়া ’আযা-বান্ না-র’’ (অর্থাৎ কবরের ফিতনাহ্ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে বাঁচাও)। এ দু’আ শুনার পর আমার বাসনা জাগলো, এ মৃত ব্যক্তি যদি আমি হতাম। (মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: صَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى جَنَازَةٍ فَحَفِظْتُ مِنْ دُعَائِهِ وَهُوَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدنس وأبدله دَارا خيرا من دَاره وَأهلا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ وَأدْخلهُ الْجنَّة وأعذه من عَذَاب الْقَبْر وَمن عَذَاب النَّار» . وَفِي رِوَايَةٍ: «وَقِهِ فِتْنَةَ الْقَبْرِ وَعَذَابَ النَّارِ» قَالَ حَتَّى تَمَنَّيْتُ أَنْ أَكُونَ أَنَا ذَلِكَ الْمَيِّت. رَوَاهُ مُسلم

وعن عوف بن مالك قال صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم على جنازة فحفظت من دعاىه وهو يقول اللهم اغفر له وارحمه وعافه واعف عنه واكرم نزله ووسع مدخله واغسله بالماء والثلج والبرد ونقه من الخطايا كما نقيت الثوب الابيض من الدنس وابدله دارا خيرا من داره واهلا خيرا من اهله وزوجا خيرا من زوجه وادخله الجنة واعذه من عذاب القبر ومن عذاب النار وفي رواية وقه فتنة القبر وعذاب النار قال حتى تمنيت ان اكون انا ذلك الميت رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ জাতীয় হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার দু‘আ স্বশব্দে পাঠ করেছেন, (এবং স্বশব্দে পাঠ করাই মুস্তাহাব)। পক্ষান্তরে আরেকদল ‘আলিমের মত তার বিপরীত। তারা নীরবে পাঠকেই মুস্তাহাব মনে করেন। জোরে পড়ার হাদীসের ক্ষেত্রে তারা বলেন- এটা ছিল শিক্ষামূলক। তবে এ কথা সত্য যে, উভয় পদ্ধতিই বৈধ।

আখিরাতে তার উত্তম সঙ্গীর অর্থ হলো হুরে ‘ঈন (ডাগর ডাগর উজ্জ্বল সুন্দর চোখবিশিষ্টা সুন্দরী রমণীগণ)। অথবা দুনিয়ার স্ত্রীও হতে পারে, তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সিয়াম ইত্যাদির কারণে তার স্ত্রীও হুরে ‘ঈনের চেয়েও উত্তম হয়ে যাবেন। ইমাম সুয়ূতী বলেন, অধিকাংশ ফকীহের মতে এটা শুধু পুরুষের বেলায় প্রযোজ্য নারীর জন্য নয়। আল্লামা শামী বলেন, আহল এবং সঙ্গী পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো সিফাত বা গুণাবলীর পরিবর্তন, জাত বা স্বত্ত্বার পরিবর্তন নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫৬-[১১] আবূ সালামাহ্ ইবনু ’আবদুর রহমান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস (রাঃ)মৃত্যুবরণ করলে (তাঁর লাশ বাড়ী হতে দাফনের জন্য আনার পর) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তার জানাযাহ্ মসজিদে আনো, তাহলে আমিও জানাযাহ্ আদায় করতে পারব। লোকেরা (জানাযাহ্ মসজিদে আনতে) অস্বীকার করলেন (কারণ তারা ভাবলেন, মসজিদে জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কিভাবে আদায় করা যেতে পারে)। তখন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’বায়যা’ নাম্নী মহিলার দু’ছেলে সুহায়ল ও তার ভাইয়ের জানাযার সালাত মসজিদে আদায় করিয়েছেন। (মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ عَائِشَة لما توفّي سعد بن أبي وَقاص قَالَت: ادخُلُوا بِهِ الْمَسْجِد حَتَّى أُصَلِّي عَلَيْهِ فَأُنْكِرَ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَتْ: وَاللَّهِ لَقَدْ صَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ابْنَيْ بَيْضَاءَ فِي الْمَسْجِدِ: سُهَيْلٍ وَأَخِيهِ. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي سلمة بن عبد الرحمن ان عاىشة لما توفي سعد بن ابي وقاص قالت ادخلوا به المسجد حتى اصلي عليه فانكر ذلك عليها فقالت والله لقد صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم على ابني بيضاء في المسجد سهيل واخيه رواه مسلم

ব্যাখ্যা: সালাতুল জানাযায় পুরুষদের সাথে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে এ হাদীসটি প্রামাণ্য দলীল।

এছাড়াও ইমাম হাকিম সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ ‘উমায়র ইবনু আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) ইন্তিকাল করলে আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ডেকে তার বাড়ীতে আনলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাড়ীতেই জানাযার সালাত আদায় করলেন। আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে দাঁড়ালেন আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তার পিছনে দাঁড়ালেন। এদের সাথে আর কেউ ছিলেন না। এ হাদীসটি সহীহ, বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ।

এটা ইমাম মালিক-এর মাযহাবও বটে, কিন্তু ইমাম শাফি‘ঈ বলেন, নারীরা জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না। এটাতো পুরুষদের সাথে নারীদের অংশ গ্রহণের কথা, কিন্তু পুরুষবিহীন শুধুমাত্র নারীরা জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবে কিনা?

