দ্বিতীয়ত: কোনো নেককার ওলী কিংবা পীর-বুযুর্গকে ডাকা, তাদের নামে ‘নজরনেওয়াজ’ মান্নত করা বা তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা

কোন মৃত নেককার ওলী কিংবা পীর-বুযুর্গকে ডাকা, তাদের সম্মানের উসীলায় দো‘আ করা এবং তাদের জন্য নজরনেওয়াজ মান্নত করা -এটা স্পষ্টতঃই ইসলাম বহির্ভুত বিষয়; বরং তা বড় শির্ক ও তাওহীদ বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত। যেমন, কেউ বললো, ‘হে খাজা বাবা, হে অমুক ওলী, এই অনুন্যোপায় ভক্তের হাতটি ধরুন, আমাকে সাহায্য করুন, আল্লাহর কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করুন, আমি আপনার আশ্রয়ে, আমি আপনার ও আল্লাহর ওপরে। এই যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিস্কার শির্কী কথাবার্তার অন্তর্ভুক্ত।

এইরূপে কোনো মৃত ব্যক্তির নামে নজর বা মান্নত করাও শরী‘আতসম্মত উসীলা নয়। অর্থাৎ এভাবে বলা যে, ‘খাজা বাবা’! যদি আল্লাহ আমাকে অমুক জিনিসটি মিলিয়ে দেন, তাহলে তোমার নামে এই জিনিস নজরনেওয়াজ দেবো। অথবা হে আমার ওলী, তোমার দরবারে এই হাদিয়া পেশ করবো। অথবা যদি আমি অমুক জিনিস হাসিল করতে পারি তাহলে তোমার জন্য এটা ওটা দিব। এই সবই ‘গাইরুল্লাহর’ জন্য মান্নত এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদত করার শামিল। ফলে ইসলামের সঙ্গে এর সুদূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন:

﴿وَجَعَلُواْ لِلَّهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ ٱلۡحَرۡثِ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ نَصِيبٗا فَقَالُواْ هَٰذَا لِلَّهِ بِزَعۡمِهِمۡ وَهَٰذَا لِشُرَكَآئِنَاۖ فَمَا كَانَ لِشُرَكَآئِهِمۡ فَلَا يَصِلُ إِلَى ٱللَّهِۖ وَمَا كَانَ لِلَّهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلَىٰ شُرَكَآئِهِمۡۗ سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ١٣٦﴾ [الانعام: ١٣٦]

“আর তারা আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করে চাষাবাদ ও পশুপালন থেকে যা কিছু তারা উৎপাদন করেছে তার একাংশ এবং বলে-‘এই হচ্ছে আল্লাহর জন্য’ (তাদের ধারণা অনুযায়ী) ‘আর এটা হচ্ছে আমাদের অংশীদার দেবতাদের জন্য’। তারপর যা তাদের অংশী দেবতাদের জন্য, তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, আর যা আল্লাহর জন্য, তা পৌঁছে যায় তাদের অংশীদারদের কাছে। কী নিকৃষ্ট যা তারা সিদ্ধান্ত নেয়”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৩৬]

কোনো মৃত বান্দার কাছে ধর্না দেওয়া, তার কাছে কিছু আশা করা, কিছু প্রার্থনা করা, তাদের কবরে গেলাফ চড়িয়ে মাজার বানানো, আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালানো প্রভৃতি মুর্খতাসুলভ কর্মকাণ্ড না ছিল নবীর শিক্ষা, না সাহাবী ও তাবেঈগণের কর্মরীতি। বরং তারা বিশ্বাস করতো যে দো‘আ কেবল আল্লাহর দিকেই করতে হয়। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦﴾ [البقرة: ١٨٦]

“আর যখন বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, দেখ, আমি অতি নিকটে। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি, যখন সে আমাকে আহ্বান করে। কাজেই তারা আমার প্রতি সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক। যাতে তারা সুপথে চলতে পারে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

আর তাদেরকে তাদের নবী তাওহীদবাদীগণের সর্দার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন যে, “দো‘আই হচ্ছে ইবাদত”।[1]

সুতরাং যে ইবাদতটি নিতান্তই আল্লাহ তা‘আলার জন্য খাস, সেটা অন্য কারো জন্য করা কী করে বৈধ হতে পারে?

জেনে রাখুন, উপরোক্ত যাবতীয় বিদ‘আতী কর্মকাণ্ডই তাওহীদ ও নবী-রাসূলগণের শিক্ষা-পরিপন্থী। নবী-রাসূলগণের শিক্ষা হলো, ইবাদত হবে শুধুমাত্র এক ও লা-শরীক আল্লাহর জন্য। এটা আল্লাহ ভিন্ন আর কারো জন্য হতে পারে না। তারা এটাও বলেছেন যে, আল্লাহ শুধুমাত্র খালেছ ও বিশুদ্ধ এবং শরী‘আত সমর্থিত ইবাদতই কবুল করেন। আল্লাহ তাঁর বান্দার সব গুনাহই ক্ষমা করেন, কিন্তু শির্ক তাঁর নিকট অমার্জনীয় অপরাধ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨﴾ [النساء: ٤٨]

“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্য সব অপরাধ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে, সে এক বিরাট পাপ উদ্ভাবন করে। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]

>
[1] তিরমিযী