কিতাবুত তাওহীদ ১ হতে ৬৭ তম অধ্যায় মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব ১ টি

১। আল্লাহ তা’আলার বাণী,

حَتَّى إِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ قَالُوا مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالُوا الْحَقَّ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ ﴿سبأ:23﴾

‘‘এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন লোকদের অন্তর থেকে ভয়-ভীতি দূর হয়ে যাবে তখন তারা সুপারিশকারীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, তোমাদের রব কি জবাব দিয়েছেন? তারা বলবে, সঠিক জবাবই পাওয়া গিয়েছে আর তিনিই মহান ও শ্রেষ্ঠ। (সাবাঃ ২৩)

২। সহীহ্ বুখারীতে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,

إذا قضى الله الأمر فى السماء ضربت الملائكة بأجنحتها خضعانا لقوله، كأنه سلسلة على صقوان، ينفذ هم ذلك (حتى إذا فزع عن قلوبهم قالوا ماذا قال ربكم. قالوا: الحق وهوالعلي الكبير فيسمعها مسترق السمع، ومسترق السمع هكذا بعضه قوق بعض وصفه سفيان بن عيينه بكفه، فحرفها وبدد بين أصابعه، فيسمع الكلمة فيلقيا إلى من تحته، ثم يلقيها الآخر إلى من تحته، حتى يلقيها على لسان الساحر أو الكاهن، فربما أدركه الشهاب قبل أن يلقيها. وربما ألقاها قبل أن يدركه. فيكذب معها مائة كذبة. فيقال أليس قد قال لنا يوم كذا وكذا كذا وكذا؟ فيصدق بتلك الكلمة التى سمعت من السماء.

‘‘যখন আল্লাহ তাআলা আকাশে কোন বিষয়ের ফয়সালা করেন, তখন তাঁর কথার সমর্থনে বিনয়াবনত হয়ে ফিরিস্তারা তাদের ডানাগুলো নাড়াতে থাকে। ডানা নাড়ানোর আওয়াজ যেন ঠিক পাথরের উপর শিকলের আওয়াজ। তাদের অবস্থা এভাবেই চলতে থাকে। যখন তাদের অন্তর থেকে এক সময় ভয়-ভীতি দূর হয়ে যায়, তখন তারা বলে, তোমাদের রব তোমাদেরকে কি বলেছেন? তারা জবাবে বলে, আল্লাহ হক কথাই বলেছেন। বস্ত্ততঃ তিনিই হচ্ছেন মহান ও শ্রেষ্ঠ। এমতাবস্থায় চুরি করে কথা শ্রবণকারীরা উক্ত কথা শুনে ফেলে। আর এসব কথা চোরেরা এ ভাবে পর পর অবস্থান করতে থাকে। এ হাদীসের বর্ণনাকারী সুফইয়ান বিন উয়াইনা চুরি করে কথা শ্রবণকারী [খাত চোর] দের অবস্থা বর্ণ করতে গিয়ে হাতের তালু দ্বারা এর ধরণ বিশ্লেষণ করেছেন এবং হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে তাদের অবস্থা বুঝিয়েছেন। অতঃপর চুপিসারে শ্রবণকারী কথাগুলো শুনে তার নিজের ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। শেষ পর্যন্ত এ কথা একজন যাদুকর কিংবা গণকের ভাষায় দুনিয়াতে প্রকাশ পায়। কোন কোন সময় গণক বা যাদুকরের কাছে উক্ত কথা পৌঁছানোর পূর্বে শ্রবণকারীর উপর আগুনের তীর নিক্ষিপ্ত হয়। আবার কোন কোন সময় আগুণের তীর নিক্ষিপ্ত হওয়ার পূর্বেই সে কথা দুনিয়াতে পৌঁছে যায়। ঐ সত্য কথাটির সাথে শত শত মিথ্যা কথা যোগ করে মিথ্যার বেশাতি করা হয়। অতঃপর শত মিথ্যার সাথে মিশ্রিত সত্য কথাটি যখন বাস্তবে রূপ লাভ করে তখন বলা হয়, অমুক-অমুক দিনে এমন এমন কথা কি

