হজ সফরে সহজ গাইড হজ মুহাম্মাদ মোশফিকুর রহমান ১ টি
১২ যিলহজ: মিনায় রাত্রিযাপন ও জামরাতে কংকর নিক্ষেপ
  • যদি এখনও তাওয়াফে ইফাদাহ না করে থাকেন, তাহলে ১২ যিলহজ দিনের বেলায় মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ করুন। তাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের পেছনে অথবা মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানে দুই রাকাত সালাত পড়ুন, যমযমের পানি পান করুন এবং সা‘ঈ করে মিনায় ফিরে আসুন।
  • ঠিক ১১ জিলহজের মতো করে একই নিয়মে দুপুরের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনটি জামরাতে গিয়ে কংকর নিক্ষেপ শেষ করুন।[1]
  • সাধারণত ১২ তারিখ প্রথম ওয়াক্তে কংকর মারার প্রচণ্ড ভীড় থাকে। তাই একটু দেরী করে বিকালের দিকে গেলে ভালো হয়। আবার ১২ তারিখই কংকর নিক্ষেপের পর্ব শেষ করা যায়, তবে যুক্তিযুক্ত কারণ সাপেক্ষে। আপনি যদি কোনো বিশেষ কারণে; যেমন: সম্পদ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকলে, জীবনের নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে, গুরুতর শারিরীক অসুস্থতার অবনতি, রোগীর সেবার জন্য সাথে থাকা, চাকরী হারানোর ভয় ইত্যাদি বিশেষ কারণে আজ কংকর নিক্ষেপ করে সূর্যাস্তের পূর্বেই মক্কায় ফিরে যেতে চান তবে আপনি যেতে পারবেন। এতে কোনো ক্ষতি নেই।
  • আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন, ‘‘যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দুই দিনে চলে আসে তবে তার কোনো পাপ নেই। আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোনো পাপ নেই, এটা তার জন্য; যে তাকওয়া অবলম্বন করে”।[2]
  • আপনি যদি ১২ তারিখই কংকর নিক্ষেপের পর্ব শেষ করতে চান তবে অবশ্যই সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনা এলাকা ত্যাগ করতে হবে। মিনায় সূর্যাস্ত হয়ে গেলে আর মিনা ত্যাগ করবেন না, বরং রাতে মিনায় অবস্থান করে পরবর্তী দিন একই নিয়মে তিনটি জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করে তারপর মিনা ত্যাগ করবেন। তবে কোনো বৈধ কারণ ছাড়া মিনা ত্যাগ না করাই উত্তম। কংকর নিক্ষেপের জন্য মিনায় ১৩ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ তিনদিন অবস্থান করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত।
  • মক্কার উদ্দেশ্যে মিনা ত্যাগ করার পর হজের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত কাজ হলো বিদায়ী তাওয়াফ করা। দেশে ফেরা বা মদীনা গমনের আগে এ তাওয়াফ করবেন। এর মাঝে যে কয়দিন মক্কায় থাকবেন সে কয়দিন নফল তাওয়াফ, জামআতে সালাত, তাহাজ্জুদ সালাত, দো‘আ ও যিকিরে মশগুল থাকবেন।
  • সতর্কতা: আজকাল কিছু কিছু হজ এজেন্সির নেতাদের দেখা যায় তারা ১২ তারিখে কংকর নিক্ষেপের পর হাজীদের নিয়ে মিনা ত্যাগ করে চলে যান। তারা কুরআনের ঐ আয়াত পেশ করে অথবা দলের কয়েকজন লোকের অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে, সবাই দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে গেছে, আশেপাশে অন্যান্যরা সবাই চলে যাচ্ছে, তাবুতে আর খাবার পাওয়া যাবে না ইত্যাদি বলে সবাইকে নিয়ে মক্কায় চলে যেতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো তাদের কষ্ট লাঘব করা। সর্টকাটে হজ শেষ করানো। ওজর থাকতে পারে কারো ব্যক্তিগত, সে অনুযায়ী তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই বলে সকলকে ওজরের আওতায় ফেলে এমন কাজ করা অনুচিত। দুই দিন মিনায় অবস্থান করে মিনা ত্যাগ করার অনুমতি আছে তবে যুক্তিযুক্ত কারণ সাপেক্ষে।

এমন পরিস্থিতিতে পড়লে আপনি কি করবেন? আবার ঐ একই কথা বলবো। আপনি যদি তাকওয়া অবলম্বনকারী হন ও বিশেষ কোনো ওজর না থাকে তবে দল থেকে আলাদা হয়ে যান ও মিনায় অবস্থান করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুসরণ করুন ও তিন দিন মিনায় অবস্থান করে জামরায় কংকর নিক্ষেপ করে তারপর মক্কায় ফিরে যান।

[1] মুসনাদে আহমদ, সহীহ মুসলিম

[2] সূরা আল-বাকারা: ২:২০৩