হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষার উপর স্বতন্ত্রগ্রন্থ রচনা

চতুর্থ হিজরির মাঝামাঝি সময়ে যখন হাদিসের কিতাব লেখা প্রায় শেষ, তখন আলেমগণ হাদিসের পরিভাষাগুলো স্বতন্ত্র কিতাবে জমা করা আরম্ভ করেন। তারা প্রথমে সনদসহ পরিভাষাগুলো জমা করেন, তার উপর টিকা সংযোজন করেন ও তাদের নীতি থেকে বেশ-কিছু নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করেন।

সর্বপ্রথম এ বিষয়ে কলম ধরেন কাযী আবু মুহাম্মদ হাসান ইব্‌ন আব্দুর রহমান ইব্‌ন খাল্লাদ রামাহুরমুযি (মৃ.৩৬০হি.), তিনি "الْمُحَدِّث الفاصل بين الراوي والواعي" নামে উসুলে হাদিসের উপর স্বতন্ত্র কিতাব লিখেন। এতে তিনি হাদিস বর্ণনা করা, শ্রবণ করা, শিক্ষা দেওয়া ও হাদিস সংক্রান্ত মুহাদ্দিসের জরুরি জ্ঞাতব্য বিষয়গুলো জমা করেন, কিন্তু পরিপূর্ণ কিতাবের ন্যায় উসুলে হাদিসের বিভিন্ন প্রকারগুলো তিনি উল্লেখ করেননি।

অতঃপর তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইব্‌ন আব্দুল্লাহ নিসাপুরি (মৃ.৪০৫হি.), যিনি হাকেম নামে প্রসিদ্ধ। তিনি "معرفة علوم الحديث" নামে একখানা কিতাব রচনা করেন। সর্বপ্রথম উসুলে হাদিসের উপর এটা স্বতন্ত্র রচনা। এতে তিনি উসুলে হাদিসের ৫২-টি পরিভাষা উল্লেখ করেন। প্রত্যেক পরিভাষার সংজ্ঞা দেন, যার ভাগ হয় তার ভাগ করেন এবং উদাহরণ দ্বারা স্পষ্ট করে।

অতঃপর উসুলে হাদিসের উপর গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেন আবু বকর আহমদ ইব্‌ন আলি ইব্‌ন সাবিত, যিনি খতিবে বাগদাদি (মৃ.৪৬৩হি.) নামে প্রসিদ্ধ। উসুলে হাদিসের উপর তিনি একাধিক কিতাব রচনা করেন, যেমন "الكفاية في علم الرواية" এতে তিনি হাদিস বর্ণনার পদ্ধতি, নীতিমালা ও আলেমদের মতামত জমা করেন। তার দ্বিতীয় কিতাব "الجامع لأخلاق الراوي وآداب السامع" এতে তিনি মুহাদ্দিস, হাদিস অন্বেষণকারী ও তাদের জ্ঞাতব্য বিষয়গুলো উল্লেখ করেন। তার তৃতীয় কিতাব "الرحلة في طلب الحديث" এতে তিনি হাদিসের জন্য আলেমদের বিভিন্ন দেশ সফর ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জমা করেন। তার চতুর্থ কিতাব "تقييد العلم" এতে তিনি হাদিস লেখা ও তার সাথে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো জমা করেন। তার পঞ্চম কিতাব "المزيد في متصل الأسانيد" এতে তিনি হাদিসের বিভিন্ন প্রকারগুলো উল্লেখ করেন। উসুলে হাদিসের সনদ কিংবা মতনের সাথে সম্পৃক্ত এমন কোনো ইলম নেই যার উপর তিনি স্বতন্ত্র কিতাব কিংবা পুস্তিকা রচনা করেননি। পরবর্তী আলেমদের নিকট তার কিতাবগুলো ব্যাপক সমাদৃত হয়। তার কিতাব থেকে সবাই উপকৃত হন, অনেকে বলেন: “ইনসাফের দৃষ্টিতে সবাই স্বীকার করবে যে, খতিবের পরবর্তী মুহাদ্দিসগণ তার কিতাবের উপর নির্ভরশীল”।

অতঃপর এ বিষয়ে স্বতন্ত্র কিতাব লিখেন কাযী ইয়াদ ইব্‌ন মুসা ইয়াহসুবি (মৃ.৫৪৪হি.), তার কিতাবের নাম "الإلماع إلى معرفة أصول الرواية وتقييد السماع" এতে তিনি হাদিস বর্ণনা করা ও শিক্ষা দেওয়ার নীতিমালা জমা করেন। এভাবে উসুলে হাদিসের উপর লিখিত গ্রন্থসমূহের সংখ্যা বাড়তে থাকে।