তোমাদেরকে বলা হয়নি? এমতাবস্থায় আকাশে শ্রুত কথাটিকেই সত্যায়িত করা হয়।

৩। নাওয়াস বিন সামআন রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,

إذا أراد الله تعالى أن يوحى بالأمر، وتكلم بوحى أخذت السماوات منه رجفة، او قال: رعدة شديدة خوفا من الله عزوجل، فإذا سمع ذلك أهل السماوات صعقوا وخروا لله سجدا، فيكون أول من يرفع رأسه جبريل، فيكلمه الله من وحيه بما أراد ثم يمر جبريل على الملائكة، كلما مر بسماء سأله ملائكتها: ماذا قال ربنا يا جبريل؟ فيقول جبريل: قال الحق، وهو العلي الكبير، فيقولون كلهم مثل ما قال جبريل، فينتهي جبريل بالوحي إلى حيث أمره الله عز وجل.

‘‘আল্লাহ তাআলা যখন কোন বিষয়ে অহী করতে চান এবং অহীর মাধ্যমে কথা বলেন তখন আল্লাহ রাববুল ইজ্জতের ভয়ে সমস্ত আকাশ মন্ডলী কেঁপে উঠে অথবা বিকট আওয়াজ করে। আকাশবাসী ফিরিস্তাগণ এ নিকট আওয়াজ শুনে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে সর্ব প্রথম যিনি মাথা উঠান, তিনি হচ্ছেন জিবরাঈল তারপর আল্লাহ তাআলা যা ইচ্ছা করেন অহীর মাধ্যমে জিবরাঈল এর সাথে কথা বলেন। জিবরাঈল এরপর ফিরিস্তাদের পাশ দিয়ে যেতে থাকেন। যতবারই আকাশ অতিক্রম করতে থাকেন ততবারই উক্ত আকাশের

ফিরিস্তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করে, ‘হে জিবরাঈল, আমাদের রব কি বলেছেন? জিবরাঈল উত্তরে বলেন, ‘আল্লাহ হক কথাই বলেছেন, তিনিই মহান ও শ্রেষ্ঠ’। একথা শুনে তারা সবাই জিবরাঈল যা বলেছেন তাই বলে। তারপর আল্লাহ তাআলা জিবরাঈলকে যেখানে অহী নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন সে দিকে চলে যান।’’

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১। সুরা সাবার ২৩ নং আয়াতের তাফসীর।

২। এ আয়াতে রয়েছে শিরক বাতিলের প্রমাণ। বিশেষ করে সালেহীনের সাথে যে শিরককে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এটিই সে আয়াত, যাকে অন্তর থেকে শিরক বৃক্ষের ‘শিকড় কর্তনকারী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

৩। قال الحق وهو العلي الكبير এ আয়াতের তাফসীর।

৪। হক সম্পর্কে ফিরিস্তাদের জিজ্ঞাসার কারণ।

৫। ‘এমন এমন কথা বলেছেন’ এ কথার মাধ্যমে জিবরাঈল কর্তৃক জবাব প্রদান।

৬। জিসদারত অবস্থা থেকে সর্ব প্রথম জিবরাইল কর্তৃক মাথা উঠানোর উল্লেখ।

৭। সমস্ত আকাশবাসীর উদ্দেশ্যে জিবরাইল কথা বলবেন। কারণ তাঁর কাছেই তারা কথা জিজ্ঞাসা করে।

৮। বেহুশ হয়ে পড়ার বিষয়টি আকাশবাসী সকলের জন্যই প্রযোজ্য।

৯। আল্লাহর কালামের প্রভাবে সমস্ত আকাশ প্রকম্পিত হওয়া।

১০। জিবরাঈল আল্লাহর নির্দেশিত পথে অহি সর্ব শেষ গন্তব্যে পৌঁছান।