উপদেশ ৭. নফল ছালাতের ফযীলত আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اَللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَا اَلْفَجْرِ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا-

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ফজরের পূর্বের দু’রাক‘আত ছালাত পৃথিবী ও পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ অপেক্ষা উত্তম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১১৬৪; বাংলা মিশকাত হা/১০৯৬)

ব্যাখ্যা : সুন্নাত সমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হচ্ছে ফজরের পূর্বের দু’রাক‘আত সুন্নাত। এ সূন্নাতে কত কল্যাণ আছে, তা মানুষের পক্ষে হিসাব করা সাধ্যাতীত ব্যাপার। তারপর যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত, তারপর যোহরের দু’রাক‘আত তারপর মাগরিবের পরে দু’রাক‘আত, তারপর এশার পর দু’রাক‘আত ধারাবাহিক গুরুত্ব বহন করে। প্রকাশ থাকে যে, মাগরিবের পর ছয় রাক‘আত নফল পড়ার প্রমাণে বর্ণিত হাদীছটি জাল (আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১১৭৩)। মাগরিবের পর বিশ রাক‘আত নফল ছালাত পড়ার প্রমাণে বর্ণিত হাদীছটিও জাল (আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১১৭৪)। এশার পর চার রাক‘আত বা ছয় রাক‘আত ছালাত পড়ার প্রমাণে বর্ণিত হাদীছটিও নিতান্তই যঈফ (আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১১৭৫)

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اَللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ أَرْبَعُ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ بَعْدَ الزَّوَالِ تُحْسَبُ بِمِثْلِهِنَّ فِيْ صَلاَةِ السَّحَرِ، وَمَاَ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ وَيُسَبِّحُ اللهَ تِلْكَ السَّاعَةَ-

ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)কে বলতে শুনেছি, ‘সূর্য ঢলে যাওয়ার পর যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ছালাতের নেকী শেষ রাতের ছালাতের সমান করা হয়। সূর্য ঢলে যাওয়া মাত্র পৃথিবীর সব কিছু আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করতে থাকে’ (তিরমিযী, আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত, ১১৭৭ নং হাদীছের টীকা দ্রঃ হাদীছ ছহীহ)। শেষ রাতে যেমন আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষণ হয় তেমন সূর্য ঢলা মাত্র রহমত বর্ষণ হয়ে থাকে। আর এ সময়ে সবকিছু আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اَللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ؛ يَضْرِبُ عَلَى كُلِّ عُقْدَةٍ، عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ، فَإِن اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ الله انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَأَصْبَحَ نَشِيْطًا طَيِّبَ النَّفْسِ، وَإِلاَّ أَصْبَحَ خَبِيْثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ঘুমায় শয়তান তার মাথার পিছন দিকে তিনটি গিরা দেয় এবং প্রত্যেক গিরার উপর মোহর মারে বা থাবা মেরে বলে, রাত অনেক আছে তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও। যদি সে জাগে এবং দো‘আ পড়ে তাহলে একটি গিরা খুলে যায়। তারপর যদি সে ওযূ করে আরও একটি গিরা খুলে যায়। তারপর যদি সে ছালাত আদায় করে তবে অপর গিরাটিও খুলে যায় এবং সে সকালে প্রফুলল মন পবিত্র অন্তরে সকাল করে। অন্যথা সে সকালে উঠে কলুষিত অন্তর ও অলস মনে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১২১৯; বাংলা মিশকাত হা/১১৫১)

ব্যাখ্যা : ইবাদতের উদ্দেশ্যে রাতে উঠার বিরুদ্ধে শয়তানের প্রবল বাধাদানকেই তিনটি গিরা দ্বারা বুঝিয়েছেন। রাতে উঠে ইবাদত করতে পারলে শয়তানের উদ্দেশ্য বাতিল হয়। শয়তানের প্রচেষ্টা নিষ্ফল হয়। এমন ব্যক্তি আল্লাহর রহমতে প্রফুল্ল হয়। ফলে সে উজ্জ্বল চেহারায় উদ্দমী হয়ে প্রফুল্ল মনে সকাল করে। পক্ষান্তরে অন্যরা মন মরা ও উদাসীন হয়ে কলুষিত অন্তরে সকাল করে।

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَعَارَّ مِنَ اللَّيْلِ فَقَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ثُمَّ قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي أَوْ قَالَ ثمَّ دَعَا استيجيب لَهُ فَإِنْ تَوَضَّأَ وَصَلَّى قُبِلَتْ صَلَاتُهُ.

উবাদা বিন ছামিতcবলেন, রাসূলুল্লাহaবলেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে জেগে বলে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একা, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁর রাজত্ব, তাঁরই জন্য প্রশংসা, তিনি সমস্ত বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, আল্লাহ অতি মহান, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত আমার কোন শক্তি ও সামর্থ্য নেই’। অতঃপর বলে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমায় ক্ষমা কর। অতঃপর কোন প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তার সে প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং সে যদি ওযু করে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ তার সে ছালাত কবুল করেন (বুখারী, মিশকাত হা/১১৪৫)।

عَنِ الْمُغِيْرَةِ رَضِيَ اَللهُ عَنْهُ قَالَ قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى تَوَرَّمَتْ قَدَمَاهُ فَقِيْلَ لَهُ لِمَ تَصْنَعُ هَذَا وَقَدْ غُفِرَ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأخَّرَ، قَالَ أَفَلاَ أَكُوْنُ عَبْدًا شَكُوْرًا-

মুগীরাহ ইবনু শু‘বা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) রাতের ছালাতে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন, যাতে তাঁর পায়ের পাতা ফুলে যেত। তখন তাঁকে বলা হল, আপনি এরূপ কেন করেন? আল্লাহতো আপনার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হব না’? (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১২২০; বাংলা মিশকাত হা/১১৫২)

ব্যাখ্যা : প্রত্যেক মানুষের জন্য দু’টি কারণে রাতে উঠে ইবাদত করা কর্তব্য ১. ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশ্যে, ২. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُوْلُ مَنْ يَدْعُوْنِيْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهُ-

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমাদের প্রতিপালক প্রত্যেক রাতেই এই নিকটবর্তী আকাশে অবতীর্ণ হন, যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে এবং বলতে থাকেন কে আছে যে, আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে যে আমার নিকট কিছু চায় আমি তাকে তা দান করব এবং কে আছে যে আমার নিকট ক্ষমা চায়, আমি তাকে ক্ষমা করব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১২২৩; বাংলা মিশকাত হা/১১৫৫)

ব্যাখ্যা : হাদীছে আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও রহমতের প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহ মহাশক্তিশালী হওয়ার পরেও প্রতিশোধ নিতে চান না। দুনিয়াতে কত মানুষ কতভাবে গুনাহ করছে তার ইয়ত্তা নেই। তবুও তিনি সকলের বিপদ উদ্ধার করার জন্য এবং সকলের গুনাহ ক্ষমা করার জন্য সবাইকে ডেকে বলেন, বিপদে আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। কোন প্রয়োজন হলে আমার কাছে চাও, আমি দিব। আমার কাছে গুনাহ ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করব।