এ প্রশ্নে ইমাম ইবনুল কুদামাহ্ বলেন, মহিলাগণ জামা‘আত করতে পারবে, তবে ইমাম কাতারের মাঝে দাঁড়াবে।

ইমাম আহমাদ এর উপর (কুরআন-হাদীসের) নস পেশ করেছেন। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-ও এমন কথাই বলেছেন।

ইমাম শাফি‘ঈ বলেন, মহিলাগণ একা একা সালাত আদায় করবে, তবে যদি জামা‘আত করেই ফেলে তাও বৈধ।

এ হাদীস আরো প্রমাণ করে যে, মসজিদে জানাযার সালাত আদায় করা জায়িয। শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব সহ জমহূরের এটাই মত। ইমাম মালিক ও আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) তার বিপরীত মত পেশ করেছেন। এ মতাবলম্বীদের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নির্দেশের উপর সাহাবীরা আপত্তি করেছিলেন। এর প্রত্যুত্তরে মুহাদ্দিসগণ বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ওপর আপত্তি করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তার লাশ মসজিদে আনা হয় এবং সকল সাহাবী সে জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। (একজনও আপত্তি করে জানাযাহ্ থেকে বিরত থাকেননি) বরং সকলেই তা মেনে নেন, আর পরবর্তীতে বিষয়টি এভাবেই স্থায়িত্ব রূপ লাভ করে। এর উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী দু’ খলীফা যথাক্রমে আবূ বাকর এবং ‘উমার (রাঃ)-এর জানাযাহ্ মসজিদেই অনুষ্ঠিত হয়। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, তবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বাভাবিক নিয়ম ছিল খোলা মাঠেই জানাযার সালাত আদায় করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫৭-[১২] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে এক মহিলার জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছি। মহিলাটি নিফাস অবস্থায় মারা গেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার সালাতে তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: صَلَّيْتُ وَرَاءَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى امْرَأَةٍ مَاتَتْ فِي نِفَاسِهَا فَقَامَ وَسَطَهَا

وعن سمرة بن جندب قال صليت وراء رسول الله صلى الله عليه وسلم على امراة ماتت في نفاسها فقام وسطها

ব্যাখ্যা: এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মৃতব্যক্তি মহিলা হলে সুন্নাত হলো ইমাম সাহেব লাশের মাঝামাঝি বা কোমর বরাবর দাঁড়াবে। কেউ যদি একাকীও জানাযাহ্ আদায় করে তার জন্যও একই হুকুম। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতামত ভিন্ন। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর এক্ষেত্রে দু’টি মত পাওয়া যায়। তার প্রসিদ্ধ মত হলো- ইমাম নারী-পুরুষ উভয়েরই সীনা বরাবর দাঁড়াবে। ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে লাশের মাথা বরাবর দাঁড়াবে।

আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম আত্ তিরমিযী, ইমাম আহমাদ-এর মত বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম মহিলার মাঝ বরাবর দাঁড়াবে আর পুরুষের মাথা বরাবর দাঁড়াবে। ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক, আহমাদ, ইসহাক্ব, আবূ ইউসুফ প্রমুখ ইমামগণের মাযহাব এটাই, আর এটা হকও বটে। সামনে আনাস (রাঃ) ও সামুরাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস এ মতেরই পোষকতায় বর্ণিত হয়েছে। স্বয়ং হিদায়া গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর দ্বিতীয় মতটি এটাই বর্ণিত হয়েছে। কেননা আনাস (রাঃ) এ রকম ‘আমল করেছেন এবং বলেছেন, এটাই ‘সুন্নাত’। ইমাম ত্বহাবী (রহঃ) ইমাম আবূ হানীফার এ মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

আত্ তিরমিযীর ভাষ্যকার শায়খুল হাদীস ‘আল্লামা ‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী (রহঃ), ইবনুল হুমাম-এর বুক ও কোমর বরাবর দাঁড়ানোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যে তাবীল করেছেন তার প্রেক্ষিতে বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পুরুষের মাথা বরাবর এবং নারীর কোমর বরাবর দাঁড়ানোর হাদীস প্রমাণিত হওয়ার পর অন্য কোন তাবীল বা ব্যাখ্যার দিকে ভ্রুক্ষেপ করার কোনই প্রয়োজন নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫৮-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক কবরের কাছ দিয়ে গেলেন, যাতে রাতের বেলা কাউকে দাফন করা হয়েছিল। তিনি বললেন, একে কখন দাফন করা হয়েছে? সাহাবীগণ জবাব দিলেন গত রাতে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে খবর দাওনি কেন? সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাকে অন্ধকার রাতে দাফন করেছি, তাই আপনাকে ঘুম থেকে জাগানো ভাল মনে করিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِقَبْرٍ دُفِنَ لَيْلًا فَقَالَ: «مَتَى دُفِنَ هَذَا؟» قَالُوا: الْبَارِحَةَ. قَالَ: «أَفَلَا آذَنْتُمُونِي؟» قَالُوا: دَفَنَّاهُ فِي ظُلْمَةِ اللَّيْلِ فَكَرِهْنَا أَنْ نُوقِظَكَ فَقَامَ فَصَفَفْنَا خَلفه فصلى عَلَيْهِ

وعن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر بقبر دفن ليلا فقال متى دفن هذا قالوا البارحة قال افلا اذنتموني قالوا دفناه في ظلمة الليل فكرهنا ان نوقظك فقام فصففنا خلفه فصلى عليه

ব্যাখ্যা: কবরস্থ ব্যক্তির নাম ছিল ত্বলহাহ্ ইবনু বারা ইবনু ‘উমায়র। তিনি আনসারদের সাথে মৈত্রী বা সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলেন।

এ বিশুদ্ধ হাদীসসহ আরো কিছু হাদীস দ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায় যে, রাত্রিবেলা দাফন করা বৈধ। খুলাফায়ে রাশিদীনের মধ্যে আবূ বাকর, ‘উমার (রাঃ) প্রমুখগণও রাত্রিতে দাফন করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নন্দিনী ফাত্বিমাহ্ (রাঃ)-কেও ‘আলী (রাঃ) রাত্রিকালেই দাফন করেছেন।

ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক, আহমাদ, (এর প্রসিদ্ধ মত) ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইসহাক্ব (রহঃ) প্রমুখ ইমামসহ জমহূর ‘আলিমের মত ও মাযহাব এটাই।

পক্ষান্তরে ক্বাতাদাহ্, হাসান বসরী, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব প্রমুখ ‘আলিমগণের মতে রাত্রিকালে দাফন করা বৈধ নয়। ইবনু হাযম বলেন, একান্ত প্রয়োজন বা সমস্যা ছাড়া রাতে দাফন করা বৈধ নয়। এরা জাবির (রাঃ)-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন। জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে আছে, এক ব্যক্তি ইন্তিকাল করলে লোকেরা তাকে রাতে দাফন করে ফেলেন। খবর শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রাতে দাফন করার কারণে তিরস্কার করলেন এবং বললেন, একান্ত বাধ্য না হলে রাতে দাফন করবে না। আর যখন কারো কাফন দিবে তাকে উত্তম কাফন দিবে।

জমহূরের পক্ষ থেকে এ হাদীসের প্রত্যুত্তরে বলা হয় যে, লোকেরা রাতের অন্ধকারে নিকৃষ্ট কাপড় দিয়েই তাকে দাফন করেছিল, তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  তাদের তিরস্কার করেন এবং রাতের বেলা কবর দিতে নিষেধ করেন। ইমাম ত্বহাবী (রহঃ) বলেন, সকল মুসলিম যাতে জানাযায় অংশগ্রহণ পূর্বক (জানাযাহ্ আদায়ের) ফাযীলাত লাভ করতে পারে তাই রাতের অন্ধকারে সামান্য কতিপয় লোক নিয়ে জানাযাহ্ আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা প্রথম দিকে ছিল পরবর্তীতে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। অথবা জানাযাহ্ আদায় না করিয়েই রাতে দাফন করতে নিষেধ করা হয়েছে।

ক্ববরের উপর জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের বৈধতাও এ হাদীস থেকে প্রমাণিত। চাই তার জানাযাহ্ আদায় করে দাফন করা হোক চাই বিনা জানাযায় দাফন করা হোক। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকাংশ আহলে ‘ইলম সাহাবী এবং বিজ্ঞ তাবি‘ঈ ও তৎপরবর্তী ইমাম মুজতাহিদ এ মতই অবলম্বন করেছেন। আবূ মূসা, ইবনু ‘উমার, ‘আয়িশাহ্, ‘আলী, ইবনু মাস্‘ঊদ, আনাস, সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, ক্বাতাদাহ্ প্রমুখ সাহাবী এবং তাবি‘ঈ হতে এতদসংক্রান্ত বর্ণনা রয়েছে।

ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব, আওযা‘ঈ প্রমুখসহ সমস্ত হাদীসবিদ এ মতের-ই অনুসারী ছিলেন। এ বিষয়ে অনেক সহীহ ও হাসান হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। পক্ষান্তরে ইমাম নাখ্‘ঈ, সাওরী, মালিক, আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) প্রমুখ বলেন, মাইয়্যিতের ওলী উপস্থিত থেকে জানাযাহ্ হয়ে গেলে ঐ ব্যক্তির পুনঃ জানাযাহ্ জায়িয নেই। আর এ অবস্থা ছাড়া ক্ববরের উপরও জানাযাহ্ বৈধ নয়। অনুরূপ জানাযাহ্ ছাড়া দাফন হয়ে থাকলে তার জন্যই কেবল ক্ববরের উপর জানাযাহ্ বৈধ অন্যথায় নয়।

কেউ কেউ বলেছেন, দাফনের পর ক্ববরের উপর সালাত আদায়ের বিষয়টি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল। কিন্তু আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই দলীলের প্রয়োজন, কিন্তু এখানে তা নেই। ইমাম ইবনু হাযম বলেন, উল্লেখিত বাক্যে এমন দলীল নেই যে, এটা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস ছিল। তাছাড়া অন্যের জন্য ক্ববরের উপর সালাত আদায়ের কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই।

ক্ববরের উপর জানাযার সালাত কতদিন পর্যন্ত চলবে? এটা নিয়েও কিছুটা মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

ইমাম আহমাদ, ইসহাক্ব ও শাফি‘ঈর অনুসারীরা একমাসকাল পর্যন্ত সালাত আদায় বৈধ মনে করেন।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, একমাত্র ওলী তিনদিন পর্যন্ত সালাত আদায় করতে পারবে। কিন্তু অন্যেরা আদায় করতেই পারবে না। নির্ভরযোগ্য একদল ‘উলামার মতে সর্বদাই ক্ববরের উপর জানাযার সালাত আদায় করা চলবে। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুহাদায়ে উহুদের ক্ববরের উপর আট বছর পর জানাযাহ্ আদায় করিয়েছেন। এদের আরো যুক্তি হলো- সালাতুল জানাযার উদ্দেশ্য হলো মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ। সুতরাং তা সর্বসময়ের জন্যই বৈধ, আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কোন সময়ও নির্ধারণ করে দেননি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৫৯-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন কালো মহিলা অথবা একটি যুবক (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মসজিদে নাবাবী ঝাড়ু দিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পেলেন না। তিনি সে মহিলা অথবা যুবকটির খোঁজ নিলেন। লোকেরা বলল, সে ইন্তিকাল করেছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? (তাহলে আমিও জানাযায় শরীক থাকতাম।) বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা এ মহিলা বা যুবকের বিষয়টিকে ছোট বা তুচ্ছ ভেবেছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছে আমাকে দেখাও। তারা তাঁকে তার কবর দেখিয়ে দিল। তখন তিনি তার (কাছে গেলেন ও) কবরে জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন, তারপর বললেন, এ কবরগুলো এর অধিবাসীদের জন্য ঘন অন্ধকারে ভরা ছিল। আর আমার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের ফলে আল্লাহ তা’আলা এগুলোকে আলোকিত করে দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম; এ হাদীসের ভাষা মুসলিমের)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ كَانَتْ تَقُمُّ الْمَسْجِدَ أَوْ شَابٌّ فَفَقَدَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَ عَنْهَا أَوْ عَنْهُ فَقَالُوا: مَاتَ. قَالَ: «أَفَلَا كُنْتُمْ آذَنْتُمُونِي؟» قَالَ: فَكَأَنَّهُمْ صَغَّرُوا أَمْرَهَا أَوْ أَمْرَهُ. فَقَالَ: «دلوني على قَبره» فدلوه فصلى عَلَيْهَا. قَالَ: «إِنَّ هَذِهِ الْقُبُورَ مَمْلُوءَةٌ ظُلْمَةً عَلَى أَهْلِهَا وَإِنَّ اللَّهَ يُنَوِّرُهَا لَهُمْ بِصَلَاتِي عَلَيْهِمْ» . وَلَفظه لمُسلم

وعن ابي هريرة ان امراة سوداء كانت تقم المسجد او شاب ففقدها رسول الله صلى الله عليه وسلم فسال عنها او عنه فقالوا مات قال افلا كنتم اذنتموني قال فكانهم صغروا امرها او امره فقال دلوني على قبره فدلوه فصلى عليها قال ان هذه القبور مملوءة ظلمة على اهلها وان الله ينورها لهم بصلاتي عليهم ولفظه لمسلم

