এই যাদু কিভাবে করা হয় তার বর্ণনাঃ বিয়ের বিরোধী ও হিংসুক ব্যক্তি খবীস যাদুকরের কাছে গিয়ে আবদার করে যে, অমুকের মেয়েকে এমন যাদু কর যেন সে বিয়ে করতে অস্বীকার করে।

যাদুকর তাকে বলে, এই কাজ সহজ তুমি শুধু সেই মেয়ের কোন বস্তু যেমনঃ চুল, কাপড় ইত্যাদি এনে দাও । আর তার ও তার মার নাম এনে দাও । এরপর কাজ সহজে হয়ে যাবে। যাদুকর এই কাজের জন্যে জ্বিন নির্ধারণ করে। অতঃপর জ্বিন সেই মেয়ে অথবা ছেলের পিছু করতে থাকে। আর নিম্নের যে কোন এক অবস্থায় পেলে তার মধ্যে প্রবেশ করেঃ


১। ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থা।

২। অতি মাত্রায় রাগাম্বিত অবস্থা।

৩। অতি উদাসীন বা গাফিলতির অবস্থা।

৪। অতিমাত্রায় যৌন স্পৃহার অবস্থায়।

এক্ষেত্রে জ্বিন দু'অবস্থার এক অবস্থা গ্রহণ করেঃ

১। হয়ত মেয়ের মধ্যে প্রবেশ করে তার অন্তরে ঘৃণা জন্মায় ফলে যে ব্যক্তিই তাকে প্রস্তাব দেয় তা প্রত্যাখ্যান করে।

২। মহিলার ভেতর প্রবেশ না করতে পারলে, সে ছেলের ভেতরে প্রবেশ করে তার অন্তরে ঘৃণা জন্মায় যে, পাত্র অসুন্দর ও কুৎসিত। পরিণামে যে ব্যক্তিই সেই মেয়েকে প্রস্তাব দেয় বিনা কারণেই সে পরক্ষণেই প্রত্যাখ্যান করে যদিও প্রথমে সে সম্মত ছিল। আর তা শয়তানের কুমন্ত্রণার ফলেই, এরূপ অবস্থায় যাদুর প্রচন্ডতার কারণে পুরুষ প্রস্তাবের জন্য মহিলার বাড়িতে যাওয়ার পর হতেই অস্থিরতা বোধ করতঃ দ্রুত সেখান হতে বিদায় হয়ে যায় এর বিপরীতও হতে পারে।

১ । বিভিন্ন সময়ে মাথা ব্যাথা হওয়া যার চিকিৎসা কোন ঔষধে হয় না।

২। মানুষিক অশান্তি বিশেষ করে আসরের পর থেকে অর্ধরাত পর্যন্ত।

৩। বিয়ের প্রস্তাবকারীকে খুব খারাপ মনে হওয়া।

৪ । সর্বাদায় মস্তিষ্কে অশান্তি বিরাজ করা।

৫ । ঘুমের মধ্যে স্বস্তি না পাওয়া।

৬। পেটে সর্বদায় ব্যাথা অনুভব করা।

৭ । পিঠের নিম্নাংশের জোড়ে ব্যাথা অনুভব হওয়া।

১। আপনি উল্লেখিত আয়াতসমূহ ও দু'আ পড়ে ঝাড়বেন। তবে যদি রোগী বেহুশ হয়ে পড়ে আর জ্বিন কথা বলতে থাকে তবুও সেই পূর্বের উল্লেখিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।

২। আর যদি রোগী বেহুশ না হয় আর শরীরে অন্য ধরণের পরিবর্তন অনুভব করে তবে তাকে নিম্নের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বলতে হবেঃ

১ । সকল নামায সঠিক সময়ে পড়ার পাবন্দি থাকতে হবে।

২ । গান-বাজনা থেকে বেঁচে চলতে হবে।

৩। শুয়ার পূর্বে অযু করে আয়াতুল কুরসী পড়ে নিবে।

৪ । দু'হাত তুলে শুয়ার পূর্বে সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে সমস্ত শরীর স্পর্শ করবে (এমনটি তিনবার করবে)

৫ । আয়াতুল কুরসী এক ঘন্টার ক্যাসেটে বার বার রেকর্ড করে দৈনিক একবার শুনবে ।

৬। অন্য একটি এক ঘণ্টার ক্যাসেটে বার বার সূরা ফালাক, নাস ও ইখলাস রেকর্ড করে দৈনিক কমপক্ষে একবার শুনবে।

৭। পূর্বে বর্ণিত কুরআনের আয়াতসমূহ ও দু'আ পড়ে পানিতে ফু দিয়ে রোগীকে পান করতে বলবে এবং সেই পানি দিয়ে গোসল করাবে এই কাজটি তিন দিন করবে। আর গোসল কোন পবিত্র স্থানে করবে।

৮ । রোগী অবশ্যই ফজরের নামাযের পর দৈনিক (لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ) একশ’বার পড়বে।

৯। শরয়ী পর্দা মেনে চলবে।

এই আমল এক মাস পর্যন্ত করবে। এরপর দু'টি অবস্থার একটি হবেঃ

ইনশাআল্লাহ হয়ত সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে অথবা তার কষ্ট বৃদ্ধি পাবে এবং কুরআন পড়ে রোগীকে ঝাড়লে বেহুশ হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় পূর্বের বর্ণিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।

বিয়ে ভাঙ্গার যাদুর চিকিৎসার এক উদাহরণ

এক এমন মেয়ের ঘটনা, যে রাতে বিয়েতে সম্মতি দেয়, সকালে অস্বীকার করে। একদিন আমার নিকট এক যুবক এসে বলল, আমাদের এক মেয়ের বিষয়টি খুবই আশ্চর্যের। সে রাতে বিয়ের প্রস্তাবে সম্মতি দেয়, আর সকাল বেলা অস্বীকার করে। তাতে কোন যৌক্তিক কারণও থাকে না । আর বিষয়টি বার বার এমন হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন?

আমি তাকে বললাম তাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। সুতরাং সে মেয়েটিকে নিয়ে আসল। আমি যখন দু'আ ও কুরআনের আয়াত পড়ে ঝাড়লাম মুহুর্তেই সে বেহুশ হয়ে গেল। এরপর তার মধ্যে প্রবেশ করা জ্বিন কথা বলতে লাগল।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম তুমি কে?

উত্তরে বললঃ আমি অমুক জিন।

আমি বললামঃ তুমি এই মেয়েটিকে কেন কষ্ট দিচ্ছ?

উত্তরে বললঃ আমি তাকে ভালোবাসি।

আমি বললামঃ এটাতো তোমার ভালোবাসা নয়। তুমি আসলে কি চাও?

সে বললঃ আমি চাই, এই মেয়ে যেন বিয়ে না করে।

আমি বললামঃ তুমি তাকে কিভাবে প্রতারিত কর, যাতে সে বিয়েতে অস্বীকার করে?

উত্তরে বললঃ যখনই বিয়ের জন্যে তার কাছে কেউ প্রস্তাব নিয়ে আসে সে সম্মতি দেয়; কিন্তু রাতে তাকে স্বপ্লের মাধ্যমে আমি ভয় দেখাই যে তুমি যদি বিয়ে কর তবে তোমার জন্য তা অকল্যাণ হবে।

আমি বললামঃ তোমার ধর্ম কি?

সে বললঃ ইসলাম।

আমি বললামঃ তবে তোমার জন্য এটা জায়েয নয়। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তুমি নিজেও ক্ষতি করবে না এবং ক্ষতির কারণও হবে না।” (ইবনে মাজাহঃ ২৩৪০ আলবানী সহীহ বলেছেন।) অথচ তুমি যা করছ তা একজন মুসলমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছ। আর এটা শরীয়তে না জায়েয। শেষ পর্যন্ত সেই জিন আমার কথায় প্রভাবিত হল এবং বের হয়ে গেল। তার হুশ ফিরে সে ভাল হয়ে গেল। সমস্ত প্রশংসার অধিকারী কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালা। আর সবকিছুর ক্ষমতা আল্লাহর হাতে।

যাদুর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ

১ । যাদুর লক্ষণসমূহ আর জিনে ধরা লক্ষণসমূহ এক হতে পারে।

২। পেটে সর্বদা ব্যাথা হলে বুঝতে হবে, যাদু করে খাওয়ানো হয়েছে অথবা পান করানো হয়েছে।

৩। কুরআনে কারামের মাধ্যমে চিকিৎসা ফলপ্রসূ হওয়া দু'টি বিষয়ের উপর নির্ভর করেঃ

প্রথমতঃ চিকিৎসককে আল্লাহ তায়ালার হুকুমের পাবন্দ হতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ রোগীর কুরআনের চিকিৎসার কার্যকারীতা সম্পর্কে পূর্ণ আস্থা থাকতে হবে ।

৪ । অন্তরে অস্থিরতা বিশেষ করে রাতে। এই লক্ষণটি অধিকাংশ যাদুর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

৫। যাদুর স্থান দু’ভাবে সন্ধান পাওয়া যেতে পারেঃ প্রথমতঃ যাদুতে নির্ধারিত জ্বিনের সত্য সংবাদে যে অমুক স্থানে যাদুর বস্তু রয়েছে। তবে জ্বিনের কথা যাচাই না করে বিশ্বাস করা যাবে না কেননা তারা সাধারণত মিথ্যাই বলে ।

দ্বিতীয়তঃ রোগী অথবা চিকিৎসক ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে ফযীলত পূর্ণ সময়ে যেমনঃ রাতের শেষভাগে দুই রাকআত নামায আদায় করবে এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করবে যে, আল্লাহ যেন যাদুর স্থান জানিয়ে দেয়। এর ফলে স্বপ্লের মাধ্যমে জানতে পারবে অথবা ধারণা সৃষ্টি হবে। অতঃপর সে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করবে।

৬। কালো জিরার তেলে ঝাড়-ফুঁক করে রুগীকে সকাল-সন্ধ্যায় ব্যাথার স্থানে উক্ত তেল মালিশ করতে বলতে হবে। এটি সবধরণের যাদুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلَّا السَّامَ

অর্থাৎ "কালো জিরা প্রত্যেক রোগের ঔষধ মৃত্যু ব্যতীত।" (বুখারীঃ ৫৬৮৭ ও মুসলিমঃ ২২১৫)

এক এমন মেয়ের ঘটনা যাকে আল্লাহ তায়ালা স্বপ্নের মাধ্যমে যাদুর স্থান জানিয়ে দিয়েছেন

এই মেয়ে আমার কাছে আসলে, আমি কুরআনের আয়াত পড়ে ঝাড় ফুক করলে বুঝতে পারলাম যে, তাকে শক্তিশালী যাদু করা হয়েছে। আমি বাড়ির লোকজনকে এই চিকিৎসার ব্যাপারে বললাম এটি ব্যবহার কর ইনশাআল্লাহ যাদু তার স্থানেই নষ্ট হয়ে যাবে। (যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে) তারা বলল, এমন পদ্ধতি বলে দিন, যাতে যাদুর স্থান কোথায় জানতে পারি?

আমি বললামঃ বিশেষ করে রাতের শেষভাগে যখন দু'আ কবুল হয় কেঁদে কেদে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। রুগী নামাযে দাড়িয়ে যায় আর আল্লাহর নিকট কাকুতি-মিনতি করে দোয়া করে (যা তারা বর্ণনা করে), তারপর রুগী স্বপ্নে দেখল যে, কেউ তার হাত ধরে ঘরের সেই স্থানে নিয়ে গেল যেখানে যাদু লুকানো হয়েছে। সকালে সে বাড়ির সকলকে স্বপ্নের কথা বলল। আর বাড়ির লোকজন তার বলা স্থানে খোজ করতে থাকল। অল্প মাটি খননের পর তারা যাদুর পুটলি খুজে পেল যা তারা জুলিয়ে দেয়। এরপর আলহামদুলিল্লাহ যাদু নিঃশেষ হয়ে যায়। আর রোগী আরোগ্য লাভ করে ।

