শাযের জন্য এক হাদিস হওয়া জরুরি নয়, কখনো ভিন্ন দু’টি হাদিস একটির কারণে অপরটি শায হয়, যেমন: ‌

قال الإمام أبو داود -رحمه الله- حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: قَدِمَ عَبَّادُ بْنُ كَثِيرٍ الْمَدِينَةَ، فَمَالَ إِلَى مَجْلِسِ الْعَلَاءِ فَأَخَذَ بِيَدِهِ فَأَقَامَهُ، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّ هَذَا يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا انْتَصَفَ شَعْبَانُ، فَلَا تَصُومُوا»

“... ... আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন শাবানের অর্ধেক হয়, তোমরা সিয়াম রেখ না”।[1] আবু দাউদসহ অন্যান্য সুনান গ্রন্থকারগণ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। অনেকের নিকট হাদিসটি সহি, তাই তারা শাবানের শেষার্ধে সিয়াম রাখা মাকরুহ বলেন, তবে যার সিয়াম রাখার অভ্যাস আছে তার পক্ষে মাকরুহ নয়।

ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেছেন: “হাদিসটি শায, কারণ অন্যান্য সহি হাদিস তার পরিপন্থী, তাই সিয়াম রাখা মাকরুহ নয়”। তিনি বর্ণনা করেন:

حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنِ أَبِي سَلَمَةَ، عَنِ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَقَدَّمُوا شَهْرَ رَمَضَانَ بِصِيَامِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا رَجُلًا كَانَ يَصُومُ صَوْمًا فَلْيَصُمْهُ»

“তোমরা এক দিন অথবা দু’দিনের সিয়াম দ্বারা রমযানকে এগিয়ে এনো না, তবে যে পূর্ব থেকে সিয়াম রাখত, সে যেন তাতে সিয়াম রাখে”।[2]

এ হাদিস অধিক সহি তাই মাহফুয, যা প্রমাণ করে রমযানের দু’দিন পূর্বে, তথা শাবানের শেষার্ধে সিয়াম রাখা বৈধ। হাদিস দু’টি আলাদা, তবু আহলে ইলম অধিকতর সহি হাদিসের কারণে অপেক্ষাকৃত কম সহি হাদিসকে শায বলেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শাযের জন্য এক হাদিস হওয়া জরুরি নয়।

এ ছাড়া অন্যান্য সহি হাদিসও প্রমাণ করে শাবানের শেষার্ধে সিয়াম রাখা বৈধ, যেমন ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন:

«لَا يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُمْ رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَجُلٌ كَانَ يَصُومُ صَوْمَهُ فَلْيَصُمْ ذَلِكَ الْيَوْمَ»

“তোমাদের কেউ রমযানকে একদিন বা দু’দিনের সিয়াম দ্বারা এগিয়ে আনবে না, তবে যে নিজের সিয়াম পালন করত, সে যেন ঐ দিন সিয়াম রাখে”।[3]

এ হাদিস প্রমাণ করে সিয়ামে অভ্যস্ত ব্যক্তির জন্য শাবানের শেষার্ধে সিয়াম পালন করা বৈধ, যেমন কোনো ব্যক্তির অভ্যাস সোম ও বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করা, অথবা একদিন সিয়াম রাখা ও একদিন ইফতার করা, তার জন্য রমযানের এক-দু’ দিন পূর্বে সিয়াম রাখা দোষণীয় নয়, যা يوم الشك বা সন্দেহের দিন নামে পরিচিত। এ দিন ব্যতীত শাবানের শেষার্ধে কারো জন্য সিয়াম রাখা দোষণীয় নয়।

এখানে আমরা শায ও শাযের বিপরীত মাহফুয জানলাম। এ ছাড়া আরো প্রকার রয়েছে, লেখক যা উল্লেখ করেননি, যেমন সেকাহ রাবির বিরোধিতাকারী যদি দুর্বল হয়, তখন তার হাদিসকে মুনকার বলা হয়। মুনকার শাযের চেয়েও খারাপ, কারণ সে দুর্বল হয়েও সবলের বিরোধিতা করেছে। মুনকারের বিপরীত মারূফ। অতএব চার প্রকার হল: শায ও মাহফুয, মুনকার ও মারূফ।

একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর:

প্রশ্ন হতে পারে: ‘শায’ একটি সুপ্ত দোষ বা ইল্লত, যা একাধিক সনদ জমা করা ব্যতীত জানা সম্ভব নয়। অনুরূপ ইদতিরাব, কালব ও ইদরাজ সুপ্ত ইল্লত, যা একাধিক সনদ জমা করা ছাড়া জানা যায় না, তবু কেন মুহাদ্দিসগণ ‘সহি’র জন্য শায না হওয়া র্শত করেছেন, কিন্তু ইদতিরাব, কালব ও ইদরাজ না হওয়া শর্ত করেননি?

উত্তর: মুহাদ্দিসগণ জমহুর ফুকাহার বিপরীত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, কারণ তারা ‘শায’কে ইল্লত মানেন না, অথচ ইদতিরাব, ইদরাজ ও কালবকে ইল্লত মানেন। তারা সেকাহ রাবির অতিরিক্ত শব্দকে গ্রহণ করেন, যদিও একাধিক সেকাহ রাবির বর্ণিত হাদিস বিরোধী হয়, তবে উভয় বর্ণনা জমা করা অসম্ভব হলে তারাও অতিরিক্ত শব্দ ত্যাগ করেন। মুহাদ্দিসগণ মুত্তাসিল ও মুরসাল বিরোধ হলে অধিক সেকাহ রাবির বর্ণনাকে প্রাধান্য দেন, কিন্তু ফকিহগণ সমন্বয় করার চেষ্টা করেন।‘শায’ এর হুকুম: শায শাহেদ ও মুতাবে‘ হওয়ার উপযুক্ত নয়।

[1] আবু দাউদ: (২৩৩৭) এ হাদিস অভিন্ন অর্থ ও ভিন্নভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন: ইমাম তিরমিযি, নাসায়ি, ইব্‌ন মাজাহ, আহমদ, ইব্‌ন হিব্বান, বায়হাকি, আব্দুর রাজ্জাক, ইব্‌নে আবি শায়বাহ ও ইমাম তাহাবি রহ. প্রমুখগণ। সবার সনদে ক্রমান্বয়ে শেষের তিনজন রাবি হলেন: ‘আলা, আব্দুর রহমান ও সাহাবি আবু হুরায়রা রা.। অর্থাৎ আবু হুরায়রা রা. থেকে আব্দুর রহমান এবং তার থেকে তার ছেলে ‘আলা বর্ণনা করেছে হাদিসটি। ইমাম নাসায়ি রহ. বলেন: “আমাদের জানা মতে ‘আলা ইব্‌ন আব্দুর রহমান ব্যতীত কেউ এ হাদিস বর্ণনা করেনি”। সুনানুল কুবরা: (২৯২৩), ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন: “এ হাদিস অন্য কোনো সনদে আমরা জানি না”। তিরমিযি: (৭৩৮)

[2] আহমদ: (৯৮২৮),

[3] বুখারি: (১৯১৪), মুসলিম: (১০৮২)