তাবুক যুদ্ধের ঘটনা থেকে যে সমস্ত বিধি-বিধান জানা যায়
  • হারাম মাসে যুদ্ধ করা জায়েয আছে। বিশেষ করে যদি রজব মাসে তাবুকের দিকে বের হওয়ার ঘটনা সহীহ হয়ে থাকে। এখানে আরেকটি কথা হচ্ছে তাবুকের অভিযান ছিল খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে। তারা অন্যান্য আরব গোত্রের ন্যায় হারাম মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতনা।
  • মুসলমানদের ইমামের কর্তব্য হল তিনি সকল মুসলিমকে ঐ বিষয়গুলো জানিয়ে দিবেন, যা গোপন রাখলে তাদের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে এবং ঐ সমস্ত বিষয়গুলো তাদের থেকে গোপন রাখবেন, যেগুলো গোপন রাখার মধ্যে তাদের কল্যাণ রয়েছে।
  • মুসলিমদের রাষ্ট্রপ্রধান যদি জিহাদে যাওয়ার ডাক দেন, তাহলে সকলের জন্যই জিহাদে বের হওয়া আবশ্যক। ইমামের অনুমতি ব্যতীত কারও জন্য পিছনে থাকা বৈধ নয়। সৈনিকদের বের হওয়ার ব্যাপারে এটি জরুরী নয় যে, রাষ্ট্র নায়ক প্রত্যেকের নাম আলাদাভাবে ঘোষণা করবেন। যেই স্থানে জিহাদ করা ফরযে আইন, তার মধ্যে এটিও একটি। অর্থাৎ (১) নেতা যখন জিহাদের ডাক দিবে, (২) শত্রুরা যখন মুসলিমদের দেশে আক্রমণ করবে, (৩) যখন মুজাহিদগণ জিহাদের জন্য শত্রু পক্ষের মুখোমুখি কাতারবন্দী হয়ে যাবে, তখন সেখান থেকে সরে যাওয়া নিষিদ্ধ।
  • জান দ্বারা যেমন আল্লাহর পথে জিহাদ করা আবশ্যক তেমনি মাল দ্বারাও জিহাদ করা আবশ্যক। এটিই সঠিক কথা। এতে কোন সন্দেহ নেই। শুধু একটি স্থান ব্যতীত সকল স্থানে নফসের দ্বারা জিহাদ করার পূর্বে মাল দ্বারা জিহাদ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
  • এই যুদ্ধে উছমান বিন আফ্ফান (রাঃ) প্রচুর পরিমাণ সম্পদ খরচ করেছিলেন এবং সকল লোকের চেয়ে তাঁর অবদানই অধিক ছিল।
  • যারা সম্পদ না থাকার কারণে জিহাদে যেতে অক্ষম, তাদের ওযর ততক্ষণ পর্যন্ত গৃহীত হবেনা, যতক্ষণ না তারা সম্পদ সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে। তাবুক যুদ্ধের সময় অপারগরা যখন রসূল (ﷺ) এর কাছে সওয়ারী চাইলেন এবং তা না পেয়ে যুদ্ধে শরীক হতে না পারার দুঃখে ক্রন্দরত অবস্থায় ফেরত গেলেন, তখনই আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে জিহাদে যাওয়া থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
  • শাসক যখন জিহাদের সফরে বের হবেন, তখন অনুসারীদের কাউকে নায়েব নির্ধারণ করলে সেই নায়েবকে মুজাহিদদের মধ্যে গণ্য করা হবে। কেননা সেও তার কাজের মাধ্যমে মুজাহিদদেরকে সহযোগিতা করে থাকে।
  • ছামুদ জাতির অঞ্চলের কূপের পানি পান করা জায়েয নেই। তা দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা বা রান্না কিংবা আটা গুলাও জায়েয নেই। তবে উটনী যেই কূপ থেকে পানি পান করত, তা ব্যতীত অন্যান্য কূপের পানি চতুষ্পদ জন্তুকে পান করানো যাবেনা। রসূল (ﷺ)-এর যুগ পর্যন্ত এই কূপটি পরিচিত ছিল। শত শত বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও বর্তমান কাল পর্যন্ত কূপটি রয়ে গেছে। তাবুকের পথে কাফেলার সওয়ারীগুলো এই কূপ ব্যতীত অন্য কোন কূপের কাছে অবতরণ করেনা। কূপটি গোলাকার, এর প্রাচীর খুব মজবুত, খুব প্রশস্ত, এটি যে অত্যন্ত পুরাতন, তার আলামত সুস্পষ্ট এবং এটি অন্যান্য কূপের মত নয়।
  • গাছের কাঁচা ফল অনুমান করে পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং ক্রয়-বিক্রয় জায়েয আছে। অনুমানকারীর কথাই গ্রহণযোগ্য।
  • যেই স্থানে আল্লাহর আযাব নাযিল হয়েছে বলে পরিচিত এবং যারা আল্লাহর আযাবে নিপতিত হয়েছে, তাদের বাড়িঘরে প্রবেশ করা অনুচিত। সেই অঞ্চলে অবস্থান করাও ঠিক নয়। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় দ্রুত গতিতে এবং কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে যেতে হবে। তাদের জনপদে প্রবেশ করতে চাইলে ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ করতে হবে।
  • সফর অবস্থায় নাবী (ﷺ) দুই সলাত একত্রিত করে আদায় করতেন। তাবুক যুদ্ধের ঘটনায় নাবী (ﷺ) জমা তাকদীম করেছেন। অর্থাৎ পরের সলাতকে আগের সলাতের সাথে মিলিয়ে পড়েছেন। যেমন বর্ণিত হয়েছে মুআয (রাঃ) এর হাদীছে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন- হাদীসটির ইলস্নত তথা দুর্বল কারণগুলো আমরা উল্লেখ করেছি। জমা তাকদীম তথা পরের সলাতকে আগের সলাতের ওয়াক্তে এবং এক সাথে দুই সলাত পড়ার বিষয়টি শুধু তাবুকের সফরেই বর্ণিত হয়েছে। নাবী (ﷺ) থেকে আরাফায় প্রবেশের পূর্বে আরাফার দিন যোহরের সাথে আসর সলাত পড়ার কথাটিও সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
  • বালি দিয়ে তায়াম্মুম করা জায়েয। কেননা নাবী (ﷺ) ও সাহাবীগণ মদ্বীনা ও তাবুকের মরুপথ অতিক্রম করেছেন। তারা সাথে মাটি নিয়ে যান নি। দীর্ঘ পথের কোথাও পানি ছিলনা। সাহাবীগণ পিপাসার অভিযোগও করেছিলেন।
  • নাবী (ﷺ) তাবুকে বিশ দিনেরও বেশী সময় অবস্থান করেছিলেন। এ সময় তিনি সলাত কসর করতেন। তিনি এটি বলেন নি যে, কোন লোক বিশ দিনের অধিক অবস্থান করলে সলাত কসর করতে পারবেনা। ইমাম ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন- মুসাফিরের জন্য সলাত কসর করা জায়েয হওয়ার বিষয়ে আলেমগণের ইজমা বর্ণিত হয়েছে। স্থায়ীভাবে বসবাস করার নিয়ত না করলে যত দিন ইচ্ছা কসর করতে পারবে। এভাবে বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও।
  • কোন বিষয়ে শপথকারী যদি দেখে যে, শপথ পূর্ণ করার চেয়ে ভঙ্গ করার মধ্যেই অধিক কল্যাণ ও উপকার রয়েছে, তাহলে শপথ ভঙ্গ করা মুস্তাহাব এবং কাফ্ফারা আদায় করা মুস্তাহাব। ইচ্ছা করলে শপথ ভঙ্গ করার পূর্বেই কাফ্ফারা দিতে পারে, ইচ্ছা করলে পরেও দিতে পারবে।
  • রসূান্বিত অবস্থায়ও শপথ সংঘটিত হয়। তবে শর্ত হল, রসূ যেন এমন না হয় যে, শপথকারী তখন কি বলছে, তা নিজেই বুঝতে অক্ষম। তাই রসূান্বিত অবস্থায় শপথ করলে, তার হুকুম কার্যকর হবে এবং তার ক্রয়-বিক্রয় ও অন্যান্য লেনদেনও কার্যকর হবে। তবে রসূান্বিত ব্যক্তির অবস্থা যদি এমন হয় যে, তার মসিত্মস্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে, যার কারণে নিজের কথা নিজেই বুঝতে পারছে না, তাহলে তার কোন লেনদেনই গ্রহণযোগ্য হবেনা, তার শপথ, তালাক এবং দাসমুক্তিসহ কোন কিছুই কার্যকর হবেনা।
  • নাবী (ﷺ) বলেন- لَسْتُ أَنَا حَمَلْتُكُمْ وَلَكِنَّ اللهَ حَمَلَكُمْ আমি তোমাদের বাহনের ব্যবস্থা করি নি; বরং আল্লাহ্ তা‘আলাই তোমাদের বাহনের ব্যবস্থা করেছেন। এই কথা দ্বারা জাবরিয়া[1] সম্প্রদায় দলীল গ্রহণ করতে পারে। মূলতঃ এ দিয়ে তাদের দলীল দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এই কথা রসূল (ﷺ)-এর নিম্নোক্ত কথার অনুরূপ। তিনি বলেন-

والله لا أعطي أحدا شيئا ولا أمنع و إنما أنا قاسم أضع حيث أمرت

  • ‘‘আমি কাউকে কিছুই দেইনা, কাউকে কোন কিছু থেকে বারণও করিনা। আমি কেবল বণ্টনকারী। আমাকে যেখানে দেয়ার হুকুম করা হয় আমি সেখানেই দান করি’’।[2] সুতরাং আমি আল্লাহর একজন বান্দা এবং তাঁর রসূল। আমি আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী কাজ করি। আমার প্রভু যখন আমাকে কোন বিষয়ে আদেশ করেন, আমি সেটি তামিল করি। সুতরাং আল্লাহই দানকারী, তিনি বঞ্চিতকারী এবং তাবুক যুদ্ধে বাহনহীন যোদ্ধাদের বাহনের ব্যবস্থাও করেছেন আল্লাহ। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-

وَمَا رَمَيْتَ إذْ رَمَيْتَ وَلَكِنَّ اللهَ رَمَى

  • ‘‘আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন স্বয়ং আল্লাহ্’’। (সূরা আনফাল-৮:১৭) বদরের যুদ্ধের দিন মাটির যেই মুষ্ঠি তিনি কাফেরদের দিকে নিক্ষেপ করেছিলেন, তা কাফেরদের চেহারায় লেগে গিয়েছিল। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর জন্য নিক্ষেপ সাব্যস্ত করেছেন। কারণ তিনিই মুষ্ঠিভর্তি মাটি নিয়েছেন এবং নিক্ষেপ করেছেন। এই দিক থেকে তিনিই কাজটি করেছেন। অপর দিকে সকল কাফেরের চেহারায় মাটি পৌঁছে দেয়ার কাজটি নাবী (ﷺ) করেন নি; বরং তা করেছেন আল্লাহ্ তাআলা। এই দৃষ্টিকোন থেকে বলা হয়েছে যে, তিনি নিক্ষেপ করেন নি; বরং করেছেন আল্লাহ্ তাআলা। এটি একমাত্র আল্লাহরই কাজ, বান্দা এটি করতে সক্ষম নয়। নিক্ষেপ হচ্ছে প্রথম কাজ, যা করেছেন রসূল (ﷺ)। আর সকল কাফেরদের চেহারায় গিয়ে পৌঁছা হচ্ছে শেষ কাজ, যা করেছেন আল্লাহ্ তা‘আলা।
  • আহলে যিম্মা তথা কর প্রদান চুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী কোন অমুসলিম যদি এমন কোন কাজ করে, যা ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতিকর, তাহলে তার জান ও মালের নিরাপত্তা জনিত চুক্তির মেয়াদ তৎক্ষণাৎ শেষ হয়ে যাবে। মুসলিমদের শাসক যদি অঙ্গিকার ভঙ্গকারীকে ধরতে অক্ষম হয়, তাহলে তার জান-মাল যে কোন মুসলিমের জন্য হালাল। নাবী (ﷺ) আয়লাবাসীদের সাথে যে চুক্তি করেছিলেন, তাতে এই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
  • প্রয়োজনে মৃত ব্যক্তিকে রাতেই দাফন করা জায়েয। কেননা নাবী (ﷺ) যুল-বিজাদাইনকে রাতেই দাফন করেছিলেন।
  • ইমামুল মুসলিমীনের পক্ষ হতে প্রেরিত সারিয়া (যুদ্ধের ছোট বাহিনী) যদি মালে গণীমত অর্জন করতে পারে কিংবা শত্রুদেরকে বন্দী করে নিয়ে আসতে পারে অথবা কোন দুর্গ জয় করতে পারে, তাহলে তা থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করার পর বাকী সবই মুজাহিদদের মধ্যে ভাগ করতে হবে। নাবী (ﷺ) দাওমাতুল জানদালের মালে গণীমত সৈনিকদের মাঝেই ভাগ করেছিলেন। খালেদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর নের্তৃত্বে এই অভিযান প্রেরিত হয়েছিল। উকাইদারের সাথে সন্ধির মাধ্যমে তিনি দাওমাতুল জান্দাল জয় করেন। তবে বড় ধরণের অভিযান চলাকালে সৈনিকদের থেকে যদি সারিয়া (ছোট বাহিনী) অন্য কোন দিকে পাঠানো হয়, তাহলে তারা যদি মূল অভিযানের সৈনিকদের ক্ষমতাবলে কিছু অর্জন করে, তাহলে তাদের অর্জিত গণীমত খুমুস এবং নফল বের করার পর অবশিষ্ট সম্পদ সকলেরই প্রাপ্য হবে। এটিই ছিল নাবী (ﷺ)-এর পবিত্র সুন্নাত।
  • তাবুক যুদ্ধের সময় নাবী (ﷺ) বলেন- মদ্বীনায় এক দল লোক রয়ে গেছে। যখনই তোমরা কোন পথ বা উপত্যকা অতিক্রম করেছ, তখনই তারা তোমাদের সাথে ছিল। এর দ্বারা কলবী (অন্তরের) জিহাদ উদ্দেশ্য। এটি চার প্রকার জিহাদের অন্যতম একটি প্রকার। জিহাদের বাকী প্রকারগুলো হচ্ছে, জিহাদে মালী (মালের জিহাদ), জিহাদে লিসানী (জবান ও কলমের মাধ্যমে জিহাদ) এবং জিহাদে বদনী (জানের মাধ্যমে জিহাদ)।
  • পাপ কাজের আড্ডা ও স্থানসমূহ জ্বালিয়ে দেয়া উচিৎ। কেননা নাবী (ﷺ) মসজিদে যিরারকে জ্বালিয়ে ও ধ্বংস করে দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। সেটি ছিল মসজিদ। সেখানে সলাত পড়া হত এবং তাতে আল্লাহর যিকির করা হত। যেহেতু এটি নির্মাণ করা হয়েছিল মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য, মুমিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য এবং মুনাফেকদের ষড়যমেত্মর জন্য, তাই এটি ধ্বংস করে দেয়া হল। যে কোন জায়গার অবস্থা এ রকম হবে, শাসকের উপর আবশ্যক হচ্ছে, তা আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলা বা ধ্বংস করে দেয়া। তা যদি করা সম্ভব না হয়, তাহলে কমপক্ষে সেই জায়গার শেকেল ও সুরত (আসল অবস্থা) পরিবর্তন করে দেয়া উচিৎ। যাতে করে সেখানে পাপ কাজের সুযোগ না থাকে।
  • এই যদি হয় মসজিদে যিরারের অবস্থা, তাহলে শির্কের আড্ডা তথা মাজার ও কবরের উপর নির্মিত গম্বুজগুলো ধ্বংস করে দেয়ার গুরুত্ব আরও বেশী। কারণ এগুলোর খাদেমরা যিয়ারতকারীদেরকে আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে মাবুদ হিসাবে গ্রহণ করার আহবান জানায়। এমনি যে সমস্ত স্থানে মদপান, অশস্নীল কাজ ও নানা ধরণের অপকর্ম হয়, সেগুলোও গুড়িয়ে দেয়া উচিৎ। উমার (রাঃ) যখন জানতে পারলেন যে, একটি গ্রামে মদ ক্রয়-বিক্রয় হয়, তখন তিনি সেই গ্রামকে সম্পূর্নরূপে জ্বালিয়ে দিয়েছেন। তিনি রুওয়াইশীদ আল-ছাকাফীর মদের দোকান জ্বালিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে ফাসেক ও বদমাইশ নামে প্রসিদ্ধ করে দিয়েছেন। সা’দ (রাঃ) যখন জনগণ থেকে দূরে সরে এসে নিজ প্রাসাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন তিনি তার ঘরকে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। রসূল (ﷺ) জুমআ ও জামআত পরিত্যাগকারীদের ঘরও জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। নারী ও শিশু থাকার কারণে তিনি ঘর জ্বালিয়ে দেন নি।
  • ইবাদত ও নৈকট্যের কাজ ব্যতীত অন্য কোন কাজে ওয়াক্ফ করা সহীহ নয়। তাই মসজিদে যিরারের ওয়াক্ফ সঠিক ছিলনা। সুতরাং কবরের উপর মসজিদ নির্মিত হলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে। এমনি মসজিদে কোন মাইয়েতকে দাফন করা হলে, তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল এবং অন্যান্য ইমামগণ সুস্পষ্ট করে এ কথাই বলেছেন। ইসলামে কবর ও মসজিদ একত্রিত হতে পারেনা। কবর এবং মসজিদের যেটি আগে হবে, সেটিই টিকবে। এ দু’টির একটি আগে হলে এবং তার উপর অন্যটি স্থাপন করা হলে পরেরটি উঠিয়ে ফেলতে হবে। আগেরটিই টিকে থাকার হকদার। আর দু’টিই যদি এক সাথে করা হয় তাও জায়েয নেই। এ ধরণের কাজে ওয়াক্ফ করা হলে, তা সহীহ হবেনা। যেই মসজিদে কবর আছে বা কবরের উপর নির্মিত মসজিদে সলাত সহীহ নয়। নাবী (ﷺ) এই মসজিদে সলাত পড়তে নিষেধ করেছেন এবং যারা কবরকে মসজিদে পরিণত করে কিংবা তাতে বাতি জ্বালায়, তাদের উপর অভিশাপ করেছেন। এই হচ্ছে ইসলামের সঠিক শিক্ষা, যা দিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নাবী ও রসূলকে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে ইসলামের এই আসল শিক্ষা মানুষের মাঝে প্রায় অপরিচিত হয়ে গেছে।
  • আনন্দ প্রকাশের জন্য সম্মানী ব্যক্তিদের আগমণে কবিতা আবৃত্তি করা জায়েয আছে। তবে শর্ত হল, তার সাথে যেন হারাম বিষয়ের সংযোগ না হয়। যেমন বাদ্য যন্ত্র, অশ্লীল গান ইত্যাদি।
  • নাবী (ﷺ) যখন তাবুক থেকে বিজয়ী বেশে ফেরত আসলেন তখন প্রশংসাকারীগণ তাঁর প্রশংসা করছিল। তিনি তা শুনছিলেন। কোন প্রকার প্রতিবাদ করেন নি। অন্যদেরকে এর উপর কিয়াস করা যাবেনা। কেননা সকল প্রশংসাকারী এবং প্রশংসিত ব্যক্তিগণ একই রকম নন। তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আর নাবী (ﷺ) বলেছেন-

احْثُوا فِي وُجُوهِ الْمَدَّاحِينَ التُّرَابَ

‘‘তোমরা প্রশংসাকারীদের মুখে মাটি নিক্ষেপ কর’’।[3]

[1]. জাবরিয়া একটি বিদআতী সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের অন্যতম খারাপ আকীদাহ হচ্ছে, তারা মনে করে বান্দার কোন কাজ নেই। বান্দার পক্ষ হতে যা কিছু হতে দেখা যায়, তা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই করান। তাদের ধারণায়, আল্লাহ্ বান্দাকে পাপ করতে বাধ্য করেন। অনুরূপ আনুগত্যের কাজেও। তাদের মতে বান্দার কোন স্বাধীনতা বা ইচ্ছা নেই। উপরে বর্ণিত হাদীসের ন্যায় আরও কিছু হাদীছ ও কুরআনের আয়াত দিয়ে তারা তাদের বাতিল মতের পক্ষে দলীল পেশ করার চেষ্টা করেন।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের অন্যতম আকীদা হচ্ছে, বান্দা যে সকল কাজ করে থাকে তাতে তার ইচ্ছা ও ক্ষমতা রয়েছে। আল্লাহর ক্ষমতা ও ইচ্ছার অধীনে থেকেও সে তার ইচ্ছা ও ক্ষমতার বলে স্বীয় কাজগুলো করে থাকে। সুতরাং সে কাজের ইচ্ছা করে এবং কাজ সম্পাদন করে। তবে সে কেবল তাই করে, যা করার জন্য আল্লাহ্ তাকে অনুমতি দেন কিংবা তা বাস্তবায়ন করার শক্তি দেন। কাজেই বান্দার ইচ্ছা রয়েছে, যার মাধ্যমে সে ভাল বা মন্দের কোন একটি নির্বাচন করে। এই ইচ্ছার কারণেই ভাল কাজের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হবে এবং অন্যায় কাজের জন্য তাকে শাস্তি দেয়া ইনসাফ হবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ

وَمَا تَشَاءُونَ إِلا أَنْ يَشَاءَ اللهُ

‘‘তোমরা ইচ্ছা করবে না, যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন’’। (সূরা দাহর-৭৬:৩০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ

وَلا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا * إِلا أَنْ يَشَاءَ اللهُ

‘‘কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলো না, আমি ওটা আগামীকাল করব। এটা না বলে যে, ‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে’। (সূরা কাহ্ফ-১৮:২৩,২৪) আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেনঃ

مَنْ يَشَأِ اللهُ يُضْلِلْهُ وَمَنْ يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

‘‘আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা করেন হিদায়াতের সরল-সহজ পথের সন্ধান দেন’’। (সূরা আনআম-৬: ৩৯)

আর এ ব্যাপারে কাদরীয়া সম্প্রদায়ের আকীদাহ হচ্ছে জাবরীয়াদের আকীদার সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা কাদরীয়ারা তাকদীরকে অস্বীকার করে। তারা বলে পূর্বনির্ধারিত কোন কিছু নেই। বান্দা যা করে, তা পূর্বে লিখা হয় নি। সে যা করে তাতে সে সম্পূর্ণ স্বাধীন। বান্দা কাজ করার পরই আল্লাহ্ তা জানতে পারেন। সুতরাং এই বিশ্বাস করা যে, বান্দার কর্মে বান্দা সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং পৃথিবীতে যত ঘটনা ঘটে, পূর্ব থেকেই আল্লাহ্ তা‘আলা তা অবগত নন- এটি একটি সুস্পষ্ট গোমরাহী ও কুফরী বিশ্বাস। ইসলামী শরীয়তের একটি প্রকাশ্য ও জরুরী বিষয়কে মিথ্যা বলা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ ব্যাপারে সঠিক আকীদা হচ্ছে, সকল বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা পূর্ব হতেই অবগত আছেন। তিনি সমস্ত সৃষ্টির তাকদীর লিখে দিয়েছেন। আল্লাহর ইচ্ছা ও অবগতি ব্যতীত দুনিয়াতে কিছুই সংঘটিত হয় না এবং গাছের একটি পাতাও ঝরেনা। এর উপর কুরআন ও সুন্নাতের অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ

]إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ[

‘‘আমি প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে’’। (সূরা কামার-৫৪:৪৯) আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেনঃ

مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي أَنْفُسِكُمْ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا

‘‘পৃথিবীতে এবং তোমাদের শরীরে এমন কোন বিপদ আপতিত হয় না, যা সৃষ্টি করার পূর্বেই একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি নি’’। (সূরা হাদীদঃ ২২) আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেনঃ

فَمَنْ يُرِدِ اللهُ أَنْ يَهدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإسْلاَمِ وَمَنْ يُرِدْ أَنْ يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا

‘‘অতএব আল্লাহ্ যাকে হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার অন্তকরণ খুলে দেন। আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তার অন্তকরণ খুব সংকুচিত করে দেন’’। (সূরা আন-আম-৬:১২৫) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(كَتَبَ اللهُ مَقَادِيرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ: وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ)

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত মাখলুকের তাকদীর লিখে দিয়েছেন। তাঁর আরশ পানির উপরে’’। তিনি আরো বলেনঃ

(إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ فَقَالَ: لَهُ اكْتُبْ قَالَ: رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ)

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা কলম সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম তাকে বললেনঃ লিখ। কলম বললঃ হে আমার প্রতিপালক! কী লিখব? আল্লাহ্ বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী প্রতিটি বস্ত্তর তাকদীর লিখ’’। নাবী সাঃ) আবু হুরায়রাকে লক্ষ্য করে বলেনঃ

(يا أبا هريرة جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا هُوَ كَائِنٌ)

‘‘হে আবু হুরায়রা! পৃথিবীতে যা সৃষ্টি হবে তা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। অর্থাৎ সবকিছু লিখা হয়ে গেছে।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে এমন অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যাতে কাদরীয়াদের (তাকদীর অস্বীকারকারীদের) নিন্দা করা হয়েছে। কোন কোন হাদীছে তাদেরকে এই উম্মাতের অগ্নিপূজক বলা হয়েছে। ইবনে উমার  হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কাদরীয়ারা এই উম্মাতের অগ্নিপূজক। তারা অসুস্থ হলে তাদের দেখতে যাবে না এবং তাদের কারও মৃত্যু হলে তোমরা তার জানাযায় শরীক হবে না। ইমাম আবু দাউদ এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। সাহাবীদের যুগের শেষের দিকে সর্বপ্রথম বসরাতে মাবাদ আলজুহানী তাকদীর অস্বীকারের ঘোষণা দেয়। তার থেকে তারই ছাত্র গায়লান আদ্ দিমাসকী এটি গ্রহণ করে। যে সমস্ত সাহাবী তখন জীবিত ছিলেন এবং এই কথা শুনেছেন, তাদের সকলেই এ মতবাদ থেকে সাবধান করেছেন এবং এই মতবাদ থেকে নিজেকে মুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার, আবু হুরায়রা, আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস, আনাস বিন মালেক, আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবু আওফা এবং উকবা বিন আমের  অন্যতম।

সহীহ মুসলিমে ইয়াহইয়া বিন ইয়ামুর হতে বর্ণিত হয়েছে যে, বসরাতে সর্বপ্রথম মাবাদ আলজুহানী যখন তাকদীর সম্পর্কে কথা বলল, তখন আমি এবং আব্দুর রাহমান হিময়ারী হজ্জ অথবা উমরার উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা বললামঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পেলে এ সকল লোক যা বলছে, সে ব্যাপারে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করব। আমরা আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার  কে পেয়ে গেলাম। আমি বললামঃ হে আবু আব্দুর রাহমান! আমাদের মাঝে এমন কিছু লোক আত্ম প্রকাশ করছে, যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইলম চর্চাও করে। তাদের ব্যাপারে আরও বলা হয়েছে যে, তারা ধারণা করে, তাকদীর নেই। সব কিছুই নতুনভাবে শুরু হয়। অর্থাৎ পৃথিবীতে যা কিছু হয়, তা পূর্ব থেকে নির্ধারিত নয়; বরং নতুন করেই শুরু হয় এবং বান্দাই তার কর্মের স্রষ্টা। এমন কি বান্দা কাজ করার পূর্বে আল্লাহ্ তা‘আলা সেই কাজ সম্পর্কে জানেনও না। বান্দা যখন কোন কাজ করে তখনই আল্লাহ্ তা‘আলা তা জানতে পারেন। (নাউযুবিল্লাহ্) আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার তখন বললেনঃ তুমি যদি তাদের সাক্ষাৎ পাও, তাহলে বলবে যে, আমি তাদের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমার সাথে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর শপথ! তাদের কারও যদি উহুদ পাহাড় সমান র্স্বণও থাকে এবং তা যদি আল্লাহর রাস্তায় সাদকা করে দেয়, তার থেকে আল্লাহ্ তা কবুল করবেন না। যতক্ষণ না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনবে। দেখুনঃ সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান, ইসলাম ও ইহসান।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোকগণ তাকদীরকে বিশ্বাস করেন। তথা সবকিছুই আল্লাহ্ তা‘আলা পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন, তার অবগতি ব্যতীত পৃথিবীতে কিছুই হয় না, মানুষ ও তার কর্মসমূহ তিনিই সৃষ্টি করেছেন। মানুষ যা কিছু করে, তা করার পূর্বেই আল্লাহ্ তা‘আলা অবগত থাকেন। এই বিশ্বাস আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের আকীদার অন্যতম অংশ। তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের সাথে সাথে তারা এই বিশ্বাস করেন যে, মানুষেরও ইচ্ছা ও কর্ম নির্বাচনের স্বাধীনতা রয়েছে। এই ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতা আছে বলেই তাকে শরীয়ত পালনের আদেশ দেয়া হয়েছে। বান্দা ও বান্দার ইচ্ছা উভয়েরই স্রষ্টা আল্লাহ। কুরআন মযীদ এই সত্যটিকেই সাব্যস্ত করেছে। সুন্নাতে নববীতেও সুস্পষ্ট উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ

إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَسْتَقِيمَ وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

‘‘এটা তো কেবল বিশ্ববাসীদের জন্যে উপদেশ, তার জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সোজা চলতে চায়। তোমরা আল্লাহ্ রাববুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না’’। (সূরা তকাভীর- ৮১:২৭-২৯) আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেনঃ

وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا وَإِنْ يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا

বলুন: সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক। আমি জালেমদের জন্যে অগ্নি প্রসত্মুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পুজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানা গেল যে, যারা বলে মানুষ ইচ্ছা, শক্তি ও দৃঢ়তা দিয়েই কাজ করে, বান্দার কাজে বান্দা সম্পূর্ণ স্বাধীন, তাতে আল্লাহর কোন দখল নেই, এমন কি কাজ করার আগে আল্লাহ্ তা‘আলা জানতেও পারেন না, তাদের কথা বাতিল। আসল কথা হচ্ছে আল্লাহর পৃথিবীতে ও রাজ্যে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছুই হয় না। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত বান্দা কোন কিছুই করতে পারে না। যেমন আমরা উপরে বর্ণিত দলীলসমূহের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছি। আল্লাহ্ তা‘আলা এখানে বান্দার ইচ্ছা আছে বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। আরও সংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছার পূর্বে বান্দার ইচ্ছা কখনও কার্যকর হয় না। বান্দার কাজ প্রকৃতপক্ষে বান্দাই করে। এ জন্যই তার হিসাব নেওয়া হবে এবং বিনিময় দেয়া হবে।

মক্কার মুশরিকরাও তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস করত। তবে তাদের সমস্যা ছিল যে, তারা শিরক ও গোমরাহীর উপর তাকদীর দ্বারা দলীল পেশ করত। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ

سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللهُ مَا أَشْرَكْنَا وَلا آبَاؤُنَا وَلا حَرَّمْنَا مِنْ شَيْءٍ كَذَلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ حَتَّى ذَاقُوا بَأْسَنَا قُلْ هَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ عِلْمٍ فَتُخْرِجُوهُ لَنَا إِنْ تَتَّبِعُونَ إِلا الظَّنَّ وَإِنْ أَنْتُمْ إِلا تَخْرُصُونَ

‘‘অচিরেই মুশরেকরা বলবে: যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ-দাদারা এবং না আমরা কোন বসত্মুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুন: তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে, যা আমাদেরকে দেখাতে পার? তোমরা শুধু আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল’’। (সূরা আনআম-৬:১৪৮) সুতরাং পাপ কাজ করে তাকদীর দ্বারা দলীল গ্রহণ করা অন্যায় ও বাতিল। কেননা মুশরিক ও পাপীরা স্বীয় ইচ্ছা ও স্বাধীনতার বলে পাপের কাজ করে। সে এটা কখনই অনুভব করে না যে, তাকে কেউ চাপ দিয়ে করাচ্ছে। সুতরাং তার উপর আবশ্যক ছিল যে, সে সেচ্ছায় তার প্রভুর তাওহীদ বাস্তবায়ন করবে এবং শিরক ও পাপ কাজ বর্জন করবে। এ সবই তার ক্ষমতাধীন ও আয়ত্তে ছিল। (আল্লাহই ভাল জানেন)

[2]. বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাগাযি।

[3] . মুসনাদে আহমাদ, হাদীসটি সহীহ, সহীহুল জামে, হা/১৮৬।