স্ত্রী সহবাসে হঠাৎ অপারগ হয়ে যাওয়ার চিকিৎসা

হঠাৎ অপারগতা বলতে এখানে উদ্দেশ্য হলো, পরিপূর্ণ ও নিখুঁত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে জন্ম নেয়া ও সাধারণত রোগে আক্রান্ত হওয়া ব্যতীতই কোন পুরুষের তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে অসামর্থ হওয়া। আমরা যদি এই অপারগতা সম্পর্কে জানতে চাই তবে আমাদেরকে প্রথমে লিঙ্গ শক্ত হয় কিভাবে তা জানতে হবে। এটা সকলেরই জানা যে, পুরুষাঙ্গ রাবারের মত চিকনা মাংসের এক টুকরা। যখন রক্তের চাপ এর উপর বৃদ্ধিপায় তখন সেটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে । আর যখন রক্তের চাপহাস পায় তখন ঢিলে হয় ও শক্তি শেষ হয়ে যায়।

যৌনাঙ্গের তিনটি স্তরঃ

১। যখন পুরুষের মধ্যে যৌন চাহিদা সৃষ্টি হয় তখন পুরুষের অন্ডকোষের মধ্যে বিশেষ এক ধরনের হরমোনের সৃষ্টি হয়। আর এই হরমোন যখন রক্তের সাথে মিশে যায় তখন রক্ত অতিদ্রুত সঞ্চালিত হয়ে মাথার চামড়া পর্যন্ত পৌছে যায় এবং শরীর গরম হয়ে বিদ্যুত সঞ্চালনের মত হয়ে যায়।

২। যেহেতু যৌন চাহিদার নিয়ন্ত্রণ মস্তিষ্ক করে, তাই এটা পুরুষাঙ্গের গতি দ্রুত কেন্দ্রবিন্দুতে পৌছে দেয়।

৩। মগজের যৌন উত্তেজনার কেন্দ্র বিন্দু প্রজনন কোষে দ্রুত স্প্রিট প্রেরণ করে যার ফলে পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে যায়।

যাদুর দায়িত্বে নিয়োজিত শয়তান পুরুষের মস্তিষ্কে যা যৌন চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণকারী ও কেন্দ্রবিন্দু তাতে প্রভাব বিস্তার করে। আর অন্য সব অঙ্গ সঠিক থাকে। আর যখন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে চায় তখন ফেলে। যার ফলে রক্ত সঞ্চালক মেশিন চলে না আর যৌনাঙ্গের রক্ত ফিরে যায়। ফলে পুরুষাঙ্গ নিস্তেজ হয়ে যায়।

এজন্য দেখা যাবে এ ধরনের পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে চুম্বন ও আলিঙ্গনে থাকে তখন তার যৌন ক্ষমতা সাধারণ অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। যৌনাঙ্গ প্রবেশকালীন সময়ে ঢিলে পড়ে যায় এবং সে বিফল হয়ে যায়।

আবার কখনও এমনও হয় যে, যখন একটি পুরুষের দু'টি স্ত্রী তখন সে তার মধ্যে একটির সাথে সহবাস তো করতে পারে; কিন্তু অন্য স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে ব্যর্থ হয়। এটা এজন্যে যে, যাদুর শয়তান একজনের থেকে দূরে রাখার জন্যে সে যখন দ্বিতীয় স্ত্রীর নিকট যায় যৌন উত্তেজনার কেন্দ্র নষ্ট করে দেয়।

পুরুষের যেমন স্ত্রী হতে অপারগতা সৃষ্টি হয় তেমনি নারীরও পুরুষ হতে অপারগতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর মেয়েদের অপারগতা পাঁচ ধরণেরঃ

১ । স্ত্রী তার স্বামীকে তার নিকট আসতে বাধা দেয়ঃ এজন্যে সে তার উরুকে একটির সাথে অপরটি মিলিয়ে দেয়, যাতে তার স্বামী সহবাসে সক্ষম না হয়। তার এ কাজ তার অনিচ্ছায় হয়ে থাকে। এমনকি এক যুবকের স্ত্রী এই যাদু দ্বারা আক্রান্ত ছিল। তার স্ত্রী সহবাসের সময় দুই উরুর রান একত্রিত করে ফেলত তাতে সে তার স্ত্রীকে গালি গালাজ করত। উত্তরে তার স্ত্রী বলত বিষয়টি আমার ইচ্ছাধীন নয়। তুমি বরং আমার উরুর মধ্যে লোহার বালা দিয়ে রেখো কাজ করার পূর্বে যাতে মিলিত না হয়ে যায়। বাস্তবে তার স্বামী এমনটিই করল; কিন্তু এরপরও সে ব্যর্থ হল । এরপর তার স্ত্রী তাকে পরামর্শ দিল যে, সে যেন তাকে নেশাযুক্ত ইঞ্জেকশন দেয়। এরপর স্বামী তাকে ইঞ্জেকশন দিল এবং সে তার কর্মে সফল হল; কিন্তু সহবাসের কর্ম কেবল স্বামীর পক্ষ হতে হল।

২। মস্তিষ্কের অনুভূতি হারিয়ে ফেলাঃ মহিলার মস্তিষ্কের অনুভূতি শক্তির কেন্দ্রবিন্দু যাদুকরের জ্বিন নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়। সুতরাং স্বামী যখন স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে চায় তখন জ্বিন তার অনুভূতি শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়, যার কারণে মহিলার প্রাকৃতিক অনুভূতি থাকে না। আর না নিজের স্বামীর সামনে কোন বিকর্ষন সৃষ্টি হয় বরং সে সময় এই হতভাগা নারীর অবস্থা জড় পদার্থের মত হয়ে যায়। আর বাকী তার প্রাকৃতিক যেসব কিছু দেয়ার তা কিছুই দিতে পারে না, ফলে সহবাস একেবারে বিফল হয়ে যায়।

৩। জরায়ু থেকে রক্ত প্রবাহ সহবাসের সময় রক্ত প্রবাহিত হওয়া। পূর্বে বর্ণিত ইস্তিহায্য হতে এর পার্থক্য হলো এটি শুধু সহবাসের সময়েই প্রবাহিত হয়।

এর একটি ঘটনা হল এক সেনা সদস্য যখন ছুটি নিয়ে বাড়ী আসত তখন তার স্ত্রীর রক্তপ্রবাহ শুরু হত। আর যখন ছুটি শেষ হলে বাড়ী থেকে বের হত মুহুর্তেই তার স্ত্রী সুস্থ হয়ে যেত।

৪। কুমারী যুবতীকে বিয়ের পর প্রথম রাতে তার স্বামী তাকে অকুমারী অনুভব করে, যার ফলে তাকে সন্দেহ করে বসে; কিন্তু যদি এ ধরণের মেয়েকে চিকিৎসা করা হয় ও যাদু নষ্ট হয় তখন সে বুঝতে পারে যে, সে কুমারী।

৫ । পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় তার সামনে মাংশের এক প্রতিবন্ধকতা পায়, যার ফলে তাদের সহবাস সফল হয় না।

প্রথম পদ্ধতিঃ

ইতিপূর্বে উদ্ধৃত (ষষ্ঠ অধ্যায়ে) পন্থায় চিকিৎসা করবেন। জিনের সাথে কথা বলার পর যাদুস্থান সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে কোথায়; অতঃপর সেখান হতে বের করতে পারলে যাদু শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাকে বের হতে বলবে এবং সে বের হয়ে গেলে বুঝতে হবে যে, যাদুর প্রভাব নিঃশেষ হয়ে গেছে। আর যদি জ্বিন রুগীর মাধ্যমে কথা না বলে তবে চিকিৎসার অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ

নিম্নে উদ্ধৃত আয়াত কয়েকবার পড়ে পানিতে সাতবার ফু দিবে এরপর রোগীকে পান করাবে এবং কয়েক দিন সেই পানি দিয়ে গোসল করবে। আয়াতগুলো হলঃ

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ، وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

অর্থঃ "মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন তোমরা যেই যাদু দেখাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তা ধ্বংস করে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কর্মের সংশোধন করেন না এবং আল্লাহ সত্যকে তার নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত করবেন যদিও অপরাধীগণ তা অপছন্দ করে।" (সূরা ইউনুসঃ ৮১-৮২ এটিও বেশি বেশি পড়বে, বিশেষ করেঃ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ অংশটি বেশি বেশি পড়বে।

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ

অর্থঃ “তখন আমি মূসা-এর নিকট এই প্রত্যাদেশ পাঠালামঃ তুমি তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ কর, মূসা (আলাইহিস সালাম) তা নিক্ষেপ করলে ওটা একটা বিরাট সাপ হয়ে সহসা ওদের অলীক (মিথ্যা) সৃষ্টিগুলোকে গিলে ফেলল। পরিশেষে যা হক ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো, আর যা কিছু বানানো হয়েছিল তা বাতিল প্রমাণিত হলো । আর ফিরাউন ও তার দলবলের লোকেরা মুকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে গেল। যাদুকরগণ তখন সিজদায় পড়ে গেল। তারা আনলাম। (জিজ্ঞেস করা হলো— কোন বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি? তারা উত্তরে বললে) মূসা ও হারূনের প্রতিপালকের প্রতি।” (সূরা আরাফঃ ১১৭-১২২)

তৃতীয় পদ্ধতিঃ

কুলের সাতটি সবুজ পাতা পাথর দিয়ে পিষে পানিতে ঢেলে নাড়তে থাকবে এবং নিম্নের আয়াতসমূহ পড়তে থাকবে আর ফুঁ দিতে থাকবে।

আয়াতগুলো হল এইঃ আয়াতুল কুরসী সাতবার এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস। আর সেই পানি রোগী পান করবে এবং গোসলও করবে কয়েক দিন পর্যন্ত ।

ইনশাআল্লাহ রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। সে পানিতে অন্য পানি মিশাবে না ও উক্ত পানি গরমও করবে না। যদি শীত থাকে তবে পানি রোদে গরম করতে পারে। আর লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পানি যেন অপবিত্র স্থানে না পড়ে। তাতে ইনশাআল্লাহ যাদু প্রথমবার গোসলেই শেষ হয়ে যাবে।

চতুর্থ পদ্ধতিঃ

উল্লেখিত ঝাড়-ফুঁক রোগীর কানে পড়বে তার সাথে নিম্নের এই আয়াতটিও রোগীর কানে পড়বে।

وَقَدِمْنَا إِلَىٰ مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا

অর্থঃ “আমি তাদের কৃতকর্মগুলোর দিকে অগ্রসর হবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলি-কণায় পরিণত করবো।" (সূরা ফুরকানঃ ২৩)

এই আয়াত রোগীর কানে একশ’বার অথবা তার অধিক পড়বে। যে পর্যন্ত না রোগী বেহুশ হয়ে পড়ে। এই আমল কয়েক দিন করতে থাকবে যে পর্যন্ত না রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তাতে ইনশাআল্লাহ যাদু নিঃশেষ হয়ে যাবে।

পঞ্চম পদ্ধতিঃ

হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) এই প্রকার ঝাড়-ফুঁকের উপর ইমাম শাবী হতে প্রমাণ বর্ণনা করেছেন। (বিস্তারিত দেখুনঃ ফতহুল বারী ২৩৩/১০)

তাহল বনের ভেতর থেকে কাঁটাযুক্ত গাছের পাতাসমূহ একত্রিত করে পাথর দিয়ে পিষে মিহি করবে এবং তার উপর কুরআনের আয়াত পড়ে ফু দিবে এরপর তা পানিতে মিশাবে এবং তা দিয়ে গোসল করবে। (আমি মনে করি পানিতে সূরা ফালাক নাস এবং আয়াতুল কুরসী পড়ে ফুঁ দিবে তবে তা উত্তম হবে।)

৬ষ্ঠ পদ্ধতিঃ

হাফেজ ইবনে হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন আমি জাফর মুস্তাগফিরির কিতাবে (চিকিৎসা বিষয়ক পুস্তক) ঝাড়-ফুঁকের পদ্ধতি অধ্যায়ন করেছি যে, জাফর মুস্তাগফিরি বলেন আমি নাসুহ বিন ওয়াসেলের হাতে (কুতাইবা বিন আহমদ বুখারীর ব্যখ্যার এক অংশে) লেখা পেলাম যে, কাতাদাহ সাঈদ বিন মুসাইয়্যেবের কাছে জিজ্ঞেস করলেন যে, কোন পুরুষ যদি তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে ব্যর্থ হওয়ার রোগে আক্রান্ত হয় তবে কি তার জন্যে ঝাঁড়-ফুঁকের চিকিৎসা জায়েয? তিনি বললেন ঝাড়-ফুঁকের উদ্দেশ্য তো সুস্থ করা তাই এতে কোন সমস্যা নেই। শরীয়তে মানব কল্যাণে কোন কার্যকর বিষয় নিষেধ নেই।

