৭২ ছয়টি মূলকথা যখন আপনার নিকট তখন কেন দুঃখ করা?

“দুখের পরে সুখ” পুস্তকের গ্রন্থকার একজন বিজ্ঞলোকের ঘটনা উল্লেখ করেছেন যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছিলেন। তাঁর ভাইয়েরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর ক্ষতির জন্য তাকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলেন। তিনি উত্তর দিলেন। ছয়টি উপাদানে আমি একটি ঔষধ বানিয়েছি। সে উপাদান ছয়টি কী তারা তাকে তা জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিলেন-

১. সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান রাখা।

২. তকদীরে যা আছে তা অলঙ্ঘনীয়ভাবে ঘটবে এই অলঙ্ঘনীয় সত্য কথাকে মেনে নেয়া।

৩. দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি ধৈর্যের সুফল পাবে, এর কোন বিকল্প নেই।

৪. ধৈর্য না ধরে আমি কী করতে পারি? একথার নিহিতার্থে অবিচল আস্থা রাখা।

৫. নিজেকে নিজে এ প্রশ্ন করা, “আমার নিজের ধ্বংস করার জন্য আমি কেন এক জন ইচ্ছুক ব্যক্তি হব?”

৬. একথা জানা যে, মুহুর্তেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে মসিবত দূর হয়ে যায় বা যেতে পারে।

অন্যেরা যদি আপনার ক্ষতি করে বা আপনাকে যাতনা দেয় বা আপনি অত্যাচারিত হন অথবা অন্যের হিংসার শিকার হন তবে দুঃখ করবেন না।

শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেছেন-

“মু’মিন ব্যক্তি ঝগড়াও করে না প্রতিশোধও নেয় না এবং অন্যের ছিদ্রান্বেষণও করে না অর্থাৎ অন্যের দোষও তালাশ করে না।” বাধা-বিপত্তি বা সমস্যার সম্মুখীন হলে হতাশ না হয়ে বরং সহ্য করুন ও ধৈর্য ধরুন।

একজন বিজ্ঞ লোক বলেছেন-

“হে সময়! তোমার নিকট যদি অবশিষ্ট কিছু (সময়) থাকে যা দিয়ে তুমি যোগ্য ও মর্যাদাবানদেরকে অপদস্ত কর। তবে তা তুমি আমাকে দাও।” অর্থাৎ হে সময়! তুমি যতই দীর্ঘ হও না কেন তোমার দীর্ঘতার চেয়ে আমার ধৈর্য অনেক বেশি। সুতরাং, তুমি আমার যোগ্যতার ও মর্যাদার হানি করতে পারবে না।

ধৈর্য হলো উদ্বিগ্নতার বিপরীত, ধৈর্য শান্তির ফল বহন করে। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ধৈর্য ধরে না, পরিস্থিতির কারণে সে ধৈর্য ধরতে বাধ্য হয়।

আল মুতানাব্বি বলেছেন-

“সময় আমার উপর এতটাই সমস্যার (তীর) নিক্ষেপ করেছে যে, তীরে তীরে আমার হৃদয়ে আবরণ পড়ে গেছে এখন যখন আমি কোন তীর দ্বারা আক্রান্ত হই তখন আমি সমস্যার প্রতি ভ্রুক্ষেপ ছাড়াই বেঁচে আছি; কেননা, উদ্বিগ্ন হয়ে আমি লাভবান হয়নি।”

কেউ যদি আপনার কোন উপকার করতে অস্বীকৃতি জানায় অথবা আপনাকে যদি ভ্রুকুটি করা হয় অথবা কোন কৃপণ ব্যক্তি যদি আপনাকে ফিরিয়ে দেয় তবে ব্যাথাতুর হবেন না। যদি আপনি অন্যের কাছে কিছু চাওয়া থেকে বিরত থেকে নাকে খত দেয়ার অপমানের ঘাম বা লাঞ্ছনা থেকে বাঁচতে পারেন তবে বিশাল বাড়ি ও সুন্দর বাগানের চেয়ে কুঁড়ে ঘর বা তাবুই আপনার জন্য শ্রেয় এবং সেসব পার্থিব জিনিসের চেয়ে ভালো যা আপনাকে শুধু দুশ্চিন্তা ও অশান্তিই বয়ে এনে দেয়।

তীব্র মানসিক যাতনা রোগের মতোই, এটা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এর পূর্ণ মেয়াদকাল ধরে চলবে। আর যে নাকি এটাকে তাড়াতাড়ি দূর করে দিতে চায় সে প্রায়ই এটাকে বৃদ্ধি করে। দুর্দশাগ্রস্ত লোকের ধৈর্য ধরা বাধ্যতামূলক। তাকে অবশ্যই শান্তির আশায় থাকতে হবে। তাকে সালাত, প্রার্থনা ও ইবাদতে নাছোড়বান্দা হয়ে লেগে থাকতে হবে।