পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ২. ২. সৃষ্টিজগত ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মঙ্গলময় না অমঙ্গলময়?

আদিপুস্তকে পৃথিবী সৃষ্টির বর্ণনা শেষে লেখেছে: ‘‘পরে ঈশ্বর আপনার নিমিত্ত বস্ত্ত সকলের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম (very good)। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে ষষ্ঠ দিবস হইল।’’ (আদিপুস্তক ১/৩১)

 জুবিলী বাইবেল: ‘‘পরমেশ্বর তাঁর তৈরি করা সমস্ত কিছুর দিকে তাকিয়ে দেখলেন; আর সত্যি, সেই সমস্ত কিছু খুবই মঙ্গলময়...।’’ মো-০৬: ‘‘আল্লাহ তাঁর নিজের তৈরি সব কিছু দেখলেন। সেগুলো সত্যিই খুব চমৎকার হয়েছিল।’’

এ থেকে আমরা জানছি যে, সৃষ্টিজগত স্রষ্টার দৃষ্টিতে very good: অতি উত্তম, মঙ্গলময় ও চমৎকার বলে প্রতিভাত হল। কিন্তু এর বিপরীতে আদিপুস্তকেরই পরবর্তী ৬ অধ্যায় বলছে যে, ঈশ্বরের সৃষ্টি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অতি মন্দ, অমঙ্গময় ও অ-চমৎকার বলে গণ্য হয়। ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির জন্য অনুশোচনা ও অনুতাপে দগ্ধ হন এবং অন্তরের ব্যাথায় আক্রান্ত হন: ‘‘আর সদাপ্রভু দেখিলেন, পৃথিবীর মানুষের দুষ্টতা বড়, এবং তাহার অমত্মঃকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ। তাই সদাপ্রভু পৃথিবীতে মনুষ্যের নির্মাণ প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন (repented), ও মনঃপীড়া পাইলেন (grieved at his heart)।’’ (আদিপুস্তক ৬/৫-৬)

জুবিলী বাইবেল: ‘‘পৃথিবীতে যে তিনি মানুষকে নির্মাণ করলেন, তার জন্য প্রভুর দুঃখ হল, তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হলেন।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘মাবুদ অন্তরে ব্যাথ্যা পেলেন। তিনি পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন বলে দুঃখিত হয়ে বললেন।’’

সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ক্ষেত্রে এ বড় অদ্ভুত বৈপরীত্য! তিনিই সৃষ্টিকে খুব ভাল বলে গণ্য করছেন এবং তিনিই কিছুদিন পরে সে সৃষ্টিকে মন্দ ও অমঙ্গলময় বলে গণ্য করছেন এবং অনুতপ্ত, দুঃখিত, ব্যথিত ও মনক্ষুণ্ণ হচ্ছেন!

আমেরিকান গবেষক স্কট বিডস্ট্রাপ (Scott Bidstrup) ‘খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা আপনাকে যা জানতে দিতে চায় না: বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তির একটা সংক্ষিপ্ত সমীক্ষা’ (What The Christian Fundamentalist Doesn't Want You To Know: A Brief Survey of Biblical Errancy) প্রবন্ধে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, খ্রিষ্টান প্রচারকরা এ বৈপরীত্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আদম ও হাওয়ার পাপে লিপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সৃষ্টিজগৎ ‘অত্যন্ত সুন্দর’ ছিল। আদম-হাওয়ার পাপের সময়ে আর সৃষ্টি ‘অত্যন্ত সুন্দর’ থাকল না। পাপ সংঘটিত হওয়ার পরে সৃষ্টি অমঙ্গলময় হয়ে গেল। এরপর এ ব্যাখ্যা পর্যালোচনা করে তিনি বলেন:

“If the fundamentalist's argument were true, then obviously God must not have foreseen the consequences of Eve's eating of the fruit; otherwise he would have known from the outset that there was a problem. And 6:6 has god repenting. Repentance implies mistakenness at minimum, so their argument would undermine the claim of God's perfection. The argument that the sin had not yet occurred, and thus the creation was still perfect denies that creation isn't perfect if it isn't going to remain so.”

‘‘মৌলবাদীদের যুক্তি যদি সত্য হয় তবে সুস্পষ্টতই প্রমাণ হয় যে, ঈশ্বর পূর্ব থেকে হাওয়ার ফল খাওয়ার বিষয়টা জানতে পারেননি। নাহলে তিনি জানতে পারতেন যে, এ সৃষ্টির মধ্যে সমস্যা বিদ্যমান। আর আদিপুস্তক ৬/৬-এ ঈশ্বর অনুতপ্ত হয়েছেন। আর অনুতাপের ন্যূনতম কারণ ভুল। কাজেই মৌলবাদীদের যুক্তি ঈশ্বরের পূর্ণতার সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের দাবি, পাপ সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত সৃষ্টি সুন্দর ও নিখুঁত ছিল। তাঁদের দাবি সঠিক নয়; কারণ যে সৃষ্টি সুন্দর থাকতে পারে না সে সৃষ্টি তো সুন্দর বা নিখুঁত নয়।’’ (http://www.bidstrup.com/bible2.htm)