দ্বিতীয় হিজরির শেষার্ধ থেকে চতুর্থ হিজরির প্রথমার্ধ পর্যন্ত সময়কে ইলমে হাদিসের স্বর্ণযুগ বলা হয়। তৃতীয় শতাব্দীতে মুহাদ্দিসগণ হাদিসের কিতাব রচনায় মনোযোগী হন। এ সময় হাদিসের মূল কিতাবগুলো রচনা করা হয়, যেমন:

১. ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বলের মুসনাদ (মৃ.২৪১হি.), সহি বুখারি (মৃ.২৫৬হি.), সহি মুসলিম (মৃ.২৬১হি.), সুনানে আবু দাউদ সিজিসতানি (মৃ.২৭৫হি.), সুনানে তিরমিযি (মৃ.২৭৯হি.), সুনানে নাসায়ি (মৃ.৩০৩হি), সুনানে ইব্‌ন মাজাহ (মৃ.২৭৫হি.) সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাব।

২. অনেক মুহাদ্দিস علم الرجال ‘ইলমুর রিজাল’ বা রাবিদের জীবনীর উপর একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন, যেমন: ইমাম বুখারি ক. আত-তারিখুল কাবির, খ. আত-তারিখুল আওসাত, গ. আত-তারিখুস সাগির। ঘ. ‘কিতাবুদ দুয়াফা’; ইয়াহইয়া ইব্‌ন মায়িন (মৃ.২৩৪হি.) ‘আত-তারিখ’; মুহাম্মদ ইব্‌ন সা‘দ (মৃ.২৩০হি.) ‘আত-তাবকাতুল কুবরা’; নাসায়ি ‘কিতাবুদ দু‘আফা’; ইব্‌ন আবি হাতেম (মৃ.৩২৭হি.) ‘আল-জারহু ওয়াততা‘দিল’; ইব্‌ন হিব্বান (মৃ.৩৫৪হি.) ‘কিতাবুস সিকাত’ ইত্যাদি রচনা করেন। এসব কিতাবে তারা রাবিদের নাম, কে সেকাহ- কে দুর্বল, কে গ্রহণযোগ্য- কে পরিত্যক্ত ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করেন।

৩. কতক মুহাদ্দিস বিশেষ প্রকার হাদিস স্বতন্ত্র কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন, যেমন ইমাম বুখারি ও মুসলিম সহি হাদিস জমা করেন; ইমাম আবু দাউদ মুরসাল হাদিস জমা করেন; ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বল ও আবু দাউদ উভয়ে ‘নাসেখ ও মানসুখে’র উপর স্বতন্ত্র কিতাব লিখেন; ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বল ও আলি ইব্‌ন মাদিনি (মৃ.২৩৪হি.) ‘ইলাল’ (হাদীসের গোপন দোষ-ত্রুটি)-এর উপর কিতাব লিখেন; অনুরূপ ইমাম তিরমিযি ‘ইলালে’র উপর কিতাব লিখেন; ইমাম শাফে‘ঈ ও ইব্‌ন কুতাইবাহ (মৃ.২৭৬হি.) প্রমুখগণ জটিল অর্থ সম্পন্ন হাদিসগুলো স্বতন্ত্র কিতাবে জমা করেন। এভাবে হাদিসের বিশেষ প্রকার স্বতন্ত্র কিতাবে জমা করা হয়।

মুহাদ্দিসগণ এসব কিতাবে ‘উসুলে হাদিসে’র পরিভাষা ব্যবহার করেছেন, কিন্তু কেউ তার সংজ্ঞা দেননি। যেমন বুখারি ও মুসলিম ‘সহি’ হাদিসের সংজ্ঞা দেননি, অথবা সহির শর্ত বলেননি। ইমাম আহমদ ‘নাসেখ ও মানসুখে’র উপর কিতাব লিখেছেন, কিন্তু তার সংজ্ঞা দেননি। অনুরূপ ই‘লাল ও মারাসিল হাদিসের গ্রন্থকারগণ ‘ইল্লত’ ও ‘মুরসালে’র সংজ্ঞা দেননি। তাদের কিতাবসমূহ ছিল ‘উসুলে হাদিস’ বা হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষার বাস্তব অনুশীলন, সবাই তার অর্থ জানত, তাই কেউ পরিভাষার সংজ্ঞা দেননি।

সর্বপ্রথম হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষা সংক্রান্ত সংজ্ঞা দেন ইমাম শাফে‘ঈ রাহিমাহুল্লাহ্। তিনি উসুলে ফিকহের উপর লিখিত ‘আর-রিসালাহ’ গ্রন্থে ‘উসুলে হাদিসে’র কতক পরিভাষার সংজ্ঞা দেন, যেমন দলিল যোগ্য হাদিসের শর্ত, খবরে ওয়াহেদের প্রামাণিকতা, রাবির গ্রহণযোগ্যতা ও হাদিসের ভাবার্থ বর্ণনার শর্ত, মুদাল্লিস রাবির হাদিসের হুকুম এবং মুরসাল হাদিসের হুকুম ইত্যাদি বিষয়গুলো তিনি উসুলে ফিকহের অধীন বর্ণনা করেন। অনুরূপ ইমাম মুসলিম সহি মুসলিমের ভূমিকায় এবং ইমাম তিরমিযি ‘ইলালুস সাগির’ গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু তখন পর্যন্ত কেউ উসুলে হাদিসের পরিভাষা সংক্রান্ত স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেননি।