মুসলিমের হাদিসে لَا يَرْقُونَ শব্দের বৃদ্ধির শায

قال الإمام مسلم –رحمه الله- حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا حُصَيْنُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ: " كُنْتُ عِنْدَ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، فَقَالَ: ... ... وَلَكِنْ حَدَّثَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: « ... ... هُمُ الَّذِينَ لَا يَرْقُونَ، وَلَا يَسْتَرْقُونَ، وَلَا يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ»

... ... তবে আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদেরকে বলেন, তিনি বলেছেন: “তারাই, যারা ঝাড়-ফুঁক করে না, ঝাড়-ফুঁক তলব করে না, কুলক্ষণ গ্রহণ করে না এবং তাদের রবের উপর তারা তাওয়াক্কুল করে”।[1]

قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ، حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: سَمِعْتُ حُصَيْنَ بْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: كُنْتُ قَاعِدًا عِنْدَ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، فَقَالَ: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ، هُمُ الَّذِينَ لَا يَسْتَرْقُونَ، وَلَا يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ»

... ... আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার উম্মত থেকে শত্তুর হাজার বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যারা ঝাড়-ফুঁক তলব করে না, কুলক্ষণ গ্রহণ করে না এবং তাদের রবের উপর তারা তাওয়াক্কুল করে”।[2]

আমাদের সামনে ইমাম মুসলিম ও বুখারির দু’টি সনদে একটি হাদিস বিদ্যমান। মুসলিমের সনদে لَا يَرْقُونَ রয়েছে, যা ইমাম বুখারির সনদে নেই। উভয় ইব্‌ন আব্বাস সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তাই হাদিস এক। ইব্‌ন আব্বাস (মৃ.৬৮হি.); এর ছাত্র সা‘ঈদ ইব্‌ন জুবায়ের (মৃ.৯৫হি.); তার ছাত্র হুসাইন ইব্‌নে আব্দুর রহমান (মৃ.১৩৬হি.); তার ছাত্র দু’জন: শু‘বা (মৃ.১৬০হি.) ও হুশাইম (মৃ.১৮৩হি.) থেকে বুখারি ও মুসলিমের সনদ ভাগ হয়েছে। শু‘বার ছাত্র রাওহু ইব্‌নু উবাদাহ (মৃ২০৫হি.), তার ছাত্র ইসহাক (মৃ২৫১হি.), তার ছাত্র ইমাম বুখারি (মৃ.২৫৬হি.)। আর হুশাইমের ছাত্র সা‘ঈদ ইব্‌ন মানসুর (মৃ.২২৭হি.); তার ছাত্র ইমাম মুসলিম (মৃ.২৬১হি.)।

হাদিসটি ইমাম বুখারি নিয়েছেন হুসাইনের ছাত্র শু‘বা থেকে, ইমাম মুসলিম নিয়েছেন হুসাইনের ছাত্র হুশাইম থেকে। হুশাইমের হাদিসে لَا يَرْقُونَ রয়েছে, শু‘বার হাদিসে যা নেই। যদিও উভয়ই সেকাহ[3], তবে হুশাইম অপেক্ষা শু‘বা অধিক সেকাহ, তাই শু‘বার হাদিস মাহফুয ও হুশাইমের বৃদ্ধি শায। দ্বিতীয়ত শু‘বার স্বপক্ষে শাহেদ ও মুতাবি‘ রয়েছে, যা হুশাইমের পক্ষে নেই।[4] অতএব হুশাইমের لَا يَرْقُونَ বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়।

শায়খুল ইসলাম ইব্‌নে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: لَا يَرْقُونَ বৃদ্ধি শায, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম ঝাড়ফুঁক করেছেন, অতএব মতনের এ বাক্য হাদিস হতে পারে না। ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে ইমাম বুখারি[5] বর্ণনা করেন:

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ الْمِنْهَالِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَوِّذُ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ، وَيَقُولُ: إِنَّ أَبَاكُمَا كَانَ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ»

“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনকে ঝাড়-ফুঁক করতেন এবং বলতেন: নিশ্চয় তোমাদের পিতা ইবরাহিম নিম্নের বাক্যগুলো দ্বারা ইসমাইল ও ইসহাককে ঝাঁড়ফুক করতেন:

«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ»

জ্ঞাতব্য: অপরকে ঝাড়-ফুঁক করা ও অপরের নিকট তলব করা এক নয়। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক ঝাঁড়-ফুককারী অপরকে উপকার করে, যা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়, কিন্তু ঝাড়-ফুঁক তলবকারী অপরের নিকট নিজের প্রয়োজন পেশ করে, যা বৈধ হলেও উঁচু পর্যায়ের তাওয়াক্কুল পরিপন্থী।এ হাদিসে দু’টি দোষ: একটি সেকাহ রাবির বিরোধিতা অপরটি ইল্লত। হুশাইম لَا يَرْقُونَ শব্দ বৃদ্ধি করে তার চেয়ে অধিক সেকাহ রাবির বিরোধিতা করেছেন তাই তার হাদিস শায; দ্বিতীয়ত এ শব্দ প্রমাণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীলের কর্ম উঁচু পর্যায়ের তাওয়াক্কুল পরিপন্থী ছিল তাই হাদিসটি মু‘আল্।

>
[1] মুসলিম: (২২১)

[2] বুখারি: (৬৪৭২), এ হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আবু সুলাইমান খাত্তাবি রহ. প্রমুখগণ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে এবং তার সিদ্ধান্ত ও পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হয়ে এসব চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করে সে এ হাদিসের উদ্দেশ্য। এটা পরিপক্ক ঈমানের অধিকারীদের মর্যাদা”। কাদি ইয়াদ রহ. বলেন: “হাদিসের স্পষ্ট অর্থ ও দাবি সেঁকা ও ঝাঁড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করা ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির হুকুম এক”। নবী সা. বৈধতা প্রমাণের জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ও তার অনুমতি প্রদান করেছেন। ফাতহুল বারি লি ইব্‌ন হাজার রহ.।

[3] ‘শু‘বা’ সম্পর্কে হাফেজ ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “সেকাহ, হাফেযে হাদিস ও ইবাদত গুজার, ইরাকে সর্বপ্রথম তিনি রাবিদের ভালো-মন্দ যাচাই আরম্ভ করেন এবং সুন্নত থেকে মিথ্যা দূরীভূত করেন”। ‘হুশাইম’ সম্পর্কে তিনি বলেন: “সেকাহ, হাদিসের সুদৃঢ় ইমাম, অধিক তাদলিস ও সূক্ষ্ম ইরসালে অভ্যস্ত। তিনি হাদিসের ইমাম, তার আদালত সম্পর্কে সবাই একমত, তবে তার তাদলিস প্রসিদ্ধ ছিল। সকল ইমাম তাকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন”। দেখুন: তাহযিবুত তাহযীব, লি ইব্‌ন হাজার রহ.।

[4] অধিকন্তু ইমাম বুখারি রহ. হুসাইন ইব্‌ন আব্দুর রহমানের দু’জন ছাত্র: হুশাইম এবং মুহাম্মদ ইব্‌ন ফুদাইল সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, তাতে لَا يَرْقُونَ শব্দের বৃদ্ধি নেই। বুখারি: (৬৫৪১); অনুরূপ ইমাম মুসলিম সাহাবি ‘ইমরান ইব্‌ন হুসাইন থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন তাতে لَا يَرْقُونَ শব্দের বৃদ্ধি নেই। অতএব শাহেদ ও মুতাবি‘ থাকার ফলে শু‘বার হাদিস আরো শক্তিশালী। দেখুন: মুসলিম: (২২০) ও (২২১)

[5] বুখারি: (৩৩৭১)