শির্ক কী ও কেন? চতুর্থ পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী

আমরা মহাশুন্যে কতক ঘুর্ণমান ও কতক স্থির গ্রহ, নক্ষত্র ও তারকারাজি দেখতে পাই। এরা সবাই আল্লাহর সুনির্দিষ্ট বিধানের অধীনে মহাশুন্যে অবস্থান করছে। এদের সৃষ্টির পিছনে মহান আল্লাহর আসল উদ্দেশ্য কী, সে সম্পর্কে তিনি কুরআনুল কারীমের কোথাও বিস্তারিতভাবে কোনো তথ্য প্রদান না করে থাকলেও সংক্ষেপে এ সব সৃষ্টির কিছু উদ্দেশ্য ও উপকারিতার কথা বর্ণনা করেছেন। যেমন এ সম্পর্কে বলেছেন :

﴿وَلَقَدۡ زَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنۡيَا بِمَصَٰبِيحَ وَجَعَلۡنَٰهَا رُجُومٗا لِّلشَّيَٰطِينِۖ﴾ [الملك: ٥]

‘‘আমি পৃথিবীর নিকটতম আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জিত করেছি, সেগুলোকে শয়তানের জন্য ক্ষেপনাস্ত্রস্বরূপ তৈরী করেছি।’’[1]

এ আয়াত দ্বারা তারকা সৃষ্টির পিছনে আল্লাহর একটি উদ্দেশ্য ও তা সৃষ্টির একটি উপকারিতার সন্ধান পাওয়া যায় : এ সব সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে- পৃথিবী সংলগ্ন আকাশকে সাজানো। আর এর উপকারিতা হচ্ছে- যে সকল জিন শয়তান উর্ধ্বজগতে গিয়ে ফেরেশতাদের কথোপকথন শ্রবণ করতে চায়, সে সব শয়তানদের উপর তারকারাজি থেকে কোনো আগ্নেয় উপাদান নিক্ষেপ করার কাজে এ সব তারকাকে ব্যবহার করা হয়।[2]

মানব জীবনে তারকা সৃষ্টির পিছনে কী উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে অন্যত্র বলা হয়েছে :

﴿ وَعَلَٰمَٰتٖۚ وَبِٱلنَّجۡمِ هُمۡ يَهۡتَدُونَ ١٦ ﴾ [النحل: ١٦]

‘‘এবং তিনি পথ নির্ণায়ক অনেক নিদর্শনাদি সৃষ্টি করেছেন, আর তারকা দ্বারা তারা পথের নির্দেশনা লাভ করে।’’[3]

অপর আয়াতে বলা হয়েছে:

﴿وَهُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلنُّجُومَ لِتَهۡتَدُواْ بِهَا فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۗ﴾ [الانعام: ٩٧]

‘‘তিনি হলেন সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা এর দ্বারা স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও।’’[4]এ দুটি আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, তারকা সৃষ্টির পিছনে মানব জীবনে যে প্রত্যক্ষ উপকারিতা রয়েছে তা হলো- সমুদ্র বা স্থল পথে রাতের বেলা চলার সময় তাদের সাথে দিকদর্শনের জন্য যদি কোনো যন্ত্রপাতি না থাকে, তা হলে তারা তারকার প্রতি লক্ষ্য করে পথের নির্দেশনা লাভ করবে। এই হচ্ছে নক্ষত্রপুঞ্জ সৃষ্টির পিছনে আল্লাহ তা‘আলার কী উদ্দেশ্য রয়েছে এবং মানব জীবনে এর প্রত্যক্ষ কী উপকারিতা, তার একটি বর্ণনা।

এর বাইরে যদি আমরা বিজ্ঞানের আলোকে তারকা সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে যাই তা হলে এটুকু বলতে পরি যে, বিশ্বজগত সুষ্ঠুভাবে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত পরিচালিত হওয়ার জন্য মহান আল্লাহ মহাশূন্যে এ সব গ্রহ, নক্ষত্র ও তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে বলেই আমাদের পক্ষে এ সব সৃষ্টির এ উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব হয়েছে। কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময়ে মহাশূন্য সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান এতদূর অগ্রসর হয় নি বলেই কুরআনে এ উদ্দেশ্যের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণিত না হয়ে যে উদ্দেশ্য ও উপকারের কথা তৎকালীন মানুষের বোধগম্য হয় কেবল সে উদ্দেশ্য ও উপকারের কথাই তাতে বর্ণনা করা হয়েছে।

>
[1]. আল-কুরআন, সূরা মুলক : ৫।

[2]. মুফতি মুহাম্মদ শফী‘ ইমাম কুরত্ববী থেকে বর্ণনা করেন : নক্ষত্ররাজিকে শয়তান বিতাড়িত করার জন্যে নিক্ষেপ করার অর্থ এরূপ হতে পারে যে, নক্ষত্ররাজি থেকে কোন আগ্নেয় উপাদান শয়তানের দিকে নিক্ষেপ করা হয় এবং নক্ষত্ররাজি স্বস্থানেই থেকে যায়। সাধারণ দর্শকের দৃষ্টিতে এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নক্ষত্রের ন্যায় গতিশীল দেখা যেতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই এটাকে তারকা খসে যাওয়া বলা হতে পারে। দেখুন : মুফতি মুহাম্মদ শফী‘, প্রাগুক্ত; পৃ. ১৩৯২।

[3]. আল-কুরআন, সূরা নাহাল : ১৬।

[4] . আল-কুরআন, সূরা আল-আন‘আম : ৯৭।