নাসুহ বলেন যে, হাম্মাদ শাকির আমাকে চিকিৎসার পদ্ধতির বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে বলেন কিন্তু আমি বলতে পারিনি। এরপর তিনি আমাকে বললেন যে, যখন এমন ব্যক্তি যে, স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য সব কাজই করতে পারে, তবে এমন রোগী কিছু জ্বালানী/লাকড়ী একত্রিত করে তাতে আগুন লাগিয়ে দিবে। এবং সেই আগুনের মাঝখানে একটি কুড়াল রেখে দিবে। আর যখন কুড়াল গরম হয়ে যাবে তখন সেটাকে বের করে তাতে পেশাব করে দিবে ইনশাল্লাহ সে আরোগ্য লাভ করবে। (ফতহুল বারী খণ্ড ১০ পৃঃ ২২৩)

এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, রোগী কুড়ালের উপর এমন কোন বিশ্বাস রাখবে না বরং তার বুঝতে হবে যে, এটা একটা মাধ্যম। কুড়ালের গরম তাপ যখন পুরুষাঙ্গে পড়ে তখন জ্বিন প্রচণ্ড আঘাত পায় এবং সে বের হয়ে চলে যায়। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় সে সুস্থ হয়ে উঠে।

সপ্তম পদ্ধতিঃ

এক পাত্রে পানি নিয়ে তাতে সূরা ফালাক ও নাস পড়বে এবং নিম্নের দু'আ পড়ে পানিতে ফুঁ দিবে।

بسم الله أرقيق والله يشفيك من كل داء يؤذيك، ومن كل نفس أو عين حاسد الله يشفيك

অতঃপর সেই পানিতে সাতবার ফু দিবে এবং রোগী পর পর তিন দিন পান করবে এবং তা দিয়ে গোসল করবে। ইনশাআল্লাহ যাদু ধ্বংস হয়ে যাবে এবং রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। আর গোসল কোন অপবিত্র স্থানে করবে না ।

অষ্টম পদ্ধতিঃ

রোগীর কানে নিম্নের আয়াত ও সূরা পড়বেনঃ

১ । সূরা ফাতেহা ৭০ বারের অধিক।

২। আয়াতুল কুরসী ৭০ বারের অধিক।

৩। সূরা ফালাক ও নাস ৭০ বারের অধিক।

এগুলি পরপর তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত পড়বেন। ইনশাআল্লাহ যাদু নিক্রিয় হয়ে যাবে এবং রুগী সুস্থ হয়ে যাবে।

নবম পদ্ধতিঃ

পরিস্কার একটি পাত্রে পরিস্কার কালি দিয়ে নিম্নের আয়াতসমূহ লিখবেঃ

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ، وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

অর্থঃ “মূসা বললেন তোমরা যেই যাদু দেখাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তা ধ্বংস করে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কর্মের সংশোধন করেন না এবং আল্লাহ সত্যকে তার নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত করবেন যদিও অপরাধীগণ তা অপছন্দ করে।" (সূরা ইউনুসঃ ৮১-৮২)

এই আয়াত লেখার পর সেই পাত্রে কালো জিরার তেল ঢেলে তা নাড়াচাড়া করবে। এরপর রোগী সেই তেল পান করবে এবং কপালে ও বুকে মালিশ করতে থাকবে। ইনশাআল্লাহ যাদু বিনষ্ট ও নিক্রিয় হয়ে যাবে এবং রোগী আরোগ্য লাভ করবে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এই বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছেন যে, কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত যিকিরসমূহ লিখে পানিতে গুলিয়ে তা রোগীকে পান করানো জায়েয। (মাজমাউল ফাতোয়াঃ ১৯/৬৪)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »