হালালকে হারাম ও হারামকে হালালে পরিণত করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশা করা

জাহিলরা শিরকের মাধ্যমে যেমন ইবাদত করে তেমনি হালালকে হারাম করার মাধ্যমেও ইবাদত করে।

...........................................

ব্যাখ্যা: জাহিলী সমস্যা: আল্লাহ তা‘আলা যা আবশ্যকীয়ভাবে হারাম করেছেন, তার মাধ্যমে জাহিলদের ইবাদত করা তথা নৈকট্য লাভ করা। তাওয়াফের সময় তারা লজ্জাস্থান আবৃত রাখাকে হারাম করেছে যেমন মুশরিকদের এ অবস্থা সম্পর্কে পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরাও এরূপ করেছে। খ্রিষ্টানরা অনেক পবিত্র জিনিসকে নিজেদের উপর হারাম করেছে। অপরদিকে, আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু হারাম করেছেন ইয়াহুদীরা তা নিজেদের জন্য বৈধ করে নিয়েছে, যেমন সুদ। অথচ হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে ও মানুষের সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।

আর মুশরিকরা বিভিন্ন প্রকার চতুষ্পদ জন্তু হারাম করেছে। এর মধ্যে (البحيرة) বাহিরাহ তথা ঝুলন্ত কান বিশিষ্ট উষ্ট্রী, (السائبة) সায়িবাহ তথা মুক্ত উষ্ট্রী ও (الوصيلة) ওয়াসিলাহ বা দু’বার বাচ্চা প্রসব করেছে এমন উষ্ট্রী উল্লেখ যোগ্য। এ চতুষ্পদ জন্তুকে তারা এসব নামকরণ করেছে। আর মূর্তির কারণে পশুগুলোকে তারা হারাম করেছে। আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে এসব থেকে নিষেধ করে বলেন,

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ وَلا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ) [المائدة: 87]

হে মুমিনগণ, আল্লাহ যে সব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না (সূরা আল মায়িদা ৫ : ৮৭)।

আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন, মু’মিনগণ তা হারাম করতে কঠোর হবে না, সহজেই হারাম হোক তাও চাইবে না এবং হারামকে বৈধও মনে করবে না। বরং ন্যায়নীতি অবলম্বন করবে।

সুতরাং হালালকে হারাম ও হারামকে হালালে পরিনত করা জাহিলী দীনের অন্তর্ভুক্ত। তাই আল্লাহর কিতাবের দলীল-প্রমাণ ছাড়া কারো জন্য হালাল ও হারাম পরিবর্তন করে তা ইবাদত গণ্য করা বৈধ নয়। যেমন খ্রিষ্টানদের বৈরাগ্যতা ও মুশরিকদের বাইতুল্লাহ তাওয়াফের মাধ্যমে যে ইবাদত হয় তা আল্লাহ তা‘আলা শরী‘আত সম্মত করেননি। আল্লাহর অবাধ্যতার মাধ্যমে তার ইবাদত ও নৈকট্য লাভ করা বিধিসম্মত নয়। মহান আল্লাহ এ ধরণের শরী‘আতের অনুমোদন দেননি।

এটি অত্যান্ত মারাত্নক সমস্যা। যেমনভাবে জাহিলরা শিরকের মাধ্যমে ইবাদত করতো, যা মহা অন্যায়। পূর্বযুগের শিরক, বর্তমানেও বিদ্যমান। তাই যারা কবর প্রদক্ষিণ করে, সেখানে প্রাণী উৎসর্গ ও মান্নত করে বলে, এগুলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম; তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,

(مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى) [الزمر: 3]

আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে (সূরা আয যুমার ৩৯:৩)।

(هَؤُلاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ) [يونس: 18]

এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী (সূরা ইউনূস ১০:১৮)।

প্রাচীন কালের মুশরিক ও বর্তমানে নিজেকে ইসলামের সাথে সম্পৃক্তকারী মুশরিকরাও এসব শিরকে লিপ্ত। তারা বলে, ঐ সকল নেক লোকদের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। তারা আমাদের জন্য সুপারিশ করবে ও আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে।