দ্বিতীয় প্রকার শাফা‘আত: কিয়ামতের দিন নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন বহু সংখ্যক লোকের জন্য শাফা‘আত করবেন, যাদের সৎ আমল এবং খারাপ আমল সমান সমান হবে। তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য শাফা‘আত করবেন।

তৃতীয় প্রকার শাফা‘আত: এমনি তিনি আরো এক শ্রেণীর লোকের জন্য শাফা‘আত করবেন, যাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ করা হয়েছে। তিনি সুপারিশ করবেন, যাতে তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ না করানো হয়।

চতুর্থ প্রকার শাফা‘আত: জান্নাতে প্রবেশকারী এক শ্রেণীর লোকের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য তিনি আল্লাহর কাছে শাফা‘আত করবেন। তাদের আমল অনুযায়ী যে পরিমাণ ছাওয়াব পাওয়ার হকদার, তিনি তাদেরকে তার চেয়ে বেশী প্রদান করার জন্য শাফা‘আত করবেন। মুতাযেলা সম্প্রদায়ের লোকেরা শুধু এ প্রকার শাফা‘আতকে সাব্যস্ত করে থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য প্রকার শাফা‘আতকে তারা অস্বীকার করেছে। যদিও সে ব্যাপারে অনেক ছহীহ হাদীছ রয়েছে।

পঞ্চম প্রকার শাফা‘আত: এক শ্রেণীর লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করানোর ব্যাপারে তিনি শাফা‘আত করবেন। উক্কাশা বিন মিহসানের হাদীছটি এ শ্রেণীর লোকদের শাফা‘আতের ব্যাপারে সর্বোত্তম দলীল।

حِينَ دَعَا لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَجْعَلَهُ مِنَ السَّبْعِينَ أَلْفًا الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ

উক্কাশার জন্য রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু‘আ করেছেন যে, তিনি যেন তাকে ঐ ৭০ হাজারের অন্তর্ভুক্ত করে নেন, যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[1] ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে।

ষষ্ঠ প্রকার শাফা‘আত: যারা জাহান্নামে প্রবেশের হকদার হবে, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের শাস্তি কমানোর জন্য শাফা‘আত করবেন। তিনি তার চাচা আবু তালেবের শাস্তি কমানোর জন্য আল্লাহর কাছে শাফা‘আত করবেন।[2]

ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ তাযকিরা নামক কিতাবে এ প্রকার শাফা‘আত সম্পর্কে আলোচনা করার পর বলেন, যে ব্যক্তি বলবে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ ‘‘সে সময় সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো কাজে আসবে না’’। (সূরা মুদ্দাছছির: ৪৮)

তার জবাবে বলা হবে, কাফেরদের জাহান্নাম থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে শাফা‘আত কারীদের কোনো শাফা‘আতই কাজে আসবে না। কিন্তু তাওহীদপন্থী পাপীদের জন্য সুপারিশ কারীদের সুপারিশ কাজে আসবে। তাওহীদপন্থী পাপী মুমিনগণ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

সপ্তম প্রকার শাফা‘আত: সমস্ত মুমিনদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করার ব্যাপারে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফা‘আত করবেন। যেমনটি ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। ছহীহ মুসলিমে আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, أَنَا أَوَّلُ شَفِيعٍ فِي الْجَنَّةِ আমি জান্নাতের মধ্যে সর্বপ্রথম সুপারিশকারী হবো।[3]

অষ্টম প্রকার শাফা‘আত: তার উম্মতের কবীরাগুনাহকারী এক শ্রেণীর লোক কিয়ামতের দিন জাহান্নামে যাবে। কিন্তু নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য শাফা‘আতের কারণে তারা জাহান্নাম থেকে রেহাই পেয়ে যাবে।[4] এ প্রকার শাফা‘আতের ব্যাপারে মুতাওয়াতের সূত্রে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। মুতাযেলাদের কাছে এ প্রকার হাদীছগুলো অস্পষ্ট রয়েছে। তাই তারা এ প্রকার শাফা‘আতকে অস্বীকার করেছে। এ ছহীহ হাদীছগুলো সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার কারণেই তারা এ ধরণের মত প্রকাশ করেছে। আর কিছু কিছু লোক এগুলো সম্পর্কে জেনেও তা কবুল করতে অস্বীকার করেছে এবং তারা তাদের বিদ‘আতের উপর অবিচল রয়েছে। ফেরেশতা, নাবীগণ এবং মুমিনগণও এ প্রকার শাফা‘আত করবেন। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারবার এ শাফা‘আত করবেন। এ প্রকার শাফা‘আতের পক্ষে যেসব হাদীছ রয়েছে, তার মধ্যে আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাদীছ অন্যতম।

রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, «شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي» ‘‘আমার উম্মতের কবীরাহ গুনাহকারী লোকেরাই কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত লাভ করে ধন্য হবে’’।[5] ইমাম আহমাদ বিন হান্বাল রহিমাহুল্লাহ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ কিতাবুত্ তাওহীদে বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, সুলায়মান বিন হারব্, তিনি বর্ণনা করেন হাম্মাদ বিন যাইদ থেকে, হাম্মাদ বর্ণনা করেছেন, মামাদ বিন হেলাল আনাযী থেকে, তিনি বলেন, আমরা বসরার অধিবাসী একদল লোক আনাস বিন মালিকের নিকট গেলাম। শাফাআতের হাদীছ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য আমাদের সাথে ছাবিত আল-বুনানীকেও নিয়ে গেলাম। আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তখন তার গৃহে অবস্থান করছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখলাম। তিনি চাশতের ছ্বলাত পড়ছেন। আমরা তার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। তখন তিনি স্বীয় বিছানার উপর ছিলেন। আমরা ছাবিতকে বললাম, শাফাআতের হাদীছের পূর্বে তাকে অন্য কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না। ছাবিত তখন বললেন, হে আবু হামযাহ! তোমার এ ভাইয়েরা বসরা থেকে এসেছে। তোমাকে তারা শাফাআতের হাদীছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেন, আমাদের কাছে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, যেদিন কিয়ামত হবে, সেদিন মানুষ দলে দলে পরস্পরের নিকট গমণ করবে। তারা আদম আলাইহি সালামের কাছে গিয়ে বলবে, আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট শাফা‘আত করুন। আদম বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা চলে যাও ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে। তিনি হলেন আল্লাহর খলীল। তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিকট যাবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা চলে যাও মুসার কাছে। তিনি হলেন কালীমুল্লাহ।

তারা মুসা আলাইহিস সালামের কাছে যাবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে চলে যাও। তিনি হলেন রূহুল্লাহ এবং আল্লাহর কালেমা। তারা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে যাবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা চলে যাও। মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলবো, আমি এর যোগ্য। আমি তখন আমার রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করবো। আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। আমাকে এমন কিছু প্রশংসা শিখানো হবে, যা দ্বারা আমি সেদিন আল্লাহর প্রশংসা করবো। এখন সেগুলো আমার মনে পড়ছে না। আমি সেগুলোর দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করবো এবং আল্লাহর জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়বো। তখন আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উঠাও। কথা বলো। তোমার কথা শ্রবণ করা হবে, শাফা‘আত করো, তোমার শাফা‘আত কবুল করা হবে এবং চাও, তোমাকে দেয়া হবে। আমি তখন বলবো, হে আমার রব! আমার উম্মতকে বাঁচাও, হে আমার রব! আমার উম্মতকে বাঁচাও। অতঃপর বলা হবে, যাও। যার অন্তরে একটি যবের দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করো। আমি গিয়ে তাই করবো।

অতঃপর ফিরে এসে ঐ প্রশংসার বাক্যগুলো দিয়েই আবার আল্লাহর প্রশংসা শুরু করবো এবং আল্লাহর জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়বো। তখন আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উঠাও। কথা বলো। তোমার কথা শ্রবণ করা হবে, শাফা‘আত করো, তোমার শাফা‘আত কবুল করা হবে এবং চাও, তোমাকে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে আমার রব! আমার উম্মতকে বাঁচাও, হে আমার রব! আমার উম্মতকে বাঁচাও। অতঃপর বলা হবে, যাও। যার অন্তরে একটি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করো। আমি গিয়ে তাই করবো।

অতঃপর ফিরে এসে ঐ প্রশংসার বাক্যগুলো দিয়েই আবার আল্লাহর প্রশংসা শুরু করবো এবং আল্লাহর জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়বো। তখন আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উঠাও। কথা বলো। তোমার কথা শ্রবণ করা হবে, শাফা‘আত করো, তোমার শাফা‘আত কবুল করা হবে এবং চাও, তোমাকে দেয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে আমার রব! আমার উম্মতকে বাঁচাও, হে আমার রব! আমার উম্মতকে বাঁচাও। অতঃপর বলা হবে, যাও। যার অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও কম পরিমাণ ঈমান রয়েছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করো। আমি গিয়ে তাই করবো।

বর্ণনাকারী বলেন, আমরা যখন আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট থেকে বের হলাম, তখন আমি আমার কতক সাথীকে বললাম, আমরা যদি হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহর কাছে যেতাম! অতঃপর আমরা তার কাছে গিয়ে আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীছ সম্পর্কে আলোচনা করতাম! তখন তিনি হাজ্জাজের যুলুমের ভয়ে আবু খলীফার বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। আমরা তার কাছে গিয়ে সালাম দিলাম। তিনি আমাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। আমরা তাকে বললাম, হে আবু সাঈদ! আমরা তোমার ভাই আনাস বিন মালেকের নিকট থেকে আগমন করেছি। তিনি আমাদের কাছে শাফা‘আত সম্পর্কে যে হাদীছ শুনিয়েছেন, আমরা তা আর কখনো শুনতে পাইনি। তিনি বললেন, সেটি কোন্ হাদীছ? আমরা তাকে হাদীছটি শুনালাম। আমরা যখন হাদীছে বর্ণিত শেষোক্ত তিনটি শাফা‘আত পর্যন্ত বর্ণনা করলাম, তখন তিনি বললেন, এরপর কী? আমরা বললাম, তিনি এর চেয়ে বেশী আর কিছুই বর্ণনা করেনি। অতঃপর তিনি বললেন, আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ২০ বছর আগে যুবক বয়সে আমার কাছে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। আমি আশঙ্কা করছি, তিনি কি তা ভুলে গেছেন? না কি তোমরা আমল ছেড়ে দিয়ে শাফাআতের উপর ভরসা করে বসে থাকবে, এ আশঙ্কায় তিনি পুরো হাদীছটি তোমাদেরকে শুনানো অপছন্দ করছেন। অতঃপর আমরা বললাম, হে আবু সাঈদ! আমাদের কাছে আপনি তা বর্ণনা করুন। এতে তিনি হাসলেন এবং তাদেরকে তাড়াহুড়া করতে দেখে বললেন,

وَكَانَ الْإِنْسَانُ عَجُولًا

‘‘মানুষ বড়ই তাড়াহুড়াকারী’’। (সূরা বানী ইসরাঈল: ১১)

তোমরা আমার কাছে যা বর্ণনা করলে, তা আমি পুনরায় বর্ণনা করতে চাই না। তোমাদেরকে তিনি যেভাবে শুনিয়েছেন, আমাকেও সেভাবে শুনিয়েছেন।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চতুর্থবার আমি গিয়ে আল্লাহ তা‘আলার সেই প্রশংসাগুলো করবো এবং আল্লাহর জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়বো। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ মাথা উঠাও। কথা বলো, তোমার কথা শ্রবণ করা হবে। চাও, দেয়া হবে, সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। আমি তখন বলবো, হে আমার রব! যারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তাদের ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য আমাকে অনুমতি দাও। আল্লাহ তা‘আলা তখন বলবেন, আমার বড়ত্ব, মর্যাদা, অহঙ্কার এবং সম্মানের শপথ! যারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, আমি অবশ্যই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো।[6] ইমাম মুসলিম হাদীছটিকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন।

হাফেয আবু ইয়ালা উছমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোক শাফা‘আত করবে। (১) নাবীগণ (২) আলেমগণ (৩) শহীদগণ।[7]

ছহীহ মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ফেরেশতাগণ সুপারিশ করেছে, নাবীগণ শাফা‘আত করেছে এবং মুমিনগণ শাফা‘আত করেছে। এখন শুধু সর্বাধিক আল্লাহ তা‘আলাই অবশিষ্ট রয়েছে। অতঃপর তিনি জাহান্নাম থেকে এক মুষ্ঠি মানুষ বের করবেন, যারা কোনো আমলই করেনি।[8]

অতঃপর শাফা‘আতের ক্ষেত্রে লোকেরা তিনভাবে বিভক্ত।

(১) মুশরিক, খৃষ্টান এবং যেসব সুফী তাদের শাইখদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে, তারা আল্লাহর নিকট তাদের বড়দের শাফা‘আতকে ঠিক দুনিয়ার মানুষের নিকট পরিচিত শাফাআতের মতই মনে করে।

(২) মুতাযেলা সম্প্রদায় এবং খারেজীরা কবীরা গুনাহকারীদের ব্যাপারে আমাদের নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অন্যদের শাফা‘আতকে অস্বীকার করে।

(৩) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকেরা কবীরা গুনাহকারীদের ব্যাপারে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অন্যদের শাফা‘আতের স্বীকৃতি প্রদান করেন। তবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অনুমতি দেয়ার আগে এবং একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার পূর্বে শাফা‘আত শুরু করবেন না।যেমনটি শাফা‘আতের ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন লোকেরা সর্বপ্রথম আদম আলাইহিস সালামের নিকট যাবে, অতঃপর নূহ (আ.), ইবরাহীম (আ.), মুসা (আ.) এবং সবশেষে ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে গেলে তিনি তাদেরকে বলবেন, তোমরা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর এমন একজন বান্দা, যার পূর্বের এবং পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারা আমার কাছে আসবে। আমি যখন আমার রবকে দেখবো, তখন তার জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়বো। আমাকে আল্লাহ তা‘আলা তখন এমন কিছু প্রশংসা শিখিয়ে দিবেন, যা দ্বারা আমি তার প্রশংসা করবো। এখন আমার সেগুলো মনে পড়ছে না। আল্লাহ তা‘আলা তখন বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। কথা বলো, তোমার কথা শ্রবণ করা হবে, শাফা‘আত করো, তোমার শাফা‘আত কবুল করা হবে। আমি তখন মাথা উঠিয়ে বলবো, হে আমার রব! আমার উম্মতকে বাঁচাও। তখন আমাকে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ লোককে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অনুমতি দেয়া হবে। আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। অতঃপর আমি পুনরায় গিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়বো। অতঃপর আমাকে আরেকটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে।[9] নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা মোট তিনবার উল্লেখ করেছেন।

[1]. মুত্তাফাকুন আলাইহি, ছহীহ বুখারী হা/৫৭৫২, ছহীহ মুসলিম হা/২২০।

[2]. ছহীহ মুসলিম হা/২০৯।

[3]. ছহীহ মুসলিম ১৯৬, মুসনাদে আহমাদ।

[4]. শারহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতিয়াহ, পৃষ্ঠা নং- ১৪২।

[5]. মিশকাত ৫৫৯৮-৫৫৯৯। ইমাম আলবানী রহিমাহুল্লাহ হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: শাইখের টিকাসহ শরহুল আকীদাহ আত্ তাহাবীয়া, টিকা নং- ২০৫।

[6]. ছহীহ।

[7]. হাদীছটি বানোয়াট। ইবনে মাজাহ ৪৩১৩।

[8]. ছহীহ: মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ।

[9]. মুত্তাফাকুন আলাইহি।