(মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ)-এ বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো যে, এ বিশ্বাস পোষণকারী অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সকল মানুষের ঊর্ধ্বে ভালবাসবেন। আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ

‘‘যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে আমাকে তার পিতা ও সন্তান থেকে বেশি ভালবাসবে।’’[1]

অন্য হাদীসে আনাস ইবনু মালিক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

‘‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে আমাকে তার পিতা, সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে বেশি ভালবাসবে।’’[2]

অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ বিন হিশাম (রা) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর কাছে বসে ছিলাম। তিনি তখন উমারের (রা) হাত ধরে ছিলেন। উমর বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমার কাছে আমার নিজের জীবন ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়। তখন তিনি বলেন,

لا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ فَإِنَّهُ الآنَ وَاللَّهِ لأَنْتَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي فَقَالَ النَّبِيُّ (ﷺ): الآنَ يَا عُمَرُ

‘‘হলো না উমার, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম, অবশ্যই আমাকে তোমার নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসতে হবে। তখন উমার (রা) বলেন: আল্লাহর কসম, আপনি এখন আমার কাছে আমার জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয়। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হাঁ, উমর, এখন (তোমার ঈমান পূর্ণতা পেল)।’’[3]

এখানে বুঝতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ভালবাসা কোনো মুখের দাবির ব্যাপার নয়। তার নির্দেশিত পথে চলা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলা, তার শরীয়াতকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করা, তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকাই হলো তার মহববতের প্রকাশ।  যে যত বেশী তার শরীয়তকে মেনে চলবেন এবং তার সুন্নাত মত জীবন যাপন করবেন, তার ভালবাসা তত বেশী গভীর হবে। সাহাবীগণ, তাবিয়ীগ, ইমামগণ কর্ম ও অনুসরণের মাধ্যমেই তাকে ভালবেসেছেন।

তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ভালবাসার অর্থ হলো তাঁর উপর ঈমান আনা, তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সকল নবীর নেতা, সর্বশেষ নবী ও রাসূল বলে বিশ্বাস করা, তাঁর সকল আদেশ নিষেধ মেনে চলা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণ করা এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে তাঁকে সম্মান দান করা, তাঁর জন্য বেশি বেশি সালাত ও সালাম পাঠ করা, তাঁর জীবনী, শিক্ষা, আদেশ-নিষেধ ভালভাবে জানার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকা। এভাবেই মুসলিমের অন্তরে তাঁর প্রতি ভালবাসা গভীর হতে থাকে, তখন জীবনের সবকিছুর ঊর্ধ্বে, সকল মানুষের ঊর্ধ্বে, এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও তাঁকে ভালবাসতে সক্ষম হয় একজন মুসলিম। আমরা আল্লাহর দরবারে সকাতরে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রকৃত অনুসরণের ও প্রকৃত ভালবাসার তাওফীক দান করেন। আমীন!

[1] বুখারী, আস-সহীহ ১/১৪।
[2] বুখারী, আস-সহীহ ১/১৪; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৬৭।
[3] সহীহ বুখারী ৬/২৪৪৫; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ১১/৫২৩।