ব্যাখ্যা: ক্ববরের উপর জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা যারা বৈধ মনে করেন না- এ হাদীসটিও তাদের ঐ দাবীকে খন্ডন করে দেয়। ক্ববরের উপর জানাযাহ্ আদায় করাটাছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি বিজ্ঞচিত যুগান্তকারী কাজ। এটা ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফা‘আত; কারো মর্যাদার জন্য অথবা কাউকে তুচ্ছ করার জন্য নয়। আর এর বিধানও ব্যক্তির জন্য সীমাবদ্ধ নয় বরং সার্বজনীন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৬০-[১৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদ করা গোলাম কুরায়ব ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। ইবনু ’আব্বাস-এর এক ছেলে (মক্কার নিকটবর্তী) ’কুদায়দ’ অথবা ’উসফান’ নামক স্থানে মারা গিয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন, হে কুরায়ব! জানাযার জন্য কেমন লোক জমা হয়েছে দেখো। কুরায়ব বলেন, আমি বের হয়ে দেখলাম, জানাযার জন্য কিছু লোক একত্রিত হয়েছে। অতঃপর তাকে আমি এ খবর জানালাম। তিনি বললেন, তোমার হিসেবে তারা কি চল্লিশজন হবে? আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) তখন বললেন, তাহলে সালাতের জন্য তাকে বের করে আনো। কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কোন মুসলিম মারা গেলে আল্লাহর সাথে শরীক করেনি এমন চল্লিশজন যদি তার জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা এ মৃত ব্যক্তির জন্য তাদের সুপারিশ কবূল করেন। (মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ كُرَيْبٍ مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ مَاتَ لَهُ ابْنٌ بِقُدَيْدٍ أَوْ بِعُسْفَانَ فَقَالَ: يَا كُرَيْبُ انْظُرْ مَا اجْتَمَعَ لَهُ مِنَ النَّاسِ قَالَ: فَخَرَجْتُ فَإِذَا نَاسٌ قَدِ اجْتَمَعُوا لَهُ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ: تَقُولُ: هُمْ أَرْبَعُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: أَخْرِجُوهُ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فَيَقُومُ عَلَى جَنَازَتِهِ أَرْبَعُونَ رَجُلًا لَا يُشْرِكُونَ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلَّا شَفَّعَهُمُ اللَّهُ فِيهِ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن كريب مولى ابن عباس عن عبد الله بن عباس انه مات له ابن بقديد او بعسفان فقال يا كريب انظر ما اجتمع له من الناس قال فخرجت فاذا ناس قد اجتمعوا له فاخبرته فقال تقول هم اربعون قال نعم قال اخرجوه فاني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ما من رجل مسلم يموت فيقوم على جنازته اربعون رجلا لا يشركون بالله شيىا الا شفعهم الله فيه رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এখানে চল্লিশজন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীকে শির্ক মুক্ত হতে হবে মর্মে শর্ত করা হয়েছে। কিন্তু ইবনু মাজার এক বর্ণনায় শির্কের শর্ত ছাড়াই শুধু চল্লিশজন মু’মিনের কথা বলা হয়েছে।

চল্লিশজন মু’মিন কারো পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করলে অথবা তার জন্য দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘আ কবূল করবেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৬১-[১৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সালাতে জানাযায় একশতজন মুসলিমের দল হাযির থাকবে, তাদের প্রত্যেকেই তার জন্য শাফা’আত (মাগফিরাত কামনা) করবে। তাহলে তার জন্য তাদের এ শাফা’আত (কবূল) হয়ে যাবে। (মুসলিম)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا مِنْ مَيِّتٍ تُصَلِّي عَلَيْهِ أُمَّةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَبْلُغُونَ مِائَةً كُلُّهُمْ يَشْفَعُونَ لَهُ: إِلَّا شفعوا فِيهِ . رَوَاهُ مُسلم

وعن عاىشة رضي الله عنها عن النبي صلى الله عليه وسلم قال ما من ميت تصلي عليه امة من المسلمين يبلغون ماىة كلهم يشفعون له الا شفعوا فيه رواه مسلم

ব্যাখ্যা: একশত মুসলিম জানাযায় অংশগ্রহণ পূর্বক মাইয়্যিতের জন্য সুপারিশ করলে আল্লাহ তাদের সুপারিশ কবূল করবেন। এ সুপারিশের অর্থ দু‘আ।

জানাযার লোক বেশী হওয়া চাই যাতে তাদের দু‘আ কবূলযোগ্য হয় এবং মৃত ব্যক্তি এর মাধ্যমে সফলতা লাভ করতে পারেন। মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশকারীদের দু’টি শর্ত থাকতে হবে।

(এক) সুপারিশকারীকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে এবং শির্কমুক্ত থাকতে হবে।

(দুই) সুপারিশকারী খালেসভাবে দু‘আ মাগফিরাত কামনা করবে।

মালিক ইবনু হুবায়রার হাদীসে এসেছে তিন কাতার লোক যার জানাযায় অংশগ্রহণ করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য (জান্নাত) ওয়াজিব করে দেন।

তিন কাতার, চল্লিশজন এবং একশতজন অংশগ্রহণের এ নানামুখী বর্ণনার ব্যাপারে ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, প্রথমে একশতজনের সুপারিশের কথা বলা হয়েছিল, তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, এরপর চল্লিশজনের, অতঃপর তিন কাতারের কথা জানানো হয়েছিল ফলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  সেভাবেই পর্যায়ক্রমে হাদীস বর্ণনা করে জনগণকে অবহিত করেছেন।

