মুরজিয়া মতবাদ, নেক আমল, মুজিযা-কারামত, আখিরাত, ঈমান-ইসলাম ও অন্যান্য প্রসঙ্গে ইমাম আ’যম আবূ হানীফা নু’মান ইবন সাবিত (রাহ) যা বলেন

ইমাম আ’যম আবূ হানীফা নু’মান ইবন সাবিত (রাহ) বলেন:


وَلاَ نَقُوْلُ: إِنَّ الْمُؤْمِنَ لاَ يَضُرُّهُ الذُّنُوْبُ، وَلاَ نَقُوْلُ: إِنَّهُ لاَ يَدْخُلُ النَّارَ، وَلاَ نَقُوْلُ: إِنَّهُ يَخْلُدُ فِيْهَا، وَإِنْ كَانَ فَاسِقاً بَعْدَ أَنْ يَخْرُجَ مِنَ الدُّنْيَا مُؤْمِناً. وَلاَ نَقُوْلُ: إِنَّ حَسَنَاتِنَا مَقْبُوْلَةٌ وَسَيِّئَاتِنَا مَغْفُوْرَةٌ كَقَوْلِ الْمُرْجِئَةِ. وَلَكِنْ نَقُوْلُ: الْمَسْأَلَةُ مُبَيَّنَةٌ مُفَصَّلَةٌ: مَنْ عَمِلَ حَسَنَةً بِجَمِيْعِ شَرَائِطِهَا خَالِيَةً عَنِ الْعُيُوْبِ الْمُفْسِدَةِ وَالْمَعَانِيْ الْمُبْطِلَةِ وَلَمْ يُبْطِلْهَا بِالْكُفْرِ وَالرِّدَّةِ وَالأَخْلاَقِ السَّيِّئَةِ حَتَّى خَرَجَ مِنَ الدُّنْيَا مُؤْمِناً فَإِنَّ اللهَ تَعَالَى لاَ يُضَيِّعُهَا بَلْ يَقْبَلُهَا مِنْهُ وَيُثِيْبُهُ عَلَيْهَا . وَمَا كَانَ مِنَ السَّيِّئَةِ دُوْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ وَلَمْ يَتُبْ عَنْهَا صَاحِبُهَا حَتَّى مَاتَ مُؤْمِناً فَإِنَّهُ فِيْ مَشِيْئَةِ اللهِ تَعَالَى بِقَوْلِهِ إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ بِالنَّارِ، وَإِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ وَلَمْ يُعَذِّبْهُ بِالنَّارِ أَصْلاً. وَالرِّيَاءُ إِذَا وَقَعَ فِيْ عَمَلٍ مِنَ الأَعْمَالِ فَإِنَّهُ يُبْطِلُ أَجْرَهُ، وَكَذَلِكَ الْعُجْبُ.


وَالآيَاتُ ثَابِتَةٌ لِلأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ، وَالْكَرَامَاتُ لِلأَوْلِيَاءِ حَقٌّ. وَأَمَّا الَّتِيْ تَكُوْنُ ِلأَعْدَائِهِ مِثْلِ إِبْلِيْسَ وَفِرْعَوْنَ وَالدَّجَّالِ مِِمَّا رُوِيَ فِيْ الأَخْبَارِ أَنَّهُ كَانَ وَيَكُوْنُ لَهُمْ لاَ نُسَمِّيْهَا آَيَاتٍ وَلاَ كَرَامَاتٍ، وَلكِنْ نُسَمِّيْهَا قَضَاءَ حَاجَاتٍ لَهُمْ، وَذَلِكَ ِلأَنَّ اللهَ تَعَالَى يَقْضِيْ حَاجَاتِ أَعْدَائِهِ اسْتِدْرَاجاً لَهُمْ وَعُقُوْبَةً لَهُمْ فَيَغْتَرُّوْنَ بِهِ وَيَزْدَادُوْنَ طُغْيَاناً وَكُفْراً، وَذَلِكَ كُلُّهُ جَائِزٌ وَمُمْكِنٌ. وَكَانَ اللهُ تَعَالَي خَالِقاً قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ، وَرَازِقاً قَبْلَ أَنْ يَرْزُقَ.


وَاللهُ تَعَالَي يُرَي فِيْ الآخِرَةِ، وَيَرَاهُ الْمُؤْمِنُوْنَ وَهُمْ فِيْ الْجَنَّةِ بِأَعْيُنِ رُؤُوْسِهِمْ بِلاَ تَشْبِيْهٍ وَلاَ كَيْفِيَّةٍ وَلاَ يَكُوْنَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ خَلْقِهِ مَسَافَةٌ.


وَالإِيْمَانُ هُوَ الإِقْرَارُ وَالتَّصْدِيْقُ، وَإِيْمَانُ أَهْلِ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ لاَ يَزِيْدُ وَلاَ يَنْقُصُ مِنْ جِهَةِ الْمُؤْمَنِ بِهِ، وَيَزِيْدُ وَيَنْقُصُ مِنْ جِهَةِ الْيَقِيْنِ وَالتَّصْدِيْقِ. وَالْمُؤْمِنُوْنَ مُسْتَوُوْنَ فِيْ الإِيْمَانِ وَالتَّوْحِيْدِ مُتَفَاضِلُوْنَ بِالأَعْمَالِ. وَالإِسْلاَمُ هُوَ التَّسْلِيْمُ وَالاِنْقِيَادُ ِلأَوَامِرِ اللهِ تَعَالَي. فَمِنْ طَرِيْقِ اللُّغَةِ فَرْقٌ بَيْنَ الإِيْمَانِ وَالإِسْلاَمِ. وَلَكِنْ لاَ يَكُوْنُ إِيْمَانٌ بِلاَ إِسْلاَمٍ، وَلاَ يُوْجَدُ إِسْلاَمٌ بِلاَ إِيْمَانٍ، وَهُمَا كَالظَّهْرِ مَعَ الْبَطْنِ، وَالدِّيْنُ اسْمٌ وَاقِعٌ عَلَي الإِيْمَانِ وَالإِسْلاَمِ وَالشَّرَائِعِ كُلِّهَا. نَعْرِفُ اللهَ تَعَالَي حَقَّ مَعْرِفَتِهِ كَمَا وَصَفَ اللهُ نَفْسَهُ فِيْ كِتَابِهِ بِجَمِيْعِ صِفَاتِهِ، وَلَيْسَ يَقْدِرُ أَحَدٌ أَنْ يَعْبُدَ اللهَ حَقَّ عِبَادَتِهِ كَمَا هُوَ أَهْلٌ لَهُ، وَلَكِنَّهُ يَعْبُدُهُ بِأَمْرِهِ كَمَا أَمَرَهُ بِكِتَابِهِ وَسُنَّةِ رَسُوْلِهِ ﷺ. وَيَسْتَوِيْ الْمُؤْمِنُوْنَ كُلُّهُمْ فِيْ الْمَعْرِفَةِ وَالْيَقِيْنِ وَالتَّوَكُّلِ وَالْمَحَبَّةِ وَالرِّضَا وَالْخَوْفِ وَالرَّجَاءِ وَالإِيْمَانِ فِيْ ذَلِكَ، وَيَتَفَاوَتُوْنَ فِيْمَا دُوْنَ الإِيْمَانِ فِيْ ذَلِكَ كُلِّهِ. وَاللهُ تَعَالَي مُتَفَضِّلٌ عَلَي عِبَادِهِ عَادِلٌ، قَدْ يُعْطِيْ مِنَ الثَّوَابِ أَضْعَافَ مَا يَسْتَوْجِبُهُ الْعَبْدُ تَفَضُّلاً مِنْهُ، وَقَدْ يُعَاقِبُ عَلَي الذَّنْبِ عَدْلاً مِنْهُ. وَقَدْ يَعْفُوْ فَضْلاً مِنْهُ.


