কোনো কিছুই তাকে অক্ষম করতে পারে না।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, (وَلَا شَيْءَ يُعْجِزُهُ) কোনো কিছুই তাকে অক্ষম করতে পারে না।

 

ব্যাখ্যা: তিনি যেহেতু পরিপূর্ণ ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, তাই কোন কিছুই তাকে অক্ষম করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾

‘‘আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাবান’’ (সূরা আল বাকারা: ২০)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا﴾

‘‘আল্লাহ সব জিনিসের উপর শক্তিশালী’’ (সূরা আল কাহাফ: ৪৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا﴾

‘‘আকাশ মন্ডলীতে ও পৃথিবীতে আল্লাহকে অক্ষম করে দেবার মতো কোন জিনিস নেই। তিনি সবকিছু জানেন এবং সব জিনিসের উপর ক্ষমতাশীল’’ (সূরা আল ফাতির: ৪৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ﴾

‘‘তার কুরসী আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত হয়ে আছে। আর আসমান ও যমীনকে ধারণ করা তার জন্য মোটেই কঠিন নয়। আর তিনি সমুন্নত, মহান’’ (সূরা আল বাকারা: ২৫৫)।

এখানে لَايَئُوْدُهُ অর্থ হলো মোটেই কঠিন হয় না, ভারী অনুভব হয় না, তাকে অপারগ করে না। এখানে আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র সত্তা হতে যা নাকচ করা হয়েছে, তার বিপরীত বিশেষণ পূর্ণরূপে তার জন্য সাব্যস্ত বলেই তা নাকচ করা হয়েছে। অনুরূপ কুরআন ও সুন্নাহয় আল্লাহ তা‘আলাকে যেসব বিশেষণ থেকে মুক্ত ও পবিত্র করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই একই কথা। যা নাকচ করা হয়েছে, তার বিপরীতটি পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত বলেই সে নাকচ এসেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا﴾

‘‘তোমার রব কারো প্রতি যুলুম করেন না’’ (সূরা আল কাহাফ: ৪৯)।

তিনি যেহেতু আদল বা ন্যায়বিচারের বিশেষণে পূর্ণরূপে বিশেষিত তাই তিনি যুলুমকে নিজের সত্তা থেকে অস্বীকার করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা সূরা সাবা’র ৩ নং আয়াতে বলেন,

﴿لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَلَا أَصْغَرُ مِن ذَٰلِكَ وَلَا أَكْبَرُ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ﴾

‘‘তার কাছ থেকে অণু পরিমাণ জিনিস আকাশ সমূহেও লুকিয়ে নেই এবং পৃথিবীতেও নেই। অণুর চেয়ে ছোট হোক, কিংবা তার চেয়ে বড় হোক, সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা রয়েছে’’।

তার ইলম যেহেতু পরিপূর্ণ, তাই তার ইলম থেকে আসমান-যমীনের কোন কিছুই লুকিয়ে নেই। সূরা ক্বফের ৩৮ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٍ﴾

‘‘আমি আকাশ-পৃথিবী এবং তার মধ্যকার সব জিনিসকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি অথচ তাতে আমি ক্লান্ত হইনি’’।

তার ক্ষমতা যেহেতু পরিপূর্ণ ও সার্বভৌম তাই ক্লান্তি ও কষ্ট তার কাছে আসতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা আয়াতুল কুরসীতে (সূরা আল বাকারা: ২৫৫) আরো বলেন,

لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ

‘‘তন্দ্রা ও নিদ্রা তাকে স্পর্শ করতে পারে না’’।

তার হায়াত যেহেতু পরিপূর্ণ এবং তিনি যেহেতু সবকিছুর পরিপূর্ণ ধারক, তাই তার পবিত্র সত্তা থেকে তন্দ্রা ও নিদ্রার ধারণাকে নাকচ করা হয়েছে। সূরা আন‘আমের ১০৩ নং আয়াতে বলেন,

لَّا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ

‘‘দৃষ্টিশক্তি তাকে আয়ত্ত করতে পারে না’’। তার বড়ত্ব, সম্মান ও মহত্ত্ব যেহেতু পূর্ণাঙ্গ, তাই তাকে দৃষ্টির মাধ্যমে আয়ত্ত ও পরিবেষ্টন করা অসম্ভব।

