সিজদায় গিয়ে মহানবী (ﷺ) এক এক সময়ে এক এক রকম দুআ পাঠ করতেন। তাঁর বিভিন্ন দুআ নিম্নরুপ:-

  1. سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلى। (সুবহা-না রাব্বিয়্যাল আ’লা)

অর্থ- আমি আমার মহান প্রভুর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। ৩ বার বা ততোধিক বার। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৮৫নং, দারাক্বুত্বনী, সুনান, ত্বাহা, বাযযার, ত্বাবারানী)

  1. سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلى وَ بِحَمْدِهِ

উচ্চারণ:- সুবহা-না রাব্বিয়্যাল আ’লা অবিহামদিহ্‌।

অর্থ- আমি আমার সুমহান প্রভুর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। ৩ বার। (আবূদাঊদ, সুনান , আহমাদ, মুসনাদ, দারাক্বুত্বনী, সুনান, বায়হাকী ২/৮৬, ত্বাবারানী, মু’জাম)

  1. سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلاَئِكَةِ وَالرُّوْحِ

উচ্চারণ:- সুব্বূহুন ক্বুদ্দূসুন রাব্বুল মালা-ইকাতি অররুহ।

অর্থ- অতি নিরঞ্জন, অসীম পবিত্র ফিরিশ্‌তামন্ডলী ও জিবরীল (আহমাদ, মুসনাদ) এর প্রভু (আল্লাহ)। (মুসলিম)

  1. سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ رَبَّنَا وَ بِحَمْدِكَ اللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ

উচ্চারণ:- সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রব্বানা অবিহামদিকা,আল্লা-হুম্মাগ ফিরলী।

অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি, হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাকে মাফ কর। (বুখারী, মুসলিম)

  1. اَللّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ آمَنْتُ وَ لَكَ أَسْلَمْتُ وَ أَنْتَ رَبِّىَ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِيْ خَلَقَهُ وَ صوَّرَهُ فَأَحْسَنَ صُوَرَهُ وَ شَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাত্তু অ বিকা আ-মানতু অ লাকা আসলামতু অ আন্তা রাব্বী, সাজাদা অজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু অ স্বাউওয়ারাহু ফাআহ্‌সানা স্বুয়ারাহু অ শাক্বা সামআহু অ বাস্বারাহু ফাতাবা রাকাল্লা-হু আহ্‌সানুল খা-লিক্বীন।

অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য সিজদাবনত, তোমাতেই বিশ্বাসী, তোমার নিকটেই আত্মসমর্পণকারী, তুমি আমার প্রভু। আমার মুখমণ্ডল তাঁর উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, ওর আকৃতি দান করেছেন এবং আকৃতি সুন্দর করেছেন। ওর চক্ষু ও কর্ণকে উদগত করেছেন। সুতরাং সুনিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান! (মুসলিম, সহীহ ৭৭১, আবূদাঊদ, সুনান ৭৬০ নং, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ)

  1. اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذَنْبِيْ كُلَّهُ وَ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ وَعَلاَنِيَّتَهُ وَسِرَّهُ

    উচ্চারণ- আল্লা-হুম্মাগফিরলী যামবী কুল্লাহ্‌, অদিক্বাহু অজিল্লাহ্‌, অআউওয়ালাহু অ আ-খিরাহ্‌, অ আলা-নিয়্যাতাহু অসির্রাহ্‌।

অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি আমার কম ও বেশী, পূর্বের ও পরের, প্রকাশিত ও গুপ্ত সকল প্রকার গুনাহকে মাফ করে দাও। (মুসলিম, সহীহ ৪৮৩নং, আআহমাদ, মুসনাদ)

  1. سَجَدَ لَكَ سَوَادِيْ وَخِيَالِيْ، وَآمَنَ بِكَ فُؤَادِيْ، أَبُوْءُ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ، هذِيْ يَدِيْ وَمَا

جَنَيْتُ عَلى نَفْسِيْ

উচ্চারণ:- সাজাদা লাকা সাওয়া-দী অ খিয়ালী অ আ-মানা বিকা ফুআদী, আবূউবিনি’মাতিকা আলাইয়্যা।হা-যী য়্যাদী অমা জানাইতু আলা নাফসী।

অর্থ- আমার দেহ্‌ ও মন তোমার উদ্দেশ্যে সিজদাবনত, আমার হৃদয় তোমার উপর বিশ্বাসী। আমি আমার উপর তোমার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। এটা আমার নিজের উপর অত্যাচারের সাথে (তোমার জন্য) আমার আনুগত্য। (হাকেম, বাযযার, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১২৮)

  1. তাহাজ্জুদের নামাযের সিজদায় নিম্নের দুআগুলি পাঠ করা উত্তম।

سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ، لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ،

উচ্চারণ- সুবহা-কাল্লা-হুম্মা অ বিহামদিকা লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত।

অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি, তুমি ছাড়া অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই। (মুসলিম, সহীহ ৪৮৫নং, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ)

  1. سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ

উচ্চারণ:- সুবহা-না যিল জাবারুতি অল মালাকূতি অল কিবরিয়া-ই অল আযামাহ্‌।

অর্থ- আমি প্রবলতা, সার্বভৌমত্ব, গর্ব ও মাহাত্মের অধিকারী (আল্লাহর) পবিত্রতা ঘোষণা করি। (আবু দাউদ, নাসাঈ)

  1. اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ

উচ্চারণ- আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা আসরারতু অমা আ’লানতু।

অর্থ- হে আল্লাহ! আমার অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য পাপসমূহ ক্ষমা করে দাও। (নাসাঈ, সুনান ১০৭৬ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইবনে আবী শাইবা)

  1. اَللّهُمَّ اجْعَلْ فِيْ قَلْبِيْ نُوْراً وَّ فِيْ لِسَانِيْ نُوْراً وَّفِيْ سَمْعِيْ نُوْراً وَّفِيْ بَصَرِيْ نُوْراً وَّ مِنْ فَوْقِيْ نُوْراً وَّمِنْ تَحْتِيْ نُوْراً وَّعَنْ يَّمِيْنِيْ نُوْراً وَّعَنْ شِمَالِيْ نُوْراً وَّمِنْ بَيْنِ يَدَىَّ

نُوْراً وَّمِنْ خَلْفِيْ نُوْراً وَّاجْعَلْ فِيْ نَفْسِيْ نُوْراً وَّأَعْظِمْ لِيْ نُوْراً

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মাজ্‌আল ফী ক্বালবী নূরাঁউঅফী লিসা-নী নূরাঁউঅফী সাময়ী নূরাঁউঁ অফী বাস্বারী নূরাঁউঅমিন ফাউক্বী নূরাঁউঅমিন তাহ্‌তী নূরাঁউঅ আঁই য়্যামীনী নূরাঁউঅ আন শিমা-লী নূরাঁউঅমিন বাইনি য়্যাদাইয়্যা নূরাঁউঅমিন খালফী নূরাঁউঅজ্‌আল ফী নাফসী নূরাঁউঅ আ’যিম লী নূরা।

অর্থ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয় ও রসনায় কর্ণ ও চক্ষুতে, ঊর্ধ্বে ও নিম্নে, ডাইনে ও বামে, সম্মুখে ও পশ্চাতে জ্যোতি প্রদান কর। আমার আত্মায় জ্যোতি দাও এবং আমাকে অধিক অধিক নূর দান কর। (মুসলিম, সহীহ ৭৬৩, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৭৩ নং, আআহমাদ, মুসনাদ, ইবনে আবী শাইবা)

  1. اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ وَ أَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلى نَفْسِكَ

উচ্চারণ- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিক, অবিমুআফা-তিকা মিন উক্বূবাতিক, অ আঊযু বিকা মিন্‌কা লা উহস্বী ষানা-আন আলাইকা আন্তা কামা আষনাইতা আলা নাফসিক।

অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার সন্তুষ্টির অসীলায় তোমার ক্রোধ থেকে, তোমার ক্ষমাশীলতার অসীলায় তোমার শাস্তি থেকে এবং তোমার সত্তার অসীলায় তোমার আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার উপর তোমার প্রশংসা গুনে শেষ করতে পারি না, যেমন তুমি নিজের প্রশংসা নিজে করেছ। (মুসলিম, ইবনে আবী শাইবা, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৫৩, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৩৮৪১ নং)

রুকূ ও সিজদাতে কুরআন পাঠ করতে মহানবী (ﷺ) নিষেধ করতেন এবং সিজদাতে অধিকাধিক দুআ করতে আদেশ করতেন। আর এ কথা রুকূর বর্ণনায় আলোচিত হয়েছে। তিনি আরো বলতেন, “সিজদাহ অবস্থায় বান্দা আপন প্রভুর সবচেয়ে অধিক নিকটতম হয়ে থাকে। সুতরাং ঐ অবস্থায় তোমরা বেশী-বেশী করে দুআ কর।” (মুসলিম, সহীহ ৪৮২, আআহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪৫৬নং)

উল্লেখ্য যে, সিজদায় প্রার্থনামূলক দুআ করার জন্য ৪, ৬, ১০, ১১ ও ১২নং যিক্‌র পঠনীয়। এ ছাড়া কুরআনী দুআ বা অন্য কোন সহীহহাদীসের দুআ পাঠ করা দূষণীয় নয়। যেমন সিজদায় কুরআন পাঠ নিষিদ্ধ হলেও দুআ হিসাবে কোন কুরআনী আয়াত দ্বারা প্রার্থনা করা নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১৮৪-১৮৫)