ক্বাযী ‘আয়ায (রহঃ) বলেন, প্রশ্নকারীদের প্রশ্নের ভিন্নতাসাপেক্ষে (উত্তরের) এ ভিন্নতা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৬২-[১৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (একবার) এক জানাযায় গেলেন। সেখানে তারা মৃতের প্রশংসা করতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। (ঠিক) এভাবে তারা আর এক জানাযায় গেলেন সেখানে তারা তার বদনাম করতে লাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। এ কথা শুনে ’উমার (রাঃ) জানতে চাইলেন। কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? (হে আল্লাহর রসূল!) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা যে ব্যক্তির প্রশংসা করেছ, তার জন্য জান্নাতপ্রাপ্তি ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর যার বদনাম করেছ, তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা জমিনে আল্লাহর সাক্ষী। (বুখারী, মুসলিম; অন্য আর এক বর্ণনার ভাষা হলো তিনি বলেছেন, মু’মিন আল্লাহ তা’আলার সাক্ষী।)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: مَرُّوا بِجَنَازَةٍ فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْرًا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَجَبَتْ» ثُمَّ مَرُّوا بِأُخْرَى فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا شَرًّا. فَقَالَ: «وَجَبَتْ» فَقَالَ عُمَرُ: مَا وَجَبَتْ؟ فَقَالَ: «هَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْرًا فَوَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَهَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرًّا فَوَجَبَتْ لَهُ النَّارُ أَنْتُم شُهَدَاء الله فِي الأَرْض» . وَفِي رِوَايَةٍ: «الْمُؤْمِنُونَ شُهَدَاءُ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ»

وعن انس قال مروا بجنازة فاثنوا عليها خيرا فقال النبي صلى الله عليه وسلم وجبت ثم مروا باخرى فاثنوا عليها شرا فقال وجبت فقال عمر ما وجبت فقال هذا اثنيتم عليه خيرا فوجبت له الجنة وهذا اثنيتم عليه شرا فوجبت له النار انتم شهداء الله في الارض وفي رواية المومنون شهداء الله في الارض

ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, اَلْوُجُوْبُ (উজূব) দ্বারা উদ্দেশ্য الثبوت সাব্যস্ত হওয়া। ওয়াজিব হওয়া কোন বস্ত্তর ক্ষেত্রেই কেবল প্রযোজ্য। আল্লাহর ওপর কোন কিছু ওয়াজিব হয় না। আল্লাহ যে সাওয়াব দেন এটা তার অনুগ্রহ, আর তিনি যদি কোন শাস্তি দেন তবে সেটা তার ন্যায় বিচার। তিনি যা করেন সে ব্যাপারে কেউ তার উপর কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না। সহীহুল বুখারীতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘তোমরা যার উপর ভাল প্রশংসামূলক সাক্ষ্যদান করেছ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে’’। এটি অন্যান্য বর্ণনার তুলনায় অধিক স্পষ্ট।

এটা সাহাবীগণের জন্যই খাস নয়, বরং ঈমান ইয়াকীনে যে কেউই ঐ গুণাবলী অর্জনে সক্ষম হবে সে এ মর্যাদা পাবে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘তোমরা (জমিনে) আল্লাহর সাক্ষী’’। আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ এর অর্থ এই নয় যে, সাহাবীগণ বা মু’মিনগণ কারো ব্যাপারে যা বলল তাই হলো। কারণ যে জান্নাতের হকদার সে কখনো তাদের কথায় জাহান্নামী হতে পারে না অনুরূপ তার বিপরীতও হতে পারে না। বরং এর অর্থ হলো লোকেরা যার জীবনে কল্যাণকর কাজ দেখবে তার-ই প্রশংসা করবে। আর কল্যাণকর কাজ-ই তো জান্নাতে যাওয়ার কারণ ও আলামত। সুতরাং নেক ‘আমল দেখে তার ব্যাপারে বলা যায় সে জান্নাতী। (এটাই হলো মু’মিনদের সাক্ষী)।

