সাঈ করার নিয়ত বা প্রতিজ্ঞা করা।

  • হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম (চুম্বন-স্পর্শ) করে সাঈর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।
  • ওজু অবস্থায় সাঈ করা।
  • তাওয়াফ শেষ করার সাথে সাথে সাঈ করা।
  • সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে, হাত উঠিয়ে, দীর্ঘক্ষণ দোয়া করা।
  • পুরুষদের জন্য সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে একটু দৌড়ে অতিক্রম করা।
  • সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে পড়বে—

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ ، إِنَّكَ أَنْت َالأَعَزُّ الأَكْرَمُ.

হে আল্লাহ ! ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয় তুমি মহা পরাক্রমশালী ও মহা দয়াবান।[1]

  • সাত চক্কর পূর্ণ করা।
  • সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম করা।
  • সাফা মারওয়া বরাবর মধ্যবর্তী স্থানে সাঈ করা। মাসআ অর্থাৎ সাঈ করার সুনির্ধারিত স্থানের বাইরে দিয়ে চক্কর লাগালে সাঈ হবে না।
  • দুই চক্করের মাঝে বেশি বিলম্ব না করা।

উল্লিখিত পয়েন্টগুলো অনুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার সাঈ শত ভাগ শুদ্ধ হবে। এর কোনোটায় ত্রুটি থেকে গেলে বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নিন।

[1] তাবরানি : ৮৭০

সাঈ করতে যাচ্ছেন এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করুন। সাঈর পূর্বে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ করুন। চুম্বন-স্পর্শ সম্ভব না হলে, এ ক্ষেত্রে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করার কোনো বিধান নেই।[1] এরপর সাফা পাহাড়ের দিকে আগান। সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে, রাসূলুল্লাহ (স) এর অনুসরণে বলুন—

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ، أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهِ.

উচ্চারণ: ইন্নাস্সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআয়িরিল্লাহ। আব্দায়ু বিমা বাদায়াল্লাহু বিহি

অর্থ: নিশ্চয়ই সাফা মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন। আমি শুরু করছি আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন।[2]

এরপর সাফা পাহাড়ে ওঠে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন এবং আল্লাহর একত্ববাদ, বড়ত্ব ও প্রশংসার ঘোষণা দিয়ে বলবে—

اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ.

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল্মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাছারা আব্দাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ্।

অর্থ: আল্লাহ সুমহান, আল্লাহ সুমহান, আল্লাহ সুমহান ![3] আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, এবং আল্লাহ মহান। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, ও সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক। তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন, ও তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রুদেরকে পরাজিত করেছেন।[4] এবং উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করবে।[5] উপরোক্ত দোয়া এবং ইহ-পরকালের জন্য কল্যাণকর অন্যান্য দোয়া সামর্থ্য অনুযায়ী তিন বার পড়বে। পদ্ধতি এমন হবে যে, উক্ত দোয়াটি একবার পাঠ করে তার সাথে সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যান্য দোয়া পড়বে। অত:পর পুনরায় উক্ত দোয়াটি পাঠ করবে এবং তার সাথে অন্যান্য দোয়া পাঠ করবে। এভাবে তিন বার করবে।[6]

দোয়া শেষ হলে মারওয়ার দিকে রওয়ানা হোন। যেসব দোয়া আপনার মনে আসে পড়ুন। সাফা থেকে নেমে কিছু দূর এগোলেই ওপরে ও ডানে-বামে সবুজ বাতি জ্বালানো দেখবেন। এই জায়গাটুকু, পুরুষ হাজিগণ, দৌড়ানোর মত করে দ্রুত গতিতে হেঁটে চলুন। পরবর্তী সবুজ বাতির আলামত এলে চলার গতি স্বাভাবিক করুন। তবে নারীদের ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় চলার গতি থাকবে স্বাভাবিক। সবুজ দুই আলামতের মাঝে চলার সময় নীচের দোয়াটি পড়ুন-

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ ، إِنَّكَ أَنْت َالأَعَزُّ الأَكْرَمُ.

উচ্চারণ: রাবিবগ্ফির্ ওয়ার্হাম্, ইন্নাকা আন্তাল্ আয়া’য্যুল আকরাম্

অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি সমধিক শক্তিশালী ও সম্মানিত।

মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছার পূর্বে, সাফায় পৌঁছার পূর্বে যে আয়াতটি পড়েছিলেন, তা পড়তে হবে না। মারওয়ায় উঠে সাফার মতো পবিত্র কাবার দিকে মুখ করে একই কায়দায় হাত উঠিয়ে মোনাজাত করুন। মারওয়া থেকে সাফায় আসার পথে সবুজ বাতির এখান থেকে আবার দ্রুত গতিতে চলুন। দ্বিতীয় সবুজ আলামতের এখানে এলে চলার গতি স্বাভাবিক করুন। সাফায় এসে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে আবার মোনাজাত ধরুন। সাফা মারওয়া উভয়টা দোয়া কবুলের জায়গা। কাজেই তাড়াতাড়ি সাঈ সেরে নিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার চিন্তা করবেন না। ধীরে সুস্থে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)যেখানে যা করেছেন সেখানে সেটা সেভাবেই করার চেষ্টা করুন। কতটুকু করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে, এই চিন্তা মাথায় আনবেন না। বরং এটা টারগেট বানাবেন যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কোথায় কোন কাজ কীভাবে ও কত সময় করেছেন, আমিও ঠিক সেভাবেই করব।

একই নিয়মে সাঈর বাকি চক্করগুলোও আদায় করুন। সাঈ করার সময় সালাত দাঁড়িয়ে গেলে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করুন। সাঈ করার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসে আরাম করে নিন। এতে সাঈর কোনো ক্ষতি হবে না।

আপনার শেষ সাঈ—অর্থাৎ সপ্তম সাঈ—মারওয়াতে গিয়ে শেষ হবে। শেষ হওয়ার পর মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করতে যাবেন। মারওয়ার পাশেই চুল কাটার সেলুন রয়েছে। সেখানে গিয়ে মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছোট করে নিন। যদি হজ্জের জন্য মাথা মুন্ডানোর সময় পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ জিলহজ্জ এর পূর্বে আপনার মাথার চুল গজাবে না এরূপ আশঙ্কা হয় তবে উমরার পর চুল ছোট করা উত্তম। বিদায় হজ্জের সময় তামাত্তুকারী সাহাবাগণ কসর - চুল ছোট-করেছিলেন।[7] কেননা তাঁরা হজ্জের পাঁচ দিন পূর্বে উমরা আদায় করেছিলেন। তবে অন্যসব ক্ষেত্রে মাথা মুন্ডন করা উত্তম।

মনে করিয়ে দেয়া ভাল যে, পবিত্র কুরআনে ‘হলক’ এবং’কসর’ এর কথা এসেছে। মাথার চুল গোড়া থেকে কেটে ফেলাকে হলক বলে আর ছোট করাকে বলে কসর। কারও কারও মতে এক আঙুল চুল ছেঁটে ফেলাকে কসর বলে। তাই মাথায় যদি একেবারেই চুল না থাকে তাহলে সত্যিকার অর্থে হলক ও কসর কোনোটাই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। মুন্ডিত মাথায় নতুন করে ক্ষুর চালালে এটাকে কেউ মাথা মুন্ডন বলে না, বরং এটা হবে تمرير الموسى (ক্ষুর সঞ্চালন) যা কেবল টাক-মাথা ওয়ালাদের জন্য প্রযোজ্য।

মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করার পর গোসল করে স্বাভাবিক সেলাই করা কাপড় পরে নেবেন। ৮ জিলহজ্জ পর্যন্ত হালাল অবস্থায় থাকবেন। এহরাম বাঁধতে হবে না। এখন আপনার কাজ হবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করা, ও হজ্জের ব্যাপারে পড়াশোনা করে খুব সুন্দরভাবে বড় হজ্জের জন্য প্রস্ত্ততি নেয়া। সাধ্য-মত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করা।

[1] - কেননা রাসূলুল্লাহ (স) এর হজ্জের বর্ণনায় সাঈর পূর্বে (استلام ) ইস্তিলাম এর কথা আছে। আর ইস্তিলাম শব্দের অর্থ চুম্বন বা স্পর্শ। ইশারা করাকে ইস্তিলাম বলা হয়না। (দেখুন : লিসানুল আরব: খন্ড ১২, পৃ:২৯৭)

[2] ইমাম মুসলিম কর্তৃক জাবের রা. হতে বর্ণিত হাদিস : কিতাবুল মুগনি : ৩১০

[3] নাসায়ি : ২/ ৬২৪

[4] - আলবানী : সহিহুন্নাসায়ী, ২/২২৪ ও মুসলিম : ২/২২২

[5] আবু দাউদ : ১/৩৫১

[6] মুসলিম : হাদিসে জাবের : ২১৩৭

[7] - فحل الناس كلهم وقصروا (হাদিসে জাবের: মুসলিম)

পবিত্র কুরআনে, হজ্জ ও উমরা উভয়টির কথা এসেছে। এরশাদ হয়েছে, وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ তোমরা হজ্জ ও উমরা আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ করো’[1]

এ’তেমার اعتمار)) শব্দ থেকে উমরা (عمرة) উৎকলিত। এর শাব্দিক অর্থ,যিয়ারত করা। পারিভাষিক অথে,র্ পবিত্র কাবার যিয়ারত তথা তাওয়াফ, সাফা মারওয়ার সাঈ ও মাথা মুন্ডন (হলক) ও চুল ছোট করা (কসর) কে উমরা বলা হয়।

1. আল-বাকারা, ১৯৬

হাদিসে এসেছে, ‘রমজান মাসে উমরা করা এক হজ্জের সমান’[1] ‘এক উমরা থেকে অন্য উমরা, এ-দুয়ের মাঝে কৃত পাপের, কাফফারা।’[2] ‘যে ব্যক্তি এই ঘরে এলো, অতঃপর যৌনতা ও শরিয়ত-বিরুদ্ধ কাজ থেকে বিরত রইল, সে মাতৃ-গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট ‘হওয়ার দিনের মত হয়ে ফিরে গেল।’ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানির মতানুসারে এখানে হজ্জকারী ও উমরাকারী উভয় ব্যক্তিকেই বুঝানো হয়েছে।[3]

[1] - عمرة في رمضان تعدل حجة (তিরমিযী: হাদিস নং ৮৬১ ; ইবনে মাজাহ : হাদিস নং ২৯৮২ )

[2] - عمرة إلى عمرة كفارة لما بينها والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة (বোখারি : হাদিস নং ১৬৫০)

[3] - ফাতহুল বারী : ৩/৩৮২

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এবং সাহাবায়ে কেরাম এক সফরে একাধিক উমরা করেননি। শুধু তাই নয় বরং তামাত্তু হজ্জকারীদেরকে উমরা আদায়ের পর হালাল অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।[1] তাই উত্তম হল এক সফরে একাধিক উমরা না করা। একাধিক উমরা থেকে বরং বেশি বেশি তাওয়াফ করাই উত্তম। তবে যদি কেউ উমরা করতেই চায় তাহলে হজ্জের পরে করা যেতে পারে, যেমনটি করেছিলেন আয়েশা (রাঃ) ; তবে, রাসূল তাকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন—এমন কোন প্রমাণ নেই। বরং, নিরুৎসাহিত করেছেন এমন বর্ণনা হাদিসে পাওয়া যায়।[2]

[1] - وأقيموا حلالا (মুসলিম)

[2] বিস্তারিত দেখুন : যাদুল মাআদ : খন্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯২-৯৫
অন্যান্য সময়ে একাধিক বার উমরা করা প্রসঙ্গে

এক বর্ণনা অনুসারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)জীবনে মোট চার বার উমরা করেছেন। প্রথমবার: হুদায়বিয়ার উমরা, যা পথে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় সম্পন্ন করতে পারেননি। বরং সেখানেই মাথা মুন্ডনের মাধ্যমে হালাল হয়ে যান। দ্বিতীয় বার: উমরাতুল কাজা। তৃতীয় বার : জিয়িররানা থেকে। চতুর্থবার: বিদায় হজ্জের সাথে। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)উমরার উদ্দেশ্যে হেরেমের এরিয়ার বাইরে বের হয়ে উমরা করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই।[1]

সাহাবায়ে কেরামের উমরা আদায়ের পদ্ধতি থেকে অবশ্য হজ্জের সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বছরে একাধিকবার উমরা করার বৈধতা প্রমাণিত হয়। মক্কায় ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর শাসনামলে ইবনে উমর বছরে দুটি করে উমরা করেছেন। আয়েশা (রাঃ) বছরে তিনটি পর্যন্ত উমরাও করেছেন।[2] এক হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা বার বার হজ্জ ও উমরা আদায় করো। কেননা এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহ বিমোচন করে দেয়।’[3] সাহাবায়ে কেরামের ক্ষেত্রে দেখা যেত, এক উমরা আদায়ের পর তাদের মাথার চুল কাল হয়ে যাওয়ার আবার উমরা করতেন, তার আগে করতেন না।[4]

[1] বিস্তারিত দেখুন : যাদুল মাআদ : খন্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯২-৯৫

[2] - সাইয়িদ সাবিক : ফেকহুস্সুন্নাহ , খন্ড : ৭ , পৃ: ৭৪৯

[3] - আলবানী : সহিহুন্নাসায়ী : হাদিস নং ৫৫৮

[4] বিস্তারিত দেখুন : যাদুল মাআদ : খন্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯০-৯৫

উমরা শুরু করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। তবে হজ্জের মত উমরা আদায় আবশ্যিক কি-না সে ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্মল (রাঃ) এর নিকট উমরা করা ওয়াজিব। প্রমাণ: পবিত্র কুরআনের বাণী ‘ وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ -তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর।’[1] এই অভিমতের পক্ষে বেশ কিছু হাদিসও রয়েছে তন্মধ্যে কয়েকটি হল নিম্নরূপ—

  1. এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর কাছে এসে বললেন আমার পিতা খুব বৃদ্ধ। তিনি হজ্জ-উমরা করতে অপারগ, এমনকী সফরও করতে পারেন না। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, ‘তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা পালন করো।[2]
  2. কোনো কোনো বর্ণনায় হাদিসে জিব্রিলের একাংশে এসেছে (وأن تحج وتعتمر -তুমি হজ্জ করবে ও উমরা করবে)[3]
  3. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করলেন, নারীর ওপর কি জিহাদ ফরজ? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, তাদের ওপর জিহাদ আছে যে জিহাদে কিতাল (যুদ্ধ) নেই। আর তা হল হজ্জ ও উমরা।[4]
  4. হাদিসে এসেছে, ‘হজ্জ ও উমরা দুটি ফরজ কর্ম। এতে কিছু যায় আসে না যে তুমি কোনটি দিয়ে শুরু করলে।’[5]

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতানুসারে উমরা করা সুন্নত। প্রমাণ, জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস: উমরা করা ওয়াজিব কি-না রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেছেন, না; তবে যদি উমরা করো তা হবে উত্তম।[6]

উভয়পক্ষের দলিল প্রমাণ পর্যালোচনা করলে যারা ওয়াজিব বলেছেন তাদের কথাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত বলে মনে হয়।

[1] - সূরা আল বাকারা : ১৯২

[2] - أتى رجل فقال : إن أبي شيخ كبير لا يستطيع الحج ولا العمرة ولا الظعن ، فقال : حج عن أبيك واعتمر (আবু দাউদ : হাদিস নং ১৮১০; তিরমিযী : হাদিস নং ৯৩০)

[3] -ইবনে হিববান : হাদিস নং ১৭৩ ; দারা কুতনী : ২/২৮২)

[4] - আহমদ : ২/১৬৫ ; ইবনে মাজাহ : হাদিস নং ২৯০১

[5] - إن الحج والعمرة فريضتان لا يضرك أيهما بدأت (দারা কুতনী : হাদিস নং ২১৭ )

[6] - أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل عن العمرة ، أ واجبة هي ، فقال: لا ، و أن تعتمروا أفضل (আহমদ, তিরমিযি )

আরাফা দিবস, ও ১০, ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ্জ এই পাঁচ দিন উমরা করা উচিৎ নয়। তবে বছরের বাকি দিনগুলোতে যে কোনো সময় উমরা আদায়ে কোনো সমস্যা নেই।

হজ্জের মীকাতের বর্ণনা আগেই গিয়েছে। উমরাকারী যদি এই মীকাতের বাইরে থেকে আসে তাহলে মীকাত থেকে এহরাম বেঁধে আসতে হবে।[1] উমরাকারী যদি হেরেমের অভ্যন্তরে থাকে তাহলে হেরেম এর এরিয়া থেকে বাইরে যেতে হবে। হিল্ল থেকে এহরাম বাঁধতে হবে। সবচেয়ে নিকটবর্তী হিল্ল হল তানয়ীম, যেখানে বর্তমানে মসজিদে আয়েশা রয়েছে।

[1] - দেখুন মুসলিম : হাদিস নং ১১৮১
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে