নবী-রসূলগণের দা'ওয়াতের পদ্ধতি দা'ওয়াত ও তাবলীগ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল ১ টি
আভ্যন্তরীণ মাধ্যমগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

প্রথম প্রকার: বাণীর মাধ্যমে দা'ওয়াত ও তাবলীগ:

দাওয়াতের কাজ বেশীর ভাগ কথার মাধ্যমে হয়ে থাকে। অতএব, দায়ীকে বাণীর গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকেফহাল হতে হবে। মানুষের অন্তরে একটি ভাল কথার কি যে প্রভাব হতে পারে তার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। বাণীই হচ্ছে মানুষের নিকট হক-সত্য পৌঁছানোর আসল মাধ্যম।

বাণীর জন্য কিছু নিয়ম-নীতি:

১. বাণী মাদ'উর জন্য সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হওয়া জরুরি।

২. বেদাতী শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। আর কুরআন-হাদীসে ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ব্যবহৃত শব্দ ব্যবহার করা ওয়াজিব। যে সকল শব্দে হক ও বাতিল উভয়টির আশঙ্কা রয়েছে তার ব্যবহার পরিত্যাগ করা জরুরি।

৩. ধীরে ধীরে কথা বলা এবং তাড়াহুড়া না করা, যাতে করে মাদ'উ স্পষ্ট বুঝতে পারে। রসূলুল্লাহ ﷺ একটি কথাকে তিনবার করে বলতেন যেন শ্রোতা সহজে বুঝতে পারে। [বুখারী]

৪. দায়ী যেন মাদ'উর উপরে বড়ত্ব বিস্তার এবং তাকে ছোট করে দেখা কিংবা নিজের গুরুত্ব প্রকাশ না করেন। বরং তার জন্য ভদ্রভাবে বিনয়ের সাথে কল্যাণকামী হিসাবে কথা বলবেন। এ দ্বারা মাদ'উ উপলব্ধি করতে পারবে যে, দায়ী একমাত্র তারই হেদায়েত ও উপকার কামনা করছেন।

৫. কথার মধ্যে ভালবাসা ও নম্রতার প্রকাশ করবেন। মাদ'উকে অতি আপন করে কথা বলবেন।

৬. সর্বদা মাদ'উর হিম্মতকে জাগানোর চেষ্টা করবেন। তার মধ্যে কোন কিছু ভাল থাকলে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে তা উল্লেখ করে প্রশংসা করবেন।

বাণীর প্রকারসমূহ:

খুতবা: প্রচারের জন্য খুতবা এক উত্তম মাধ্যম। খুত্বা মাদউর সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন বিষয়ে হওয়া জরুরি। খুৎবার জন্য কতগুলি জিনিসের উপর দায়ীকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। যেমন:

১. কুরআনের আয়াত ও হাদীসে নববী উল্লেখ করবে এবং নবী রসুলগণ ও সাহাবা কেরামের বাস্তব আমলের চিত্র তুলে ধরবেন। কেননা, ইহা বুঝা ও আমলের জন্য বড় উপকারী।

২. কুরআন হাদীসের ঘটনা উল্লেখ এবং উদাহরণ পেশ করবেন: কারণ ইহা রসূলুল্লাহ ﷺ করতেন।

৩. খুৎবা যেন লম্বা না হয় তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। খুৎবা ছোট এবং সালাত লম্বা করা চালাক ও বুদ্ধিমান খতীবের পরিচয় যা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

৪. ভাষা যেন প্রাঞ্জল ও সহজ হয়: কেননা, সকল শ্রোতা এক মানের নয়। ভাষায় যেন আগের সাথে পরের মিল থাকে। শুরুতে শ্রোতাদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রবাহমান কোন ঘটনা দিয়ে খুৎবা আরম্ভ করা উপকারী।

৫. মাদ'উর কোন রোগটি চিকিৎসা করা বেশি প্রয়োজন তার প্রতি লক্ষ্য রেখে দায়ী দাওয়াতের ডোজ ঔষধ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। উৎসাহিত করার প্রয়োজন হলে উৎসাহিত করবেন এবং ভয় প্রদর্শনের প্রয়োজন হলে ভয় প্রদর্শন করবেন।

৬. যে সমস্ত আয়াত বা হাদীস ব্যাখ্যা ছাড়া বুঝতে ভুল করতে পারে, সে সকল আয়াত বা হাদীস ব্যাখ্যা ছাড়া উল্লেখ করা চলবে না। বরং প্রয়োজন মোতাবেক ব্যাখ্যা করবেন যাতে করে মাদ'উ সঠিক তথ্য বুঝতে পারে।

৭. তাড়াতাড়ি ও অপ্রয়োজনে শব্দ উঁচু করবেন না। উত্তম হলো কাগজে না লিখে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে মুখস্ত খুৎবা প্রদান করা।

       

বক্তৃতা: কোন একটি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য বক্তৃতা করার প্রয়োজন হয়। এখতেলাফ তথা মতানৈক্য আছে এমন কোন বিষয়ে আলোচনা করা চলবে না। অনুরূপভাবে সূক্ষ্ণ বিষয়েও আলোচনা করা যাবে না। বর্তমানে স্যাটেলাইট চ্যানেলে বা অনলাইনে বক্তৃতা দেয়া যেতে পারে। অনুরূপভাবে ইউটিউবে ডাউনলোড করে ব্যাপকভাবে প্রচার করা যেতে পারে। এছাড়া অডিও এবং ভিডিও সিডি করেও প্রচার করা সম্ভব।

পর্যালোচনা ও বিতর্ক: ইহা দু'জন অথবা আরো বেশি লোকের মধ্যে হয়ে থাকে। কখনো মাদ'উ সহজভাবে গ্রহণ করতে না চাইলে বির্তকের মাধ্যমে তার সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, দায়ী যেন কখনো উঁচু শব্দে কথা না বলেন। নম্রতা, ভদ্রতা ও বিনয়ী এবং আদবের সাথে বিতর্ক করবেন। কোন ক্রমেই শক্ত কথা বা কঠোরতা অবলম্বন করা চলবে না। মাদ'উ কখনোায়ীকে কোন খারাপভাবে দোষারোপ করতে পারে। যেমন: বোকা, পাগল ও কবি ইত্যাদি। সব চেষ্টা তদবীর বিফলে গেলে আল্লাহর উপর ফয়সালা ছেড়ে দিবেন এবং মাদ'উর হেদায়েতের জন্য বেশি বেশি করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন।

লিখিত আকারে: ইহা চিঠি-পত্র আকারে বা বই আকারে কিংবা প্রবন্ধ আকারে আবার অনুবাদ করেও হতে পারে। এর দ্বারা বহু মানুষকে উপকৃত করা যেতে পারে। সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা উচিত; কেননা, মানুষ বিভিন্ন শ্রেণী ও বিভিন্ন স্তরের রয়েছে।