মুমিন-মুসলিমদের মাঝে দা'ওয়াতের কিছু পদ্ধতি

১. তা'লীম ও তরবিয়ত তথা শিক্ষা ও দীক্ষা:

মুমিন-মুসলিমদেরকে তা'লীম (শিক্ষা) তরবিয়ত (প্রতিপালন)ও তাজকিয়া (পবিত্র ও বিশুদ্ধকরণ) নবী-রসূলগণের কাজ। তরবিয়ত হচ্ছে মানুষকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিপালন করা ও প্রস্তুত করা।

আল্লাহ তায়ালার বাণী:

هُوَ الَّذِيْ بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّيْنَ رَسُوْلًا مِنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلَالٍ مُبِيْنٍ

"তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।” [সূরা জুমু'আহ: ২]

         

নবী ﷺ এর বাণী:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلَّا يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ وَيُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ

“আবু হুরাইরা [রাঃ] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “প্রতিটি শিশু সন্তান জন্মগ্রহণ করে ইসলামের উপরে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইহুদি বানাই, খ্রীষ্টান বানাই অথবা অগ্নি পূজক বানাই।" [বুখারী ও মুসলিম]

তা'লীম-তরবিয়তের কিছু নীতিমালা:

(ক) একজন সৎ ও পরিপূর্ণ উত্তম আদর্শ মানুষের ধারণা থাকা, কুরআন একজন মুমিন-মুসলিমের চিত্র তুলে ধরেছে। যেমন:

আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

لِمَنْ كَانَ يَرْجُوا اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا

"যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।”[সূরা আহজাব : ২১]

আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ الَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ

"মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয় নম্র: যারা অনর্থক কথা- বর্তায় নির্লিপ্ত, যারা জাকাত দান করে থাকে এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে। আর যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে। আর যারা তাদের সালাতসমূহের হেফাজত করে, তারাই উত্তরাধিকারী লাভ করবে, তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে।" [সূরা মু'মিনূন ১-১১]

সা'দ ইবনে হেশাম ইবনে 'আমের বলেন, আমি আয়েশা (রা:) এর নিকট এসে বললাম হে উম্মুল মু'মিনীন আমাকে রসুলুল্লাহ ﷺ এর চরিত্র সম্পর্কে খবর দেন। উত্তরে তিনি বলেন: তাঁর চরিত্র ছিল আল-কুরআন (অর্থাৎ-কুরআনের বাস্তব চিত্র) তুমি আল্লাহর বাণী: "আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।" [সূরা কালাম: ৪] পড়নি। (আহমাদ, হাদীসটি সহীহ-সহীহুল জামে'-আলবানী: হা: নং ৪৮১১)

অনুরূপভাবে একজন খারাপ পাপিষ্ঠ মানুষেরও চিত্র তুলে ধরেছে। যেমন:

وَكَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ وَلِتَسْتَبِيْنَ سَبِيْلُ الْمُجْرِمِيْنَ

“আর এমনিভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি যাতে অপরাধীদের পথ সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।" [সূরা আন'আম: ৫৫]

(খ) সদা-সর্বদা তা'লীম (শিক্ষা) তরবিয়ত (প্রশিক্ষণ) দেওয়া: একজন দায়ীর জন্য তা'লীম-তরবিয়তের কাজ সর্বদা চালিয়ে যেতে হবে। মায়ের কোল থেকে শুরু করে কবর পর্যন্ত মুমিন মুসলিমের কাজ ইসলামি শিক্ষা-দীক্ষা চালিয়ে যাওয়া। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবীকে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেন:

وَقُلْ رَبِّ زِدْنِيْ عِلْمًا

"আর বলুন, হে আমার প্রতিপালক আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও।” [সূরা ত্বহা : ১১৪]

উম্মে সালামা [রাঃ] থেকে বর্ণিত, নবী ﷺ ফজরের সালাত আদায় করে এ দোয়াটি পড়তেন:

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا

“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রুজি ও গ্রহণযোগ্য আমল কামনা করছি।” [ইবনে মাজাহ, হাদীসটি হাসান, সহীহুল জামে'-আলবানী হা: নং ৩৬৩৫]

(গ) জ্ঞানার্জন ও আমল একই সাথে শিক্ষা দেওয়া: আমল ছাড়া জ্ঞানার্জন ফলবিহীন গাছের মত। সাহাবাগণ জ্ঞানার্জন ও আমল একই সাথে করতেন। দশটি করে আয়াতের অর্থ জেনে তার আমল করার পর আবার দশটি আয়াত শিখতেন। [আহমাদ]

(ঙ) ছোট বয়সে হেফজ শক্তিকে মুখস্ত করার কাজে লাগানো:

(চ) বাতিলের পূর্বে হক শিখানো এবং সংশয় আসার আগেই তার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তার উত্তর জানানো:

আল্লাহ তা’য়ালার বাণী:

سَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللهُ مَا أَشْرَكْنَا وَلَا آبَاؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ شَيْءٍ كَذَلِكَ كَذَّبَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ حَتَّى ذَاقُوا بَأْسَنَا قُلْ هَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ عِلْمٍ فَتُخْرِجُوْهُ لَنَا إِنْ تَتَّبِعُوْنَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ أَنْتُمْ إِلَّا تَخْرُصُوْنَ

“মুশরেকরা বলবে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ-দাদারা এবং না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম। এমনভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমনকি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুন তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে, যা আমাদেরকে দেখাতে পার? তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল।" [সূরা আন'আম: ১৪৮]

আল্লাহ তা’য়ালার বাণী:

سَيَقُوْلُ السُّفَهَاءُ مِنَ النَّاسِ مَا وَلَّاهُمْ عَنْ قِبْلَتِهِمُ الَّتِيْ كَانُوا عَلَيْهَا قُلْ لِلهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ يَهْدِيْ مَنْ يَشَاءُ إِلىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيْمٍ

“নির্বোধরা বলবে, কিসে মুসলিমদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুন: পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান।"[সূরা বাকারা: ১৪২]

(ছ) উত্তম আদর্শ দ্বারা তরবিয়ত করা: মানুষ কথা ও ওয়াজ-নসিহতের চেয়ে আদর্শ দ্বারাই বেশি আকৃষ্ট হয়। মহানবী ﷺ তাঁর সাহাবাগণকে উত্তম আদর্শ ও নমুনার দ্বারা অন্তরে প্রভাব ফেলেছিলেন এবং তরবিয়ত করেছিলেন। সুতরাং একজন দায়ী তার উত্তম চরিত্র ও আদর্শ দ্বারা যতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারেন ততটুকু কথা ও ওয়াজ- নসিহত দ্বারা করতে সক্ষম নন।

(জ) শিক্ষার সাথে সাথে বাস্তবায়ন: শুধুমাত্র শিক্ষা দিলে হবে না বরং সাথে সাথে বাস্তবের প্রশিক্ষণ ও অভ্যন্ত করাতে হবে এবং চরিত্রের মাঝে ফুটে উঠে এমন হতে হবে।

নবী ﷺ বলেন:

إِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ، وَإِنَّمَا الْحِلْمُ بِالتَّحَلُّمِ

"শিক্ষা জ্ঞানার্জনের দ্বারা এবং সহনশীলতা ধৈর্যের মাধ্যমে অর্জিত হয়।" [সাহীহুল জামে'- আলবানী, হা: নং ২৩২৮)

(ঝ) শিক্ষা ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে শিক্ষা দেওয়া: ছোট ছোট বিষয়গুলোর পরে বড় বড় বিষয়গুলো শিক্ষা দেওয়া। ছোটকাল হতেই শিক্ষা আরম্ভ করা। সহজ ও সরল বিষয়গুলো কঠিন বিষয়ের আগে শিখানো।

আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

وَلَكِنْ كُوْنُوا رَبَّانِيِّيْنَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُوْنَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُوْنَ

"বরং তারা বলবে, তোমরা আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাও, যেমন তোমরা কিতাব শিখাতে এবং যেমন তোমরা নিজেরাও পড়তে।” [সূরা আল-ইমরান: ৭৯]

ইবনে আব্বাস [রাঃ] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: তারা ঐ মুরব্বি যারা মানুষকে বড় জ্ঞান শিখানোর পূর্বে ছোট ছোট জ্ঞান শিক্ষা দান করেন।

(ঞ) সবসময় মান নিরূপণ ও জরিপ করা: যত বড় বয়সের হোক না কেন উপযুক্তভাবে নিরূপণ করতে হবে। আবুযার গিফারী [রাঃ] একজন মানুষের মা নিয়ে ভর্ৎসনা করলে নবী ﷺ তাকে বলেন

إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيْكَ جَاهِلِيَّةٌ

আবুযার বলেন, আমি বললাম: এ বুড় বয়সে এ সময়ে। তিনি ﷺ বললেন:"হ্যাঁ" [বুখারী ও মুসলিম]

নবী ﷺ মুয়ায [রাঃ]কে বলেন:

يَا مُعَاذُ أَفَتَّانٌ أَنْتَ

“তুমি ফেতনাকারী হে মুয়ায।" [বুখারী ও মুসলিম]

উমার [রাঃ] আবু বকর [রাঃ] এর সাথে ঝগড়া করলে নবী ﷺ তাকে বলেন:

أَمَا أَنْتُمْ بِتَارِكِيْ لِيْ صَاحِبِيْ

"তোমরা আমার সাথীকেও ছাড়বে না!?” [বুখারী]

(ট) মানুষকে তাদের প্রয়োজনীয় ও উপকারী জ্ঞান শিখানো।

(ঠ) মানুষের বুঝের ক্ষমতা অনুসারে শিক্ষা দেয়া।

(ড) সুস্পষ্ট বাতিল ও সংশয়ের পিছনে সময় নষ্ট না করা।

২. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ:

