রাহে বেলায়াত দ্বিতীয় অধ্যায় - বেলায়াতের পথে যিকরের সাথে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

আল্লাহর যিকর মানব হৃদয়ের খাদ্য ও আত্মার পাথেয়। আল্লাহর রহমত, নিয়ামত, করুণা, বরকত, বিধান, পুরস্কার, শাস্তি, তাঁর প্রশংসা, মর্যাদা, একত্ব ইত্যাদির স্মরণ মানুষের হৃদয়কে পূত পবিত্র, প্রশান্ত ও শক্তিশালী করে। যিকর মূলত রূহের জন্য অক্সিজেন ও পানির মতো। যে মুহূর্তগুলি বান্দা আল্লাহর যিকর থেকে বিরত থাকে সেই মুহূর্তগুলি তার আত্মা অক্সিজেন ও পানির অভাবে কষ্ট পেতে থাকে। মহান প্রভুর সাথে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। দুর্বল হয়ে পড়ে তার হৃদয়। চিরশত্রু শয়তান সুযোগ পায় এই দুর্বল হৃদয়কে আক্রমণ করার।

আত্মিক সুস্থতা ও ভারসম্যপূর্ণ হৃদয়ের জন্য মুমিনকে সর্বদা আল্লাহর যিকরে হৃদয়কে রত রাখার চেষ্টা করতে হবে। বিভিন্ন ব্যস্ততায়, কর্ম, চিন্তা, উদ্বেগ ইত্যাদির কারণে কিছু সময় যিকর বিহীনভাবে অতিবাহিত হলে, আবার যিকরের দিকে ফিরে আসতে হবে। মুখ ও মনকে সাধ্যমতো ব্যস্ত রাখতে হবে মহান প্রভুর স্মরণে।

জাগতিক ব্যস্ততার ফলে যিকর থেকে সাময়িক বিরতি আত্মার কিছু ক্ষতি করলেও তা স্বাভাবিক এবং সে ক্ষতির পূরণ সম্ভব। কিন্তু এর চেয়েও ভয়ঙ্কর ক্ষতি এমন বিষয়ে হৃদয়কে রত রাখা যা আল্লাহর যিকর থেকে তাকে দূরে নিয়ে যায় এবং আল্লাহর যিকরের প্রতি হৃদয়ে অনীহা সৃষ্টি করে।

আমরা জানি যে, মানুষ অসুস্থ হলে তার রুচি নষ্ট হয়। তখন দেহের জন্য উপকারী খাদ্যে তার অনীহা সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতিকারক খাদ্য গ্রহণে তার লোভ বেড়ে যায। হৃদয়ের অবস্থাও অনুরূপ। স্বাভাবিকভাবে মানবহৃদয় আল্লাহর যিকরে তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ করে। কিন্তু অসুস্থ হৃদয় তার প্রভুর যিকরে অনীহা অনুভব করে।

বর্তমান সমাজের প্রায় সকল প্রচার মাধ্যম, বিনোদন, পত্রিকা, গল্প, উপন্যাস হৃদয়কে অসুস্থ করার ও আল্লাহর যিকর থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার কর্মে নিয়োজিত। আমরা অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সাথে লক্ষ্য করি যে, এ সকল প্রচার ও বিনোদন মাধ্যমগুলি শুধু আল্লাহর যিকর থেকে বিরতই রাখে না। উপরন্তু মহান আল্লাহর যিকর, ধর্ম, নৈতিকতা, ধার্মিক মানুষ ও ধর্মজীবনের প্রতি কটাক্ষ, বিষোদগার ও ঘৃণা ছড়াতে ব্যস্ত। এসকল প্রচার ও বিনোদন মাধ্যম মুনিনের জন্য বিষের মতোই ক্ষতিকর।


সম্মানিত পাঠক, যথাসাধ্য চেষ্টা করুন এগুলি থেকে দূরে থাকার। বিনোদনের জন্য ইসলাম-সম্মত অথবা ইসলামী মূল্যবোধ বিরোধী নয় এরূপ মাধ্যম ব্যবহার করুন। সাহিত্য উপন্যাস, গল্প, পত্রিকা ইত্যাদি পরিহার করে ইসলামী বই, সৎ মানুষদের জীবনী ইত্যাদি পাঠে নিজেকে রত রাখা দরকার। প্রয়োজনে এমন সাহিত্য পাঠ করুন যা ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। অমুসলিম লেখকগণের উপন্যাস গল্প শিরক, কুফরী, মূর্তিপূজা, অনৈসলামিক রীতিনীতির কথায় ভরা। এর চেয়েও ক্ষতিকর মুসলিম নামধারী অনেক লেখকের উপন্যাস ও সাহিত্য। তারা ইসলামী মূল্যবোধকে আহত করার মানসেই সাহিত্য রচনা করেন।

কোনো কোনো পত্র-প্রত্রিকার মূলনীতি ইসলাম, মুসলিম, আলিম, ইসলামী ব্যক্তিত্ব, ইসলামী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির কুৎসা রটনার মাধ্যমে পাঠকের মনকে ক্রমান্বয়ে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি বিরক্ত বা বিদ্বেষসম্পন্ন করে তোলা। যখনই কোনো পত্র-পত্রিকা বা সাহিত্যকর্মে এরূপ লেখালেখি দেখতে পাবেন, তখনই তা পড়া বন্ধ করুন। এগুলি বিষ। স্বল্পমাত্রার বিষের মতো ক্রমান্বয়ে তা আপনার হৃদয়কে আল্লাহর যিকর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবে। সংবাদ জানার জন্য, বা সাহিত্যের জন্য অন্য পত্রিকা বা বই পড়ুন। সবচেয়ে ভালো হয় এসকল অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি থেকে নিজেকে যথাসম্ভব দূরে রাখা। আল্লাহ আমাদের শয়তান ও তার অনুচরদের খপ্পর থেকে রক্ষা করুন।