আল্লাহর উপর ভরসা করা উপায়-উপকরণ অবলম্বন ও চেষ্টা করার পরিপন্থী নয়

কিছু মানুষ মনে করে, জীবিকা উপার্জনের জন্য চেষ্টা করা এবং উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা আল্লাহর উপর ভরসা করার পরিপন্থি। তারা আরো বলে সবকিছু যেহেতু তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে, তাই উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের ধারণা বাতিল। উপার্জনের জন্য চেষ্টা করা এবং উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফরয, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুস্তাহাব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈধ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাকরুহ এবং ক্ষেত্র বিশেষে হারাম। এ বিষয়টি যথাস্থানে আলোচনা করা হয়েছে।

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম ভরসাকারী। তারপরও তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য মাথায় হেলমেট পরিধান করতেন এবং জীবিকা তালাশের জন্য বাজারে যেতেন। কাফেররা নাবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতো,

مَا لِهَٰذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِي فِي الْأَسْوَاقِ

এ কেমন রসূল, যে খাবার খায় এবং হাটে বাজারে ঘুরে বেড়ায়? (সূরা আল ফুরকান ২৫:৭)।

এ জন্যই অনেক মানুষকে আপনি দেখবেন, যারা মনে করে জীবিকার জন্য চেষ্টা করা আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করার পরিপন্থি, তারা রিযিকের জন্য অপর মানুষের কাছে হাত পাতে। মানুষের দান-খয়রাত ও হাদীয়া-উপঢৌকনের উপর নির্ভর করে জীবন পরিচালনা করে। কখনো চাঁদাবাজি ও অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ অপহরণ করতে বাধ্য হয়। এ বিষয়ের আলোচনা যথাস্থানে করা হয়েছে। এ সংক্ষিপ্ত কিতাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِندَهُ أُمُّ الْكِتَابِ

‘‘আল্লাহ যা চান নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং যা চান কায়েম রাখেন। উম্মুল কিতাব তার কাছেই আছে’’। (সূরা রা’দ: ৩৯)

এর ব্যাখ্যা করার সময় কিছু কথার প্রতি ইতিপূর্বে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ ‘‘তিনি প্রতিদিন কোন না কোনো মহান কার্যে রত আছেন’’। (সূরা আর্-রাহমান: ২৯)

এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে ইমাম বগবী মুকাতিল থেকে বর্ণনা করে বলেন, আয়াতটি ইহুদীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারা বলেছিল, আল্লাহ তা‘আলা শনিবারের দিন কিছুই করেন না। মুফাসসিরগণ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রতিদিন কোনো না কোনো কাজে রত থাকেন, -এর অর্থ হলো তিনি কাউকে সৃষ্টি করেন, জীবন দান করেন, কারো মৃত্যু ঘটান, কারো রিযিকের ব্যবস্থা করেন, কাউকে সম্মান দান করেন, কাউকে অপদস্ত করেন, রোগীকে শিফা দান করেন, কয়েদী মুক্ত করেন, বিপদগ্রস্তকে বিপদ মুক্ত করেন, দু‘আকারীর দু‘আ কবুল করেন, প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং কারো গুনাহ মাফ করেন। এমনি তার সৃষ্টির মধ্যে স্বীয় ইচ্ছায় আরো অনেক কিছু করেন, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।