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র সত্তা থেকে যেসব বিষয় নাকচ করা হয়েছে, তার বিপরীতটি পূর্ণরূপে তার জন্য সাব্যস্ত করার জন্যই তা করা হয়েছে। অন্যথায় শুধু নাকচ করাতে কোন প্রশংসা হয় না।[1]

যে নাকচ করাতে কোনো প্রশংসা হয় না তার উদাহরণ স্বরূপ কবির এ কথাটি পেশ করা যেতে পারে। কবি একটি গোত্রের নিন্দা করতে গিয়ে বলেন,

قُبَيِّلَةٌ لَا يَغْدِرُونَ بِذِمَّةٍ... وَلَا يَظْلِمُونَ النَّاسَ حَبَّةَ خَرْدَلِ

‘‘তাদের গোত্র এত ছোট যে, তারা কোন অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না এবং মানুষের উপর অণু পরিমাণ যুলুমও করে না। এ লাইনের পূর্বের এবং পরের লাইনে যা উল্লেখ করা হয়েছে এবং গোত্রের লোকদেরকে বুঝানোর জন্যقبيلة শব্দকে ‘তাসগীর’ তথা ক্ষুদ্রতা বাচক শব্দের দ্বারা উল্লেখ করাকে যদি গাদ্দারী ও যুলুম নাকচ করার সাথে মিলানো হয়, তাহলে বুঝা যাবে যে, এখানে তাদের অপারগতা, অক্ষমতা ও দুর্বলতা বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। গাদ্দারী ও যুলুম পরিহার করার মধ্যে যুলুম ও গাদ্দারী করার উপর তাদের পরিপূর্ণ ক্ষমতা থাকা বুঝায় না এবং তাদের প্রশংসাও বুঝায় না। কারণ তারা ক্ষমতা না থাকার কারণে যুলুম ও গাদ্দারী ছেড়ে দিয়েছে। ক্ষমতা থাকার পরও যদি ছেড়ে দিতো, তাহলে তারা প্রশংসার হকদার হতো। অন্য কবি বলেছেন,

لَكِنَّ قَوْمِي وَإِنْ كَانُوا ذَوِي عَدَدٍ... لَيْسُوا مِنَ الشَّرِّ فِي شَيْءٍ وَإِنْ هَانَا

‘‘আমার গোত্রের লোকের সংখ্যা অনেক হলেও তারা যুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করে না। যদিও তা তুচ্ছ ব্যাপারে হয়ে থাকে’’।

এখানে যুলুম প্রতিরোধ না করার মাধ্যমে যখন তাদের নিন্দা করা হয়েছে তখন জানা গেল যে, তাদের অক্ষমতা ও দুর্বলতার কারণেই তারা প্রতিশোধ নেয় না। কারণ প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকার পরও যদি কেউ যালেমকে ক্ষমা করে দেয়, তখনই সে ক্ষমা করা প্রশংসাযোগ্য হয়।[2]

এ জন্যই কুরআন মাজীদের যেসব স্থানে আল্লাহ তা‘আলার সিফাতসমূহ সাব্যস্তের আলোচনা এসেছে, সেখানে সিফাতগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। অপর দিকে যেখানে আল্লাহ তা‘আলা থেকে কোন কিছু নাকচ করা হয়েছে, সেখানে খুব সংক্ষিপ্তভাবেই করা হয়েছে।[3]

