হারাম কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা

লজ্জাস্থান প্রকাশের মাধ্যমে ইবাদত করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَإِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا

আর যখন তারা কোন অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, আমরা এতে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা আরাফ ৭:২৮)।

ব্যাখ্যা: জাহিলরা কা’বা ঘর তাওয়াফের সময় লজ্জাস্থান প্রকাশের মাধ্যমে ইবাদত করতো। তারা আহলে হারামের অন্তর্ভুক্ত নয় এ মর্মে শয়তান এহেন খারাপ কর্মকে তাদের জন্য সৌন্দর্য মন্ডিত করে তুলে ধরে। সে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগমন করতো। শয়তান যে পোশাকে আগমন করতো, একই পোশাকে হারাম এলাকায় প্রবেশ করতো না। এখানে সে আল্লাহর অবাধ্য কর্ম করতো। আহলে হারামের কাউকে পেলে শয়তান তাকে পোশাক দিয়ে দিত, যাতে সে ঐ পোশাকে তাওয়াফ করে নচেৎ শয়তান হারাম এলাকার সীমানায় পোশাক খুলে ফেলতো এবং উলঙ্গ অবস্থায় হারামে প্রবেশ করতো। এমনিভাবে শয়তান তাদের জন্য সৌন্দর্য তুলে ধরতো। এ অশ্লীল কর্মের সময় তারা বলতো, আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে আমরা এর উপরই পেয়েছি।

(وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا) [الأعراف: 28]

আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা আরাফ ৭:২৮)।

লক্ষণীয় যে, কাশফুল আওরাহ (উলঙ্গপনার) নাম ফাহিসাহ (অশ্লীলতা)। আর যা কিছু জঘন্যতার শেষ সীমায় পৌঁছে তা ফাহিসাহ বলে গণ্য। অবাধে এমন মন্দ কর্ম সংঘটিত হওয়াকে বর্তমান যুগের অনেক মানুষ সংস্কৃতি ও অগ্রগতি গণ্য করে।

আল্লাহ তা‘আলা জাহিলদের এরূপ কর্ম প্রত্যাখ্যান করে বলেন,

(قُلْ إِنَّ اللَّهَ لا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ) [الأعراف: 28]

বল, আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না? (সূরা আরাফ ৭:২৮)।

অর্থাৎ বান্দার জন্য উলঙ্গপনা শরী‘আত সম্মত নয়। তাদের জন্য আবৃত থাকাকে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে, যাতে ফিতনা মুক্ত থাকা যায়, আর স্বভাবজাত পাপাচার থেকেও দুরে থাকা যায়। তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে, জ্ঞান ছাড়াই বিরোধীতা করে। তারা দু’টি বাতিল-মিথ্যা যুক্তি পেশ করে, যার একটি অপরটি থেকে বেশি মিথ্যা।

প্রথমত: (وَجَدْنَا عَلَيْهَا آبَاءَنَا) আমরা আমাদের বাপ-দাদার রীতির উপরই বিদ্যমান (সূরা আল আরাফ ৭:২৮)।

দ্বিতীয়ত: বড়ই মারাত্মক। (وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا) আল্লাহ আমাদেরকে এরূপ নির্দেশ দিয়েছেন।

এভাবে তারা আল্লাহ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন,

(قُلْ إِنَّ اللَّهَ لا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لا تَعْلَمُونَ) [الأعراف: 28]

বল, আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না? (সূরা আরাফ ২:২৮)।

জ্ঞান ছাড়া আল্লাহ তা‘আলার বিরুদ্ধে কথা বলা মারাত্নক জঘন্য অন্যায়।

আল্লাহ তা‘আলা যা নিষেধ করেছেন তা তিনি বর্ণনা করেন,

(قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ) [الأعراف: 33]

বল, আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, (সূরা আরাফ ৭:৩৩)।

(فاحشة) শব্দটির বহুবচন (فواحش) আর নিষিদ্ধ অন্যায় কর্মই হলো ফাহিসাহ। আর উলঙ্গপনা অন্যায় কর্মের অন্তর্ভুক্ত। (مَا ظَهَرَ مِنْهَا) এআয়াতাংশ জনসম্মুখে প্রকাশ্যে অশ্লীলতার কথা বুঝায়। আর (وَمَا بَطَنَ) এ অংশটুকু মানুষের গোপন অপকর্ম বুঝায় যা আল্লাহ ও মানুষের মাঝে সীমায়িত থাকে।

(وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَاناً) [الأعراف: 33]

আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি (সূরা আরাফ ৭:৩৩)

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের জন্য কখনোই প্রমাণ নাযিল করেননি। তার একত্বের উপরই তিনি দলীল নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা শিরককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لا تَعْلَمُونَ) [الأعراف: 33]

আল্লাহর উপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না (সূরা আরাফ ৭:৩৩)।

কোন জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহ তা‘আলার বিরুদ্ধে কথা বলা শিরকের চেয়েও জঘন্য। আর একারণে জাহিলদের কথা হলো, আল্লাহ আমাদের উলঙ্গপনার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহর কিতাব ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহর দলীল ব্যতীরেকে যারা হালাল ও হারামের ব্যাপারে কথা বলে, তারা যেন সতর্ক হয়। আল্লাহর বাণী:

(يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ)

হে বণী আদম, তোমরা তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ কর (সূরা আরাফ ৭:৩১)।

অর্থাৎ তোমরা তোমাদের গুপ্তাঙ্গ আবৃত করো।

(عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ)

অর্থাৎ প্রতি ছ্বলাতে। অর্থাৎ প্রত্যেক ছ্বলাতের সময় সাজ-সজ্জা গ্রহণ করতে হয় এবং বাইতুল্লাহ তাওয়াফের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। জাহিলরা উলঙ্গপনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাইতো, এটাকে তারা আল্লাহর ইবাদত গণ্য করতো। এটা মিথ্যা ও বক্রতার মধ্যে অধিক অশ্লীল। আমরা এ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

জরুরী অবস্থা ছাড়া আমরা উলঙ্গ হওয়াকে হারাম হিসাবেই গ্রহণ করবো। জরুরী অবস্থা: যেমন (মলত্যাগ) ও চিকিৎসা অথবা স্বামী-স্ত্রী পরস্পর মিলনের সময় উলঙ্গ হওয়া। এ দু’টি অবস্থা ছাড়া কঠোরতার সাথে উলঙ্গ হওয়া হারাম। কেননা তা অশ্লীলতা ও পাপাচারীতার দিকে ধাবিত করে। শয়তান জানে; উলঙ্গপনা ব্যভিচারীতা ও সমকামিতার দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে মানুষ উলঙ্গপনায় আগ্রহী হয়। আর এটার নাম রাখা হয়েছে অগ্রগতি, সভ্যতা ও সংস্কৃতি। পক্ষান্তরে শরীর আবৃত রাখা ও মার্জিত পোশাককে অপছন্দ করে বলা হয়, এটা অনগ্রগতি, পশ্চাদগামিতা ও প্রাচীন রীতি। বর্তমানে হিজাবকে ত্যাগ করতে বলা হয়, পুস্তিকায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও সমাবেশে এ ভাল বিষয়টি নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়। কিন্তু ঈমানদারগণ দীন আঁকড়ে ধরায় এসব তাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না।