হেদায়াত, কবর, অনুবাদ, আয়াতসমূহের মর্যাদা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আত্মীয়গণ, মিরাজ, কিয়ামতের আলামত ইত্যাদি সম্পর্কে ইমাম আবূ হানীফা নুমান ইবন সাবিত (রাহিমাহুল্লাহু) বলেন

ইমাম আবূ হানীফা নুমান ইবন সাবিত (রাহিমাহুল্লাহু) বলেন:


وَاللهُ تَعَالَي يَهْدِيْ مَنْ يَشَاءُ فَضْلاً مِنْهُ، وَيُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ عَدْلاً مِنْهُ وَإِضْلاَلُهُ خُذْلاَنُهُ وَتَفْسِيْرُ الْخُذْلاَنِ أَنْ لاَ يُوَفِّقَ الْعَبْدَ عَلَي مَا يَرْضَاهُ عَنْهُ وَهُوَ عَدْلٌ مِنْهُ. وَكَذَا عُقُوْبَةُ الْمَخْذُوْلِ عَلَى الْمَعْصِيَةِ. وَلاَ يَجُوْزُ أَنْ نَقُوْلُ: إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْلُبُ الإِيْمَانَ مِنَ الْعَبْدِ الْمُؤْمِنِ قَهْراً وَجَبْراً. وَلَكِنْ نَقُوْلُ: الْعَبْدُ يَدَعُ الإِيْمَانَ فَإِذَا تَرَكَهُ فَحِيْنَئِذٍ يَسْلُبُهُ مِنْهُ الشَّيْطَانُ.


وَسُؤَالُ مُنْكَرٍ وَنَكِيْرٍ حَقٌّ كَائِنٌ فِيْ الْقَبْرِ، وَإِعَادَةُ الرُّوْحِ إِلَى جَسَدِ الْعَبْدِ فِيْ قَبْرِهِ حَقٌّ، وَضَغْطَةُ الْقَبْرِ وَعَذَابُهُ حَقٌّ كَائِنٌ لِلْكُفَّارِ كُلِّهِمْ أَجْمَعِيْنَ وَلِبَعْضِ عُصَاةِ الْمُؤْمِنِيْنَ.


وَكُلُّ شَيْءٍ ذَكَرَهُ الْعُلَمَاءُ بِالْفَارِسِيِّةِ مِنْ صِفَاتِ اللهِ تَعَالَى عَزَّ اسْمُهُ فَجَائِزٌ الْقَوْلُ بِهِ سِوَى الْيَدِ بِالْفَارِسِيَّةِ وَيَجُوْزُ أَنْ يُقَالَ "بُرُوئِ خُدَاي" عَزَّ وَجَّلَّ بِلاَ تَشْبِيْهٍ وَلاَ كَيْفِيَّةٍ. وَلَيْسَ قُرْبُ اللهِ تَعَالَى وَلاَ بُعْدُهُ مِنْ طَرِيْقِ طُوْلِ الْمَسَافَةِ وَقِصَرِهَا، وَلَكِنْ (وَلاَ) عَلَى مَعْنَى الْكَرَامَةِ وَالْهَوَانِ، وَالْمُطِيْعُ قَرِيْبٌ مِنْهُ بِلاَ كَيْفٍ، وَالْعَاصِىْ بَعِيْدٌ مِنْهُ بِلاَ كَيْفٍ. وَالْقُرْبُ وَالْبُعْدُ وَالإِقْبَالُ يَقَعُ عَلَى الْمُنَاجِىْ وَكَذَالِكَ جَوَارُهُ فِىْ الْجَنَّةِ، وَالْوُقُوْفُ بَيْنَ يَدَيْهِ بِلاَ كَيْفِيَّةٍ.


وَالْقُرْآنُ مُنَزَّلٌ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَهُوَ فِىْ الْمُصْحَفِ مَكْتُوْبٌ، وَآَيَاتُ الْقُرْآَنِ فِىْ مَعْنَى الْكَلاَمِ كُلُّهَا مُسْتَوِيَةٌ فِىْ الْفَضِيْلَةِ وَالْعَظَمَةِ، إِلاَّ أَنَّ لِبَعْضِهَا فَضِيْلَةَ الذِّكْرِ وَفَضِيْلَةَ الْمَذْكُوْرِ، مِثْلُ آَيَةِ الْكُرْسِىِّ؛ لأَنَّ الْمَذْكُوْرَ فِيْهَا جَلاَلُ اللهِ تَعَالَى وَعَظَمَتُهُ وَصِفَاتُهُ، فَاجْتَمَعَتْ فِيْهَا فَضِيْلَتَانِ: فَضِيْلَةُ الذِّكْرِ وَفَضِيْلَةُ الْمَذْكُوْرِ، وَلِبَعْضِهَا فَضِيْلَةُ الذِّكْرِ فَحَسْبٌ مِثْلُ قِصَّةِ الْكُفَّارِ، وَلَيْسَ لِلْمَذْكُوْرِ فِيْهَا فَضْلٌ وَهُمُ الْكُفَّارُ. وَكَذَالِكَ الأَسْمَاءُ وَالصِّفَاتُ كُلُّهَا مُسْتَوِيَةٌ فِىْ الْعَظَمَةِ وَالْفَضْلِ لاَ تَفَاوُتَ بَيْنَهَا.


وَوَالِدَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ تَعَالَي عَلَيْهِ وَآَلِهِ وَسَلَّمَ مَاتَا عَلَى الْكُفْرِ (وَفِيْ نُسْخَةٍ زِيْدَ) وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآَلِهِ وَسَلَّمَ مَاتَ عَلَى الاِيْمَانِ وَأَبُوْ طَالِبٍ عَمُّهُ ﷺ وَأَبُوْ عَلِيٍّ  مَاتَ كَافِراً.


وَقَاسِمٌ وَطَاهِرٌ وَإِبْرَاهِيْمُ كَانُوْا بَنِىْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ، وَفَاطِمَةُ وَرُقَيَّةُ وَزَيْنَبُ وَأُمُّ كُلْثُوْمٍ كُنَّ جَمِيْعاً بَنَاتِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ. وَرَضِيَ عَنْهُنَّ


وَإِذَا أَشْكَلَ عَلَى الإِنْسَانِ شَيْءٌ مِنْ دَقَائِقِ عِلْمِ التَّوْحِيْدِ، فَإِنَّهُ يَنْبَغِىْ لَهُ أَنْ يَعْتَقِدَ فِىْ الْحَالِ مَا هُوَ الصَّوَابُ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى إِلَى أَنْ يَجِدَ عَالِماً فَيَسْأَلُهُ، وَلاَ يَسَعُهُ تَأْخِيْرُ الطَّلَبِ، وَلاَ يُعْذَرُ بِالْوَقْفِ فِيْهِ، وَيَكْفُرُ إِنْ وَقَفَ.


وَخَبَرُ الْمِعْرَاجِ حَقٌّ. مَنْ رَدَّهُ فَهُوَ ضَالٌّ مُبْتَدِعٌ . وَخُرُوْجُ الدَّجَّالِ وَيَأْجُوْجَ وَمَأْجُوْجَ وَطُلُوْعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنُزُوْلُ عِيْسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ مِنَ السَّمَاءِ وَسَائِرُ عَلاَمَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ عَلَى مَا وَرَدَتْ بِهِ الأَخْبَارُ الصَّحِيْحَةُ حَقٌّ كَائِنٌ وَاللهُ تَعَالَى يَهْدِيْ مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيْمٍ


বঙ্গানুবাদ:
আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে যাকে ইচ্ছা সুপথ প্রদর্শন করেন। আর তিনি ন্যায়পরায়ণতা পূর্বক যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন। বিভ্রান্ত করার অর্থ সাহায্য পরিত্যাগ করা। সাহায্য পরিত্যাগের ব্যাখ্যা এই যে, মহান আল্লাহ সে বান্দাকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলার তাওফীক প্রদান করেন না। বিষয়টি তাঁর ন্যায়পরায়ণতার প্রকাশ। অনুরূপভাবে যে পাপীকে তিনি পাপ ও অবাধ্যতার কারণে পরিত্যাগ করেছেন তার পাপের কারণে শাস্তি প্রদানও তাঁর ন্যায়পরায়ণতার প্রকাশ।

আমাদের জন্য এ কথা বলা বৈধ নয় যে, শয়তান জবরদস্তি করে বা জোর করে মুমিন বান্দার ঈমান কেড়ে নেয়। বরং আমরা বলি: বান্দা তার ঈমান পরিত্যাগ করে, তখন শয়তান তা তার থেকে ছিনিয়ে নেয়।

মুনকার ও নাকীরের প্রশ্ন সত্য, যা কবরের মধ্যে হবে। কবরের মধ্যে বান্দার রূহকে দেহে ফিরিয়ে দেওয়া সত্য। কবরের চাপ এবং কবরের আযাব সত্য, কাফিররা সকলেই এ শাস্তি ভোগ করবে এবং কোনো কোনো পাপী মুমিনও তা ভোগ করবে।

মহান আল্লাহর- মহিমান্বিত হোক তাঁর নাম- বিশেষণসমূহের বিষয়ে আলিমগণ ফার্সী ভাষায় যা কিছু উল্লেখ করেছেন তা সবই বলা বৈধ, কেবলমাত্র ফার্সী ভাষায় ইয়াদ বা হাত বলা বাদে। ফার্সীতে ‘বরোয়ে খোদা’ -আয্যা ও জাল্লা- অর্থাৎ মহান আল্লাহর চেহারার ওসীলায়- এ কথা বলা যাবে, কোনোরূপ তুলনা ছাড়া এবং কোনোরূপ স্বরূপ সন্ধান ও প্রকৃতি নির্ধারণ ছাড়া। আল্লাহর নৈকট্য এবং তাঁর দূরত্ব কোনো স্থানের দূরত্ব বা স্থানের নৈকট্য নয়। কিন্তু এর অর্থ সম্মান বা অসম্মান। (মোল্লা আলী কারীর বর্ণনা: সম্মান বা অসম্মানের অর্থেও নয়।) অনুগত বান্দা কোনো স্বরূপ সন্ধান বা প্রকৃতি নির্ধারণ ছাড়াই আল্লাহর নিকটবর্তী। অবাধ্য বান্দা কোনো স্বরূপ সন্ধান বা প্রকৃতি নির্ধারণ ছাড়াই আল্লাহ থেকে দূরবর্তী। নৈকট্য, দূরত্ব, নিকটবর্তী হওয়া ইত্যাদি প্রার্থনাকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অনুরূপভাবে জান্নাতে মহান আল্লাহর প্রতিবেশিত্ব বা নৈকট্য এবং মহান আল্লাহর সম্মুখে অবস্থান সবই স্বরূপ সন্ধান বা প্রকৃতি নির্ধারণ ছাড়া।

কুরআন কারীম রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ এবং তা মুসহাফের মধ্যে লিপিবদ্ধ। আল্লাহর কালাম হিসেবে সকল আয়াত মর্যাদা ও মহত্ত্বের দিক থেকে সমান। তবে কোনো কোনো আয়াতের দ্বিবিধ মর্যাদা রয়েছে: যিক্র-এর মর্যাদা এবং যিক্র-কৃতের মর্যাদা। যেমন আয়াতুল কুরসী। এর মধ্যে মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, মর্যাদা ও বিশেষণ আলোচিত হয়েছে, এজন্য এর মধ্যে দ্বিবিধ মর্যাদা একত্রিত হয়েছে: যিক্র বা স্মরণের মর্যাদা এবং স্মরণকৃতের মর্যাদা। আর কোনো কোনো আয়াতের কেবল যিক্র-এর ফযীলত রয়েছে, যেমন কাফিরদের কাহিনী, এতে যাদেরকে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ কাফিরদের কোনো মর্যাদা নেই। অনুরূপভাবে আল্লাহর নামসমূহ এবং বিশেষণসমূহ সবই সমমর্যাদার, এগুলোর মধ্যে মর্যাদাগত কোনো তারতম্য নেই।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পিতামাতা কুফুরের উপর মৃত্যুবরণ করেন। (কোনো কোনো পান্ডুলিপিতে অতিরিক্ত রয়েছে: এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করেন।) তাঁর চাচা এবং আলী (রা)-এর পিতা আবু তালিব কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। কাসিম, তাহির ও ইবরাহীম রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পুত্র ছিলেন। ফাতিমা, রুকাইয়া, যাইনাব ও উম্মু কুলসূম তাঁরা সকলেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কন্যা ছিলেন। আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।

যদি কোনো মানুষের কাছে ‘ইলমুত তাওহীদ’-এর বা আকীদার খুঁটিনাটি বিষয়ের সুক্ষ্ম তথ্য অস্পষ্ট হয়ে পড়ে তবে তার দায়িত্ব এই যে, তৎক্ষণাৎ এ বিষয়ে আল্লাহর নিকট যা সঠিক তাই আমার বিশ্বাস-এরূপ বিশ্বাস পোষণ করবে। এরপর যথাশীঘ্র সম্ভব কোনো আলিমকে জিজ্ঞাসা করে সঠিক তথ্য জেনে নিবে। সঠিক তথ্য জানার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দেরি করা তার জন্য বৈধ নয়। এরূপ বিষয়ে ‘দাঁড়িয়ে থাকা’ বা ‘বিরত থাকা’, অর্থাৎ ‘জানিও না এবং জানবও না বলে থেমে থাকা’, বা ‘কিছুই জানি না কাজেই কিছুই বিশ্বাস করব না’ এরূপ কথা বলা তার জন্য কোনো ওযর বলে গৃহীত হবে না। কেউ যদি এরূপ দাঁড়িয়ে থাকে বা বিরত থাকে তবে তা কুফরী বলে গণ্য হবে।

মি’রাজের সংবাদ সত্য। যে তা প্রত্যাখ্যান করে সে বিদ‘আতী ও বিভ্রান্ত।

দাজ্জালের বহির্গমন, ইয়াজূজ ও মাজূজের বহির্গমন, অস্তগমনের স্থান থেকে সূর্যের উদয় হওয়া, আকাশ থেকে ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ এবং কিয়ামাতের অন্যান্য সকল পূর্বাভাস, যেভাবে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তা সবই সত্য এবং ঘটবেই। মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।