সাহাবিরা একে অপরকে বিশ্বাস করতেন, তাদের সময় মিথ্যা ছিল না। উপস্থিত সাহাবি থেকে অনুপস্থিত সাহাবি পূর্ণ আস্থার সাথে দীন গ্রহণ করতেন। বারা ইব্‌ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

«لَيْسَ كُلُّنَا كَانَ يَسْمَعُ حَدِيثَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ لَنَا ضَيْعَةٌ (يعني عقاراً وأراضي) وَأَشْغَالٌ، وَلَكِنِ النَّاسُ لَمْ يَكُونُوا يَكْذِبُونَ يَوْمَئِذٍ، فَيُحَدِّثُ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ»

“আমাদের প্রত্যেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিস শ্রবণ করত না, আমাদের জায়গা-জমি ও ব্যস্ততা ছিল। তবে তখন মানুষেরা মিথ্যা বলত না, উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট বর্ণনা করত”।[1] আনাস ইব্‌ন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

«وَاللَّهِ مَا كُلُّ مَا نُحَدِّثُكُمْ بِهِ سَمِعْنَاهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ، وَلَكِنْ كَانَ يُحَدِّثُ بَعْضُنَا بَعْضًا، وَلا يَتَّهِمُ بَعْضُنَا بَعْضًا»

“আল্লাহর শপথ, তোমাদেরকে আমরা যা বলি, তা সব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করিনি, তবে আমাদের কতক কতককে বলত, কেউ কাউকে অপবাদ দিত না”।[2]

সাহাবিগণ যেরূপ পরস্পর মিথ্যা বলেনি, অনুরূপ তাবে‘ঈদের সাথেও তারা মিথ্যা বলেনি। ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ নিজ সনদে আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ইয়াযিদ খাতমি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

«حَدَّثَنَا الْبَرَاءُ بْنُ عَازِبٍ وَهُوَ غَيْرُ كَذُوبٍ، قَالَ: كُنَّا نُصَلِّي خَلْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا قَالَ: " سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، لَمْ يَحْنِ أَحَدٌ مِنَّا ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَبْهَتَهُ عَلَى الْأَرْضِ»

আমাদেরকে বারা ইব্‌ন আযেব বলেছেন, আর তিনি মিথ্যাবাদী নয়, তিনি বলেছেন: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করতাম, যখন তিনি বলতেন: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ আমাদের কেউ স্বীয় পিঠ নিচু করত না, যতক্ষণ না তিনি নিজ কপাল মাটিতে রাখতেন”।[3]

এখানে তাবে‘ঈ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ইয়াযিদ খাতমি সাহাবি বারা ইব্‌ন আযেব সম্পর্কে বলেছেন: وَهُوَ غَيْرُ كَذُوبٍ বা ‘তিনি মিথ্যাবাদী নয়’। তার এ কথার অর্থ সন্দেহ দূর করা নয়, বরং হাদিস শক্তিশালী করা ও সাহাবির সত্যায়ন করা উদ্দেশ্য।

ইমাম খাত্তাবি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: এ কথার অর্থ রাবিকে অপবাদ দেওয়া নয়, বরং বক্তার কথায় পূর্ণ আস্থা প্রকাশের জন্য আরবরা এরূপ বলে, যেমন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন: سمعت خليلي الصادق المصدوق ‘আমি আমার সত্যবাদী ও সত্যায়িত বন্ধুকে বলতে শুনেছি’। ইব্‌ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন: حدثني الصادق المصدوق ‘সত্যবাদী ও সত্যায়িত সত্ত্বা আমাকে বলেছেন’। এসব বাক্য দ্বারা সাহাবিগণ যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আস্থা পোষণ করেছেন, একইভাবে তাবী‘ঈগণ সাহাবিদের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করেছেন, সন্দেহ দূর করার জন্য তা বলেননি; কারণ তারা সন্দেহ করতেন না।নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মুসলিম ও অমুসলিম কারো মাঝে মিথ্যার প্রচলন ছিল না, তবুও মিথ্যা হাদিস রচনাকারীকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। বক্তার সংবাদ গ্রহণ করার পূর্বে আল্লাহ শ্রোতাদেরকে যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমরা নিশ্চিত সাহাবিদের যুগে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীতে কোনো প্রকার বৃদ্ধি ঘটেনি।

[1] রামাহুরমুযী রচিত: ‘আল-মুহাদ্দিসুল ফাসিল’: (পৃ.২৩৫), (১৩৩), ইমাম খতিব রহ. রচিত আল-জামে‘: (১/১৭৪), (১০২)

[2] হাকেম: (৩/৫৭৫), আত-তাবকাত লি ইব্‌ন সাদ: (৭/২১), আল-জামে: (১/১৭৪)

[3] বুখারি: (২/১৮১), হাদিস নং: (৬৯০)