ইসলামে সিয়াম বা রোযার জন্য কাফ্ফারার বিধান রয়েছে। কোনো মুসলিম অপারগতার কারণে সিয়াম পালন করতে না পারলে এবং কাযার ক্ষমতাও না থাকলে তিনি তার প্রতিটি ফরয সিয়ামের পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবেন। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে প্রতিটি সিয়ামের পরিবর্তে একটি ফিত্রার পরিমাণ খাদ্য প্রদানের বিধান দিয়েছেন ফকীহগণ।

কিন্তু সালাতের জন্য এরূপ কোনো কাফ্ফারার বিধান হাদীসে নেই। কারণ সিয়ামের ক্ষেত্রে যে অপারগতার সম্ভাবনা রয়েছে, সালাতের ক্ষেত্রে তা নেই। যতক্ষণ চেতনা আছে, ততক্ষণ মুমিন ইশারা-ইঙ্গিতে যেভাবে পারবেন সেভাবেই তার সাধ্যানুসারে সালাত আদায় করবেন। কাজেই অপারগতার কোনো ভয় নেই। আর দীর্ঘস্থায়ীভাবে চেতনা রহিত হলে সালাতও রহিত হবে।

তবুও পরবর্তী যুগের কোনো কোনো ফকীহ সাবধানতামূলকভাবে সালাতের জন্যও কাফফারার বিধান দিয়েছেন। নিয়মিত সালাত আদায়কারী কোনো মুমিন যদি মৃত্যুর আগে অসুস্থতার কারণে কিছু সালাত আদায় করতে না পারেন, তবে মৃত্যুর পরে তার জন্য সিয়ামের মত প্রত্যেক সালাতের বদলে একটি করে ‘ফিতরা’ প্রদানের বিধান দিয়েছেন।

কেউ কেউ এ বিধানকে আবার আজীবন সালাত পরিত্যাগকারী ও সালাতকে অবজ্ঞা ও উপহাসকারীর জন্যও প্রয়োগ করেছেন। এরপর খাদ্যের বদলে কুরআন প্রদানের এক উদ্ভট বিধান দিয়েছেন। প্রচলিত একটি পুস্তকে এ বিষয়ে লিখা হয়েছে: ‘‘এস্কাত করিবার নিয়ম এই যে, প্রথমত মুর্দার বয়স হিসাব করিবে। তম্মধ্য হইতে পুরুষের বার বছর ও স্ত্রী লোকের ৯ বছর (নাবালেগী) বয়স বাদ দিয়া বাকী বয়সের প্রত্যেক বৎসর ৮০ তোলা সেরের ওজনের ১০ মন ও ১০ সের ময়দার মূল্য ধরিয়া । ঐ মূল্যের পরিবর্তে নিজে এক জেলদ কোরআন শরীফ সকলের সম্মুখে কোন গরীব মিছকীনের নিকট হাদিয়া করিয়া দিবে। এবং সকলের মোকাবেলা বলিবে যে, অমুকের উপরোক্ত হুকুকের জন্য খোদায়ী পাওনা এত হাজার, এত শত, এত মণ ময়দার পরিবর্তে এই কালামুল্লাহ তোমার নিকট হাদীয়া করিলাম। ঐ গরীব বা মিছকীন দুইজন সাক্ষীর মোকাবিলা উহা কবুল করিলে ঐ কালামুল্লাহ তাহারই হইয়া গেল এবং ময়দা আদায় করা তাহার উপর ওয়াজিব হইয়া গেল।’’[1]

এ উদ্ভট নিয়মটি শুধু বানোয়াটই নয়, আল্লাহর দীনের সাথে চরম উপহাস! এর চেয়ে বড় উপহাস আর কি হতে পারে!! আজীবন সালাত অবমাননা করে, সালাতকে নিয়ে অবজ্ঞা উপহাস করে, মরার পরে এক জিলদ ‘কুরআন’ ফকীরকে দিয়েই মাফ!!!

[1] মাও. গোলাম রহমান, মকছুদোল মো’মেনীন, পৃ. ১৮১।