আল্লামা নাবাবী বলেন, আহলে ফাযল এবং দীনদারগণ যাদের প্রশংসা করে তাদের জন্যই এ কথা খাস। এ প্রশংসা যদি বাস্তবতার অনুকূলে হয় তাহলে সে জান্নাতী আর যদি বাস্তব ‘আমলের বিপরীত হয় তাহলে সে জান্নাতী হবে না। কিন্তু সত্য কথা হলো এ হুকুম ‘আম এবং মুত্বলাক্ব। মু’মিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে আল্লাহ তখন মানুষের অন্তরে ইলহাম করে দেন ফলে সে তার বড় বড় প্রশংসা করে। এটাও তার জান্নাতী হওয়ার দলীল, ‘আমল তার যাই হোক। আর শাস্তি দেয়া যেহেতু আল্লাহর জন্য আবশ্যক নয়, বরং তার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। এর দ্বারা আমরা প্রমাণ (ও আশা) করতে পারি যে, এ প্রশংসার খাতিরে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। সুতরাং প্রশংসার উপকারিতা অবশ্যই সাব্যস্ত। তা না হলে শুধু কর্মই যদি জান্নাতের জন্য যথেষ্ঠ হত তাহলে প্রশংসা বেকার হত, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশংসার কথা বলতেন না। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সন্দেহাতীতভাবে তা প্রমাণিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৬৩-[১৮] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম ব্যক্তির ভাল হবার ব্যাপারে চারজন লোক সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমরা আরয করলাম, যদি তিনজন (সাক্ষ্য দেয়)। তিনি বললেন, তিনজন দিলেও। আমরা (আবার) আরয করলাম, যদি দু’জন সাক্ষ্য দেয়? তিনি বললেন, দু’জন সাক্ষ্য দিলেও। তারপর আমরা আর একজনের (সাক্ষ্যের) ব্যাপারে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। (বুখারী)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا مُسْلِمٍ شَهِدَ لَهُ أَرْبَعَةٌ بِخَيْرٍ أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ» قُلْنَا: وَثَلَاثَةٌ؟ قَالَ: «وَثَلَاثَةٌ» . قُلْنَا وَاثْنَانِ؟ قَالَ: «وَاثْنَانِ» ثُمَّ لم نَسْأَلهُ عَن الْوَاحِد. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ايما مسلم شهد له اربعة بخير ادخله الله الجنة قلنا وثلاثة قال وثلاثة قلنا واثنان قال واثنان ثم لم نساله عن الواحد رواه البخاري

ব্যাখ্যা: সাক্ষ্য দানের নিসাব অধিকাংশ সময় দু’জন, এটা ন্যূনতম পরিমাণ, সুতরাং এ দু’ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। জান্নাত লাভের মতো একটি মহান মর্যাদা লাভ দু’জনের চেয়ে কমে সাক্ষ্যতে লাভ করা সম্ভব নয়। এজন্য ‘উমার (রাঃ) একজনের ব্যাপারে আর প্রশ্ন তোলেননি। দ্বিতীয়তঃ জান্নাত লাভের দুর্লভ মর্যাদা মাত্র একজন ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে পাওয়া সে তো সুদূর পরাহত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৬৪-[১৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। কেননা তারা নিশ্চিতভাবে তাদের কৃতকর্মের ফল পেয়ে গেছে। (বুখারী)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَسُبُّوا الْأَمْوَاتَ فَإِنَّهُمْ قَدْ أَفْضَوْا إِلَى مَا قدمُوا» رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تسبوا الاموات فانهم قد افضوا الى ما قدموا رواه البخاري

ব্যাখ্যা: মৃত ব্যক্তিদের গালি দেয়ার নিষেধাজ্ঞাটি ‘আম বা সার্বজনীন। মুসলিম কাফির এতে কোন ভেদাভেদ নেই। কেউ কেউ বলেছেনঃ এ নিষেধাজ্ঞাটি শুধু মুসলিমের ক্ষেত্রে অমুসলিমদের বেলায় নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।

কেননা الْأَمْوَاتَ শব্দের মধ্যে লাম বর্ণটি عهدى বা জানা, অর্থাৎ জানা-বিশেষ বা নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মৃতদের গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, স্বতন্ত্র দলীল না আসা পর্যন্ত হাদীসের অর্থ ‘আমভাবেই গ্রহণ করতে হবে। যেমন- হাদীসের রাবীদের সমালোচনা করা বৈধ। এতে স্বতন্ত্র দলীল এবং উম্মাতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সমালোচনা জীবিত মৃত কাফির মুশরিক সকলেই সমান।

