হাদীসের নামে জালিয়াতি বার চাঁদের সালাত ও ফযীলত ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)

উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, মুহার্রাম মাসের জন্য কোনো বিশেষ সালাত নেই, তবে এ মাসে বিশেষ সিয়ামের কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে এবং এ জন্য বিশেষ সাওয়াব ও ফযীলত রয়েছে। পক্ষান্তরে সফর মাসের জন্য কোনো বিশেষ সালাতও নেই, সিয়ামও নেই। এ মাসের কোনো দিবসে বা রাত্রে কোনো প্রকারের সালাত আদায়ের বিশেষ সাওয়াব বা ফযীলতে কোনো হাদীস বর্ণিত হয় নি। অনুরূপভাবে এ মাসের কোনো দিনে সিয়াম পালনেরও কোনো বিশেষ ফযীলত কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি। এ বিষয়ে যা কিছু বলা হয় সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা।

এ মাসকে কেন্দ্র করেও অনেক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা মুসলিম সমাজে প্রচলিত হয়েছে। এগুলোকে আমরা তিন ভাগে বিভক্ত করতে পারি। প্রথম, সফর মাসের ‘অশুভত্ব’ ও ‘বালা-মুসিবত’ বিষয়ক, দ্বিতীয়, সফর মাসের প্রথম তারিখে বা অন্য সময়ে বিশেষ সালাত ও তৃতীয়, আখেরী চাহার শোম্বা বা সফর মাসের শেষ বুধবার বিষয়ক।

(ক) সফর মাসের অশুভত্ব ও এ মাসের বালা-মুসিবত

কোনো স্থান, সময়, বস্ত্ত বা কর্মকে অশুভ, অযাত্রা বা অমঙ্গলময় বলে মনে করা ইসলামী বিশ্বাসের ঘোর পরিপন্থী একটি কুসংস্কার। এ বিষয়ে আমরা পরবর্তীকালে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ। এখানে লক্ষণীয় যে, আরবের মানুষেরা জাহেলী যুগ থেকে ‘সফর’ মাসকে অশুভ ও বিপদাপদের মাস বলে বিশ্বাস করত। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের এ কুসংস্কারের প্রতিবাদ করে বলেন:

لاَ طِيَرَةَ ، وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ

‘‘...কোনো অশুভ-অযাত্রা নেই, কোনো ভুত-প্রেত বা অতৃপ্ত আত্মা নেই এবং সফর মাসের অশুভত্বের কোনো অস্তিত্ব নেই।...’’[1]

অথচ এর পরেও মুসলিম সমাজে অনেকের মধ্যে পূর্ববর্তী যুগের এ সকল কুসংস্কার থেকে যায়। এ সকল কুসংস্কারকে উস্কে দেয়ার জন্য অনেক বানোয়াট কথা হাদীসের নামে বানিয়ে সমাজে প্রচার করেছে জালিয়াতগণ। এ সকল জাল কথার মধ্যে রয়েছে: এ মাস বালা মুসিবতরে মাস। এ মাসে এত লক্ষ এত হাজার... বালা নাযিল হয়।.. এ মাসেই আদম ফল খেয়েছিলেন। এমাসেই হাবীল নিহত হন। এ মাসেই নূহের কাওম ধ্বংস হয়। এ মাসেই ইবরাহীমকে (আঃ) আগুনে ফেলা হয়। .... এ মাসের আগমনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ব্যথিত হতেন। এ মাস চলে গেলে খুশি হতেন....। তিনি বলতেন:

مَنْ بَشَّرَنِيْ بِخُرُوْجِ صَفَرٍ بَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ (بِدُخُوْلِ الْجَنَّةِ)

‘‘যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করার সুসংবাদ প্রদান করব।’’ .... ইত্যাদি অনেক কথা তারা বানিয়েছে। আর অনেক সরলপ্রাণ বুযুর্গও তাদের এ সকল জালিয়াতি বিশ্বাস করে ফেলেছেন। মুহাদ্দিসগণ একমত যে, সফর মাসের অশুভত্ব ও বালা-মুসিবত বিষয়ক সকল কথাই ভিত্তিহীন মিথ্যা।[2]

(খ) সফর মাসের ১ম রাতের সালাত

উপরের মিথ্যা কথাগুলোর ভিত্তিতেই একটি ভিত্তিহীন ‘সালাতের’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেউ যদি সফর মাসের ১ম রাত্রিতে মাগরিবের পরে ... বা ইশার পরে.. চার রাক‘আত সালাত আদায় করে, অমুক অমুক সূরা বা আয়াত এতবার পাঠ করে .... তবে সে বিপদ থেকে রক্ষা পাবে, এত পুরস্কার পাবে... ইত্যাদি। এগুলো সবই ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা, যদিও অনেক সরলপ্রাণ আলিম ও বুযুর্গ এগুলো বিশ্বাস করেছেন বা তাদের বইয়ে বা ওয়াযে উল্লেখ করেছেন।[3]