وَشَفَاعَةُ الأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلاَمُ حَقٌّ، وَشَفَاعَةُ نَبِيِّنَا ﷺ لِلْمُؤْمِنِيْنَ الْمُذْنِبِيْنَ وَلأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْهُم الْمُسْتَوْجِبِيْنَ الْعِقَابَ حَقٌّ ثَابِتٌ، وَوَزْنُ الأَعْمَالِ بِالْمِيْزَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَقٌّ، وَالْوَزْنُ وَالْقِصَاصُ فِيْمَا بَيْنَ الْخُصُوْمِ بِالْحَسَنَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَقٌّ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمُ الْحَسَنَاتُ فَطَرْحُ السَّيِّئَاتِ عَلَيْهِمْ حَقٌّ جَائِزٌ. وَحَوْضُ النِّبِيِّ ﷺ حَقٌّ. وَالْجَنَّةُ وَالنَّارُ مَخْلُوْقَتَانِ الْيَوْمَ لاَ تَفْنَيَانِ أَبَداً. وَلاَ تَمُوْتُ الْحُوْرُ الْعِيْنُ أَبَداً، وَلاَ يَفْنَى عِقَابُ اللهِ تَعَالَي وَثَوَابُهُ سَرْمَداً.


বঙ্গানুবাদ:

আমরা বলি না যে, পাপ মুমিনের কোনো ক্ষতি করবে না। আমরা এও বলি না যে, মুমিন জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আমরা এও বলি না যে, মুমিন অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। মুমিন যদি ফাসিক বা পাপী হয় কিন্তু ঈমানসহ পৃথিবী ত্যাগ করে তবে তার বিষয়ে আমরা এরূপ বলি না। আমরা বলি না যে, আমাদের নেক কর্মগুলো কবুলকৃত এবং পাপরাশি ক্ষমাকৃত। মুরজিয়াগণ এরূপ বলে। বরং আমরা বলি যে, এ বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। যে ব্যক্তি সকল শর্ত পূরণ করে এবং সকল বিনষ্টকারী ত্রুটি হতে মুক্ত থেকে কোনো নেক কর্ম করবে এবং কুফর বা ধর্মত্যাগ দ্বারা (বা অশোভন আচরণ দ্বারা)[1] তার নেককর্মটি বিনষ্ট করবে না এবং ঈমানসহ পৃথিবী ত্যাগ করবে আল্লাহ তার কর্মটি নষ্ট করবেন না, বরং তিনি তা কবুল করবেন এবং তাকে তার জন্য সাওয়াব প্রদান করবেন। কোনো মানুষ যদি শির্ক ও কুফর ছাড়া অন্য কোনো পাপ কর্ম করে তাওবা না করে ঈমানসহ মৃত্যুবরণ করে তবে তার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন থাকবে। মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে জাহান্নামের মধ্যে শাস্তি দিবেন, আর ইচ্ছা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন এবং তাকে জাহান্নামে কোনোরূপ শাস্তিই দিবেন না। রিয়া যদি কোনো কর্মের মধ্যে প্রবেশ করে তবে তা সে কর্মের পুরস্কার বাতিল করে দেয়। ‘উজব’ও তদ্রূপ।

নবীগণের জন্য ‘আয়াত’ প্রমাণিত। এবং ওলীগণের কারামত সত্য। আর ইবলীস, ফিরাউন, দাজ্জাল ও তাদের মত আল্লাহর দুশমনদের দ্বারা যে সকল অলৌকিক কর্ম সাধিত হয়, যে সকল অলৌকিক কর্মের বিষয়ে কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের দ্বারা তা সংঘটিত হয়েছিল বা হবে, সেগুলোকে আমরা আয়াত বা কারামত বলি না, বরং এগুলোকে আমরা তাদের ‘কাযায়ে হাজাত’ বা প্রয়োজন মেটানো বলি। কারণ আল্লাহ তাঁর দুশমনদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেন ‘ইসতিদরাজ’ হিসেবে -তাদেরকে তাদের পথে সুযোগ দেওয়ার জন্য- এবং তাদের শাস্তি হিসেবে। এতে তারা ধোঁকাগ্রস্ত হয় এবং আরো বেশি অবাধ্যতা ও অবিশ্বাসে নিপতিত হয়। এগুলি সবই সম্ভব।

মহান আল্লাহ স্রষ্টা ছিলেন সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই। তিনি রিয্কদাতা ছিলেন সৃষ্টিকে রিয্ক প্রদানের পূর্ব থেকেই। আর আখিরাতে মহান আল্লাহ পরিদৃষ্ট হবেন। জান্নাতের মধ্যে অবস্থানকালে মুমিনগণ তাঁকে দর্শন করবেন তাদের নিজেদের চর্মচক্ষু দ্বারা। এ দর্শন সকল তুলনা ও স্বরূপ-প্রকৃতি নির্ধারণ ব্যতিরেকে। মহান আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কোনো দূরত্ব হবে না।

ঈমান হচ্ছে (মুখের) স্বীকৃতি ও (অন্তরের) সত্যায়ন। বিশ্বাসকৃত বিষয়াদির দিক থেকে (আরকানুল ঈমানের দিক থেকে)) আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীদের ঈমান বাড়ে না এবং কমে না, কিন্তু ইয়াকীন বা বিশ্বাসের দৃঢ়তা-গভীরতা ও সত্যায়নের দিক থেকে ঈমান বাড়ে এবং কমে। এভাবে ঈমান ও তাওহীদের ক্ষেত্রে মুমিনগণ সকলেই সমান। কর্মের ক্ষেত্রে তাদের মর্যাদার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে।

ইসলাম অর্থ আল্লাহর নির্দেশের জন্য আত্মসমর্পন করা এবং অনুগত হওয়া। আভিধানিকভাবে ঈমান ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে বাস্তবে ও ব্যবহারে ইসলাম ছাড়া কোনো ঈমান হয় না এবং ঈমান ছাড়া ইসলামের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কাজেই ঈমান ও ইসলাম হলো পিঠের সাথে পেটের ন্যায়। ঈমান, ইসলাম ও সমস্ত শরীয়তকে একত্রে দীন বলা হয়।

মহান আল্লাহর সত্যিকার মা’রিফাত (পরিচয়) আমরা লাভ করেছি, তিনি যেভাবে তাঁর কিতাবে তাঁর নিজের বর্ণনা দিয়েছেন সেভাবে তাঁর সকল বিশেষণ সহকারে। তবে কেউই মহান আল্লাহর সঠিক পরিপূর্ণ ইবাদত করতে সক্ষম নয়, যেরূপ ইবাদত তাঁর পাওনা। বান্দা তাঁর ইবাদত করে তাঁর নির্দেশ মত, যেভাবে তিনি তাঁর কিতাবে এবং তাঁর রাসূলের (ﷺ) সুন্নাতে নির্দেশ দিয়েছেন। মারিফাত (পরিচয় লাভ), ইয়াকীন (বিশ্বাস), তাওয়াক্কুল (নির্ভরতা), মহববত (ভালবাসা), রিযা (সন্তুষ্টি), খাওফ (ভয়), রাজা (আশা) এবং এ সকল বিষয়ের ঈমান-এর ক্ষেত্রে মুমিনগণ সকলেই সমান। তাদের মর্যাদার কমবেশি হয় মূল ঈমান বা বিশ্বাসের অতিরিক্ত যা কিছু আছে তার সবকিছুতে।

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাগণের উপর করুণাকারী ও ন্যায়বিচারক। তিনি মেহেরবানি করে অনেক সময় বান্দার প্রাপ্য সাওয়াবের চেয়ে অনেকগুণ বেশি পুরস্কার প্রদান করেন। কখনো তিনি ন্যায়বিচার হিসেবে পাপের শাস্তি প্রদান করেন। কখনো মেহেরবানি করে পাপ ক্ষমা করেন।

নবীগণের শাফা‘আত সত্য। পাপী মুমিনগণ এবং কবীরা গোনাহকারীগণের জন্য, পাপের কারণে যাদের জাহান্নাম পাওনা হয়েছিল তাদের জন্য কিয়ামাতের দিন আমাদের নবী (ﷺ)-র শাফা‘আতও সত্য। কিয়ামাতের দিন তুলাদন্ডে আমল ওযন করাও সত্য। কিয়ামাতের দিন বিবাদকারীদের মধ্যে পুণ্যকর্মের মাধ্যমে বদলার ব্যবস্থা করা সত্য। যদি তাদের সাওয়াব বা নেককর্ম না থাকে তবে পাওনাদারের পাপ তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও সত্য ও সম্ভব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাউয সত্য। জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে সৃষ্ট অবস্থায় রয়েছে (পূর্বেই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।) জান্নাত ও জাহান্নাম কখনোই বিলুপ্ত হবে না। আয়তলোচনা হূরগণ কখনোই মৃত্যুবরণ করবে না। মহান আল্লাহর অনন্ত-চিরস্থায়ী শাস্তি ও পুরস্কার কখনোই বিলুপ্ত হবে না।

[1] আল-ফিকহুল আকবারের কোনো কোনো পান্ডুলিপিতে এ অতিরিক্ত বাক্যাংশটি বিদ্যমান।
১. মুরজিয়া বিভ্রান্তি ও আহলুস সুন্নাতের আকীদা

মুরজিয়াহ (المرجئة) ‘আরজাআ’ (أرجأ) ক্রিয়া থেকে গৃহীত। আরজাআ (أرجأ) অর্থ বিলম্বিত করা, পিছিয়ে দেওয়া, স্থগিত রাখা (To postpone, adjourn) ইত্যাদি। মুরজিউন (مرجئ) অর্থ বিলম্বিতকারী বা স্থগিতকারী। বহুবচন বা ফিরকা অর্থে ‘মুরজিয়াহ’ বলা হয়, অর্থাৎ বিলম্বিতকারীগণ বা স্থগিতকারীগণ।

পূর্বের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, খারিজীদের মতে মুমিন পাপের কারণে কাফির হয়ে যান। যে মুমিন পাপ করে তাওবা ছাড়া মৃত্যু বরণ করবে সে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। তার ঈমান তার কোনো কাজে লাগবে না। মুতাযিলাগণও এরূপ বিশ্বাস পোষণ করে। তাদের মতে মুমিন তার ঈমান সত্ত্বেও যখন কোনো কবীরা গোনাহ করে তখন তার ঈমান ও সকল নেক কর্ম বিনষ্ট হয়ে যায়। এরূপ ব্যক্তি কাফির না হলেও মুমিন থাকে না। অর্থাৎ সে মুমিনও নয়, কাফিরও নয়। তবে পরিণতি কাফিরেরই। সেও কাফিরের মত অনন্তকাল জাহান্নামে শাস্তিভোগ করবে।

এদের মতে ইসলামের বিধান পালন ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কর্মের ঘাটতি মানেই ঈমানের ঘাটতি। আর ঈমানের ঘাটতি অর্থই কুফর। এর বিপরীতে আরেক দলের উদ্ভব হয়। তারা বলে, ঈমানের সাথে আমলের কোনো সম্পর্ক নেই। ঈমান থেকে আমল বা কর্ম সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ঈমানের জন্য শুধু অন্তরের ভক্তি বা বিশ্বাসই যথেষ্ট। ইসলামের কোনো বিধিবিধান পালন না করেও একব্যক্তি ঈমানের পূর্ণতার শিখরে আরোহণ করতে পারে। আর এরূপ ঈমানদার ব্যক্তির কবীরা গোনাহ তার কোনো ক্ষতি করে না। যত গোনাহই করুক না কেন সে জান্নাতী হবে। এদের মূলনীতি:
لاَ يَضُرُّ مَعَ الإِيْمَانِ مَعْصِيَةٌ كَمَا لاَ يَنْفَعُ مَعَ الْكُفْرِ طَاعَةٌ


‘‘ঈমান থাকলে কোনো পাপই কোনো ক্ষতি করে না, যেমন কুফর থাকলে কোনো পুণ্যই কাজে লাগে না।’’

দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রথম থেকেই এ মতটি বিশেষভাবে প্রসার লাভ করে। এদেরকে মুরজিয়া কেন বলা হলো সে বিষয়ে একাধিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ইবনুল আসীর বলেন, এরা যেহেতু বিশ্বাস করে যে, কবীরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ শাস্তি দিবেন না বা তার শাস্তি স্থগিত রাখবেন সেহেতু তাদেরকে মুরজিয়া বলা হয়। আর আব্দুল কাহির বাগদাদী বলেন, এরা যেহেতু আমল বা কর্মকে ঈমান থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে বা স্থগিত করেছে এজন্য এদেরকে মুরজিয়া বলা হয়।[1]

খারিজীগণ যেরূপ কুরআন- হাদীসের কিছু বক্তব্য নিজেদের মতের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে তার বিপরীতে অন্য বক্তব্যগুলো ব্যাখ্যা বা বাতিল করেছে, মুরজিয়াগণও একইভাবে কুরআন ও হাদীসের ক্ষমা বিষয়ক ও তাওহীদের ফযীলত বিষয়ক বক্তব্যগুলোকে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে বাকি আয়াত ও হাদীসগুলো ব্যাখ্যার মাধ্যমে বাতিল করেছে। সমন্বয় বা উভয় প্রকার শিক্ষা গ্রহণ করতে তারা সচেষ্ট হয় নি।

এখানে লক্ষণীয় যে, খারিজী, মুতাযিলী এবং তাদের সংগে একমত বিভিন্ন ফিরকা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতকেও মুরজিয়াহ বলে আখ্যায়িত করে। কারণ এ সকল ফিরকা কবীরা গোনাহে লিপ্ত মুসলিমের বিধান তাৎক্ষণিক বলে দেয় যে, সে অনন্তকাল জাহান্নামে বাস করবে। আর আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত কবীরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তিকে অনন্ত জাহান্নামবাসী না বলে তার বিষয়টি আল্লাহর হাতে বলে বিশ্বাস করেন এবং আল্লাহ তাকে ইচ্ছা করলে শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন। এভাবে তাঁরা পাপী মুসলিমের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি পিছিয়ে দেন।

বস্ত্তত ‘আহলুস সুন্নাত’ কুরআন ও হাদীসের সকল নির্দেশ সমানভাবে গ্রহণ করেছেন। তাঁরা কিছু আয়াত ও হাদীসকে অগ্রগণ্য করে অন্য আয়াত ও হাদীসকে ব্যাখ্যার নামে বাতিল করেন নি। বরং তাঁরা উভয় অর্থের ওহী সমানভাবে বিশ্বাস ও গ্রহণ করেছেন। আর এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেছেন:

আমরা বলি না যে, পাপ মুমিনের কোনো ক্ষতি করবে না। আমরা এও বলি না যে, মুমিন জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আমরা এও বলি না যে, মুমিন অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। মুমিন যদি ফাসিক বা পাপী হয়, কিন্তু ঈমানসহ পৃথিবী ত্যাগ করে তবে তার বিষয়ে আমরা এরূপ বলি না। আমরা বলি না যে, আমাদের নেক কর্মগুলি কবুলকৃত এবং পাপরাশি ক্ষমাকৃত, মুরজিয়াগণ এরূপ বলে থাকে।

