কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত প্রথম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

 মুসাফিরের প্রতি সময়মত জামা‘আত সহকারে সলাত সম্পাদন করা অনুরূপ ফরয, যেমন মুক্বীম অবস্থায় জামা‘আতে সলাত আদায় করা ফরয।

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ইরশাদ করেন:

﴿وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلاَةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُم مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلْيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمْ وَلْتَأْتِ طَآئِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّواْ فَلْيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ﴾ النساء102

আর যখন তুমি মু’মিনদের মাঝে অবস্থান করবে ও তাদের সঙ্গে সলাত কায়েম করবে তখন তাদের একটি দল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং সশস্ত্র থাকে, তাদের সাজদাহ করা হলে তারা যেন তোমাদের পশ্চাতে অবস্থান করে এবং যে দলটি সলাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সঙ্গে সলাত আদায় করে এবং সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে।[1]

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা যুদ্ধ অবস্থায় ভয় থাকা সত্ত্বেও উভয় দলের উপর জামা‘আত সহকারে সলাত আদায় করা ফরয করেছেন। সুতরাং শান্তি ও নিরাপত্তার অবস্থায় জামা‘আতে সলাত আদায় করা আরো বেশী ফরয। আর আল্লাহর রসূল (সা.) ও তাঁর সহচরগণ বাড়িতে মুক্বীম অবস্থায় এবং সফরে সর্বদা জামা‘আত সহকারে সলাত আদায় করতেন। এমনকি প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা.) বলেছেন:

وَلَقَدْ رَأيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إلاَّ مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ ، وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤتَى بهِ ، يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ في الصَّفِّ

আমরা নিজেদেরকে (সাহাবীগণকে) দেখেছি যে, (তাঁরা সকলে জামা‘আতে সলাত আদায় করতেন,) জামা‘আত থেকে পিছনে থাকত একমাত্র মুনাফিক্ব (কপট ব্যক্তি) যার কপটতা ছিল সর্বজন বিদিত। আর এমনও কিছু মানুষ ছিল যাদেরকে দু‘জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে (বাড়ি থেকে মসজিদে) নিয়ে এসে কাতারে দাঁড় করানো হতো।[2]

আর উযূ ও পবিত্রতার ক্ষেত্রে যত্নবান হবে। তাই ছোট নাপাকী দূরীকরণের জন্য উযূ করবে; যেমন, পেশাব, পায়খানা, বায়ু নির্গত হওয়া এবং গভীর নিদ্রা।

আর বড় নাপাকী দূরীকরণের জন্য গোসল করবে। যেমন, বীর্যপাত বা সহবাস। আর যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা যদি পানির পরিমাণ কম থাকে যা পানাহরের ক্ষেত্রে প্রয়োজন, তাহলে তায়াম্মুম করবে।

কেননা আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ইরশাদ করেছেন:

﴿وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاء أَحَدٌ مَّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاء فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيداً طَيِّباً فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾ المائدة-6

আর যদি পীড়িত হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ যদি মলত্যাগ করে আসে কিংবা যদি তোমরা নারীদের সঙ্গে সঙ্গত হও আর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে, তা দিয়ে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের উপর সংকীর্ণতা চাপিয়ে দিতে চান না, তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান আর তোমাদের প্রতি তাঁর নি’আমাত পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।[3]

উযূ এবং গোসলের পদ্ধতি তো সকলের জানা। আর তায়াম্মুমের পদ্ধতি হচ্ছে যে, উভয় হাত মাটিতে একবার মেরে তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে।

যেমন, নাবী (সা.) আম্মার বিন ইয়াসির (রা.) কে বললেন: তোমার জন্য মুখমণ্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করাই যথেষ্ট হবে।[4]

অপর একটি বর্ণনায় আছে: নাবী (সা.) নিজ হাত মাটিতে মেরে তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও নিজ হস্তদ্বয় মাসাহ করলেন।[5]

আর মনে রাখবে যে, তায়াম্মুমের পবিত্রতা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী পবিত্রতা। সুতরাং পানি পেলেই তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে এবং পানি ব্যবহার করা ফরয হয়ে যাবে।

অতএব বড় অপবিত্রতার ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি তায়ম্মুম করার পর পানি পেলেই তার প্রতি তার অপবিত্রতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে গোসল করা ফরয হবে।

অনুরূপ মলত্যাগ করার পর তায়াম্মুম করে পবিত্রতা হাসিল করার পর পানি পেলে ছোট নাপাকী (অপবিত্রতা) দূরীকরণের উদ্দেশ্যে উযূ করা ফরয হয়ে পড়বে। একটি হাদীসে এসেছে:

إِنَّ الصَّعِيدَ الطَّيِّبَ طَهُورُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدْ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِينَ فَإِذَا وَجَدَ الْمَاءَ فَلْيُمِسَّهُ بَشَرَتَهُ فَإِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ

নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলিমের জন্য পবিত্রতার উপায়, যদিও সে ব্যক্তি দশ বছর ধরে পানি না পায়। অতঃপর পানি পেলে নিজ শরীরকে পানি স্পর্শ করাবে (উযু ফরয থাকলে উযূ করবে আর গোসল ফরয থাকলে গোসল করবে) ইহা তার জন্য কল্যাণকর।[6]

[1]. সূরাহ নিসা ৪:১০২

[2]. সহীহ মুসলিম ৬৫৪।

[3]. সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫:৬

[4]. সহীহ বুখারী ৩৪১।

[5]. সহীহ বুখারী ৩৪৩।

[6]. মুসনাদ আহমাদ, আবূ দাউদ ৩৫৭ ও তিরমিযী, হাদীসটি সহীহ, দেখুন, ইরওয়া হাঃ নং ১৫৩, মিশকাতুল মাসাবিহ ৫৩০।