(গ) সফর মাসের শেষ বুধবার

বিভিন্ন জাল হাদীসে বলা হয়েছে, বুধবার অশুভ এবং যে কোনো মাসের শেষ বুধবার সবচেয়ে অশুভ দিন। আর সফর মাস যেহেতু অশুভ, সেহেতু সফর মাসের শেষ বুধবার বছরের সবচেয়ে বেশি অশুভ দিন এবং এ দিনে সবচেয়ে বেশি বালা মুসিবত নাযিল হয়। এ সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা অনেক সরলপ্রাণ বুযুর্গ বিশ্বাস করেছেন। যেমন: ‘‘সফর মাসে একলাখ বিশ হাজার ‘বালা’ নাজিল হয় এবং সবদিনের চেয়ে ‘আখেরী চাহার শুম্বা-’তে (সফর মাসে শেষ বুধবার) নাজিল হয় সবচেয়ে বেশী। সুতরাং ঐ দিনে যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত নিয়মে চার রাকাত নামাজ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ঐ বালা থেকে রক্ষা করবেন এবং পরবর্তী বছর পর্যন্ত তাকে হেফাজতে রাখবেন...।’’[4]

এগুলো সবই ভিত্তিহীন কথা। তবে আমাদের দেশে ‘আখেরী চাহার শুম্বা’-র প্রসিদ্ধি এ কারণে নয়, অন্য কারণে। প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সফর মাসের শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি সফর মাসের শেষ বুধবারে কিছুটা সুস্থ হন এবং গোসল করেন। এরপর তিনি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এ অসুস্থতাতেই তিনি পরের মাসে ইন্তিকাল করেন। এজন্য মুসলিমগণ এ দিনে তাঁর সর্বশেষ সুস্থতা ও গোসলের স্মৃতি উদযাপন করেন।

এ বিষয়ক প্রচলিত কাহিনীর সার-সংক্ষেপ প্রচলিত একটি পুস্তক থেকে উদ্ধৃত করছি: ‘‘হযরত নবী করীম (ﷺ) দুনিয়া হইতে বিদায় নিবার পূর্ববর্তী সফর মাসের শেষ সপ্তাহে ভীষণভাবে রোগে আক্রান্ত হইয়া ছিলেন। অতঃপর তিনি এই মাসের শেষ বুধবার দিন সুস্থ হইয়া গোসল করতঃ কিছু খানা খাইয়া মসজিদে নববীতে হাযির হইয়া নামাযের ইমামতী করিয়াছিলেন। ইহাতে উপস্থিত সাহাবীগণ অত্যধিক আনন্দিত হইয়াছিলেন। আর খুশীর কারণে অনেকে অনেক দান খয়রাত করিয়াছিলেন। বর্ণিত আছে, হযরত আবু বকর (রা) খুশীতে ৭ সহস্র দীনার এবং হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা) ৫ সহস্র দীনার, হযরত ওসমান (রা) ১০ সহস্র দীনার, হযরত আলী (রা) ৩ সহস্র দীনার এবং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা) ১০০ উট ও ১০০ ঘোড়া আল্লাহর ওয়াস্তে দান করিয়াছিলেন। তৎপর হইতে মুসলমানগণ সাহাবীগণের নীতি অনুকরণ ও অনুসরণ করিয়া আসিতেছে। হযরত নবী করীম (ﷺ) এর এই দিনের গোসলই জীবনের শেষ গোসল ছিল। ইহার পর আর তিনি জীবিতকালে গোসল করেন নাই। তাই সকল মুসলমানের জন্য এই দিবসে ওজু-গোসল করতঃ ইবাদৎ বান্দেগী করা উচিৎ এবং হযরত নবী করীম (ﷺ) এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করতঃ সাওয়াব রেছানী করা কর্তব্য...।’’[5]

উপরের এ কাহিনীটিই কমবেশি সমাজে প্রচলিত ও বিভিন্ন গ্রন্থে লেখা রয়েছে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেও কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীসে এ ঘটনার কোনো প্রকারের উল্লেখ পাই নি। হাদীস তো দূরের কথা কোনো ইতিহাস বা জীবনী গ্রন্থেও আমি এ ঘটনার কোনো উল্লেখ পাই নি। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোনো মুসলিম সমাজে ‘সফর মাসের শেষ বুধবার’ পালনের রেওয়াজ বা এ কাহিনী প্রচলিত আছে বলে আমার জানা নেই।

১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সর্বশেষ অসুস্থতা

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সফর বা রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখ থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কত তারিখে ইন্তিকাল করেন সে বিষয়ে হাদীস শরীফে কোনোরূপ উল্লেখ বা ইঙ্গিত নেই। অগণিত হাদীসে তাঁর অসুস্থতা, অসুস্থতা- কালীন অবস্থা, কর্ম, উপদেশ, তাঁর ইন্তিকাল ইত্যাদির ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোনো ভাবে কোনো দিন-তারিখ বলা হয় নি।

২য় হিজরী শতক থেকে আলিমগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবনের ঘটনাবলি ঐতিহাসিক দিন-তারিখ সহকারে সাজাতে চেষ্টা করেন। তাঁর অসুস্থতার শুরু সম্পর্কে অনেক মত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রখ্যাত তাবিয়ী ঐতিহাসিক ইবনু ইসহাক (১৫১ হি/৭৬৮ খৃ) বলেন:

اُبْتُدِئَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِشَكْوَاهُ الَّذِيْ قَبَضَهُ اللهُ فِيْهِ ... فِيْ لَيَالٍ بَقِيْنَ مِنْ صَفَرٍ، أَوْ فِيْ أَوَّلِ شَهْرِ رَبِيْعِ الأَوَّلِ.

‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে অসুস্থতায় ইন্তিকাল করেন, সে অসুস্থতার শুরু হয়েছিল সফর মাসের শেষে কয়েক রাত থাকতে, অথবা রবিউল আউয়াল মাসের শুরু থেকে।’’[6]

কি বার থেকে তাঁর অসুস্থতার শুরু হয়েছিল, সে বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন শনিবার, কেউ বলেছেন বুধবার এবং কেউ বলেছেন সোমবার তার অসুস্থতার শুরু হয়।[7] কয়দিনের অসুস্থতার পরে তিনি ইন্তিকাল করেন, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, ১০ দিন, কেউ বলেছেন, ১২ দিন, কেউ বলেছেন ১৩ দিন, কেউ বলেছেন, ১৪ দিন অসুস্থ থাকার পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তিকাল করেন।[8]

পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাব যে, তিনি কোন তারিখে ইন্তিকাল করেছিলেন, সে বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন ১লা রবিউল আউয়াল, কেউ বলেছেন, ২রা রবিউল আউয়াল এবং কেউ বলেছেন, ১২ই রবিউল আউয়াল তিনি ইন্তিকাল করেন।

সর্বাবস্থায়, কেউ কোনোভাবে বলছেন না যে, অসুস্থতা শুরু হওয়ার পরে মাঝে কোনো দিন তিনি সুস্থ হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থাতেই, ইন্তিকালের কয়েকদিন আগে তিনি গোসল করেছিলেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। বুখারী সংকলিত হাদীসে আয়েশা (রা) বলেন:

إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ لَمَّا دَخَلَ بَيْتِي وَاشْتَدَّ بِهِ وَجَعُهُ قَالَ هَرِيقُوا عَلَيَّ مِنْ سَبْعِ قِرَبٍ ... لَعَلِّي أَعْهَدُ إِلَى النَّاسِ (لَعَلِّى أَسْتَرِيحُ فَأَعْهَدُ إِلَى النَّاسِ) ... ثُمَّ خَرَجَ إِلَى النَّاسِ ، فَصَلَّى لَهُمْ وَخَطَبَهُمْ

‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন আমার ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার উপরে ৭ মশক পানি ঢাল...; যেন আমি আরাম বোধ করে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তাঁর দেহে পানি ঢাললাম...। এরপর তিনি মানুষদের কাছে বেরিয়ে যেয়ে তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তাদেরকে খুতবা প্রদান করলেন বা ওয়ায করলেন।’’[9]

এখানে সুস্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর অসুস্থতার মধ্যেই অসুস্থতা ও জ্বরের প্রকোপ কমানোর জন্য এভাবে গোসল করেন, যেন কিছুটা আরাম বোধ করেন এবং মসজিদে যেয়ে সবাইকে প্রয়োজনীয় নসীহত করতে পারেন।

এ গোসল করার ঘটনাটি কত তারিখে বা কী বারে ঘটেছিল তা হাদীসের কোনো বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় নি। তবে আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অন্যান্য হাদীসের সাথে এ হাদীসের সমন্বয় করে উল্লেখ করেছেন যে, এ গোসলের ঘটনাটি ঘটেছিল ইন্তিকালের আগের বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ইন্তেকালের ৫ দিন আগে।[10] ১২ই রবিউল আউয়াল ইন্তিকাল হলে তা ঘটেছিল ৮ই রবিউল আউয়াল।

উপরের আলোচনা থেকে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, সফর মাসের শেষ বুধবারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুস্থ হওয়া, গোসল করা এবং এজন্য সাহাবীগণের আনন্দিত হওয়া ও দান-সাদকা করার এ সকল কাহিনীর কোনোরূপ ভিত্তি নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।

যেহেতু মূল ঘটনাটিই প্রমাণিত নয়, সেহেতু সে ঘটনা উদযাপন করা বা পালন করার প্রশ্ন ওঠে না। এরপরেও আমাদের বুঝতে হবে যে, কোনো আনন্দের বা দুঃখের ঘটনায় আনন্দিত বা দুঃখিত হওয়া এক কথা, আর প্রতি বছর সে দিনে আনন্দ বা দুঃখ প্রকাশ করা বা ‘আনন্দ দিবস’ বা ‘শোক দিবস’ উদযাপন করা সম্পূর্ণ অন্য কথা। উভয়ের মধ্যে আসমান-যমীনের পার্থক্য।

রাসূলুল্লাহর (ﷺ) জীবনে অনেক আনন্দের দিন বা মুহূর্ত এসেছে, যখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন, শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য আল্লাহর দরবারে সাজদা করেছেন। কোনো কোনো ঘটনায় তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণও আনন্দিত হয়েছেন ও বিভিন্নভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরের বছর বা পরবর্তী কোনো সময়ে সে দিন বা মুহূর্তকে তারা বাৎসরিক ‘আনন্দ দিবস’ হিসেবে উদযাপন করেন নি। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশ বা সাহাবীদের কর্ম ছাড়া এরূপ কোনো দিন বা মুহুর্ত পালন করা বা এগুলোতে বিশেষ ইবাদত বিশেষ সাওয়াবের কারণ বলে মনে করার সুযোগ নেই।

২. আখেরী চাহার শোম্বার নামায

উপরের আলোচনা থেকে আমার জানতে পেরেছি যে, সফর মাসের শেষ বুধবারের কোনো প্রকার বিশেষত্ব হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ দিনে কোনোরূপ ইবাদত, সালাত, সিয়াম, যিকির, দোয়া, দান, সদকা ইত্যাদি পালন করলে অন্য কোনো দিনের চেযে বেশি বা বিশেষ কোনো সাওয়াব বা বরকত লাভ করা যাবে বলে ধারণা করা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা। এজন্য আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী লিখেছেন যে, সফর মাসের শেষ বুধবারে যে বিশেষ নফল সালাত বিশেষ কিছু সুরা, আয়াত ও দোয়া পাঠের মাধ্যমে আদায় করা হয়, তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।[11]

[1] বুখারী, আস-সহীহ ৫/২১৫৮, ২১৬১, ২১৭১, ২১৭৭; মুসলিম,আস-সহীহ ৪/১৭৪২-১৭৪৫।

[2] সাগানী, আল-মাউদূ‘আত, পৃ. ৬১; মোল্লা কারী, আল-আসরার, পৃ. ২২৫; তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ১১৬; আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৩০৯; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ২/৫৩৯; নিযামুদ্দীন আউলিয়া, রাহাতুল মুহিববীন, পৃ. ১০১; রাহাতুল কুলুব, পৃ. ১৩৮।

[3] খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া, রাহাতুল কুলুব, পৃ. ১৩৮-১৩৯; মুফতী হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফযীলত, পৃ. ১৪।

[4] খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া, রাহাতিল কুলুব, পৃ. ১৩৯।

[5] মুফতী হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফযীলত, পৃ. ১৫।

[6] ইবনু হিশাম, আস-সীরাহ আন-নববিয়্যাহ ৪/২৮৯।

[7] কাসতালানী, আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ, আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া ৩/৩৭৩; যারকানী, শারহুল মাওয়াহিব ১২/৮৩।

[8] কাসতালানী, আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ, আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া ৩/৩৭৩; যারকানী, শারহুল মাওয়াহিব ১২/৮৩।

[9] বুখারী, আস-সহীহ ১/৮৩, ৪/১৬১৪, ৫/২১৬০; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/২৪৩; ইবনু হিববান, আস-সহীহ ১৪/৫৬৬।

[10] ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৮/১৪২।

[11] আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার, পৃ. ১১১।