কিন্তু নিকৃষ্ট মাযহাবের উদ্ভাবক কালামশাস্ত্রবিদ এর বিপরীত করেছে। তারা যখন আল্লাহ তা‘আলা থেকে কোনো কিছু নাকচ করে, তখন খুব বিস্তারিতভাবে করে থাকে। আর যখন আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করে তখন খুব সংক্ষিপ্তভাবেই করে থাকে। তারা বলে থাকে, আল্লাহ তা‘আলার কোন শরীর নেই, ছায়া নেই, দেহ নেই, ছবি নেই, রক্ত নেই, নেই মাংস, তিনি কোন ব্যক্তি নন, পদার্থ নন, তার কোন অবস্থা নেই, তার কোন রং নেই, ঘ্রাণ নেই, স্বাদ নেই, তিনি গরম নন, ঠান্ডা নন, ভিজা নন, শুষ্ক নন, দীর্ঘ নন, প্রশস্ত নন, গভীর নন, মিলিত নন, বিচ্ছিন্ন নন, তিনি নড়াচড়া করেন না, স্থির হন না, তার কোনো অংশ নেই, তিনি অংশ বিশিষ্ট নন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট নন, কোন দিকে নন। তার কোনো ডান, বাম, সম্মুখ, পিছন, উপর এবং নীচ নেই। কোনো স্থান তাকে বেষ্টন করতে পারে না, তিনি কালের সীমা রেখার বহু উর্ধ্বে, তিনি কারো সংস্পর্শে নন, কারো থেকে দূরেও নন, কোনো স্থানেই তিনি অবতরণ করেন না কিংবা প্রবেশ করেন না, নশ্বর মাখলুকের কোনো বিশেষণেই তিনি বিশেষিত নন। এ কথা বলা যাবে না যে, তিনি দূরত্বের শেষ প্রামেত্ম, নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণের মাধ্যমে তাকে বিশেষিত করা যাবে না, তিনি দিকসমূহে গমন করেন না, তিনি সীমাবদ্ধ নন, পিতা নন, পুত্র নন, কোন পরিমাপ দ্বারাই তাকে পরিমিত করা যায় না এবং পর্দাসমূহ তাকে আড়াল করতে পারে না। মুতাযেলাদের থেকে আবুল হাসান আল আশআরী এমনি আরো অনেক জিনিস বর্ণনা করেছেন।

এ বাক্যগুলোর মধ্যে হক ও বাতিলের মিশ্রণ ঘটেছে। যার নিকট কুরআন-সুন্নাহ্র জ্ঞান রয়েছে, সে কেবল এগুলো বুঝতে সক্ষম। প্রশংসাবিহীন এ পবিত্রতা বর্ণনা করার মধ্যে কোন প্রশংসা নেই। বরং রয়েছে তাতে আল্লাহর শানে বেআদবী। আপনি যদি কোন বাদশাহকে বলেন, আপনি মেথর নন, ঝাড়ুদার নন, নাপিত নন, দর্জি নন, তাহলে এভাবে বিশেষিত করার কারণে আপনাকে শায়েস্ত না করে ছাড়বে না। যদিও আপনি কথাগুলোতে সত্যবাদী। আপনি যখন সংক্ষিপ্তভাবে তাকে দোষত্রুটি থেকে পবিত্র করবেন এবং বলবেন, আপনি প্রজাদের কারো মত নন; আপনি তাদের সকলের চেয়ে উপরে, সর্বাধিক ভদ্র এবং মহান, তাহলেই প্রশংসাকারী বলে গণ্য হবেন। দোষত্রুটি থেকে কাউকে পবিত্র করার সময় কম বলা ও সংক্ষেপ করাই সুন্দর আচরণের পরিচায়ক।

সত্য প্রকাশের সময় ঐসব শারঈ শব্দমালা ব্যবহার করা প্রয়োজন, যা নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা‘আলা থেকে গ্রহণ করেছেন। এটিই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের তরীকা।

আল্লাহ তা‘আলার অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলীর জন্য নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব শব্দ ব্যবহার করেছেন, মুআত্তিলারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা সেগুলোর অর্থ নিয়ে গবেষণা করে না। তারা যেসব বিদ‘আতী অর্থ ও শব্দ তৈরী করেছে, সেগুলোকেই তারা এএ নির্ভুল আক্বীদাহ মনে করে, যা বিশ্বাস করাকে তারা ওয়াজিব মনে করে।

অপরপক্ষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত, হকপন্থী এবং ঈমানদার লোকেরা আল্লাহ তা‘আলা এবং তার রাসূলের কথাকেই হক্ব মনে করে। এটাকে বিশ্বাস করা এবং এর উপর নির্ভর করাকে আবশ্যক মনে করে।

আল্লাহর নাম ও সিফাতের ব্যাপারে বিদ‘আতীরা যা বলেছে, তা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা আবশ্যক, কিংবা সেগুলোর আসল অবস্থা বিস্তারিত বর্ণনা করা আবশ্যক। সে সঙ্গে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত দ্বারা সেগুলো বিচার-বিশেস্নষণ করা জরুরী। তবে কোন ক্রমেই ঐগুলোর মাধ্যমে কুরআন ও সুন্নাহকে তুলনা করা যাবে না।

মোট কথা বিদ‘আতীদের অধিকাংশ আক্বীদাহ হলো না বাচক। তারা বলে এমন নয়, ঐ রকম নয়....ইত্যাদি। তারা যা সাব্যস্ত করেছে, তা অস্বীকারের তুলনায় খুব কম। তারা শুধু সাব্যস্ত করেছে যে, আল্লাহ তা‘আলা عالم (জ্ঞানবান), قادر (ক্ষমতাবান), حي (চিরঞ্জীব) বা অনুরূপ কিছু। তারা আল্লাহ তা‘আলাকে যেসব দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র করেছে তার অধিকাংশই কুরআন ও সুন্নাহ থেকে সংগৃহিত নয়। আল্লাহর সিফাতে বিশ্বাসী অন্যান্য ফির্কার লোকেরা যে আকলী তরীকা (বিবেক-বুদ্ধিভিত্তিক পদ্ধতি) অবলম্বন করেছে, বিদ‘আতীদের তরীকা তা থেকে বহু দূরে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴾لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴿ ‘‘তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা শূরা: ১১)

এখানে আল্লাহর সদৃশ নাকচ করার পর তার দৃষ্টি ও শ্রবণ সিফাত সাব্যস্ত করার মাধ্যমে নাকচ করার উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, এখানে উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র পূর্ণ গুণাবলী দ্বারা বিশেষিত।

সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঐসব বিশেষণে বিশেষিত, যা দ্বারা তিনি নিজেকে বিশেষিত করেছেন এবং যা দ্বারা তার রসূলগণ তাকে বিশেষিত করেছেন। তার সিফাতসমূহের, নামসমূহের এবং তার কর্মসমূহের কোন সদৃশ নেই। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা এবং আমাদের নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব গুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন, তারও কোন সদৃশ নেই। সে সঙ্গে আরো বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলার আরো এমনসব গুণ রয়েছে যা তিনি সৃষ্টির কাউকে অবগত করেননি। যেমন আল্লাহর সত্যবাদী নাবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুঃখ কষ্ট ও বিপদাপদের দু‘আয় বলেছেন,

«أللَّهُمّ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ العظيم رَبِيعَ قَلْبِي ونُورَ صَدْرى وجِلاءَ حُزنى وذَهَابَ هَمِّى»

‘‘আমি তোমার সে প্রত্যেক নামের উসীলা দিয়ে তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, যে নামের মাধ্যমে তুমি নিজের নামকরণ করেছো বা তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছো বা তোমার কোন বান্দাকে শিক্ষা দিয়েছো অথবা যে নামগুলোকে তুমি নিজের জ্ঞান ভান্ডারে সংরক্ষিত করে রেখেছো, কুরআনকে আমার অন্তরের প্রশান্তি, বক্ষের নূর, দুঃশ্চিন্তা এবং পেরেশানী বিদূরিত হওয়ার মাধ্যমে পরিণত করে দাও’’।[4]

সিফাত সম্পর্কে আলোচনা করার সময় বিদ‘আতীদের তরীকার বিভ্রান্তি থেকে সতর্ক করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহর কথা, وَلَا شَيْءَ يُعْجِزُهُ ‘‘কোন কিছুই তাকে অক্ষম করতে পারে না’’, এখানে যে সব বিষয় নাকচ করা হয়েছে, তা দ্বারা নিন্দনীয় নাকচ করা নয়; বরং তা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণ ক্ষমতা সাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا﴾

‘‘আকাশ মন্ডলীতে ও পৃথিবীতে আল্লাহকে অক্ষম করে দেবার মতো কোন জিনিস নেই। তিনি সবকিছু জানেন এবং তিনি সব জিনিসের উপর ক্ষমতাশীল’’। (সূরা আল ফাতির: ৪৪) এ আয়াতের শেষের দিকে আল্লাহ তা‘আলা এমন দলীল-প্রমাণ উল্লেখ করেছেন, যা তার থেকে অপারগতা ও অক্ষমতার ধারণাকে দূর করে দেয়। আর তা হলো আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণ ইলম ও পরিপূর্ণ ক্ষমতা। কর্মী লোক যা করতে চায়, তা করতে দুর্বল হওয়া থেকেই অপারগতা ও অক্ষমতার সৃষ্টি হয়। আর কাজ করার মত ক্ষমতা থাকলে ইলম না থাকার কারণেও কর্মী কাজ করতে অক্ষম ও অপারগ হয়। আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞান থেকে অণু পরিমান জিনিসও লুকায়িত নয় এবং তিনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। সাধারণ বোধশক্তি এবং মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি দ্বারাই আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণ ক্ষমতা ও পরিপূর্ণ ইলমের প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং ক্ষমতা ও অক্ষমতা যেহেতু পরস্পর বিপরীত দু’টি বিষয় এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য যেহেতু পরিপূর্ণ ক্ষমতা সাব্যস্ত, তাই তার পবিত্র সত্তা থেকে অপারগতা ও অক্ষমতার ধারণা বিদূরিত হলো। কেননা ইলাহ অক্ষম ও অপারগ হওয়ার যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা অপারগ ও অক্ষম হওয়ার বহু উর্ধ্বে।

[1]. সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহয় আল্লাহর যেসব সিফাত নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে নিছক নাকচ উদ্দেশ্য নয়; বরং সে ক্ষেত্রে যা নাকচ করা হয়েছে তার বিপরীতে সিফাতে পূর্ণতা সাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য। কেননা কোন বস্তুর শুধু দোষ-ত্রুটি নাকচ করাতে তার পূর্ণতা ও প্রশংসা সাব্যস্ত হয় না। তবে তা দ্বারা যদি তার বিপরীত গুণ সাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য হয় এবং কামালিয়াতের সিফাতগুলো উল্লেখ করা হয়, তাহলেই প্রশংসা হয়।

[2]. আল্লাহ তা‘আলা নিজের সত্তা থেকে যে যুলুমকে নাকচ করেছেন, তাতে শুধু নাকচ করা উদ্দেশ্য নয় এবং তিনি যুলুম করতে সক্ষম নন, -এটিও উদ্দেশ্য নয়। অপরাধী থেকে প্রতিশোধ নিতে অক্ষম ও দুর্বল বলে তিনি ক্ষমা করে দেন না ও প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত থাকেন না; বরং যুলুম করা এবং প্রতিশোধ নেয়ার পূর্ণ ক্ষমতা রাখার পরও যেহেতু তিনি যুলুম করেন না ও প্রতিশোধ নেন না, তাই এগুলো আল্লাহ তা‘আলা থেকে নাকচ করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ আদল ও পরিপূর্ণ ক্ষমতা সাব্যস্ত হয়। একই সঙ্গে এগুলো পরিহার করার কারণে তিনি প্রশংসিতও হন।

[3]. এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, সূরা ইখলাসে তো আল্লাহ তা‘আলা থেকে পূর্ণতার বিপরীত বৈশিষ্ট্যগুলো বিস্তারিতভাবেই নাকচ করা হয়েছে এবং আরো কয়েকটি স্থানেও বিস্তারিত নাকচ এসেছে। এর জবাব হলো সূরা ইখলাসে আল্লাহ তা‘আলা কাফেরদের মিথ্যা অপবাদের জবাব দিয়েছেন। তারা বলেছিল, আল্লাহর সন্তান রয়েছে। তাই তিনি এখানে বিস্তারিতভাবে তাদের মিথ্যা অপবাদের প্রতিবাদ করেছেন। অন্যান্য যেসব স্থানে বিস্তারিতভাবে নাকচ করেছেন, সেখানেও কোন না কোন সন্দেহ দূর করার জন্যই দীর্ঘ নফী করেছেন। অন্যথায় সিফাতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো الإثبات المفصل والنفي المجمل ‘‘আল্লাহর সুউচ্চ সিফাতগুলো বিস্তারিতভাবে সাব্যস্ত করা এবং তার শানে অশোভনীয় বিষয়গুলো সংক্ষিপ্ত আকারে নাকচ করা। কেননা বিস্তারিতভাবে সাব্যস্ত করা ও সংক্ষিপ্ত নাকচের মাধ্যমে পূর্ণতা ও প্রশংসা হয়। অপর পক্ষে বিস্তারিত নাকচের মাধ্যমে পূর্ণতা ও প্রশংসার বদলে বিশেষিত সত্তার দোষ-ত্রুটির বর্ণনা হয়ে যায় এবং তার দুর্ণাম হয়।

[4]. মুসনাদে আহমাদ, ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সিলসিলায়ে সহীহা, (১/১৯৯)।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে