নাবী ও নেকলোকদের কবরকে সেজদার জায়গা হিসাবে নির্ধারণ করা।

ব্যাখ্যা: আহলে কিতাব ও অন্যান্য জাতির রীতি হলো নাবী ও নেকলোকদের কবরকে মাসজিদ নির্ধারণ করা। ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, আরবের মুশরিক এবং ইসলামের সাথে সম্পৃক্তকারী কবর পূজারীরা সর্বদাই কবরকে মাসজিদ হিসাবে নির্ধারণ করে। তবে আহলে কিতাবরাই প্রথমে কবরকে মাসজিদ নির্ধারণ করেছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إن من كان قبلكم كانوا يتخذون القبور مساجد، ألا فلا تتخذوا القبور مساجد

তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি কবরকে মাসজিদ বানাতো। সাবধান! তোমরা আমার কবরকে মাসজিদ বানাবে না।[1]

অর্থাৎ তারা কবরের পাশে ছ্বলাত আদায় করতো। কেননা, কবরের পাশে ছ্বলাত আদায় করা কবর পূজার মাধ্যম বলে গণ্য। যদিও ছ্বলাত আদায়কারী আল্লাহর উদ্দেশ্যে ছ্বলাত আদায় করে। ছ্বলাত আদায়কারী কবরের পাশে ছ্বলাত আদায়ের সময় মূলতঃ কবরের নিকটেই সাহায্য কামনা করে, ফরিয়াদ করে। যেমন বর্তমান কবরের নিকট কি বলা হয়? এটাই হলো জাহিল, ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য জাতির দীন।

হাদীছে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

উম্মে সালমা ও উম্মে হাবীবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হাবশা এলাকায় গির্জার ভিতর মূর্তি দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবাদ দিলেন। কেননা, তারা দু‘জন তাদের স্বামীর সাথে হাবশায় প্রথম হিজরত করেন। তারা দু‘জন ঐ সৌন্দর্য মন্ডিত গির্জা ও তার ভিতরের চিত্র কর্মের বিবরণ দিলেন। তখন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবী বললেন,

أولئك قوم إذا مات فيهم الرجل الصالح، أو العبد الصالح، بنوا على قبره مسجداً، وصوروا فيه تلك الصور، أولئك شرار الخلق عند الله

ঐ সব এলাকার লোকদের মধ্যে কোন নেকলোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মাসজিদ নির্মাণ করত এবং তাদের প্রতিমূর্তি তৈরি করতো। তারাই হলো আল্লাহর নিকৃষ্ট সৃষ্টি।[2]

আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত ওলী ও নেকলোকদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করাই জাহিলী দীন। জাহিলরা ধারণা করে যে, তারা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। আর আল্লাহর নিকট তাদের জন্য সুপারিশ কামনা করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لا يَضُرُّهُمْ وَلا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ) [يونس: 18]

আর তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী (সূরা ইউনূস ১০:১৮)। তিনি আরোও বলেন,

(وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى) [الزمر: 3]

জেনে রেখ! আল্লাহর জন্যই, বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে (সূরা যুমার ৩৯:৩ )।

কবরবাসীরা সৃষ্টি করে, রিজিক দেয় এবং জীবন-মৃত্যু দান করে এসব বিষয়ে অবশ্য জাহিলরা তাদেরকে বিশ্বাস করে না। তবে তারা জানে না যে, এসব কিছু আল্লাহ তা‘আলার সাথেই নির্দিষ্ট। আল্লাহ এবং সুপারিশকারীদের মাঝে নেকলোদেরকে তারা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে। তাই নেকলোকেরা জাহিলদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে এ উদ্দেশ্যে জাহিলরা তাদের বিভিন্ন ইবাদত করে। এটাই জাহিলী দীন। আর বর্তমান কবর পূজারীরা এ রীতির উপরই রয়েছে। আমরা এ থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। কবরের উপর কোন কিছু নির্মাণ করা, বাতি প্রজ্জলন করা, পর্দা টাঙানো, কবরে লেখালেখি করা এবং কবর চুনকাম করা ইত্যাদি সবই গর্হিত কর্ম যা কবরবাসীর জন্য প্রকাশ্য বাড়াবাড়ি বলে গণ্য। এ কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব নিষেধ করেছেন।

>
[1].ছ্বহীহ মুসলিম হা/৫৩২।

[2]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৪২৭,৪৩৪,১৩৪১ ছ্বহীহ মুসলিম হা/৫২৮।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে