‘যদি টেলিভিশনে দ্বীনী প্রোগ্রাম ছাড়া অন্য কিছু দেখ, তবে তুমি হারাম’ বলে স্ত্রী হারাম করলে বা কোন অন্য কারণে ‘তুমি আমার জন্য হারাম’ ইত্যাদি বললে এবং তালাকের নিয়ত না হলে তালাক হবে না। বরং স্ত্রী সহবাস হারাম করার নিয়ত হলে তার সঙ্গে সঙ্গম অবৈধ হয়ে যাবে। বৈধ করতে চাইলে কসমের কাফ্ফারা জরুরী। আল্লাহ বলেন,

﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ (1) قَدْ فَرَضَ اللَّهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ وَاللهُ مَوْلَاكُمْ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ ﴾ (2) سورة التحريم

‘‘হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্য তা তোমার উপর অবৈধ করে নিচ্ছ কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ তোমাদের শপথ হতে মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তোমাদের সহায়। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’’[1]

প্রকাশ যে, কসমের কাফ্ফারা (প্রায়শ্চিত্ত) দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাদ্য-দান (মাথা পিছু ১ কিলো ২৫০ গ্রাম করে চাল দিলে চলে) অথবা ঐ দশজনকে বস্ত্র (গেঞ্জি-লুঙ্গি) দান কিংবা একজন ক্রীতদাস মুক্তি। আর এ সবে সামর্থ্য না থাকলে ৩ দিন রোজা পালন।[2]

স্ত্রীকে ‘তুমি আমার মায়ের পিঠের মত’ বা ‘তুমি আমার মা’ বা বোন ইত্যাদি বলে হারাম করলে একে ‘যিহার’ বলে। এমন বলা বা করা হারাম। করলে কাফ্ফারা ওয়াজেব এবং এর পূর্বে সহবাস ও তার ভূমিকা অবৈধ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْكُمْ مِنْ نِسَائِهِمْ مَا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلاَّ اللاَّئِي وَلَدْنَهُمْ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنْكَراً مِنَ الْقَوْلِ وَزُوراً وَإِنَّ اللهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ- وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا ذَلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ- فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا فَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِيناً ذَلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللهِ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾

‘‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীগণের সাথে যিহার করে তারা জেনে রাখুক, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। যারা তাদেরকে ভূমিষ্ঠ করে কেবল তারাই তাদের মাতা, ওরা তো ঘৃণ্য ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ পাপমোচনকারী ও ক্ষমাশীল, যারা নিজেদের স্ত্রীগণের সাথে যিহার করে অতঃপর ওদের উক্তি প্রত্যাহার করে নিতে চায়, তবে তাদের প্রায়শ্চিত্ত (কাফ্ফারা) হল যৌন কামনায় একে অপরকে ( স্বামী স্ত্রীকে) স্পর্শ করার পূর্বে ১টি ক্রীতদাস স্বাধীন। এ নির্দেশ তোমাদের দেওয়া হল। তোমরা যা কর আল্লাহ তার খবর রাখেন। কিন্তু যার এ সামর্থ্য নেই তার প্রায়শ্চিত্ত হল যৌন-কামনায় একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একাদিক্রমে দু’মাস রোযা পালন। যে এতে অসমর্থ সে ৬০ জন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য (মাথাপিছু ১ কিলো ২৫০ গ্রাম করে চাল) দান করবে। এটা এজন্য যে তোমরা যেন আল্লাহ ও তদীয় রসূলে বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলি আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। আর অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’’[3]

তালাকের নিয়তে যিহার করলে (স্ত্রীকে মা বা মায়ের মত বললে) তালাক হবে না যিহারই হবে। পক্ষান্তরে যিহারের নিয়তে তালাক দিলে তালাক হয়ে যাবে।[4]

স্ত্রীর তরফ থেকে যিহার হয় না। তবে স্বামীকে ‘বাপ’ বললে স্বামী সহবাস হারাম এবং এর মান কসমের সমান। অতএব কসমের কাফ্ফারা দিলেই তবে স্বামী-সঙ্গম বৈধ হবে।[5]

স্বামী যদি তার স্ত্রীকে কোন গুণ, রূপ, বা কর্মপটুতা ইত্যাদিতে তার মায়ের সাথে তুলনা করে বলে ‘তুমি আমার মায়ের মত’ (অর্থাৎ গুণে বা কর্মে) এবং অনুরূপ স্ত্রী যদি তার স্বামীকে বলে ‘আপনি আমার বাপের মত’ (অর্থাৎ কোন গুণে বা কর্মে) তবে কেউ কারো পক্ষে হারাম হয় না।[6]

[1] (আলকুরআন কারীম ৬৬/১-২,মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৮/৭৬)

[2] (সূরা আল-মায়িদা (৫): ৮৯)

[3] (আল-মুজাদালাহ (৫৮) : ২-৪)

[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৭৬)

[5] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৩)

[6] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৯৩)