প্রশ্নঃ কেউ কেউ মনে করেন, সংগঠন ছাড়া সালাফী দা‘ওয়াত প্রসার লাভ সম্ভব নয়। আবার কেউ কেউ এ মতের বিরোধিতা করেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানিয়ে বাধিত করবেন?

উত্তরঃ সালাফে ছালেহীনের অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে সার্বিক কল্যাণ। পক্ষান্তরে পরবর্তীদের সৃষ্ট বিদ‘আত অনুসরণের মধ্যে রয়েছে সার্বিক অকল্যাণ। সালাফে ছালেহীন দ্বীন প্রচার করেছেন এবং সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যকে সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ব জয় করেছেন। তারা নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জিহাদ করেছেন এবং বিজয় লাভ করেছেন; কোনো সংগঠনের মাধ্যমে নয়। পরবর্তীতে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী আলেমগণ মসজিদে মসজিদে দারস প্রদানের মাধ্যমে শর‘ঈ জ্ঞানের পতাকা উত্তোলন করেছেন। এভাবে আলেম-উলামার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অনেক ছাত্র তৈরি হয়েছে, যারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ নির্দেশিত একক পথের উপর পরিচালিত হয়েছেন। ফলে তাঁদের প্রচেষ্টার ফলাফল এসব সংগঠনের চেয়ে অনেক গুণ ভাল প্রমাণিত হয়েছে; যেখানে আলেম-উলামা তৈরিতো দূরের কথা এসব সংগঠন একজন মানসম্পন্ন ছাত্রও তৈরি করতে পারেনি। আমরা এখানে শায়খ মুক্ববিলকে দৃষ্টান্ত হিসাবে উপস্থাপন করতে পারি, যিনি এসমস্ত সংগঠন ও কর্মপদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে তিনি ছাত্রদেরকে শর‘ঈ জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে তিনি ছাত্রদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছেন এবং এক ঝাঁক আলেম তৈরী করতে পেরেছেন, যারা নিজ নিজ দেশে ফিরে দা‘ওয়াতী কাজ করেছেন এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপরে একটি সুন্দর প্রজন্ম তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন।

পক্ষান্তরে সারা দুনিয়ায় ছড়ানো-ছিটানো প্রচলিত এসব সংগঠন আমাদেরকে কি উপহার দিয়েছে? কয়জন আলেম তৈরি করতে পেরেছে? কিছুই করতে পারেনি। অথচ এই দুর্বল ও নিঃস্ব মানুষটি ইখলাছ এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা দ্বারা এমন কিছু করতে সক্ষম হয়েছেন, যার ১০০ ভাগের এক ভাগও তারা করতে পারেনি। তারা পেরেছে শুধু দলাদলি ও বিভক্তি সৃষ্টি করতে। নিজ সংগঠনের কর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন এবং অন্যদের সাথে শত্রুতা পোষণের মাধ্যমে কিছু কিছু দেশের সালাফীদেরকে টুকরো টুকরো করে ভাগ করতে পেরেছে। ইসলামকে বিপদগ্রস্ত করেছে, সালাফী পরিচয় দিয়ে সালাফী মূলনীতির বারোটা বাজিয়েছে এবং সালাফীদেরকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, চাঁদা উঠিয়ে মুসলিমদের পকেট খালি করে তারা সূদান, সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া , পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের সালাফীদের উপর আক্রমণ করছে এবং বিভিন্ন উপায়ে সালাফী মূলনীতিকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। মূলতঃ তারা শুধু ভালোভাবে আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু সালাফে ছালেহীনের আদর্শের উপর কাউকে গড়ে তুলতে পারে না। এক্ষেত্রে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সুতরাং আমি আলেমদের উদ্দেশ্যে বলব, যাকে আল্লাহ দ্বীনের জ্ঞান দান করেছেন, সে কোনো মসজিদে সৎ ও দ্বীনি জ্ঞানার্জনে আগ্রহী ছাত্রদেরকে শিক্ষাদান করুন। আমি মনে করি, আপনারা যদি দশজন আলেম তৈরি করতে পারেন, তাহলে তা হাযার হাযার সংগঠন এবং তাদের তৈরি হাযার হাযার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের থেকে বহুগুণে ভাল।([1])

([1]) ‘সালাফিইয়াতুনা আক্বওয়া মিন সালাফিইয়াতিল আলবানী সংশয়ের জবাব’ ক্যাসেট থেকে সংগৃহীত, আছালাহ রেকর্ডিং সেন্টার, জেদ্দা।
---------
বিশিষ্ট আলেম ও মুহাদ্দিছ রবী ইবনে হাদী আল-মাদখালী ১৩৫১ হিজরীতে সঊদী আরবের ছামেতা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ শহরে এবং মদীনা মুনাওয়ারায় পড়াশুনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণের মধ্যে ইবনে বায, আলবানী, আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীতী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে ১. মানহাজুল আম্বিয়া ফিদ-দা‘ওয়াহ ইলাল্লাহ, ২. মাকানাতু আহলিল হাদীছ, ৩. মাতা‘ইনু সাইয়্যেদ কুতুব ফী আছহাবি রাসূলিল্লাহ a ৪. জামা‘আহ ওয়াহেদাহ লা জামা‘আ-ত ওয়া ছিরাত ওয়াহেদ লা আশারা-ত প্রসিদ্ধ।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে