আল-ফিকহুল আকবর আল-ফিকহুল আকবারের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

ইমাম আযম তাওহীদ প্রসঙ্গে বলেছেন: ‘‘বল, ‘তিনিই আল্লাহ, একক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নহেন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয় নি। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।’’

এভাবে তিনি সূরা ইখলাস উদ্ধৃত করেছেন। আল্লাহর তাওহীদের সংক্ষিপ্ত ও পরিপূর্ণ বিবরণ এ সূরাটি। এখানে আল্লাহর বিষয়ে মূলত ৪টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে:

প্রথমত: তিনি একক ও অদ্বিতীয়। আরবীতে এখানে ‘আহাদ’ (أحدٌ) বলা হয়েছে। এর অর্থ: এক, অতুলনীয় বা অদ্বিতীয়। আমরা দেখেছি যে, ইমাম আবু হানীফা বলেছেন যে, আল্লাহর এক ও অদ্বিতীয় হওয়ার অর্থ এ নয় যে, তাঁর মত অন্য কোনো সত্তা নেই বলে বিশ্বাস করা। বরং এর পাশাপাশি এ কথাও বিশ্বাস করতে হবে যে, তাঁর যাত, সিফাত, রুবুবিয়্যাত ও উলূহিয়্যাতের কোনো বিষয়ে তাঁর কোনো শরীক নেই।

দ্বিতীয়ত: তিনি অমুখাপেক্ষী এবং সকলেই তাঁরই মুখাপেক্ষী। এখানে আরবীতে ‘‘সামাদ’’ (صمد) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘সামাদ’ শব্দটি আরবীতে ব্যাপক অর্থ বোধক। এজন্য এক শব্দে এর অনুবাদ করা যায় না। আভিধানিকভাবে ‘‘সামাদা’’ ক্রিয়াটির অর্থ কারো দিকে মুতাওয়াজ্জাহ হওয়া, তাকে লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য করে যাওয়া, সুদৃঢ় বা অটল থাকা ইত্যাদি। আর ‘‘সামাদ’’ বিশেষ্যটির আভিধানিক অর্থ চূড়ান্ত নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব সম্পন্ন নেতা বা কর্তা সকলেই যার দিকে মুতাওয়াজ্জাহ হয়, যাকে উদ্দেশ্য করে, সকল বিপদে ও প্রয়োজনে যার সাহায্য চাওয়া হয়, সকল দায়িত্ব যার উপর ন্যস্ত, যিনি ছাড়া কারো কাছে যেতে হয় না, যিনি ছাড়া কেউ প্রয়োজন মেটাতে পারে না, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।[1]

তৃতীয়ত: তিনি কারো জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয় নি। তিনি অনাদি-অনন্ত ও চিরন্তন। বিভিন্ন সমাজের মুশরিকগণ অনেক মানুষ, ফিরিশতা বা জিনকে আল্লাহর সাথে বিশেষ সম্পর্ক বুঝাতে তাঁর পুত্র, কন্যা বা সন্তান বলে দাবি করত। শাহ ওয়ালিউল্লাহর বক্তব্য থেকে আমরা দেখেছি যে, তারা ‘‘সন্তান’’ বলতে জাগতিক বা জৈবিক ‘‘সন্তান’’ বুঝাতো না; বরং তাঁর সাথে বিশেষ সম্পর্ক যুক্ত বা তাঁর ‘‘প্রিয়পাত্র’’ বুঝাতো। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:


وَقَالَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى نَحْنُ أَبْنَاءُ اللَّهِ وَأَحِبَّاؤُهُ


ইহূদী ও খৃস্টানগণ বলে: আমরা আল্লাহর পুত্র ও তাঁর প্রিয়পাত্র।’’[2]

ইহূদীগণ উযাইর (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র, খৃস্টানগণ ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র, আরবের কাফিরগণ ফিরিশতাগণকে আল্লাহর কন্যা বলে দাবি করত। এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন জাতি ও সমাজের কাফিরদের মধ্যে এরূপ দাবি ও বিশ্বাসের প্রচলন ছিল। এ আয়াতে মহান আল্লাহ এ ধরনের সকল শিরকী ধারণা খন্ডন করেছেন।

চতুর্থত: তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। আমরা দেখেছি যে, কাউকে সামগ্রিকভাবে বা আংশিক ভাবে আল্লাহর কোনো ক্ষমতা, অধিকার, বিশেষণ, রুবূবিয়্যাত বা ইবাদতে আল্লাহর সমতুল্য বলে বিশ্বাস করাই শিরক। আর এ আয়াতে শিরকের মূলোৎপাটন করা হয়েছে।

[1] তাবারী, আত-তাফসীর ২৪/৬৮৯-৬৯৩; জাওহারী, আস-সিহাহ ১/৩৯৬; ফাইরোয-আবাদী, আল-কামূসুল মুহীত ১/৩৭৫; সামীন হালাবী, আদ-দুর্রুল মাসূন ১/৫৯৪৪।

[2] সূরা (৫) মায়িদা: ১৮ আয়াত।