রিসালাতের সাক্ষের অবিচ্ছেদ্য অংশ মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সম্মান করা। তিনি সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, মানবজাতির নেতা, নবী-রাসূলদের প্রধান। তিনি আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা, তাঁর হাবীব, তাঁর সবচেয়ে সম্মানিত বান্দা, সর্বযুগের সকল মানুষের নেতা।

অন্যান্য নবী-রাসূলের সাধারণ মর্যাদা সবই তিনি লাভ করেছেন। তিনি নিষ্পাপ, মনোনীত ও সকল কলুষতা থেকে মুক্ত ছিলেন। নবুয়ত প্রাপ্তির আগে ও নবুয়তের পরে সর্ব অবস্থায় আল্লাহ তাকে সকল পাপ, অন্যায় ও কালিমা থেকে রক্ষা করেছেন। এছাড়াও আল্লাহ তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন।

কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াতে তাঁর মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর প্রতি আল্লাহর অপার অনুগ্রহের বিষয়ে আল্লাহ বলেন:

وَلَوْلا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّتْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ أَنْ يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِنْ شَيْءٍ وَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا.

‘‘তোমার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তাদের একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করতে চাইত; কিন্তু তারা নিজেদেরকে ছাড়া আর কাউকে পথভ্রষ্ট করে না, এবং তোমার কোনোই ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব এবং হিকমাত অবতীর্ণ করেছেন এবং তুমি যা জানতে না তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তোমার প্রতি আল্লাহর মহা-অনুগ্রহ রয়েছে।’’[1]

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:

وَلَئِنْ شِئْنَا لَنَذْهَبَنَّ بِالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ ثُمَّ لا تَجِدُ لَكَ بِهِ عَلَيْنَا وَكِيلا  إِلا رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ إِنَّ فَضْلَهُ كَانَ عَلَيْكَ كَبِيرًا

‘‘ওহীর মাধ্যমে আমি তোমার প্রতি যা নাযিল করেছি তা আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যাহার করে নিতে পারতাম, সে অবস্থায় তুমি আমার বিরুদ্ধে কোনো সাহায্যকারী বা কর্মবিধায়ক পেতে না। কিন্তু তোমার প্রতিপালকের দয়া; নিশ্চয় তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ মহান।’’[2]

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ

‘‘আমি তো তোমাকে রাসূল বানিয়েছি কেবল বিশ্ব জগতের জন্য রহমত-রূপে।’’[3]

মহান আল্লাহ আরো বলেন:

أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ وَوَضَعْنَا عَنْكَ وِزْرَكَ الَّذِي أَنْقَضَ ظَهْرَكَ وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ

‘‘আমি কি তোমার বক্ষ তোমার কল্যাণে প্রশস্ত করে দেই নি? আমি অপসারণ করেছি তোমার ভার, যা ছিল তোমার জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক। এবং আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।’’[4]

তাঁর মর্যাদা বর্ণনা করে আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন:

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا

‘‘হে নবী, আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি, সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তার দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’’[5]

তাঁকে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন:

إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلا

‘‘নিশ্চয় আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। যেন তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং তাঁকে (রাসূলকে) সাহায্যকর এবং সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধায় তাঁর (আল্লাহর) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।’’[6]

সকল মানুষের ঊর্ধ্বে তাঁর সম্মান। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন:

النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ وَأُولُو الأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ

‘‘মুমিনদের নিকট নবী তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্টতর এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিনগণ ও মুহাজিরগণ অপেক্ষা যারা আত্মীয় তারা পরস্পরের ঘনিষ্টতর।’’[7]

এভাবে আল্লাহ সকলের ঊর্ধ্বে তাঁকে সম্মান দান করেছেন এবং কোনো ভাবে তাঁকে কষ্ট দান করা বা তার মনোকষ্টের কারণ হওয়া মুসলিমের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন। তাঁর বিশেষ মর্যদার অংশ হিসাবে তার মৃত্যুর পরে তার স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:

وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا

‘‘তোমাদের জন্য সংগত নয় যে, তোমরা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দিবে অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পত্নীদিগকে বিবাহ করবে। আল্লাহর নিকট তা ঘোরতর অপরাধ।’’[8]

অন্যান্য সকল মানুষের থেকে পৃথকভাবে সম্মানের সাথে তাঁকে ডাকতে হবে এবং তাঁর ডাকে সাড়া দিতে হবে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন:

لا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا

‘‘রাসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের প্রতি আহবানের মত গণ্য করো না।’’[9]

তাঁর সাথে আদব রক্ষার বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لا تَشْعُرُونَ  إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَى لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ

‘‘হে মুমিনগণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে কোনো বিষয়ে অগ্রসর হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের নিজেদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যে যেভাবে জোরে কথা বল সেরূপ জোরে বা সশব্দে তাঁর সাথে কথা বলো না; কারণ এতে তোমাদের কর্ম বিনষ্ট ও নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে। যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে নিজেদের কন্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরিশোধিত করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা-পুরস্কার।’’[10]

পাঠক, চিন্তা করুন! কত বড় সাবধানতার প্রয়োজন! কোনোভাবেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সামনে অগ্রণী হওয়া যাবে না। তাঁর কথার উপরে কথা বলা যাবে না। নিজেদের মতামত, যুক্তি, কর্ম, পছন্দ ইত্যাদি দিয়ে তাঁর আগে যাওয়া যাবে না। বরং মতামতে, কর্মে, ইবাদতে, দাওয়াতে, পছন্দে-অপছন্দে সকল বিষয়ে তাঁর পিছে থাকতে হবে এবং তাঁকে অনুসরণ করতে হবে। তাঁর সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করা যাবে না। তাঁর মত, কর্ম, রীতি, নির্দেশ কোনো কিছু মুমিনের নিকট পৌঁছালে মুমিন আর তার সামনে নিজের মতামত বা পছন্দ বিকল্প হিসেবে দাঁড় করান না। বরং নিজের মত ও পছন্দকে নীচু করে তাঁর মতকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করেন। এ-ই ঈমানের দাবি। এ-ই আল্লাহর নির্দেশ। না হলে আমাদের বড় বড় কথা, মহা মহা কর্ম আমাদের অজান্তে-অজ্ঞাতে নিষ্ফল হয়ে যাবে! কী করুণ পরিণতি!

বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর মর্যাদার কথা উম্মাতকে জানিয়েছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। নিজের অহংকার প্রকাশের জন্য নয়, উম্মাতকে তাদের বিশ্বাসের ও কর্মের দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্যই তিনি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি তাদেরকে জানিয়েছেন। ইতোপূর্বে আমরা এ অর্থে কয়েকটি হাদীস দেখেছি। আমরা দেখেছি যে, মহান আল্লাহ বিভিন্ন দিক থেকে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে অন্যান্য সকল নবী-রাসূল থেকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। এ বিষয়ক আরো কয়েকটি হাদীস আমরা এখানে আলোচনা করব। আনাস ইবনু মালিক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ خُرُوجًا إِذَا بُعِثُوا وَأَنَا خَطِيبُهُمْ إِذَا وَفَدُوا وَأَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا لِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَأَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي وَلا فَخْرَ

‘‘মানুষ যখন কিয়ামতের সময় পুনরুত্থিত হবে তখন আমিই সর্বপ্রথম বের হব, মানুষেরা যখন হাজিরা দেবে তখন আমিই তাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করব, যখন তারা নিরাশ হয়ে যাবে তখন আমিই তাদের সুসংবাদ প্রদান করব এবং সেদিন আমার হাতেই থাকবে প্রশংসার ঝান্ডা। আদম সন্তানদের মধ্যে আমার প্রতিপালকে কাছে আমিই সবচেয়ে সম্মানিত, আর এতে কোনো অহংকার নেই।’’[11]

আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ

‘‘কিয়ামদের দিন আমি আদম সন্তানদের নেতা, কবর ফুড়ে আমিই প্রথম পুনরুত্থিত হব, আমিই প্রথম শাফা‘আতকারী এবং আমার শাফা‘আতই প্রথম গ্রহণ করা হবে।’’[12]

আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلا فَخْرَ وَبِيَدِي لِوَاءُ الْحَمْدِ وَلا فَخْرَ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ يَوْمَئِذٍ آدَمَ فَمَنْ سِوَاهُ إِلا تَحْتَ لِوَائِي وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ تَنْشَقُّ عَنْهُ الأَرْضُ وَلا فَخْرَ

‘‘কিয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানদের নেতা, তবে এতে কোনো অহংকার নেই। আমার হাতেই প্রশংসার ঝান্ডা থাকবে, তবে এতে কোনো অহংকার নেই। আদম থেকে শুরু করে যত নবী আছেন তারা সবাই আমার ঝান্ডার নীচে সমবেত হবেন। আমিই প্রথম মাটি ফুড়ে পুনরুত্থিত হব, তবে এতে কোনো অহংকার নেই।[13]

তাঁর মর্যাদা সুপ্রাচীন। প্রথম মানব আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির সময়েই আল্লাহ তার জন্য নুবুওয়াত ও খাতিমুন্নাবিয়ীনের মর্যাদা সংরক্ষিত করেছেন। আবু হুরায়রা বলেন:

قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ قَالَ وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ

‘‘সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল, কখন আপনার জন্য নবুয়ত নির্ধরিত হয়েছে? তিনি বললেন: যখন আদম দেহ ও আত্মার মধ্যে ছিলেন।’’[14]

ইরবাদ ইবনু সারিয়া (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ فِي أُمِّ الْكِتَابِ لَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ وَسَأُنَبِّئُكُمْ بِتَأْوِيلِ ذَلِكَ (بِأَوَّلِ ذَلِكَ) دَعْوَةِ أَبِي إِبْرَاهِيمَ وَبِشَارَةِ عِيسَى قَوْمَهُ وَرُؤْيَا أُمِّي الَّتِي رَأَتْ أَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ لَهُ قُصُورُ الشَّامِ وَكَذَلِكَ تَرَى أُمَّهَاتُ النَّبِيِّينَ، صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ.

‘‘আদম যখন তাঁর কাদার মধ্যে ভূলুণ্ঠিত ছিলেন তখনই আমি আল্লাহর নিকট লাওহে মাহফূযের মধ্যে সর্বশেষ নবী ছিলাম। আমি তোমাদেরকে আমার প্রথম শুরুর কথা বলব: আমার পিতা ইব্রাহীমের (আঃ) দু‘আ, ঈসার (আঃ) জাতিকে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী এবং আমার আম্মার স্বপ্ন; তিনি দেখতে পান যে তাঁর ভিতর থেকে একটি নূর (আলো) নির্গত হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহকে আলোকিত করে তোলে। এভাবেই নবীগণের (আঃ) মায়েরা দেখেন।’’[15]

আবূ উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

إِنَّ اللَّهَ فَضَّلَنِي عَلَى الأَنْبِيَاءِ

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ নবীগণের উপরে আমাকে মর্যাদা দান করেছেন।’’[16]

কুরআন ও হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে ওসীলা, মাকাম মাহমূদ ও শাফা‘আত-এর মর্যাদা প্রদান করবেন। ওসীলা শব্দের অর্থ নৈকট্য। এ বিষয়ে আমরা পঞ্চম অধ্যায়ে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ। হাদীস শরীফ থেকে আমরা জানতে পারি যে, মহান আল্লাহর নিকটতম ও সর্বোচ্চ মর্যাদার স্থানকে ‘‘ওসীলা’’ বলা হয়, যা মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে প্রদান করবেন। আমর ইবনূল আস (রা) এবং আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন;

إِذَا سَمِعْتُمْ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ لِي الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ (في حديث الترمذي وأبي داود: أَعْلَى دَرَجَةٍ فِي الْجَنَّةِ) لا تَنْبَغِي إِلا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِي الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ

‘‘যখন তোমরা মুয়ায্যিকে (তার আযান) শুনবে তখন সে যেরূপ বলে সেরূপ বলবে। এরপর আমার উপর সালাত (দরুদ) পাঠ করবে; কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করে আল্লাহ তাঁর উপর দশবার রহমত করেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা করবে। ওসীলা জান্নাতের এমন একটি মর্তবা (তিরমিযী ও আবূ দাউদের বর্ণনায়: জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা) যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজন ছাড়া কেউ লাভ করবে না। আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। আর যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওসীলা’ প্রার্থনা করবে তার জন্য শাফা‘আত প্রাপ্য হবে।’’[17]

মাকাম মাহমূদ অর্থ প্রশংসিত অবস্থান, যে অবস্থানে সৃষ্টির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকলেই তাঁর প্রশংসা করবেন। মহান আল্লাহ বলেন:

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا

‘‘এবং রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে; এ তোমার জন্য অতিরিক্ত, আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন ‘মাকামে মাহমূদে’ বা প্রশংশিত স্থানে।’’[18]

মুফাস্সিরগণ উল্লেখ করেছেন যে, ‘মাকাম মুহামদ’ বলতে কিয়ামদের দিন মহান আল্লাহর দরবারে শাফা‘আতের মাকাম।

[1] সূরা (৪) নিসা: ১১৩ আয়াত।
[2] সূরা (১৭) ইসরা (বনী ইসরাঈল) : ৮৬-৮৭ আয়াত।
[3] সূরা (২১) আম্বিয়া: ১০৭ আয়াত।
[4] সূরা (৯৪) ইনশিরাহ: ১-৪ আয়াত।
[5] সূরা (৩৩) আহযাব: ৪৫-৪৬ আয়াত।
[6] সূরা (৪৮) ফাতহ: ৮-৯ আয়াত।
[7] সূরা (৩৩) আহযাব: ৬ আয়াত।
[8] সূরা (৩৩) আহযাব: ৫৩ আয়াত।
[9] সূরা (২৪) নূর: ৬৩ আয়াত।
[10] সূরা (৪৯) হুজুরাত: ১-৩ আয়াত।
[11] তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫৪৬। তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।
[12] মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৮২।
[13] তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৩০৮, ৫৮৭। তিরমিযী বলেন: হাদীসটি সহীহ হাসান।
[14] তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫৪৬; আলবানী, সহীহুল জামি ২/৮৪০। তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব।
[15] আহমদ, আল-মুসনাদ ৪/১২৭-১২৮; ইবনু হিববান, আস-সহীহ ১৪/৩১৩; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ২/৬৫৬। হাকিম, যাহাবী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[16] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/১০৪। তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ।
[17] মুসলিম, আস-সহীহ ১/২৮৮; তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫৮৬; আবূ দাউদ, আস-সুনান ১/১৪৪।
[18] সূরা (১৭) ইসরা/বানী ইসরাঈল: ৭৯ আয়াত।