উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) জাহের ও মুআওয়াল (الظاهر والمؤول) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

الظاهر এর আভিধানিক অর্থ: স্পষ্ট, প্রকাশমান। পারিভাষিক অর্থ:

ما دل بنفسه علي معني راجح مع احتمال غيره

‘‘الظاهر হলো যা স্বয়ং সম্পূর্ণভাবে অগ্রগণ্য অর্থের উপর প্রমাণ করে। যদিও সেখানে ভিন্ন অর্থ সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’ এর দৃষ্টান্ত হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:

توضؤوا من لحوم الابل

‘‘উটের মাংস ভক্ষণ করলে ওযু করবে।’’[1]

এখানে ‘ওযু’ দ্বারা উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে الظاهر হলো শারঈ নিয়মে চার অঙ্গ ধৌত করা। ঐ وضوء উদ্দেশ্য নয়, যার অর্থ পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা।

আমাদের বক্তব্য: ما دل بنفسه علي معني (যা স্বয়ং সম্পূর্ণভাবে কোন অর্থের উপর প্রমাণ করে) এ অংশ দ্বারা مجمل বিলুপ্ত হয়েছে। কেননা, مجمل স্বয়ং সম্পূর্ণভাবে অর্থের উপর প্রমাণ করতে পারে না।

راجح (অগ্রগণ্য) এ শব্দ দ্বারা المؤول বিলুপ্ত হয়েছে। কেননা, পূর্বাপর ইঙ্গিত না থাকলে المؤول শব্দ مرجوح অর্থের উপর প্রমাণ করে।

مع احتمال غيره (যদিও সেখানে ভিন্ন অর্থ সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে) সর্বশেষ এ অংশ দ্বারা نص বা সুস্পষ্ট ভাষ্য বিলুপ্ত হয়েছে। কেননা, نص কেবল একটি অর্থেরই সম্ভাবনা রাখে।

الظاهر অনুযায়ী আমল করা প্রসঙ্গে:

الظاهر অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব। তবে যদি এমন দলীল পাওয়া যায়, যা তাকে ظاهر বা বাহ্যিক অর্থ থেকে সরিয়ে দেয়, তাহলে ঐ ক্ষেত্রে পরিবর্তিত অর্থই গ্রহণ যোগ্য হবে। কেননা, এটাই হলো সালাফ বা পূর্ববর্তী বিদ্বানদের কর্মপন্থা যা বেশি সতর্কতা মূলক এবং দায়িত্ব মুক্তির ক্ষেত্রে অধিকতর উপযোগী। এবং ইবাদত ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে অধিকতর উপযোগী পন্থা।

المؤول এর সংজ্ঞা:

المؤول শব্দটি আভিধানিক ভাবে أول থেকে উদগত, এর অর্থ: প্রত্যাবর্তন করা।

পারিভাষিক অর্থ:

ما حمل لفظه علي المعني المرجوح

مرجوح বা অগ্রগণ্য অর্থের উপর কোন শব্দের প্রয়োগ করাকে المؤول বলে।

আমাদের বক্তব্য: علي المعني المرجوح (অগ্রগণ্য অর্থের উপর অন্য শব্দের প্রয়োগ) এ অংশ দ্বারা نص ও الظاهر বের হয়ে গেছে। نص বের হওয়ার কারণ হলো, যেহেতু এটি কেবল একটি অর্থেরই সম্ভাবনা রাখে। الظاهر বের হয়ে গেছে। কারণ এটি راجح অগ্রগণ্য অর্থের উপর ব্যবহৃত হয়।

التأويل দু’প্রকার। যথা:

(১) গ্রহণযোগ্য ছহীহ তা'বীল (ব্যাখ্যা)।

(২) প্রত্যাখ্যাত ফাসেদ-ভুল তা'বীল (ব্যাখ্যা)।

যে تأويل (ব্যাখ্যা) এর উপর বিশুদ্ধ দলীল রয়েছে সেটাই হলো التأويل الصحيح । যেমন: আল্লাহর বাণী:

وَسْئَلِ الْقَرْيَةَ

জিজ্ঞেস করুন জনপদকে (জনপদের অধিবাসীকে) (সূরা ইউসূফ ১২:৮২)।

এখানে وَسْئَلِ الْقَرْيَةَ (জিজ্ঞেস করুন জনপদকে) আমরা ব্যাখ্যা করি وسئل أهل القرية (জিজ্ঞেস করুন জনপদের অধিবাসীকে) এর মাধ্যমে। কেননা, স্বয়ং জনপদকে প্রশ্ন করা সম্ভব নয়।

الفاسد التأويل (ভ্রান্ত ব্যাখ্যা) হলো ঐ তা'বীল যার স্বপক্ষে বিশুদ্ধ কোন দলীল নেই। যেমন: আল্লাহর বাণী:

اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ

দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন (সূরা ত্বা-হা ২০:৫)।’’

বাতিলপন্থীরা উক্ত আয়াতের اسْتَوَى এর অর্থ ভ্রান্ত ব্যাখ্যা করে বলেন, এর অর্থ হলো কর্তৃত্ব লাভ করা। কিন্তু সঠিক অর্থ হলো সমুন্নত হওয়া, অধিষ্ঠিত হওয়া। তবে এসবের কোন ধরণ বর্ণনা করা বা উপমা দেওয়া যাবে না।

জাহের ও মুআওয়ালঃ যে শব্দ শুধুমাত্র একটি অর্থ প্রদান করে। একাধিক অর্থের সম্ভাবনা রাখে না, তাকে النص বলে। পক্ষান্তরে যে শব্দ একাধিক অর্থের সম্ভবনা রাখে, তাকে المشترك বলে। অতঃপর একাধিক অর্থের মাঝে মুজতাহিদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে একটিকে অগ্রাধিকার দেন, সেটাকে الظاهر বলে। আর যে অর্থের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তাকে বলে المؤول

[1]. মুসনাদে আহমাদ; ৪/৩৫২, আবু দাউদ /১৮৪, ছ্বহীহ মুসলিম/ ৩৬০।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে