নবী-রসূলগণের দা'ওয়াতের পদ্ধতি দা'ওয়াত ও তাবলীগ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল ১ টি

অনেক সময় একক ব্যক্তির জন্য যা করা সম্ভব তা জামাতের জন্য করা সম্ভব নয়। তাই কাউকে এককভাবে দাওয়াতের গুরুত্ব সর্বদা বেশি। কারণ অনেক সময় একাকী দা'ওয়াতে যতটুকু প্রভাব পড়ে ততটুকু জামাতবদ্ধভাবে পড়ে না। তাই নবী ﷺ মক্কায় এককভাবে দাওয়াতের যে প্রভাব ব্যক্তিদের উপরে পড়েছিল তার বাস্তব চিত্র ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণ অক্ষরে লেখা রয়েছে।

এককভাবে দা'ওয়াতে পূর্ণ ব্যক্তির তরবিয়ত করা সম্ভব। কিন্তু অধিক মানুষের জন্য তা সম্ভব না। কারণ একজনের ভুল-ভ্রান্তি যেভাবে দূর করা সম্ভব তা কোন এক গোষ্ঠীর জন্য সম্ভব না। এ ছাড়া এককভাবে বাস্তব আমলের শিক্ষা-দীক্ষা দেয়া এবং সর্বপ্রকার সংশয় দূর করা সহজ। যারা জামাতবদ্ধ দা'ওয়াত থেকে ভেগে যায় বা ভাগানো হয় তাদের কাছে এককভাবে দা'ওয়াত পৌঁছানো সম্ভব। আর একক ব্যক্তিকে দা'ওয়াত করতে বেশি জ্ঞানের ও বিশেষ দায়ীর প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া যে কোন স্থানে ও অবস্থাতে এককভাবে দা'ওয়াত করা যায়।

যেসব অবস্থায় এককভাবে দা'ওয়াত ফলপ্রসূ:

১. সামাজিক মর্যাদাবান মাদ'উর জন্য:

শরিয়তের জ্ঞান না থাকার কারণে অনেক সময় সামাজিক মর্যাদাবান ব্যক্তিরা সবার সাথে বসে কিছু শুনতে রাজি হয় না। তাই তাদেরকে এককভাবে দাওয়াত ফলদায়ক হয়।

২. অসৎসঙ্গী-সাথী ব্যক্তির জন্য:

যেসব ব্যক্তির সঙ্গী-সাথী অসৎ তাদেরকে এককভাবে দা'ওয়াত ছাড়া তার মাঝে প্রভাব ফেলা সম্ভব নয়। তাই একাকী কোন ভাল স্থানে বা অবস্থায় নিয়ে দাওয়াত করলে আশানুরূপ কাজ হতে পারে।

৩. মাদউর মানসিক অবস্থার জন্য:

কোন সময় মাদ'উর মানসিক অবস্থা এমন হয় যে, সে মনে করে ভাল লোকদের সাথে মেশা সম্ভব নয়; কারণ তাঁদের ও আমার মাঝে অনেক দূরত্ব। অথবা শয়তান তার উপর প্রভাব বিস্তার করেছে তাই এমনটা ভাবে। এ অবস্থায় একাকী দা'ওয়াত বড়ই ফলপ্রদ।

৪. মাদ'উর বিশেষ ত্রুটির চিকিৎসার জন্য:

দা'ওয়াত যখন মাদউর বিশেষ কোন ত্রুটি চিকিৎসা করা উদ্দেশ্য হয়, তখন তার সাথে একাকী বসে পর্যালোচনা করে বুঝিয়ে দূর করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া সবার সামনে বা সাথে এ ধরণের উদ্দেশ্য হাসিল করা যায় না।

এককভাবে দা'ওয়াতের স্তরসমূহ:

১. সর্বপ্রথম দায়ী মাদউর সাথে সম্পর্ক গড়বেন; যাতে করে সে অনুভব করে যে দায়ী তার গুরুত্ব দিচ্ছেন। মাঝে মধ্যে তার খবরা-খবর নিবেন। দেখতে না পেলে তার ব্যাপারে প্রশ্ন এবং অসুস্থ হলে সাক্ষাত করবেন। আর এসব দাওয়াতের পথ সুগম করার জন্য। এরপর যখন মনের দিক থেকে নিকট হয়ে যাবে এবং আত্মার মহব্বত সৃষ্টি হবে। মাদ'উ যখন দা'ওয়াত কবুলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে তখন দেরী না করে সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে ভুল করবে না। মনে রাখতে হবে যে, দায়ী এ প্রথম স্তরে মাদ'উর সাথে যতটুকু উত্তীর্ণ হবেন। ততটুকু দাওয়াতের প্রভাব বিস্তার ও কবুলের আশা করতে পারবেন। এ স্তরে যে কোন তাড়াহুরা মাদ'উর মাঝে ঘৃণা ও অবজ্ঞা সৃষ্টি হতে পারে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

