আত তানূখী বাগদাদের এক গভর্ণরের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। সেই গভর্ণর তার প্রদেশের এক বৃদ্ধা মহিলার সম্পদকে জবর দখল করে নিয়েছিল। সে বৃদ্ধা মহিলার সকল অধিকার হরণ করে নেয় ও তার সম্পদকে ক্ষমতাবলে বাজেয়াপ্ত করে দেয়। বৃদ্ধ তার নিকটে গেল, তার সামনে কান্না-কাটি করল ও তার অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। গভর্ণর যা করেছে তার জন্য সে না হলো অনুতপ্ত আর না হলো লজ্জিত। রাগান্বিত হয়ে বৃদ্ধা বলে ফেলল- “আমি তোমার বিরুদ্ধে বদ দোয়া করব।” গভর্ণর উপহাসের হাসি হেসে বৃদ্ধাকে বলল, তাহলে তো রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আপনার প্রার্থনা করা উচিত।

তার ঔদ্ধত্যই তাকে বাধ্য করেছিল বৃদ্ধাকে একথা বলতে। বৃদ্ধ চলে গেল এবং গভর্ণরের বিদ্রুপাত্মক উপদেশ অনুসারেই বৃদ্ধা অবিচলিতভাবে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রার্থনা করতে থাকেন। মাত্র কয়েকদিন যেতে না যেতেই গভর্ণরকে অফিস থেকে প্রচণ্ডভাবে অপসারণ করা হলো। তার অত্যাচারের ফলস্বরূপ তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হলো এবং তাকে প্রকাশ্যে (জনগণের সামনে) চাবকানো হল। চাবকানোর পর, বৃদ্ধা তার পাশ দিয়ে গেল ও তাকে বলল, তুমি খুব ভালো কাজ করেছ! তুমি আমাকে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রার্থনা করতে বলেছ আর (তদনুপাতে) আমি সর্বাপেক্ষা সন্তোষজনক ফলাফল পেয়েছি।”

রাতের শেষ তৃতীয়াংশ আমাদের জীবনের অত্যন্ত মূল্যবান সময়। কেন? এ সময় মহান আল্লাহ বলেন-

هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَأُعْطِيَهُ هَلْ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ هَلْ مِنْ دَاعٍ فَأَسْتَجِيبَ لَهُ

ভাবাৰ্থঃ “কোন প্রার্থী আছে কি যাকে আমি দান করব? কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি যাকে আমি ক্ষমা করব? কোন আহবানকারী আছে কি যার ডাকে আমি সাড়া দিব?”

শিশুকাল থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত আমি কিছু ঘটনা মনে করতে পারি যাতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সাহায্য একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।

প্রায় দশ বছর আগে, আমি বিমানে চড়ে আবহা থেকে রিয়াদ যাচ্ছিলাম। বিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই ঘোষণা দেয়া হলো যে, যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে বিমান আবহাতে ফিরে যাচ্ছে। অতপর তারা সমস্যা সমাধান করেছে বলে দাবি করল এবং আমরা দ্বিতীয়বারের মতো আকাশে উড়লাম। রিয়াদে রানওয়ের নিকটবর্তী হওয়ার সময় অবতরণের চাকাগুলো খুলছিল না। আমরা পুরো একঘণ্টা রিয়াদ শহর প্রদক্ষিণ করলাম। পাইলট বিমান অবতরণ করার জন্য দশবার চেষ্টা করল, কিন্তু প্রতিবারই ল্যান্ডিং গিয়ার কাজ করল না। আমরা যখন আকাশে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে ছিলাম তখন বিমানের বহু লোক আতংকগ্ৰস্ত হয়ে গেল এবং প্রচুর পরিমাণে চোখের পানি ঝরতে লাগল। সেই মুহুর্তে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম যে, জীবন কত তুচ্ছ ও ক্ষণস্থায়ী এবং আমাদের আত্মা পরকালমুখী হয়ে গিয়েছিল। আমরা বারবার বলতে লাগলাম।

لا إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

ভাবার্থঃ “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, তার কোন শরীক নেই, রাজত্ব তারই, প্রশংসা তারই প্রাপ্য আর তিনি সকল বিষয়ের উপরই ক্ষমতাশীল।”

এক বৃদ্ধ লোক দাঁড়িয়ে লোকজনকে আল্লাহর নিকট তওবা করার জন্য, তার নিকট প্রার্থনা করার জন্য, ক্ষমা চাওয়ার জন্য এবং অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করলেন।

আর আল্লাহ মানুষ সম্বন্ধে বলেছেন-

“আর যখন তারা জাহাজে (নৌযানে) চড়ে তখন তারা আল্লাহর প্রতি ঈমানকে খাঁটি করে তাকে (আল্লাহকে) ডাকে (তার নিকট আকুল আবেদন করে)”। (সূরা-২৯ আল আনকাবূতঃ আয়াত-৬৫)

আমরা (একমাত্র) তার নিকটেই সনির্বন্ধ অনুরোধ করলাম যিনি বিপদগ্রস্তদের ডাকে সাড়া দেন। এগার বারের চেষ্টার সময় আমরা নিরাপদে অবতরণ করলাম। আর যখন আমরা অবতরণ করলাম তখন আমরা যেন কবর থেকে ফিরে আসছিলাম।

চোখের পানি শুকিয়ে গেল, মুখে হাসি ফুটল আর আমাদের মনের শান্তি ফিরে এল। আল্লাহ কতইনা করুনাময় ও দয়ালু। একজন আরবী কবি বলেছেন-

كم نطلب الله في ضر يحل بنا ٭ فإن تولت بلايانا نسيناه

ندعوه في البحر أن ينجي سفينتنا ٭ فإن رجعنا إلى الشاطي عصيناه

ونركب الجو في أمن وفي دعة ٭ فما سقطنا لأن الحافظ الله

ভাবার্থঃ

১. “কতবারইনা যখন আমরা বিপদগ্রস্ত হয়েছি তখন আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি! কিন্তু যখন আমাদের বিপদ কেটে গেছে তখন আমরা তাকে ভুলে গেছি!

২. সাগরে থাকাকালে আমাদের জাহাজকে রক্ষা করার জন্য আমরা তাকে ডেকেছি! কিন্তু যখন আমরা নিরাপদে তীরে ভিড়েছি তখন আমরা তার অবাধ্যতা করেছি!

৩. আর আমরা (বিমানে করে) নিরাপদে ও শান্তিতে আকাশে উড়ি; অথচ আমরা পড়ে যাই না; কেননা, (আমাদের) রক্ষক হলেন আল্লাহ।”