বরং আমরা বলি যে, এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যাকৃত। যে ব্যক্তি সকল শর্ত পূরণ করে এবং সকল বিনষ্টকারী ত্রুটি হতে মুক্ত থেকে কোনো নেক কর্ম করবে এবং কুফর বা ধর্মত্যাগ দ্বারা বা অশোভন আচরণ দ্বারা তার নেককর্মটি বিনষ্ট করবে না এবং ঈমানসহ পৃথিবী ত্যাগ করবে আল্লাহ তার কর্মটি নষ্ট করবেন না, বরং তিনি তা কবুল করবেন এবং তাকে তার জন্য সাওয়াব প্রদান করবেন।

কোনো মানুষ যদি শির্ক ও কুফর ছাড়া অন্য কোনো পাপ কর্ম করে তাওবা না করে ঈমান সহ মৃত্যুবরণ করে তবে তার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন থাকবে। মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে জাহান্নামের মধ্যে শাস্তি দিবেন, আর ইচ্ছা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন এবং তাকে জাহান্নামে কোনোরূপ শাস্তিই দিবেন না। রিয়া যদি কোনো কর্মের মধ্যে প্রবেশ করে তবে তা সে কর্মের পুরস্কার বাতিল করে দেয়। ‘উজব’ও তদ্রূপ।

এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) ও তাঁর সাথীদ্বয়ের আকীদা আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন ইমাম তাহাবী। তিনি বলেন:
وَلا نَقُولُ: لا يَضُرُّ مَعَ الإِيمَانِ ذَنْبٌ لِمَنْ عَمِلَهُ. نَرْجُو لِلْمُحْسِنِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْ يَعْفُوَ عَنْهُمْ، وَيُدْخِلَهُمُ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِهِ، وَلا نَأْمَنُ عَلَيْهِمْ، وَلا نَشْهَدُ لَهُمْ بِالْجَنَّةِ، وَنَسْتَغْفِرُ لِمُسِيئِهِمْ، وَنَخَافُ عَلَيْهِمْ، وَلا نُقَنِّطُهُمْ. ... وَالأَمْنُ وَالإِيَاسُ يَنْقُلانِ عَنْ مِلَّةِ الإِسْلامِ، وَسَبِيلُ الْحَقِّ بَيْنَهُمَا لأَهْلِ الْقِبْلَةِ. .... وَأَهْلُ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ ﷺ فِي النَّارِ لاَ يَخْلُدُونَ، إِذَا مَاتُوا وَهُمْ مُوَحِّدُونَ، وَإِنْ لَمْ يَكُونُوا تَائِبِينَ، بَعْدَ أَنْ لَقُوا اللَّهَ عَارِفِينَ مُؤْمِنِينَ، وَهُمْ فِي مَشِيئَتِهِ وَحُكْمِهِ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ، وَعَفَا عَنْهُمْ بِفَضْلِهِ، كَمَا ذَكَرَ عَزَّ وَجَلَّ فِي كِتَابِهِ: "وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ"، وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ فِي النَّارِ بِعَدْلِهِ، ثُمَّ يُخْرِجُهُمْ مِنْهَا بِرَحْمَتِهِ وَشَفَاعَةِ الشَّافِعِينَ مِنْ أَهْلِ طَاعَتِهِ، ثُمَّ يَبْعَثُهُمْ إِلَى جَنَّتِهِ، وَذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى تَوَلَّى أَهْلَ مَعْرِفَتِهِ، وَلَمْ يَجْعَلْهُمْ فِي الدَّارَيْنِ كَأَهْلِ نُكْرَتِهِ الَّذِينَ خَابُوا مِنْ هِدَايَتِهِ، وَلَمْ يَنَالُوا مِنْ وَلايَتِهِ.


‘‘আমরা এ কথাও বলি না যে, ঈমান থাকলে কোনো পাপ পাপীর ক্ষতি সাধন করে না। মু‘মিনগণের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল ইহসান অর্জনকারী নেককার তাদের সম্পর্কে আমরা আশা করি যে, আল্লাহ্ পাক তাদের দোষক্রটি ক্ষমা করবেন এবং নিজ রহমতে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে, আমরা তাদের সম্পর্কে সম্পুর্ণ নির্ভয় নই এবং তাদের জান্নাতী হওয়ার কোনো সাক্ষ্যও আমরা প্রদান করি না। আর মুমিনগণের মধ্যে যারা গুনাহগার তাদের ভূলক্রটির জন্য আমরা আল্লাহর নিকট মাগফেরাত কামনা করি এবং তাদের ব্যাপারে আশঙ্কাও পোষণ করি। তবে, আমরা তাদেরকে নিরাশাগ্রস্থ করি না।

নির্ভয় ও হতাশা উভয়ই বান্দাকে মিল্লাতে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। আহলু কিবলার জন্য এতদুভয়ের মাঝামাঝি সত্যের পথ নিহিত রয়েছে। .... মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উম্মতের মধ্যে যারা কবীরা গুণাহ করবে তারা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে না, যদি তারা তাওহীদের সাথে মৃত্যু বরণ করে, যদিও তারা তাওবা না করে মারিফাত ও ঈমানসহ আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করে থাকে। তাদের পরিণতি আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশের উপর নির্ভর করবে। তিনি চাইলে নিজ দয়ায় তাদের ক্ষমা করে দিবেন। কুরআন কারীমে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘এবং তিনি শিরক ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।’’[2] আর তিনি চাইলে আপন ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে তাদের জাহান্নামে শাস্তি দিতে পারেন। অতঃপর তিনি নিজ অনুগ্রহে এবং তাঁর অনুগত বান্দাহগণের শাফা‘আতের ফলে তাদের বের করে জান্নাতে পাঠাবেন। এর কারণ, আল্লাহ তা’আলা তাঁর ঈমানদার বান্দাহগণের অভিভাবকত্ব বিশেষভাবে গ্রহণ করেছেন। তাদের ইহকাল ও পরকালে ঐসব কাফেরদের সমতুল্য করেন নি যারা তাঁর হেদায়াত থেকে নিজেদের বঞ্চিত করেছে এবং তাঁর বন্ধুত্ব ও অভিভাবকত্ব লাভে সক্ষম হয় নি।’’[3]

[1] ইবনুল আসীর, আন-নিহাইয়া ১/৯৮; বাগদাদী, আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ. ২০২।

[2] সূরা (৪) নিসা: ৪৮ ও ১১৬ আয়াত।

[3] তাহাবী, আল-আকীদাহ, পৃ. ১৩-১৫।

ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বললেন: ‘‘যে ব্যক্তি সকল শর্ত পূরণ করে এবং সকল বিনষ্টকারী ত্রুটি থেকে মুক্ত থেকে কোনো নেক কর্ম করবে এবং কুফর বা ধর্মত্যাগ দ্বারা বা অশোভন আচরণ দ্বারা তার নেককর্মটি বিনষ্ট করবে না এবং ঈমান-সহ পৃথিবী ত্যাগ করবে আল্লাহ তার কর্মটি নষ্ট করবেন না, বরং তিনি তা কবুল করবেন এবং তাকে তার জন্য সাওয়াব প্রদান করবেন।’’ এখানে তিনি ইবাদতের পুরস্কার লাভের জন্য চারটি শর্ত উল্লেখ করেছেন: (১) নেক আমল কবুলের শর্ত পূরণ হওয়া, (২) নেক আমল বিনষ্টকারী ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া, (৩) কুফর-শিরক থেকে মুক্ত থাকা ও (৪) ঈমনসহ মৃত্যু বরণ করা।

প্রথমে আমরা নেক আমল কবুলের শর্তগুলো পর্যালোচনা করব।

নেক আমল কবুলের প্রথম শর্ত ‘ঈমান’। আমরা দেখেছি যে, ঈমানের মূল আল্লাহর তাওহীদ ও মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য। এজন্য কোনো কথা, কর্ম বা বিশ্বাস কবুল হওয়ার বা সাওয়াব পাওয়ার পূর্বশর্ত দুটি: (১) ইখলাসুল ইবাদাত (إخلاص العبادة): ইবাদতের বিশুদ্ধতা এবং (২) ইখলাসুল মুতাবাআহ (إخلاص المتابعة): অনুসরণের বিশুদ্ধতা। অর্থাৎ ইবাদতটি একমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে এবং একমাত্র মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অনুসরণে তা পালিত হতে হবে।

২. ১. ১. ইখলাসুল ইবাদাত: ইবাদাতের বিশুদ্ধতা

ইবাদত কবুল হওয়ার প্রথম শর্ত ইবাদতকারীকে শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হতে হবে এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই ইবাদতটি পালন করা হবে। কুরাআন-হাদীসে এ বিষয়ে অগণিত নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন:


فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلا صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا


‘‘অতএব যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ আশা করে সে নেক কর্ম করুক এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করুক।’’[1]

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:


وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلا يَخَافُ ظُلْمًا وَلا هَضْمًا


‘‘আর যে ব্যক্তি মুমিন হওয়া অবস্থায় নেক কর্ম করবে সে কোনো জুলুম, ক্ষতি বা কমতির আশঙ্কা করবে না।’’[2]

এভাবে কুরআনে বারবার বলা হয়েছে যে, আমল কবুলের পূর্বশর্ত ঈমান। আর ঈমানের প্রথম অংশ তাওহীদের অর্থ ইবাদত শুধুই আল্লাহর জন্য করা।[3]

[1] সূরা (১৮) কাহ্ফ: ১১০ আয়াত।

[2] সূরা (২০) তাহা: ১১২ আয়াত।

[3] দেখুন: সূরা: (৪) নিসা: ১২৪ আয়াত; সূরা (১৬) নাহল: ৯৭ আয়াত; সূরা (১৭) ইসরা (বনী ইসরাঈল): ১৯ আয়াত; সূরা (২১) আম্বিয়া: ৯৪ আয়াত; সূরা (৪০) গাফির (মুমিন): ৪০ আয়াত ...।

‘নেক আমল’ অর্থাৎ আল্লাহর সাওয়াব লাভের জন্য যে বিশ্বাস বা কর্ম পালন করা হয় তা কবুল হওয়ার দ্বিতীয় শর্ত, তা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাত ও তাঁর শিক্ষা অনুসারে পালিত হতে হবে। যদি কোনো ইবাদত তাঁর শেখানো ও আচরিত পদ্ধতিতে পালিত না হয়, তাহলে যত ইখলাস বা আন্তরিকতাই থাক না কেন, তা আল্লাহর দরবারে কোনো অবস্থাতেই গৃহীত বা কবুল হবে না।

আমরা দেখেছি যে, শাহাদাতাইন বা তাওহীদ এবং রিসালাতে বিশ্বাসের মূল অর্থই এটি। বস্ত্তত কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করলে তিনি তা কবুল করবেন তা শিক্ষা দেওয়াই রিসালাতের দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে কথা বলেন নি বা যে কাজ করেন নি সে কথা বলা বা সে কাজ করা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অল্প বা বেশি প্রয়োজন বলে বিশ্বাস করা অথবা এরূপ কাজ না করলে আল্লাহর সন্তুষ্টির কমতি হবে বলে মনে করার অর্থ তাঁর রিসালাতের দায়িত্বের পূর্ণতায় সন্দেহ করা। তিনি ছাড়া অন্য কারো কথা, কর্ম বা রীতি আল্লাহর নিকট কবুলিয়্যাতের জন্য প্রয়োজনীয় মনে করার অর্থ উক্ত ব্যক্তিকে রিসালাতের মর্যাদায় আসীন করা, যা ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক।

তাঁর সুন্নাতের ব্যতিক্রম কথা বা কর্ম জায়েয হতে পারে, তবে সাওয়াব বা কবুলের বিষয় হতে পারে না। যে কোনো কর্ম বা কথার মধ্যে যতটুকু ‘‘ইত্তিবায়ে রাসূল’’ বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুকরণ রয়েছে ততটুকুই কবুল হবে। ইত্তিবার অতিরিক্ত বা ব্যতিক্রম কোনো কিছুই কবুল হবে না। মহান আল্লাহ বলেন:


قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمْ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ.


‘‘বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদেরকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ ক্ষমাকারী দয়ালু।’’[1]

এ আয়াত নির্দেশ করে যে, আল্লাহর মহববত ও মাগফিরাত লাভের একমাত্র পথ ‘ইত্তিবায়ে রাসূল’ বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুকরণ-অনুসরণ। তাঁর অনুকরণের বাইরে আল্লাহর মহববত, কুবলিয়্যাত ও মাগফিরাত লাভের কোনো পথ নেই। বিভিন্ন হাদীসে এ বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:


مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ


‘‘আমাদের কর্ম যা নয় এমন কোনো কর্ম যদি কোনো মানুষ করে তবে তার কর্ম প্রত্যাখ্যাত (আল্লাহর নিকট কবুল হবে না)।’’[2]

সাহাবীগণ ইত্তিবায়ে রাসূলকেই ইবাদতের একমাত্র ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতেন। উমার (রা) কাবা শরীফে হাজারে আসওয়াদকে সম্বোধন করে বলেন:


أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لا تَضُرُّ وَلا تَنْفَعُ وَلَوْلا أَنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ اسْتَلَمَكَ مَا اسْتَلَمْتُكَ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ قَالَ فَمَا لَنَا وَلِلرَّمَلِ؟ إِنَّمَا كُنَّا رَاءَيْنَا بِهِ الْمُشْرِكِينَ وَقَدْ أَهْلَكَهُمُ اللَّهُ ثُمَّ قَالَ: شَيْءٌ صَنَعَهُ النَّبِيُّ ﷺ فَلا نُحِبُّ أَنْ نَتْرُكَهُ.


‘‘আমি নিশ্চিতরূপেই জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র, কল্যাণ-অকল্যাণের কোনো ক্ষমতা তোমার নেই। যদি নবী ﷺ তোমাকে চুম্বন না করতেন তাহলে কখনই আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। এরপর তিনি হাজারে আসওয়াদকে চুম্বন করেন। এরপর তিনি বলেন: তাওয়াফের সময় দৌড়ানোর আর কী প্রয়োজন? আমরা তো মুশরিকদের দেখানোর জন্য এভাবে তাওয়াফ করেছিলাম। আল্লাহ তো মুশরিকদেরকে ধ্বংস করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন: একটি কাজ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) করেছেন (কোনো যুক্তি বা প্রয়োজন না থাকলেও) আমরা তা পরিত্যাগ করতে চাই না। (আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর পদ্ধতিতে দৌড়ে দৌড়ে তাওয়াফ করব)।’’[3]

এখানে খলীফা উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর বক্তব্য থেকে আমরা দেখি যে ‘ইত্তিবায়ে রাসূল’ (ﷺ) বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসরণ ছাড়া কোনো ইবাদাত নেই।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কাবাগৃহের রুকন ইয়ামানী বা দক্ষিণ পশ্চিম কোণ এবং হাজার আসওয়াদ (দক্ষিণ পূর্ব কোণ) স্পর্শ করেন বা চুম্বন করেন। কাবা গৃহের অন্য কোনো স্থান তিনি স্পর্শ করেন নি। কোনো মুমিন যদি হাজার আসওয়াদ (কাল পাথর) চুম্বন করেন, চুম্বন করতে না পারলে স্পর্শ করেন, কোনো লাঠি দিয়ে স্পর্শ করেন বা দূর থেকে ইঙ্গিত করেন তবে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে এবং তিনি সাওয়াব ও কবুলিয়্যাত লাভ করবেন, তার মনের আবেগ যাই হোক না কেন। পক্ষান্তরে তিনি যদি রুকন ইয়ামানী বা হাজার আসওয়াদ ছাড়া অন্য কোনো স্থান স্পর্শ বা চুম্বন করেন এবং তাতে তার মনের মহা আবেগ, ভাব, ক্রন্দন ইত্যাদি থাকে তবে তার যতই ভাল লাগুক না কেন তাতে কোনো সাওয়াব হবে না; কারণ তা ইত্তিবা না হওয়ার কারণে ইবাদত বলে গণ্য হবে না।

এ বিষয়ে মুজাদ্দিদ-ই-আলফ-ই-সানী, শাইখ আহমদ সারহিন্দী (১০৩৪ হি.) বলেন: ‘‘যদি কেহ সহস্র্ বৎসর ধরিয়া ইবাদত বন্দেগি, কঠোর ব্রত ও অসাধ্য সাধন করে এবং পয়গম্বর (আ.)-গণের অনুসরণের নূরের আলোতে আলোকিত না হয়, তবে উক্ত সাধনার এ কদর্পকও মূল্য হইবে না। দ্বিপ্রহরের নিদ্রা, যাহা পয়গাম্বর (আ.)- গণের সুন্নাত এবং যাহা সরাসরি অচৈতন্য (অর্থাৎ, যাহা কোনো কর্মই নয়, শুধু আরামে অচেতন হওয়া) উল্লেখিত কঠোর সাধনাবলী ইহারও সমতুল্য নহে...।’’[4]

[1] সূরা (৩) আল-ইমরান: ৩১,৩২ আয়াত।

[2] বুখারী, আস-সহীহ ৬/২৬৭৫ (কিতাবুল ই’তিসাম, বাবু ইযাজতাহাদাল আমিলু..); মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৩৪৩ (কিতাবুল আকদিয়া, বাবু নাকদিল আহকামিল বাতিলা..)

[3] বুখারী, আস-সহীহ ২/৫৭৯ (কিতাবুল হজ্জ, বাবু মা যুকিরা ফিল হাজারিল আসওয়াদি)

[4] মুজাদ্দিদ আলফ সানী, মাকতুবাত শরীফ, ১ম খন্ড, ২য় ভাগ, মাকতুব ১৯১, পৃ: ৭০।

ইবাদত বা নেক আমল, বিশেষত অর্থসম্পদ-নির্ভর নেক আমল কবুল হওয়ার শর্ত হালাল ভক্ষণ ও হালাল সম্পদ দ্বারা ইবাদত পালন। আল্লাহ বলেন:


يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ


‘‘হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবহিত।’’[1]

এখানে মহান আল্লাহ সৎকর্ম করার পূর্বেই পবিত্র খাদ্য আহার করার কথা উল্লেখ করেছেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন:


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ


‘‘হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে আমি যে সব পবিত্র বস্ত্ত দিয়েছি তা থেকে আহার কর এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত কর।’’[2]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:


أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لا يَقْبَلُ إِلا طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ .... ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ


‘‘হে মানুষেরা, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোনো কিছুই কবুল করেন না। আল্লাহ মুমিনগণকে সে নির্দেশ দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি রাসূলগণকে দিয়েছেন ...(পবিত্র খাদ্য ভÿণের)... এরপর তিনি একজন মানুষের কথা উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি (আল্লাহর পথে) দীর্ঘ সফরে রত থাকে, ধূলি ধূসরিত দেহ ও এলোমেলো চুল, তার হাত দু’টি আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে দোয়া করতে থাকে, হে প্রভু! হে প্রভু!! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার পানীয় হারাম এবং হারাম উপার্জনের জীবিকাতেই তার রক্তমাংস গড়ে উঠেছে। তার দু‘আ কিভাবে কবুল হবে?!’’[3]

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


لاَ يَقْبَلُ الله صَلاَةً بِغَيْرِ طُهُورٍ، وَلاَ صَدَقَةً مِنْ غُلُولٍ


‘‘ওযু-গোসল ছাড়া কোনো সালাত আল্লাহ কবুল করেন না, তেমনি গুলূল বা ফাঁকি, ধোঁকা ও অবৈধ সম্পদের কোনো দান আল্লাহ কবুল করেন না।’’[4]

বিভিন্ন হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ অবৈধ সম্পদ উপার্জন করে তা থেকে দান করলে তার দানের কোনো সাওয়াব সে পাবে না এবং তার পাপের বোঝাও হালকা হবে না। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:


مَنْ جَمَعَ مَالاً حَرَاماً ثُمَّ تَصَدَّقَ بِهِ لَمْ يَكُنْ لَهُ فِيْهِ أَجْرٌ وَكَانَ إِصْرُهُ عَلَيْهِ


‘‘যে ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ সঞ্চয় করে এরপর তা দান করবে, সে দানের জন্য কোনো সাওয়াব পাবে না এবং তার পাপ তাকে ভোগ করতে হবে।’’[5]

[1] সূরা (২৩) মুমিনূন: ৫১ আয়াত।

[2] সূরা (২) বাকারা: ১৭২ আয়াত।

[3] মুসলিম, আস-সহীহ ২/৭০৩ (কিতাবুয যাকাত, বাবু কাবুলিস সাদাকাতি মিনাল কাসবিত...)।

[4] মুসলিম, আস-সহীহ ১/২০৪ (কিতাবুত তাহারাহ, বাবু উজূবিত তাহারাতি লিস সালাত)।

[5] ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ: মাওয়ারিদুয যামআন ৩/১৯, ১৩৩। হাদীসটির সনদ শক্তিশালী।

ইমাম আযম নেক আমল বাতিল হওয়ার কারণাদি উল্লেখ করে বলেছেন: ‘‘সকল বিনষ্টকারী ত্রুটি থেকে মুক্ত থেকে কোনো নেক কর্ম করবে এবং কুফর বা ধর্মত্যাগ দ্বারা বা অশোভন আচরণ দ্বারা তার নেককর্মটি বিনষ্ট করবে না ...।’’ এখানে তিনি কুফর ও ধর্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেছেন। কোনো কোনো পান্ডুলিপিতে ‘‘অশোভন আচরণ’’ কথাটিও বিদ্যমান। পরবর্তীতে তিনি রিয়া ও উজবের কথা উল্লেখ করেছেন। ‘‘আল-আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম’’ গ্রন্থে তিনি বলেন:


وَأَمَّا الْحَسَنَاتُ فَإِنَّهُ لاَ يَهْدِمُهَا شَيْءٌ غَيْرُ ثَلاَثِ خِصَالٍ. أَمَّا الْوَاحِدُ فَالشِّرْكُ بِاللهِ؛ لأَنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ: "وَمَنْ يَكْفُرْ بِالإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ". وَالأُخْرَى أَنْ يَعْمَلَ الإِنْسَانُ فَيُعْتِقَ نَسَماً أَوْ يَصِلَ رَحِماً أَوْ يَتَصَدَّقَ بِمَالٍ يُرِيْدُ بِهَذَا كُلِّهِ وَجْهَ اللهِ. ثُمَّ إِذَا غَضِبَ أَوْ قَالَ فِيْ غَيْرِ الْغَضَب امْتِنَاناً عَلَى صَاحِبِهِ الَّذِيْ كَانَ الْمَعْرُوْفُ مِنْهُ إِلَيْهِ: أَلَمْ أُعْتِقْ رَقَبَتَكَ؟ أَوْ يَقُوْلُ لِمَنْ وَصَلَهُ: أَلَمْ أَصِلْكَ؟ وَفِيْ أَشْبَاهِ هَذَا يَضْرِبُ بِهِ عَلَى رَأْسِهِ. وَلِذَلِكَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: "لاَ تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالأَذَى". وَالثَّالِثَةُ مَا كَانَ مِنْ عَمَلٍ يُرَائِيْ بِهِ النَّاسَ، فَإِنَّ ذَلِكَ الْعَمَلَ الصَّالِحَ الَّذِيْ رَاءَى بِهِ لاَ يَتَقَبَّلُهُ اللهُ مِنْهُ. فَمَا كَانَ سِوَى هَذَا مِنَ السَّيِّئَاتِ فَإِنَّهُ لاَ يَهْدِمُ الْحَسَنَاتِ.


