পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

জেনে রাখা দরকার যে, জামা’আতে সালাতের বিধান কখন থেকে শুরু হয়েছে তা নিয়ে ’আলিমদের মতানৈক্য রয়েছে। ইবনু হাজার মাক্কী দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, জামা’আতে সালাতের বিধান মদীনাতে শুরু হয়েছে।

শায়খ রিয্ওয়ান বলেনঃ জামা’আতে সালাতের বিধান মক্কাতেই শুরু হয়েছে। প্রমাণ স্বরূপ তিনি বলেন যে, মি’রাজের ঘটনার রাতের সকালে তথা ফজরে জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এবং সাহাবীগণের নিয়ে জামা’আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজাহ্ (রাঃ) ও ’আলী (রাঃ)-কে নিয়ে মক্কাতে জামা’আতে সালাত আদায় করেছেন। তবে তা প্রকাশ পায়নি এবং নিয়মিতভাবে মদীনাতেই জামা’আতে সালাত আদায় করেছেন, তার আগে নয়। এজন্যই বলা হয় যে, মদীনাতে জামা’আতের বিধান শুরু হয়েছে।

জামা’আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব নাকি সুন্নাত এ নিয়েও ’আলিমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।

হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন যে, ’আত্বা, আওযা’ঈ, আহমাদ, আবূ সাওর, ইবনু খুযায়মাহ্ এবং ইবনুল মুনযির-এর মতে জামা’আতে সালাত আদায় করা ফারযে ’আইন।

দাঊদ জাহিরী এবং তার অনুসারীদের মতে সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জামা’আত শর্ত।

ইমাম শাফি’ঈর মতে জামা’আতে সালাত আদায় করা ফারযে কিফায়াহ্। এ মত গ্রহণ করেছেন শাফি’ঈ মাযহাবের পূর্বসুরী ’আলিমগণ এবং অনেক হানাফী ও মালিকী ’আলিমগণ।

অন্যান্য ’আলিমদের মতে জামা’আতে সালাত আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্।

ইমাম বুখারী জামা’আতে সালাত আদায় করাকে ফারযে আইন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি অত্র অধ্যায়ে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত ২নং হাদীসের অধ্যায় রচনা করেছেন এভাবে (باب وجوب صلاة الجماعة) ’জামা’আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গ’। অতঃপর তিনি হাসান বসরী (রহঃ)-এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন যে, তার মা তাকে করুণার বশবর্তী হয়ে ’ইশার সালাতে জামা’আতে উপস্থিত হতে বারণ করেন, কিন্তু তিনি তার মায়ের আনুগত্য করেননি। এ থেকে বুঝা যায় যে, জামা’আতে সালাত আদায় করা ফারযে আইন।

আমি (মুবারকপূরী) মনে করি যে, জামা’আতে সালাত আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ হলেও তা ওয়াজিবের কাছাকাছি। যাতে উভয় প্রকারের হাদীসের মধ্যে সমন্বয় হয়।


১০৫২-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একা একা সালাত আদায় করার চেয়ে জামা’আতে সালাত আদায় করলে সাতাশ গুণ সাওয়াব বেশি হয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلَاةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلَاة الْفَذ بِسبع وَعشْرين دَرَجَة»

عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة الجماعة تفضل صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة

ব্যাখ্যা: ইমাম তিরমিযী বলেনঃ অধিকাংশ রাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন জামা‘আতে সালাত আদায় করা একাকী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ সাওয়াব বেশী। যেমন আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। শুধুমাত্র ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে এর সাওয়াব ২৭ গুণ বেশী। এ দুই বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় কিভাবে করা যায় সে ব্যাপারে ‘আলিমদের মাঝে অনেক বক্তব্য রয়েছে।

১. সংখ্যায় কম এর উল্লেখ বেশী সংখ্যার বিরোধী নয়, কেননা কম সংখ্যা তো বেশী সংখ্যার মধ্যে নিহিত রয়েছে।

২. হতে পারে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে কম সংখ্যা অর্থাৎ পঁচিশ গুণের কথা বলেছেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তাকে এর মর্যাদা আরো বেশী বলে অবহিত করেছেন। তখন তিনি বেশী তথা সাতাশ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন।

৩. মসজিদের দূরত্বের কারণে ফাযীলাত কম বা বেশী

৪. জামা‘আতের লোক সংখ্যার কম বেশীর কারণে ফাযীলাত কম বা বেশী ইত্যাদি।

হাদীসে শিক্ষা:

  1. জামা‘আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব নয়।
  2. সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্যও জামা‘আত শর্ত নয়।