২. দায়ী মাদউর ঈমান মজবুত করার জন্য কাজ করবেন। অধিকাংশ সময় ঈমান থাকে কিন্তু ব্যক্তি বিশেষে দুর্বল ও সবলের ব্যাপারটা লক্ষণীয়। দায়ী যখন এ বিষয়টির চিকিৎসা করতে চাইবেন তখন সরাসরি ঈমান ব্যাপারে প্রবেশ করবেন না। বরং বিভিন্ন ঘটনাবলীর সুযোগ গ্রহণ করে তার সাথে কুরআন-হাদীসের দলিলগুলো সংযুক্ত করার চেষ্টা করবেন। যেমন: কারো নবজাত সন্তান জন্মগ্রহণের সুযোগে তার সাথে আদম -এর সৃষ্টি নিয়ে কথা বলা। এরপর আল্লাহ তা'য়ালা আদম ও হাওয়া থেকে কিভাবে মানুষ সৃষ্টি করেন। মায়ের রেহেমকে কিভাবে আল্লাহ তা'য়ালা ভ্রূণের জন্য উপযুক্ত স্থান বানালেন এবং কিভাবে সেখানে তার জন্য দীর্ঘ ৯ মাস খাদ্য সরবারহ করেন। এরপর কিভাবে মায়ের দুধ পান------। এসবের দ্বারা মাদ'উর ঈমান বাড়তে শুরু করবে এবং কিছু বললে গ্রহণ করতে পারে বলে ধারণা হলে দায়ী তৃতীয় স্তরে চলে যাবেন।

৩. এ স্তরে দা'য়ী সর্বপ্রথম মাদ'উর আকীদার প্রতি দৃষ্টি দেবেন। যদি আকীদা সঠিক থাকে তবে তার এবাদত, চালচলন ও বাহ্যিকরূপ পরিবর্তনের জন্য পরামর্শ দান করবেন। যদি তার এবাদতে অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকে বা ফরজ সালাত মসজিদে জামাতে আদায় করে না তবে সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেবেন। অনুরূপভাবে ফরজ এবাদতগুলো এবং ওযু ও সালাতের সঠিক পদ্ধতি শিক্ষাবেন। এ ছাড়া আল্লাহর অসন্তুষ্টির কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য নির্দেশ করবেন। এ সময় মাদ'উকে আকীদা, ঈমান এবং উৎসাহ প্রদান ও ভয় প্রদর্শনের বিষয়ে কিছু উপকারী বই-ক্যাসেট ও সিডি হাদিয়া বা ধারে দিয়ে পড়ার জন্য পরামর্শ দেবেন। এ ছাড়া তার আশে পাশের সৎযুবকদেরকে তার সাথে উঠা-বসার জন্য নির্দেশ করবেন যাতে করে অসৎযুবকরা সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে। আর এর দ্বারা আল্লাহ চাহে সে মাদ'উর দৃঢ়তার প্রতি অব্যাহত থাকা আশা করা যাবে।

৪. এ স্তরে দা'য়ী মাদউকে দ্বীন একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা সে ব্যাপারে অবহিত করাবেন। ছোট-বড় সব বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনা রয়েছে তা জানা ও বুঝার জন্য প্রচেষ্টা করার প্রতি উৎসাহিত করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে সামনের দিকে পরিচালিত করতে থাকবেন।

আভ্যন্তরীণ মাধ্যম:

ঐ সকল মাধ্যম যার দ্বারা সরাসরি দা'ওয়াত করা হয়।

ইহা তিনভাবে হতে পারে যথা:

(১) বাণীর মাধ্যমে।

(২) কাজের মাধ্যমে।

(৩) উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে।

বাণীর মাধ্যমে কয়েকভাবে হতে পারে যথা:

(ক) খুতবা।

(খ) ক্লাস।

(গ) ভাষণ ও ওয়াজ-নসীহত। ইহা অডিও-ভিডিও ক্যাসেট-সিডি করেও হতে পারে।

(ঘ) প্রশ্নোত্তর ও তর্ক-বিতর্ক।

(ঙ) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ।

(চ) সভা-সেমিনার।

(ছ) লিখিত আকারে যথা: বই-পুস্তক, প্রবন্ধ, লীফলেট, পত্রিকা, ম্যাগাজিন ইত্যাদি দ্বারা।

(জ) শরিয়তের ফতোয়া ও মাসায়েল ইত্যাদি দ্বারা।