ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) এখানে অন্য একটি বিষয়ের অবতারণা করেছেন, তা হলো কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে নিশ্চয়তা দান বা সাক্ষ্য প্রদান। তিনি বলেছেন যে, মুমিনের বিষয়টি মূলত আল্লাহর মর্জির উপর নির্ভরশীল। সকল শর্ত পূরণ করার পরে আমলটি কবুল হওয়ার আশা করা যায়, তেমনি কুফর-শিরকমুক্ত পাপের ক্ষেত্রে শাস্তির নিশ্চিত ভয়ের পাশাপাশি ক্ষমার আশা করা যায়। এ থেকে জানা যায় যে, দুনিয়াতে কোনো মানুষের কর্মের ভিত্তিতে তাকে নিশ্চিতভাবে ‘আল্লাহর ওলী’ বা জান্নাতী অথবা জাহান্নামী বলা যায় না। আমরা দেখেছি যে, ইমাম তাহাবী বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি ইমাম আবূ হানীফার এ বিষয়ক আকীদা ব্যাখ্যা করে বলেছেন:

‘‘মু‘মিনগণের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল ইহসান অর্জনকারী নেককার তাদের সম্পর্কে আমরা আশা করি যে, আল্লাহ্ পাক তাদের দোষক্রটি ক্ষমা করবেন এবং নিজ রাহমাতে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে, আমরা তাদের সম্পর্কে সম্পুর্ণ নির্ভয় নই এবং তাদের জান্নাতী হওয়ার কোনো সাক্ষ্যও আমরা প্রদান করি না।’’

এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) ‘‘আল-আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম’’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, এক্ষেত্রে ওহীর উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হবে। কুরআন বা হাদীসে যাদেরকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাদেরকে নিশ্চিতরূপে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলতে হবে। অন্য কারো বিষয়ে নিশ্চিতরূপে বলা যাবে না যে, লোকটি জান্নাতী বা জাহান্নামী, ধারণা বা আশা পোষণ করা যাবে। তিনি বলেন:


فَإِنَّ النَّاسَ عِنْدَنَا عَلَى ثَلاَثَةِ مَنَازِلَ: الأَنْبِيَاءُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَتِ الأَنْبِيَاءُ إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ. وَالْمَنْزِلَةُ الأُخْرَى لِلْمُشْرِكِيْنَ نَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَنَّهُمْ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، وَالْمَنْزِلَةُ الثَّالِثَةُ لِلْمُوَحِّدِيْنَ نَقِفُ عَلَيْهِمْ، فَلاَ نَشْهَدُ أَنَّهُمْ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَلاَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، وَلَكِنَّا نَرْجُوْ لَهُمْ وَنَخَافُ عَلَيْهِمْ... قَالَ الْمُتَعَلِّمُ .. أَخْبِرْنِيْ هَلْ أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ تُوْجِبُ لَهُ الْجَنَّةَ إِنْ رَأَيْتَهُ صَوَّاماً قَوَّاماً غَيْرَ الأَنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللهِ عَلَى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِمْ وَمَنْ قَالَتْ لَهُ الأَنْبِيَاءُ؟ قَالَ الْعَالِمُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: لاَ أُوْجِبُ الْجَنَّةَ إِلاَّ لِمَنْ أَوْجَبَهُ النَّصُّ، وَكَذَلِكَ النَّارُ.


‘‘মানুষ আমাদের নিকট তিন পর্যায়ের: (১) নবীগণ জান্নাতী এবং নবীগণ যার বিষয়ে বলেছেন যে সে জান্নাতী সেও জান্নাতী। (২) দ্বিতীয় পর্যায় মুশরিকদের। আমরা তাদের বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করি যে, তারা জাহান্নামী। (৩) তৃতীয় পর্যায় মুমিনগণ। তাদের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত প্রদান থেকে বিরত থাকি, তাদেরকে আমরা জাহান্নামী বলেও সাক্ষ্য দিই না এবং জান্নাতী বলেও সাক্ষ্য দিই না। কিন্তু আমরা তাদের বিষয়ে আশা পোষণ করি ও আশঙ্কাও করি। .... আবূ মুকাতিল বলেন: ... নবীগণ এবং যাদের কথা নবীগণ বলেছেন তাঁরা ছাড়া অন্য কাউকে যদি আপনি দেখেন যে, সে সদাসর্বদা অত্যধিক তাহাজ্জুদ, সিয়াম ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগিতে রত তবে তার বিষয়ে কি আপনি জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করবেন? ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেন, না, যার বিষয়ে নস্স বা কুরআন বা হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে সে ব্যক্তি ভিন্ন আর কারো বিষয়ে আমি জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করব না। জাহান্নামের বিষয়ও অনুরূপ।’’[1]

[1] ইমাম আবূ হানীফা, আল-আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম, পৃ. ২৭-২৯।