‘‘নেক কর্ম বিনষ্ট করে মাত্র তিনটি বিষয়। প্রথম বিষয়: আল্লাহর সাথে শিরক করা; কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘‘আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে কুফরী করবে তার কর্ম বিনষ্ট হবে।’’[1] নেক আমল বিনষ্টকারী দ্বিতীয় বিষয় (খোঁটা বা কষ্ট দেওয়া, তা) এই যে, মানুষ কোনো নেক আমল করল, যেমন একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করল, কোনো আত্মীয়কে সহযোগিতা করল অথবা কিছু সম্পদ দান করল। এ সকল কর্ম সে একান্তই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করল। এরপর যখন সে ক্রোধান্বিত হলো- অথবা ক্রোধ ছাড়াই- সে খোঁটা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বলল: আমি কি তোমাকে মুক্ত করি নি? আমি কি তোমাকে সাহায্য করি নি? অথবা এরূপ কোনো কথা দিয়ে তার মাথায় আঘাত করল। এজন্য এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘‘তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান-কল্যাণকর্মগুলো বাতিল করো না।’’[2] নেক আমল বিনষ্ট করার তৃতীয় বিষয় রিয়া বা মানুষের দেখানোর জন্য কর্ম করা। যে নেক কর্ম মানুষের দেখানোর জন্য করা হয় তা আল্লাহ কবুল করেন না। এ ছাড়া যত পাপ তা নেক কর্ম বিনষ্ট করে না।’’[3]

আমরা এখানে এ বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করব। মহান আল্লাহর কাছে তাওফীক ও কবুলিয়্যাত প্রার্থনা করছি।

[1] সূরা (৫) মায়িদা: ৫ আয়াত।

[2] সূরা (২) বাকারা: ২৬৪ আয়াত।

[3] ইমাম আবূ হানীফা, আল-আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম, পৃ. ৩২।

আমরা ইতোপূর্বে প্রথম পরিচ্ছেদে শিরক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়া তাকফীর পরিচ্ছেদে আমরা কুফর-এর অর্থ আলোচনা করেছি। ইসলাম গ্রহণের পর কোনো শিরক বা কুফরে লিপ্ত হওয়াকে ‘‘রিদ্দাহ’’ (الردة) বা ধর্মত্যাগ বলে। শিরক মানব জীবনের ভয়ঙ্করতম পাপ। তাওবা বা অনুতপ্ত হয়ে পাপ বর্জন করা সকল পাপের ক্ষমার পথ। তবে মহান আল্লাহ তাওবা ছাড়াও নেক কর্মের কারণে, শাস্তির মাধ্যমে, শাফাআতের মাধ্যমে বা তাঁর অপার করুণায় অন্য সকল পাপ ক্ষমা করতে পারেন। তবে শিরকের পাপ তিনি তাওবার মাধ্যমে শিরক বর্জন ছাড়া ক্ষমা করেন না। মহান আল্লাহ বলেন:


إِنَّ اللَّهَ لا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا


‘‘আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। তা ছাড়া অন্য কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে কেউ আল্লার সাথে শরীক করে সে এক মহাপাপ করে।’’[1]

এছাড়া সকল পাপ বা মহাপাপে লিপ্ত ব্যক্তির জন্যও জাহান্নামের শাস্তির পর জান্নাত লাভের আশা থাকে। কিন্তু শিরক-কুফরে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যু হলে তার আর কোনো আশা থাকে না। মহান আল্লাহ বলেন:


إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ


‘‘কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করেন ও তার আবাস জাহান্নাম; জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’’[2]

সর্বোপরি শিরক-কুফর মানুষের অন্যান্য নেক আমলও বিনষ্ট করে। ইমাম আযম এ বিষয়ক একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:


وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ


‘‘তোমার এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, ‘তুমি আল্লাহর শরীক স্থির করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত’।’’[3]

আমরা দেখেছি যে, আরবের কাফিরগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অনেক ইবাদত করত। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ-উমরা, কুরবানী ইত্যাদি ইবাদত পালন করত। কিন্তু আল্লাহর নিকট তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বারবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিরকযুক্ত নেক আমল সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:


وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا


‘‘এবং আমি তাদের (কাফির-মুশরিকদের) আমলের প্রতি অগ্রসর হব এবং তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।’’[4]

[1] সূরা (৪) নিসা: ৪৮ আয়াত।

[2] সূরা (৫) মায়িদা: ৭২ আয়াত।

[3] সূরা (৩৯) যুমার: ৬৫ আয়াত।

[4] সূরা (২৫) ফুরকান: ২৩ আয়াত।

আমরা শিরক বিষয়ক মূলনীতিগুলো পূর্বে উল্লেখ করেছি। তবে যেহেতু শিরক-কুফর নেক আমল নষ্ট হওয়ার মূল কারণ এবং কুরআনের ভাষায় অধিকাংশ মানুষ ঈমান থাকা সত্ত্বেও শিরকে লিপ্ত হয়, সেহেতু আমরা এখানে সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক-কুফর উল্লেখ করছি, যেন সচেতন পাঠক এগুলো থেকে আত্মরক্ষা করতে পারেন।

  1. তাওহীদ বা রিসালাতের কোনো বিষয় অবিশ্বাস করা। যেমন আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস না করা। মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে তাঁর বান্দা, দাস ও মানুষ রূপে বিশ্বাস না করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর অবতার, আল্লাহ তাঁর সাথে মিশে গিয়েছেন, ‘যে আল্লাহ সে-ই রাসূল’ ইত্যাদি মনে করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর নবী ও রাসূল রূপে না মানা। তাঁকে কোনো বিশেষ যুগ, জাতি বা দেশের নবী মনে করা। তাঁর কোনো কথা বা শিক্ষাকে ভুল বা অচল মনে করা। আল্লাহর নৈকট্য, সন্তুষ্টি ও মুক্তি পাওয়ার জন্য তাঁর শিক্ষার অতিরিক্ত কোনো শিক্ষা, মত বা পথ আছে, থাকতে পারে বা প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করা।
  2. আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এ বিশ্বের প্রতিপালন বা পরিচালনায় শরীক আছেন বলে বিশ্বাস করা। অন্য কোনো সৃষ্টি, প্রাণী, ফিরিশতা, জীবিত বা মৃত মানুষ, নবী বা ওলী সৃষ্টি, পরিচালনা, অদৃশ্য জ্ঞান, অদৃশ্য সাহায্য, রিযিক দান, জীবন দান, সুস্থতা বা রোগব্যাধি দান, বৃষ্টি দান, বরকত দান, অনাবৃষ্টি প্রদান, অমঙ্গল প্রদান ইত্যাদি কোনো প্রকার কল্যাণ বা অকল্যাণের কোনো ক্ষমতা রাখেন বা আল্লাহ কাউকে অনুরূপ ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন বলে বিশ্বাস করা।
  3. আল্লাহ ছাড়া কোনো নবী, ওলী, জিন বা ফিরিশতা সকল প্রকার অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, গায়েব বা দূরের ডাক শুনতে পারেন, সাড়া দিতে পারেন, সদাসর্বদা সর্বত্র বিরাজমান বা হাজির নাযির বলে বিশ্বাস করা।
  4. রাসূলুল্লাহ (ﷺ), ঈসা (আঃ) বা অন্য কাউকে আল্লাহর যাত (সত্তা) বা সিফাত (বিশেষণ)-এর অংশ, আল্লাহর সত্তা, বিশেষণ বা নূর থেকে (Same Substance/ Light from Light) সৃষ্ট বা জন্ম-দেওয়া বলে বিশ্বাস করা।
  5. কোনো বস্ত্ত, প্রাণী, কর্ম, বার, তিথি, মাস ইত্যাদিকে অশুভ বা অযাত্রা বলে মনে করা। সকল প্রকার অশুভ বা অযাত্রা বিশ্বাসই শিরক।
  6. আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করা। আল্লাহ ছাড়া কোনো দৃশ্য বা অদৃশ্য, জীবিত বা মৃত প্রাণী বা বস্ত্তকে; যেমন মানুষ, জিন, ফিরিশতা, মাযার, কবর, পাথর, গাছ, মূর্তি, ছবি ইত্যাদিকে সাজদা করা, তাদের কাছে অলৌকিক সাহায্য, ত্রাণ, দীর্ঘায়ূ, রোগমুক্তি, বিপদমুক্তি, সন্তান ইত্যাদি প্রার্থনা করা, তাদের নামে মানত, কুরবানি বা উৎসর্গ করা শিরক। মূর্তিতে ভক্তিভরে ফুলদান, মূর্তির সামনে নীরবে বা ভক্তিভরে দাঁড়ানো এজাতীয় শিরকী বা শিরকতুল্য কর্ম।
  7. আল্লাহর জন্য কোনো ইবাদত করে সে ইবাদত দ্বারা আল্লাহর সাথে অন্য কারো সম্মান প্রদর্শন বা সন্তুষ্টি কামনাও শিরক। যেমন আল্লাহর জন্য সাজদা করা তবে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্ত্তকে সামনে রেখে সাজদা করা, যেন আল্লাহর সাজদার সাথে সাথে তাকেও সম্মান করা হয়ে যায়। অথবা আল্লাহর জন্য মানত করে কোনো জীবিত বা মৃত ওলী, ফিরিশতা, জিন, কবর, মাযার, পাথর, গাছ ইত্যাদিকে মানতের সাথে সংযুক্ত করা।
  8. আল্লাহ, তাঁর রাসূল বা তাঁর দ্বীনের মৌলিক কোনো বিষয় অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, অবজ্ঞা করা বা অপছন্দ করা কুফর। এ জাতীয় প্রচলিত কুফরীর মধ্যে অন্যতম আল্লাহর বিভিন্ন বিধান, যেমন - নামায, পর্দা, বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি, ইসলামী আইন ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ বা এগুলিকে বর্তমানে অচল বা মধ্যযুগীয় মনে করা।
  9. ইসলামকে শুধু ব্যক্তি জীবনে পালন করতে হবে এবং সমাজ, বিচার, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলাম চলবে না বলে মনে করা, ইসলামের কোনো বিধান বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কোনো সুন্নাতের প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা প্রকাশ করা, ওয়াজ মাহফিল, যিক্র, তিলাওয়াত, নামায, মাদ্রাসা, মসজিদ, বোরকা, পর্দা ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা অনুভব করা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বা পূর্ববর্তী অন্য কোনো নবী-রাসূলের প্রতি সামান্যতম অবজ্ঞা প্রকাশ করা।
  10. মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সর্বশেষ নবী হওয়ার বিষয়ে সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করা, তাঁর পরে কারো কাছে কোনো প্রকার ওহী এসেছে বা আসা সম্ভব বলে বিশ্বাস করা।
  11. সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারকি, রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো নিয়ম, পদ্ধতি, রীতি, নীতি, আদর্শ, আইন ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোনো নিয়ম, নীতি, মতবাদ বা আদর্শ বেশী কার্যকর, উপকারী বা উপযোগী বলে মনে করা। যুগের প্রয়োজনে তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করা। এগুলো সবই কুফর।
  12. যে কোনো প্রকার কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। উপরে বর্ণিত কোনো কুফুর বা শিরকে লিপ্ত মানুষকে মুসলিম মনে করা বা তাঁদের আকীদার প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। যেমন যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সর্বশেষ নবী বলে মানেন না বা তাঁর পরে কোনো নবী থাকতে পারে বা ওহী আসতে পারে বলে বিশ্বাস করেন তাদেরকে কাফির মনে না করা কুফরী। অনুরূপভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মকে সঠিক বা পারলৌকিক মুক্তির মাধ্যম বলে মনে করা, সব ধর্মই ঠিক মনে করা কুফর। অন্যান্য ধর্মের শিরক বা কুফরমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, সেগুলোর প্রতি মনের মধ্যে ঘৃণাবোধ না থাকা, অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে আন্তরিক বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা, তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের অনুকরণ করা, ক্রিসমাস (বড়দিন), পূজা ইত্যাদিতে আনন্দ- উদ্যাপন করা ইত্যাদি বর্তমান যুগে অতি প্রচলিত কুফরী কর্ম ও বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামই সর্বপ্রথম সকল ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রত্যেকেই তাদের ধর্ম পালন করবেন। তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা নিষিদ্ধ। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মুক্তি একমাত্র ইসলামের মধ্যে বলে বিশ্বাস ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘সব ধর্মই ঠিক’ বলার অর্থ সকল ধর্মকে মিথ্যা বলা এবং সকল ধর্মকে অবিশ্বাস করা; কারণ প্রত্যেক ধর্মেই অন্য ধর্মকে ‘বেঠিক’ বলা হয়েছে।
  13. আরেকটি প্রচলিত কুফরী গণক, জ্যোতিষী, হস্তরেখাবিদ, রাশিবিদ, জটা ফকির বা অন্য কোনোভাবে ভাগ্যগণনা, ভবিষ্যৎ গণনা বা গোপন জ্ঞান দাবি করা অথবা এসকল মানুষের কথায় বিশ্বাস করা। এ ধরনের কোনো কোনো কর্ম ইসলামের নামেও করা হয়। যে নামে বা যে পদ্ধতিতেই করা হোক গোপন তথ্য, গায়েব, অদৃশ্য, ভবিষ্যৎ বা ভাগ্য গণনা বা বলা জাতীয় সকল কর্মই কুফরী কর্ম। অনুরূপভাবে কোনো দ্রব্য, পাথর, ধাতু, অষ্টধাতু, গ্রহ বা এ জাতীয় কোনো কিছু মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে অথবা দৈহিক বা মানসিক ভালমন্দ করতে পারে বলে বিশ্বাস করা শিরক।
  14. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো কোনো কর্ম, পোষাক, আইন, বিধান, রীতি, সুন্নাত, কর্মপদ্ধতি বা ইবাদত পদ্ধতিকে অবজ্ঞা বা উপহাস করা।
  15. কোনো মানুষকে রাসুলুল্লাহ -এর শরীয়তের উর্ধ্বে মনে করা বা কোনো কোনো মানুষের জন্য শরীয়তের বিধান পালন করা জরুরী নয় বলে বিশ্বাস করা কুফরী। যেমন, মারিফাত বা মহববত অর্জন হলে, বিশেষ মাকামে পৌঁছালে আর শরীয়ত পালন করা লাগবে না বলে মনে করা। অনুরূপভাবে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, হালাল উপার্জন, পর্দা ইত্যাদি শরীয়তের যে সকল বিধান প্রকাশ্যে পালন করা ফরয তা কারো জন্য গোপনে পালন করা চলে বলে বিশ্বাস করাও কুফরী।
  16. যাদু, টোনা, বান ইত্যাদি ব্যবহার করা বা শিক্ষা করা।
  17. ইসলাম ধর্ম জানতে-বুঝতে আগ্রহ না থাকা। ইসলামকে জানা ও শিক্ষা করাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না করা বা এ বিষয়ে মনোযোগ না দেয়া।

আল্লাহ ও বান্দার মাঝখানে কোনো মধ্যস্থ আছে বা মধ্যস্থতা ছাড়া আল্লাহর নিকট ক্ষমালাভ, করুণালাভ বা মুক্তিলাভ সম্ভব নয় বলে বিশ্বাস করা শিরক।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 পরের পাতা »