কেননা যদি একাকী সালাত আদায় করলে তা যথেষ্ট না হতো তাহলে এটা বলা ঠিক হত না যে, জামা‘আতের সালাত একাকী সালাতের চেয়ে বেশী ফাযীলাতপূর্ণ। অনুরূপ একাকী সালাতের যদি কোন মর্যাদাই না থাকতো তাহলে এটাও বলা ঠিক হতো না যে, জামা‘আতে সালাত আদায় করলে তার মর্যাদা একাকী সালাত আদায় করার চাইতে পঁচিশ গুণ বা সাতাশ গুণ সাওয়াব বেশী।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৫৩-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ঐ পবিত্র সত্বার শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন নিবদ্ধ। আমি মনে করেছি কোন (খাদিমকে) লাকড়ি জোগার করার আদেশ করব। লাকড়ি জোগার করা হলে আমি (’ইশার) সালাতের আযান দিতে আদেশ করব। আযান হয়ে গেলে সালাতের ইমামতি করার জন্যে কাউকে আদেশ করব। তারপর আমি ঐসব লোকের খোঁজে বের হবো (যারা কোন কারণ ছাড়া জামা’আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়ার জন্য আসেনি)।

অপর সূত্রে আছেঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আমি ঐসব লোকের কাছে যাবো যারা সালাতে হাযির হয় না এবং আমি তাদেরকে ঘরবাড়ীসহ জ্বালিয়ে দেব। সে সত্বার কসম যার হাতে আমার জীবন আবদ্ধ! যারা সালাতের জামা’আতে অংশ গ্রহণ করে না তাদের কোন ব্যক্তি যদি জানে যে, মসজিদে মাংস সহ হাড় অথবা (গাভী ও বকরীর) দু’টি ভাল খুর পাওয়া যাবে, তাহলে সে অবশ্যই ’ইশার সালাতে উপস্থিত হয়ে যেত। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِحَطَبٍ فَيُحْطَبَ ثُمَّ آمُرَ بِالصَّلَاةِ فَيُؤَذَّنَ لَهَا ثُمَّ آمُرَ رَجُلًا فَيَؤُمَّ النَّاسَ ثُمَّ أُخَالِفَ إِلَى رِجَالٍ. وَفِي رِوَايَةٍ: لَا يَشْهَدُونَ الصَّلَاةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ يَعْلَمُ أَحَدُهُمْ أَنَّهُ يَجِدُ عَرْقًا سَمِينًا أَوْ مِرْمَاتَيْنِ حَسَنَتَيْنِ لَشَهِدَ الْعِشَاءَ . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَلمُسلم نَحوه

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم والذي نفسي بيده لقد هممت ان امر بحطب فيحطب ثم امر بالصلاة فيوذن لها ثم امر رجلا فيوم الناس ثم اخالف الى رجال وفي رواية لا يشهدون الصلاة فاحرق عليهم بيوتهم والذي نفسي بيده لو يعلم احدهم انه يجد عرقا سمينا او مرماتين حسنتين لشهد العشاء رواه البخاري ولمسلم نحوه

ব্যাখ্যা: (لَا يَشْهَدُونَ الصَّلَاةَ) ‘সালাতে উপস্থিত হয় না’ অর্থাৎ জামা‘আতে উপস্থিত হয় না কোন ওযর না থাকা সত্ত্বেও। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় আছে, (ثم آتى قوماً يصلون في بيوتهم ليست بهم علة) ‘অতঃপর আমি এমন ক্বাওমের নিকট যাই যারা বিনা ওযরে ঘরেই সালাত আদায় করে’ এখান থেকে বুঝা যায় হাদীসে যে শাস্তির কথা উল্লেখ আছে তা বিনা ওযরে জামা‘আত পরিত্যাগ করার কারণে সালাত পরিত্যাগের কারণে নয়। এতে এটাও প্রমাণিত হয় যে, ওযর থাকলে জামা‘আত পরিত্যাগ করা বৈধ।

এ হাদীস প্রমাণ বহন করে যে, জামা‘আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা ফারযে আইন। কেননা তা যদি সুন্নাত হত তাহলে জামা‘আত পরিত্যাগকারীকে শাস্তির ভয় দেখাতেন না। অনুরূপভাবে তা যদি ফারযে কিফায়াহ্ হত তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদের দ্বারাই তা আদায় হয়ে যেত।

(لَشَهِدَ الْعِشَاءَ) অবশ্যই ‘ইশাতে উপস্থিত হত। অর্থাৎ ‘ইশার সালাতে জামা‘আতে উপস্থিত হত। মোট কথা এই যে, যদি সে জানতে পারতো যে সে যদি জামা‘আতে উপস্থিত হয় তাহলে দুনিয়াবী কোন ফায়দা পাওয়া যাবে যদিও তা সামান্য অতি নগণ্য হয় তবুও সে জামা‘আতে উপস্থিত হত। কেননা তাদের সকল চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হল দুনিয়া। তাই তারা জামা‘আতে সালাতের যে পরকালীন সাওয়াব ও পুরস্কার রয়েছে তাদের তা অর্জনের কোন অভিপ্রায় নেই বলেই তারা তাতে উপস্থিত হয় না।

অত্র হাদীস থেকে যা প্রমাণিত হয়ঃ

(১) শাস্তির ভয় দেখানো বৈধ।

(২) মাল দ্বারা শাস্তি অর্থাৎ জরিমানা বৈধ।

(৩) পাপীদেরকে তাদের অসতর্ক অবস্থায় পাকড়াও করা বৈধ।

(৪) যারা বাড়ীতে লুকিয়ে থাকে অথবা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করে তাদের বের করে আনার নিমিত্তে ইমামের অথবা তার স্থলা ব্যক্তির জন্য জামা‘আত পরিত্যাগ করা বৈধ।

(৫) পাপের আড্ডাখানা গুড়িয়ে দেয়া বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৫৪-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একজন অন্ধ লোক এসে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার এমন কোন চালক নেই যে আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে। তিনি রসূলের নিকট আবেদন করলেন তাকে যেন ঘরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের অবকাশ দেয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অবকাশ দিলেন। সে ফিরে চলে যাওয়া মাত্রই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি কি সালাতের আযান শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে অবশ্যই আযানের সাড়া দিবে (অর্থাৎ নিজেকে জামা’আতে শরীক করবে)। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنْهُ قَالَ: أَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ أَعْمَى فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ لَيْسَ لِي قَائِدٌ يَقُودُنِي إِلَى الْمَسْجِدِ فَسَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُرَخِّصَ لَهُ فَيُصَلِّيَ فِي بَيْتِهِ فَرَخَّصَ لَهُ فَلَمَّا وَلَّى دَعَاهُ فَقَالَ: «هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ؟» قَالَ: نَعَمْ قَالَ: «فَأَجِبْ» . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال اتى النبي صلى الله عليه وسلم رجل اعمى فقال يا رسول الله انه ليس لي قاىد يقودني الى المسجد فسال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يرخص له فيصلي في بيته فرخص له فلما ولى دعاه فقال هل تسمع النداء بالصلاة قال نعم قال فاجب رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (أَجِبْ) ‘সাড়া দাও’ অর্থাৎ সালাতের আহবানে সাড়া দিয়ে তা কার্যে পরিণত কর তথা জামা‘আতে উপস্থিত হও। বলা হয়ে থাকে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে অন্ধ ব্যক্তিকে জামা‘আতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি ছিল তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহর নিকট থেকে ওয়াহী আসার ফলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জামা‘আতে উপস্থিত হওয়ার আদেশ দেন। এটাও বলা হয় যে, প্রথমে তাকে অনুমতি দিয়েছেন তার ওযর থাকার কারণে পরবর্তীতে যে আদেশ দেন তা তার জন্য ওয়াজিব নয় বরং তা ছিল তার জন্য উৎসাহমূলক অর্থাৎ তোমার জন্য উত্তম হলো ডাকে সাড়া দিয়ে জামা‘আতে হাজির হওয়া। তাহলে তুমি বড় ধরনের পুরস্কার পাবে।

হাদীসের শিক্ষাঃ জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া ফারযে ‘আইন। অতএব সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী জামা‘আত পরিত্যাগ করার কারণে গুনাহগার হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৫৫-[৪] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এক শৈত্য প্রবাহে শীতের রাতে সালাতের আযান দিলেন। আযান দেয়ার পর তিনি বললেন, সাবধান! তোমরা নিজ নিজ আবাসে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর। এরপর বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঠান্ডা শীত-বৃষ্টি মুখর রাতে মুয়াযযিনকে আদেশ দিতেন সে আযান দেয়ার পর যেন বলে দেয়, ’সাবধান! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায় কর।’ (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّهُ أَذَّنَ بِالصَّلَاةِ فِي لَيْلَةٍ ذَاتِ بَرْدٍ وَرِيحٍ ثُمَّ قَالَ أَلَا صَلُّوا فِي الرِّحَالِ ثُمَّ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْمُرُ الْمُؤَذِّنَ إِذَا كَانَتْ لَيْلَةٌ ذَاتُ بَرْدٍ وَمَطَرٍ يَقُولُ: «أَلَا صَلُّوا فِي الرِّحَالِ»

وعن ابن عمر انه اذن بالصلاة في ليلة ذات برد وريح ثم قال الا صلوا في الرحال ثم قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يامر الموذن اذا كانت ليلة ذات برد ومطر يقول الا صلوا في الرحال

ব্যাখ্যা: (أَلَا صَلُّوا فِي الرِّحَالِ) ‘তোমরা বাড়ীতেই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর’। رحال শব্দটি رحل-এর বহুবচন যার অর্থ বাসস্থান ও আসবাবপত্র রাখার জায়গা। এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, ঠান্ডা, বৃষ্টি এবং প্রচন্ড বায়ু এগুলোর প্রত্যেকটিই জামা‘আত ত্যাগ করার জন্য ওযর। জমহূর ‘উলামাদের অভিমত এটিই। তবে শাফি‘ঈ, মালিকী ও হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ অভিমত হল প্রচন্ড ঠান্ডা দিবা-রাত্রি সকল সময়ের জন্যই ওযর। উপরে বর্ণিত বাক্যটি মুয়াযযিন কখন বলবে? এ বিষয়ে বুখারীর একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াযযিনকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিতেন। অতঃপর আযান শেষে উপরোক্ত বাক্য উচ্চারণের নির্দেশ দিতেন। কিন্তু বুখারী ও মুসলিমে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, মুয়াযযিন যখন حى على الصلوة বলার স্থনে পৌঁছালেন তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মুয়াযযিনকে حى علي الصلاة حى على الفلاح এর পরিবর্তে উক্ত বাক্য বলতে আদেশ দিলেন এবং বললেন আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন। এতে বুঝা যায় যে, উভয় পদ্ধতিই জায়িয আছে। তবে উত্তম হলো আযানের শেষে তা বলা যাতে আযানের ছন্দ বিনষ্ট না হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৫৬-[৫] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো রাতের খাবার সামনে রাখা হলে এমতাবস্থায় সালাতের তাকবীর বলা হলে, তখন রাত্রের খাবার খাওয়া শুরু করবে। খাবার খেতে তাড়াহুড়া করবে না খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর সামনে খাবার রাখা হত এমতাবস্থায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু হলে তিনি খাবার খেয়ে শেষ করার আগে সালাতের জন্য যেতেন না, এমনকি তিনি ইমামের ক্বিরাআত (কিরআত) শুনতে পেলেও। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا وُضِعَ عَشَاءُ أَحَدِكُمْ وَأُقِيمَتِ الصَّلَاة فابدؤوا بِالْعَشَاءِ وَلَا يَعْجَلْ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهُ» وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُوضَعُ لَهُ الطَّعَامُ وَتُقَامُ الصَّلَاةُ فَلَا يَأْتِيهَا حَتَّى يَفْرُغُ مِنْهُ وَإِنَّهُ لِيَسْمَعَ قِرَاءَةَ الْإِمَامِ

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا وضع عشاء احدكم واقيمت الصلاة فابدووا بالعشاء ولا يعجل حتى يفرغ منه وكان ابن عمر يوضع له الطعام وتقام الصلاة فلا ياتيها حتى يفرغ منه وانه ليسمع قراءة الامام

ব্যাখ্যা: (إِذَا وُضِعَ عَشَاءُ أَحَدِكُمْ) ‘যখন তোমাদের রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়’। এ বাক্য থেকে জানা যায় যে, যখন খাবার উপস্থিত করা হয় তথন আগে খেয়ে পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাই উত্তম। তবে খাবার রান্না করা থাকলে বা তা পাত্রে সংরক্ষিত থাকলেও যদি তা খাবার জন্য উপস্থিত না করা হয় তবে আগে সালাত আদায় করে নিবে।

(فَابْدَؤُوْا بِالْعَشَاءِ) ‘আগে রাতের খাবার খেয়ে নাও’। এখানে আদেশের মর্মার্থ নিয়ে ‘আলিমদের মতভেদ রয়েছে। জমহূর ‘উলামাদের মতে এ নির্দেশ ওয়াজিব বুঝায় না বরং তা উত্তম বা পছন্দনীয়। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের আহবানে সাড়া দিয়ে খাবার অবস্থায় স্বীয় হাতের গোশত (গোশত/গোস্ত/গোসত) ফেলে দিয়ে সালাতে চলে গেলেন। যদি আগে খাবার খাওয়া ওয়াজিব হত তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার পরিত্যাগ করে সালাত আদায়ের জন্য চলে যেতেন না।

অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, খাবার উপস্থিত করা জামা‘আত পরিত্যাগ করার জন্য একটি ওযর। কেননা ইবনু ‘উমার (রাঃ) সালাতের ইক্বামাত শুনার পরও খাবার পরিত্যাগ করে জামা‘আতে যোগদান করতেন না যতক্ষণ না তার খাবার খাওয়া শেষ করতেন।

এ হাদীস থেকে এটাও সাব্যস্ত হয় যে, খাবার উপস্থিত করা হলে এমতাবস্থায় সালাত আদায় করা মাকরূহ। ইমাম নাবাবী বলেনঃ এটা এমন সময়ের জন্য যখন সালাতের সময় প্রশস্ত থাকে অর্থাৎ প্রচুর সময় থাকে কিন্তু যদি সালাতের সময় সংকীর্ণ হয়ে যায় তা হলে আগে সালাত আদায় করতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৫৭-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছিঃ খাবার সামনে রেখে কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নেই এবং দু’ অনিষ্ট কাজ (পায়খানা-পেশাব) চেপে রেখেও কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নেই। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «لَا صَلَاة بِحَضْرَة طَعَام وَلَا هُوَ يدافعه الأخبثان»

وعن عاىشة رضي الله عنها انها قالت سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لا صلاة بحضرة طعام ولا هو يدافعه الاخبثان

ব্যাখ্যা: (لَا صَلَاة بِحَضْرَة طَعَام) ‘খাবার উপস্থিত হলে সালাত নেই’ অর্থাৎ খাবার উপস্থিত রেখে সালাত আদায় পূর্ণাঙ্গ হয় না। এটা বলা হয়ে থাকে যে, এখানে নফী আর্থাৎ নেতিবাচকের অর্থ হল নিষেধাজ্ঞাসূচক যেমনটি আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় রয়েছে (لَا صَلَاة بِحَضْرَة طَعَامٍ) কোন ব্যক্তি উপস্থিত খাবার রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে না।

(وَلَا هُوَ يدافعه الأخبثان) আর এ অবস্থায়ও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে না যখন পেশাব বা পায়খানা যখন তাকে প্রচন্ড চাপ দেয়। পেশাব ও পায়খানার চাপের মতো অন্য কোন প্রকার চাপ যেমন বায়ু নিগর্ত হওয়ার চাপ এবং বমির চাপ এরূপ অবস্থায়ও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে না। কারণ তা সালাতে মনোযোগ দানে বাধার সৃষ্টি করে যেমন নাকি পেশাব পায়খানার চাপে বাধা সৃষ্টি করে। তবে যদি পেশাব পায়খানার প্রয়োজনবোধ করে কিন্তু তা তেমন চাপ সৃষ্টি না করে তাহলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ নেই। শুধুমাত্র পেশাব পায়খানার চাপ বা বেগ নিয়ে সালাত আদায় করা মাকরূহ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৫৮-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া হলে তখন ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ব্যতীত অন্য কোন সালাত নেই। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اقيمت الصلاة فلا صلاة الا المكتوبة رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (إِذَا أُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ) ‘‘যখন সালাতের জন্য মুয়ায্যিন ইক্বামাত বলে’’ অর্থাৎ মুয়াযযিন ইক্বামাত বলতে শুরু করে। যাতে মুক্তাদীগণ ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমাতে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্ত্তত হয়।

(فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَة) ‘‘তখন ফরয সালাত ব্যতীত সালাত নেই’’। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নেই অর্থাৎ সালাত বিশুদ্ধ হয় না অথবা এখানে (নফি) নেতিবাচক শব্দ দ্বারা নিষেধ উদ্দেশ্য। তাহলে হাদীসের অর্থ দাঁড়াল সালাতের জন্য ইক্বামাত বলা শুরু হলে তখন ঐ ফরয সালাত ব্যতীত কোন নফল সালাত শুরু করা নিষেধ। এ অর্থকে শক্তিশালী করে ইমাম বুখারী কর্তৃক তার তারীখ গ্রন্থে এবং ইমাম বাযযার-এর বাযযার গ্রন্থে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ যখন সালাতের জন্য ইক্বামাত বলা হলো তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং লোকদেরকে ফজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত সালাত আদায় করতে দেখে বললেনঃ দু’ সালাত একত্রে আদায় করা হচ্ছে। আর ইক্বামাত হয়ে গেলে তিনি ঐ দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতে নিষেধ করলেন। আর নিষেধ দ্বারা হারাম উদ্দেশ্য। কেননা নিষেধের আসল অর্থ হলো হারাম। উল্লেখ্য যে, যে সালাতের জন্য ইক্বামাত বলা হয় কোন ব্যক্তি আগেই এ সালাত আদায় করে থাকলে তার জন্য ইমামের পিছনে নফল সালাতের নিয়্যাতে ইমামের ইকতিদা করা বৈধ অন্য দলীলের ভিত্তিতে।

হাদীসের শিক্ষা: ইক্বামাত বলাকালীন সময়ে অথবা ইক্বামাত বলার পরে ইমাম সালাত শুরু করার পরে নিয়মিত সুন্নাত বা অন্য কোন নফল সালাতে ব্যস্ত থাকা নিষিদ্ধ। চাই তা ফাজরের (ফজরের) নিয়মিত সুন্নাত হোক বা অন্য কোন ওয়াক্তের নিয়মিত সুন্নাত হোক। চাই মসজিদের ভিতরে হোক বা মসজিদের কোন সাইটে বা খাম্বার পিছনে, অথবা কাতারের মাঝে বা কাতারের পিছনে অথবা মসজিদের বাইরে দরজার নিকটে, সর্বাবস্থায় ইক্বামাত বলার পর নফল সালাত আদায় নিষিদ্ধ। যে ব্যক্তি ফাজরের (ফজরের) নিয়মিত দু’ রাক্‘আত সুন্নাত সালাত আদায় করেনি, সে ব্যক্তি কি ফাজরের (ফজরের) সালাতে ইক্বামাতের সময় ঐ দু’ রাক্‘আত আদায় করবে? এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

(১) আহলে যাহিরদের মতে ইক্বামাত শ্রবণ করার পর ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত বা অন্য কোন নফল সালাত শুরু করা বৈধ নয়। আর হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এ মতটিকেই প্রাধান্য দেয়।

(২) ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ-এর মতে এ সময়ে ঐ দু’ রাক্‘আত সালাত বা কোন নফল সালাত আদায় করা মাকরূহ। তবে ইবনু কুদামাহ্ আল মুগনী গ্রন্থে বলেনঃ যখন সালাতের ইক্বামাত বলা হবে তখন নফল সালাত নিয়ে ব্যস্ত থাকবে না রাক্‘আত ছুটে যাবার আশংকা থাক বা না থাক। ইমাম শাফি‘ঈর অভিমতও এটাই। এতে বুঝা যায় যে, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ আহলুয্ যাহিরদের মতের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন।

(৩) ইমাম মালিক-এর মতে যদি কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করার জন্য মসজিদে প্রবেশ করার পর যদি ইক্বামাত বলা হয় তাহলে ইমামের সাথে সালাতে শরীক হবে এবং তখন আর ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করবে না। আর যদি মসজিদে প্রবেশ না করে থাকে এবং রাক্‘আত ছুটে যাওয়ার আশংকা না থাকে তাহলে মসজিদের বাইরে সুন্নাত আদায় করে নিবে। আর যদি প্রথম রাক্‘আত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে ইমামের সাথে সালাতে শরীক হবে।

(৪) ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ যদি উভয় রাক্‘আত ছুটে যাওয়ার আশংকা করে এবং ইমাম ২য় রাক্‘আতের রুকূ' থেকে মাথা উঠানোর পূর্বে তার সাথে শামিল না হতে পারে তাহলে ইমামের সাথে শরীক হবে।

আর যদি দু’ রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করার পরও ইমামের সাথে ২য় রাক্‘আতের রুকূ‘তেও শামিল হতে পারে তাহলে মসজিদের বাইরে দু’ রাক্‘আত আদায় করে ইমামের সাথে জামা‘আতে শামিল হবে।

যারা ইক্বামাত হয়ে যাওয়ার পরও ফাজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করে ইমামের সাথে শামিল হওয়ার পক্ষে তারা বলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ, আবুদ্ দারদা, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং তাবি‘ঈদের মধ্যে মাসরূক, আবূ ‘উসমান আন্ নাহদী ও হাসান বসরী (রহঃ) প্রভৃতি মনিষীগণ এরূপ করতেন। এর প্রতি উত্তরে আল্লামা ‘আযীম আবাদী ‘‘ই‘লাম আহলিল আসর’’ নামক গ্রন্থে বলেনঃ সাহাবীদের মধ্যে ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ), আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), আবূ মূসা আল আশ্‘আরী ও হুযায়ফাহ্ (রাঃ) এরূপ করা বৈধ মনে করতেন না। ‘‘উমার (রাঃ) কাউকে এরূপ করতে দেখলে তাকে প্রহার করতেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার প্রতি কঙ্কর ছুঁড়ে মারতেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এরূপ করাকে অস্বীকার করতেন। আর আবূ মূসা এবং হুযায়ফাহ্ (রাঃ) সুন্নাত না আদায় করে সালাতের কাতারে প্রবেশ করতেন। আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে তার বক্তব্য ও কর্মের মধ্যে অমিল পরিলক্ষিত হয়। এরূপ অবস্থার বক্তব্যকেই দলীল হিসেবে ধরা হয়, কর্ম নয়।

আর তাবি‘ঈদের মধ্যে সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র ইবনু সীরীন, ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র ইব্রা-হীম নাখ্‘ঈ এবং ‘আত্বা, ইমামদের মাঝে শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইবনুল মুবারাক, ইসহাক্ব এবং জমহূর মুহাদ্দিসীন এরূপ করা বৈধ মনে করেন না। ইবনু ‘আবদুল বার বলেনঃ মতভেদ দেখা দিলে সুন্নাত তথা হাদীসই দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। যে ব্যক্তি সুন্নাতের আশ্রয় নিলো সে সফল হলো। ইক্বামাত হলে নফল সালাত পরিত্যাগ করে জামা‘আতের পর তা আদায় করা সুন্নাতের অনুসরণের নিকটবর্তী। অতএব সে সৌভাগ্যবান যে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সুন্নাতের অনুসরণ করে। সুন্নাত শুরু করার পর ইক্বামাত হলে কি করবে?

কিছু আহলে যাহির এবং শাফি‘ঈদের মাঝে আবূ হামিদ এবং অন্যরা বলেনঃ সুন্নাত পরিত্যাগ করবে। তাদের দলীল (فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَةَ) ইক্বামাত হয়ে গেলে ফরয সালাত ব্যতীত কোন সালাত নেই।

অন্যান্য ‘আলিমগণ হাদীসের এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘‘তোমাদের ‘আমল বিনষ্ট করো না’’ আল্লাহর এ বাণী দ্বারা খাস করেছেন। আবূ হামিদ শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, সুন্নাত পূর্ণ করতে গিয়ে যদি ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমা ছুটে যায় তাহলে সুন্নাত ছেড়ে দেয়াই উত্তম। আমি (মুবারাকপূরী) বলছিঃ যদি ইক্বামাত হওয়ার পরও তার এক রাক্‘আত সুন্নাত বাকী থাকে তাহলে সালাত ছেড়ে দিবে। আর যদি সাজদাতে অথবা তাশাহুদে থাকে তাহলে সালাত ছেড়ে না দিয়ে তা পূর্ণ করলে কোন ক্ষতি নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৫৯-[৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো স্ত্রী যদি মসজিদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করে সে যেন তাকে নিষেধ না করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا اسْتَأْذَنَتِ امْرَأَة أحدكُم إِلَى الْمَسْجِد فَلَا يمْنَعهَا»

وعن ابن عمر قال قال النبي صلى الله عليه وسلم اذا استاذنت امراة احدكم الى المسجد فلا يمنعها

ব্যাখ্যা: (إِذَا اسْتَأْذَنَتِ امْرَأَةُ أحَدِكُمْ إِلَى الْمَسْجِد) ‘‘তোমাদের কারো স্ত্রী যখন (তার স্বামীর কাছে) মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায় তাহলে সে যেন তাকে নিষেধ না করে’’।

(১) হাদীস থেকে বুঝা যায় স্ত্রীকে মসজিদে যেতে বারণ করা স্বামীর জন্য হারাম। ইমাম নাবাবী বলেনঃ এ নিষেধাজ্ঞা দ্বারা হারাম বুঝায় না বরং তা মাকরূহ।

(২) হাদীস থেকে এও বুঝা যায় যে, স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে কোন স্ত্রীর পক্ষে মসজিদে যাওয়া বৈধ। আর স্বামীর পক্ষে তখনই স্ত্রীকে অনুমতি দেয়া বৈধ যখন ঐ মহিলা মসজিদে যাওয়ার বৈধতার শর্তগুলো পূর্ণ করবে। নচেৎ নয়। শর্তগুলো নিম্নরূপঃ

(১) কোন প্রকার সুগন্ধি লাগাবে না, (২) অতিরিক্ত সাজসজ্জা করবে না, (৩) এমন গহনা পরিধান করবে না যার আওয়াজ হয়, (৪) অহংকারী বস্ত্র পরিধান করবে না, (৫) পর পুরুষের সাথে সংমিশ্রণ ঘটবে না, (৬) যুবতী নারী হবে না যাদের ফিতনার মধ্যে পরার আশংকা আছে, (৭) রাস্তা নিরাপদ হবে, তাতে কোন প্রকার ফিতনার আশংকা থাকবে না। এ শর্তগুলো পাওয়া গেলে স্বামীর পক্ষে স্ত্রীকে মসজিদে অনুমতি দেয়া বৈধ। এতদসত্ত্বেও মহিলাদের ঘন ঘন মসজিদে না যাওয়াই উচিত। কেননা হাদীসে এও বর্ণিত হয়েছে যে, মেয়েদের মসজিদে সালাত আদায় করার চাইতে ঘরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাই আফযাল তথা উত্তম।

হানাফীদের মতে সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হওয়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার বৈধতা বৃদ্ধাদের বেলায় প্রযোজ্য এবং তা শুধুমাত্র মাগরিব, ‘ইশা ও ফাজরের (ফজরের) ক্ষেত্রে। আর তাদের পরবর্তী যুগের ‘আলিমদের মতে বৃদ্ধাদের হুকুম যুবতীদের মতই। অর্থাৎ কারো পক্ষেই মসজিদে যাওয়া বৈধ নয়। তারা এজন্য ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আসারকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি দেখতে পেতেন নারীরা যা করেছে, তাহলে তিনি অবশ্যই তাদেরকে মসজিদে যেতে বারণ করতেন যেমন বানী ইসরাঈলের মহিলাদের বারণ করা হয়েছিল’’। কিন্তু এ হাদীস প্রমাণ করে না যে, মহিলাদের মসজিদে যাওয়া অবৈধ। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শারী‘আতের বিধান স্থির হয়ে গেছে। তারপরে কারো পক্ষেই শারী‘আতের মধ্যে কোন বিধান নতুন করে জারী করার অধিকার নেই যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিধানের পরিপন্থী। বরং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বক্তব্যের মাধ্যমে যা পাওয়া যায় তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি মাত্র। অর্থাৎ মসজিদে যাওয়ার জন্য সে সমস্ত শর্তসমূহ পূর্ণ করতে হবে যা পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৬০-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)-এর বিবি যায়নাব (রাঃ)বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন নারী মসজিদে গেলে সে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنْ زَيْنَبَ امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَتْ: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا شَهِدَتْ إِحْدَاكُنَّ الْمَسْجِدَ فَلَا تمس طيبا» . رَوَاهُ مُسلم

وعن زينب امراة عبد الله بن مسعود قالت قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا شهدت احداكن المسجد فلا تمس طيبا رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (إِذَا شَهِدَتْ إِحْدَاكُنَّ الْمَسْجِدَ) ‘তোমাদের মধ্যে কোন নারী যখন মসজিদে উপস্থিত হবে’ অর্থাৎ মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে (فَلَا تَمَسَّ طِيْبًا) তবে সে যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করে। অর্থাৎ সুগন্ধি না লাগায়। মুসলিমের বর্ণনায় আছে ‘‘তোমাদের মধ্যকার কোন নারী যখন ‘ইশার সালাতে উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা করে সে যেন ঐ রাতে সুগন্ধি না লাগায়’’। এ হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, মসজিদে যাইতে চাইলে সুগন্ধি লাগানো যাবে না। তবে মাসজিদ থেকে ফিরে এসে যদি সুগন্ধি লাগায় তবে কোন ক্ষতি নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৬১-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে সব মহিলা সুগন্ধি লাগায় তারা যেন ’ইশার সালাতে আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ না করে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ أَصَابَتْ بَخُورًا فَلَا تَشْهَدْ مَعَنَا الْعشَاء الْآخِرَة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرةرضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ايما امراة اصابت بخورا فلا تشهد معنا العشاء الاخرة رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (فَلَا تَشْهَدْ مَعَنَا الْعشَاء الْآخِرَة) সে যেন আমাদের সাথে ‘ইশার সালাতে উপস্থিত না হয়। কেননা এ সময়টা অন্ধকার থাকে, আর সুগন্ধি মানুষের মনের শাহওয়াত তথা যৌন খাহেশ বাড়িয়ে দেয়।

ফলে এ সময়ে মহিলা ফিতনাহ্ থেকে নিরাপদ নয়। তাই বিশেষভাবে এ সময়ে মহিলাদেরকে এ অবস্থায় মসজিদে উপস্থিত হতে বারণ করা হয়েছে। তাছাড়া পূর্বে এ কথাও উল্লেখিত হয়েছে যে, সুগন্ধি লাগিয়ে মহিলাদের মসজিদে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, তা যে সময়েই হোক না কেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে