কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা চতুর্থ অধ্যায়: আরকানুল ঈমান ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৪. ৬. ২. ৫. মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মফলে বিশ্বাস

মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও তার ইচ্ছাধীন কর্মফলের বিশ্বাসের উপরেই ইসলামের অন্যান্য বিধিবিধানের ভিত্তি। মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছায় যে কর্ম করে সে শুধু তারই পুরস্কার বা শাস্তি লাভ করে। কুরআন ও হাদীসের আলোকে প্রত্যেক মুমিন বিশ্বাস করেন যে, মানুষকে আল্লাহ বিবেক, বিচার শক্তি ও জ্ঞান দান করেছেন। মানুষ তার নিজ ইচ্ছায় কর্ম করে। তবে তার কর্ম আল্লাহর জ্ঞান ও ইচ্ছা অনুসারে সংঘটিত হয়। কুরআন কারীমের মহান আল্লাহ বারংবার জানিয়েছেন যে, তিনি মানুষকে তার স্বাধীন ইচ্ছা, বিবেক ও বিচারবুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কাজেই সে তার বিচারবুদ্ধি দিয়ে যে কর্ম করবে তার ফল ভোগ করবে। মহান আল্লাহ বলেন:

إِنَّا خَلَقْنَا الإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا

‘‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রুবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য; এ জন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথ নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।’’[1]

أَلَمْ نَجْعَلْ لَهُ عَيْنَيْنِ وَلِسَانًا وَشَفَتَيْنِ وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ

‘‘আমি কি তার জন্য সৃষ্টি করি নি দু’চক্ষু? আর জিহ্বা ও দু'ওষ্ঠ? এবং আমি তাকে কি দু’টি পথই দেখাই নি?’’[2]

وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا

‘‘শপথ মানুষের এবং তাঁর, যিনি তকে সুঠাম করেছেন। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও তার সৎক©র্মর জ্ঞান দান  করেছেন। সেই সফলকাম হবে, যে নিজকে পবিত্র করবে। এবং সেই ব্যর্থ হবে, যে নিজকে কলুষিত করবে।’’[3]

তাকদীরে বিশ্বাস অর্থ আল্লাহর জ্ঞান ও আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা উভয় বিশেষণে সমানভাবে বিশ্বাস করা। আল্লাহর তাকদীর বা নির্ধারণে অবিশ্বাস করলে আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতায় অবিশ্বাস করা হয়। আর মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় অবিশ্বাস করলে আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা ও করুণায় অবিশ্বাস করা হয়। এ অবিশ্বাসের শুরু মহান আল্লাহর বিশেষণ ও কর্মকে মানুষের বিশেষণ বা কর্মের মত বলে বিশ্বাস করা থেকে। আল্লাহর সকল বিশেষণ সমানভাবে প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস করলে এ বিষয়ে কোনো অস্পষ্টতা থাকে না।

সম্ভবত একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝানো যাবে। আল্লাহর নির্ধারণ হলো যে, বিষ মৃত্যু আনে। মানুষকে আল্লাহ বিবেক ও জ্ঞান দান করেছেন যে, বিষ মৃত্যু আনে। এরপরও কেউ বিষ পান করলে সে মৃত্যু বরণ করবে। তবে তা আল্লাহর ইচ্ছা ও জ্ঞান অনুসারে ঘটবে। আল্লাহ তাঁর অনন্ত জ্ঞানে জানেন যে, নির্দিষ্ট ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে বা না জেনে বিষ পান করবে। তিনি তাঁর এ জ্ঞান ‘কিতাব মুবীন’ বা ‘লাওহে মাহফূযে’ লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে ঐ ব্যক্তির ইচ্ছা শক্তি হরণ করে তাকে বিষপান থেকে বিরত রাখতে পারেন, তেমনি তিনি ইচ্ছা করলে বিষের ক্রিয়া নষ্ট করে বিষপানকারীকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারেন। আল্লাহর জ্ঞান, লিখনি বা তাক্বদীর ও নির্ধারণ অনুসারে বিষপানকারীর মৃত্যু আসবে অথবা আসবে না। এবং বিষপানকারী বিষপানে তার ইচ্ছা, অনিচ্ছা ও কর্ম অনুসারে কর্মফল লাভ করবে।

[1] সূরা (৭৬) ইনসান/ দাহর: ২-৩ আয়াত।
[2] সূরা (৯০) বালাদ: ৮-১০ আয়াত।
[3] সূরা (৯১) শামস: ৮-১০।