ইহা বেশীর ভাগ কথার মাধ্যমে হয়ে থাকে। অমুসলিমদের মাঝে দা'ওয়াত অথবা পাপীদেরকে পাপ হতে বিরত করার জন্য এ পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। যে সকল জিনিস আল্লাহ তা'য়ালা পছন্দ করেন ও খুশি হন এবং তার নির্দেশ করেছেন তাই মা'রূফ তথা সৎকর্ম। আর যা আল্লাহ তা'য়ালা অপছন্দ ও ঘৃণা করেন এবং নিষেধ করেছেন তাই মুনকার তথা অসৎকর্ম।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের কিছু নিয়ম-নীতি:

১. যে বিষয়ের আদেশ-নিষেধ করবেন সে ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি। কারণ ডাক্তার রোগীর রোগ নির্ণয় না করে যদি চিকিৎসা আরম্ভ করেন তাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।

২. নিয়তে এখলাস এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব।

৩. আদেশ-নিষেধের কাজে নম্রতা ও ভদ্রতা অবলম্বন করা। [সূরা ত্বহা : ৪৪ দ্রষ্টব্য]

নবী ﷺ বলেন:

إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُوْنُ فِيْ شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا شَانَهُ

“নিশ্চয় নম্রতাপূর্ণ প্রতিটি জিনিস শোভিত এবং নম্রতাশূন্য প্রতিটি জিনিস অশোভিত।” [মুসলিম]

নবী ﷺ আরো বলেন:

إِنَّ اللهَ رَفِيْقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِيْ عَلَى الرِّفْقِ مَا لَا يُعْطِيْ عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لَا يُعْطِيْ عَلَى مَا سِوَاهُ

“নিশ্চয় আল্লাহ তা'য়ালা দয়াবান, তিনি দয়া করাকে পছন্দ করেন। আর আল্লাহ তা'য়ালা কোমল আচরণে যা দান করেন তা কঠোরতা ও অন্যান্যতে দান করেন না।” [মুসলিম]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ:) বলেন: দয়া ও কোমল আচরণই হচ্ছে সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের পথ। আর এ জন্যই বলা হয়েছে: তোমার সৎকাজের নির্দেশ যেন সৎভাবে হয় এবং অসৎকাজের নিষেধ যেন অসৎ না হয়। [ফাতাওয়া-ইবনে তাইমিয়া: ২৮/১৩৩]

ইমাম সুফিয়ান ছাওরী (রহ:) বলেন: তিনটি গুণ যার মধ্যে নেই সে যেন সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের কাজ না করে। (এক) নির্দেশ ও নিষেধের সময় কোমল হওয়া। (দুই) যার নির্দেশ ও নিষেধ করবে সে ব্যাপারে ইনসাফ করা। (তিন) যার নির্দেশ ও নিষেধ করবে সে ব্যাপারে জ্ঞান থাকা। [রিসালাতুল আমরি বিলমা'রূফ ওয়ান নাহয়ি 'আনিল মুনকার-ইবনে তাইমিয়্যা: ১, ১৯]

৪. শরিয়তের কল্যাণ ও বিপর্যয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখা ওয়াজিব। ক্ষতির আশঙ্কা বেশি বা দু'টি সমান সমান হলে বিরত থাকা জরুরি। যদি উপকার বেশি হয়, তবেই বাস্তবায়ন করা। আর যদি এজতেহাদের ক্ষমতা থাকে তবে এজতেহাদ করে কাজ করা।

৫. প্রতিবাদের তিনটি স্তরকে হেকমত হিসাবে গ্রহণ করা।

مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيْمَانِ

"তোমাদের যে কেউ যে কোন অন্যায় কাজ দেখবে সে যেন তা হাত দ্বারা পরিবর্তন করে। যদি তা না পারে তবে যেন তার জবান দ্বারা নিষেধ করে। যদি তাও না পারে তবে যেন তার অন্তর দ্বারা ঘৃণা করে। আর ইহাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল ঈমান।” [মুসলিম]

৬. মাদ'উর মধ্যে যদি লাভ-ক্ষতি উভয়টি এক সঙ্গে পাওয়া যায়, তবে চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

৭. যদি মাদ'উর মধ্যে উভয়টি এক সঙ্গে পাওয়া যায়, তবে ভেবে দেখবেন যে, কোন একটি করা প্রয়োজন না উভয়টি? যে মোতাবেক সামনে চলা প্রয়োজন ঠিক সেভাবে চলবেন। আর যদি উভয়টির মধ্যে কোনটি দ্বারা শুরু করবেন সন্দেহে পড়ে যান, তবে স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখবেন।

৮. সাধ্যমত এ কাজ আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু করার জন্য নির্দেশ করেননি।