মৃতদের গালি দেয়া নিষেধের কারণ বলা হয়েছে যে, তারা তো তাদের কৃতকর্মের ফলাফল পেয়ে গেছে, এখন তোমার গালি দেয়াতে তাদের কোন ক্ষতিও হবে না এবং কোন লাভও হবে না। যেমন জীবিতদের বেলায় হয়ে থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৬৫-[২০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শাহীদদের দু’ দু’জনকে এক কাপড়ে জমা করেন। তারপর বলেন, কুরআন মাজীদ এদের কারো বেশী মুখস্থ ছিল? এরপর দু’জনের যার বেশী কুরআন মুখস্থ আছে বলে ইশারা করা হয়েছে, তাকে আগে কবরে রাখেন এবং বলেন, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমি এদের জন্য সাক্ষ্য দিব। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে দাফন করার নির্দেশ দেন। তাদের জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)ও আদায় করেননি গোসলও দেয়া হয়নি। (বুখারী)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يجمع بَين الرجلَيْن فِي قَتْلَى أُحُدٍ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ ثُمَّ يَقُولُ: «أَيُّهُمْ أَكْثَرُ أَخْذًا لِلْقُرْآنِ؟» فَإِذَا أُشِيرَ لَهُ إِلَى أَحَدِهِمَا قَدَّمَهُ فِي اللَّحْدِ وَقَالَ: «أَنَا شَهِيدٌ عَلَى هَؤُلَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . وَأَمَرَ بِدَفْنِهِمْ بِدِمَائِهِمْ وَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يُغَسَّلُوا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن جابر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يجمع بين الرجلين في قتلى احد في ثوب واحد ثم يقول ايهم اكثر اخذا للقران فاذا اشير له الى احدهما قدمه في اللحد وقال انا شهيد على هولاء يوم القيامة وامر بدفنهم بدماىهم ولم يصل عليهم ولم يغسلوا رواه البخاري

ব্যাখ্যা: উহুদের শাহীদানদের দু’জনকে এক কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। এটা অনিবার্য কারণেই করা হয়েছিল। প্রশ্ন হলো দু’জনকে পর্দাহীনভাবে এক কাপড়ে কাফন দেয়া ঠিক নয় এতে দু’জনের শরীর লাগালাগি হয়ে যায়। কিন্তু হাদীসের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিলে এ প্রশ্ন রদ হয়ে যায়। কেননা এক কাপড় দেয়ার অর্থ এই নয় যে, পর্দাবিহীন দু’জনের শরীর একত্রে লাগালাগি হয়ে গিয়েছিল, কারণ শাহীদদের তো পরনের রক্তমাখা কাপড় খোলা হয় না, বরং পরনের কাপড়সহই কাফন দিতে হয়, সুতরাং পরস্পর শরীর লাগালাগির প্রশ্নই আসে না।

হতে পারে শাহীদের পরনের কাপড়ের উপর দিয়ে প্রতি দু’জনকে একটি করে চাদর বহিরাবরণী দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল, অথবা একটি লম্বা চাদর দু’ টুকরা করে প্রতি দু’জনকে ঢেকে দেয়া হয়েছিল সেটাই বর্ণনার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে দু’জনকে এক চাদরে কাফন দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি অনিবার্য প্রয়োজনে এটা জায়িয। প্রয়োজনে এক কাপড়ে দু’জনকে কাফন দেয়ার মতই এক ক্ববরেও দু’জনকে রাখা জায়িয। এ ক্ষেত্রে দু’জনের মধ্যে যার কুরআনের জ্ঞান বেশী হবে তাকেই আগে ক্ববরে রাখতে হবে এবং ক্বিবলার দিকে রাখতে হবে। এটাই মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মর্যাদার কারণে।

ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য সাক্ষ্য দিবেন, এটাও শাহীদদের সম্মান ও মর্যাদার কারণে।

এখানে জানা গেল যে, কাফিরদের সাথে যুদ্ধে নিহত শাহীদদের গোসল এবং জানাযাহ্ কোনটিই দিতে হবে না। এর প্রমাণে অনেক হাদীস রয়েছে। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব প্রমুখ ইমামগণ এ মতই অবলম্বন করেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) এবং অন্য কতিপয় ‘আলিম সাধারণ মৃত্যুদের মতই শাহীদদেরও গোসল-জানাযার কথা বলেছেন। তিনি ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির বলেনঃ

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শাহীদদের জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। শাফি‘ঈদের পক্ষ থেকে এর প্রতিউত্তরে বলা হয়েছেঃ এ সালাতের অর্থ (প্রচলিত) সালাত নয় বরং দু‘আ ইস্তিগফার। ইমাম নাবাবীও বলেন, সালাতের অর্থ এখানে দু‘আ। মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে দু‘আর অর্থই উপযুক্ত। ‘আমির ইয়ামানী বলেনঃ সালাত যে এখানে দু‘আর অর্থে এসেছে তার প্রমাণ হলো এ সালাতের জন্য তিনি সকলকে ডেকে জামা‘আতবদ্ধ করেননি যেমনটি তিনি নাজাশী বাদশাহর জানাযার ক্ষেত্রে করেছিলেন। অথচ জামা‘আতের সাথে জানাযার নামায আদায় করা অকাট্যভাবেই উত্তম। আর উহুদের শাহীদগণ তো শ্রেষ্ঠ মানুষই ছিলেন, কিভাবে এ শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোর জানাযাহ্ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী আদায় করলেন? আরো কথা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ক্ববরের উপর একাকী জানাযাহ্ পড়ার কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।

শাহীদদের গোসল না দেয়ার হিকমাত হলো এই যে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন ঐ ক্ষত ও রক্ত থেকে মেশক আম্বারের ন্যায় ঘ্রাণ বের হতে থাকবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »