সালাত মুমিনের জীবনের এমন একটি ফরয ইবাদত যার কোনো বিকল্প নেই বা কাফ্ফারা নেই। যতক্ষণ হুশ বা চেতনা থাকবে সালাত আদায় করতেই হবে। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, দৌঁড়িয়ে, হেঁটে, ইশারায় বা যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করতে হবে। চেতনা রহিত হলে সালাত মাফ হয়ে যাবে।

কোনো বিশেষ কারণে একান্ত বাধ্য হয়ে দুই এক ওয়াক্ত সালাত ছুটে গেলে কাযা করতে হবে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক ওয়াক্তের সালাতের কাযা করার কোনোরূপ বিধান হাদীস শরীফে দেয়া হয় নি। কারণ, কোনো মুসলিম সালাত পরিত্যাগ করতে পারে, এরূপ চিন্তুা রাসূলুল্লাহ () ও সাহাবীগণের যুগে ছিল না। সাহাবীগণ বলতেন, একজন মুসলিম অনেক পাপ করতে পারে, কিন্তু মুসলিম কখনো সালাত পরিত্যাগ করতে পারে না।

পরবর্তী যুগের মুসলিম ফকীহগণ এ বিষয়ে মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত সালাত ত্যাগ করলে সে ব্যক্তি কাফির বা অমুসলিমে পরিণত হবে। কেউ বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি ‘সালাতের’ গুরুত্ব পুরোপুরি স্বীকার করেন, কিন্তু অলসতা হেতু সালাত ত্যাগ করেছেন, তিনি ‘কাফিরের মত’ কঠিন পাপী বলে গণ্য হবেন, কিন্তু ‘কাফির’ বা অমুসলিম বলে গণ্য হবেন না। আর যদি কেউ মনে করেন যে, ৫ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত আদায় না করেও তিনি নামাযী মুসলমানদের মতই মুসলমান, তাহলে সে ব্যক্তি সালাতের গুরুত্ব অস্বীকার করার কারণে প্রকৃত কাফির বলে গণ্য হবেন।

সর্বাবস্থায় সকলেই একমত যে, ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ সময়ের সালাত পরিত্যাগ করলে পরে সে সালাতের ‘কাযা’ করার বিষয়ে হাদীসে কোনোরূপ বিধান দেয়া হয় নি। তবে জালিয়াতগণ এ বিষয়ে কিছু জাল হাদীস তৈরি করেছে। এছাড়া সমাজে কিছু প্রচলিত ভিত্তিহীন কথাবার্তাও এ বিষয়ে প্রচলিত আছে। দু’টি ক্ষেত্রে তা ঘটেছে। প্রথমত, উমরী কাযা ও দ্বিতীয়ত, কাফ্ফারা বা এস্কাত। এ বিষয়ে জালিয়াতদের বানানো একটি হাদীস:

قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ تَرَكْتُ الصَّلاَةَ، قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: فَاقْضِ مَا تَرَكْتَ. فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ، كَيْفَ أَقْضِيْ؟ فَقَالَ: صَلِّ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ صَلاَةً مِثْلَهَا، قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَبْلُ أَمْ بَعْدُ؟ قَالَ: لاَ بَلْ قَبْلُ

‘‘এক ব্যক্তি বলে, হে আল্লাহর রাসূল, আমি সালাত পরিত্যাগ করেছি। তিনি বলেন, তুমি যা পরিত্যাগ করেছ তা ‘কাযা’ কর। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কিভাবে তা ‘কাযা’ করব? তিনি বলেন, প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতের সাথে অনুরূপ সালাত আদায় কর। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আগে, না পরে? তিনি বলেন, না, বরং আগে।’’

মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এ হাদীসটি জাল, ভিত্তিহীন ও বাতিল।[1] যদি কোনো মুসলিম দীর্ঘদিন সালাতে অবহেলার পরে অনুতপ্ত হয়ে নিয়মিত সালাত শুরু করেন, তখন তার প্রধান দায়িত্ব হবে বিগত দিনগুলোর পরিত্যক্ত সালাতের জন্য বেশি বেশি করে কাঁদাকটি ও তাওবা করা। এর পাশাপাশি, অনেক ফকীহ বলেছেন যে, ঐ ব্যক্তি পরিত্যক্ত সালাতগুলো নির্ধারণ করে তা ‘কাযা’ করবেন। এভাবে ‘উমরী কাযা’ করার কোনো নির্ধারিত বিধান কুরআন বা হাদীসে নেই। এ হলো সাবধানতামূলক কর্ম। আশা করা যায় যে, তাওবা ও কাযার মাধ্যমে আল্লাহ তার অপরাধ ক্ষমা করবেন।

[1] জূযকানী, আল-আবাতীল ২/৫০; ইবনুল জাওযী, আল-মাওদূ‘আত ২/২৬; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/২৪; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/৮০; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৩৫।