ইতা‘আত বা আনুগত্য অর্থ আদেশ নিষেধ পালন করা। আর আদেশ-নিষেধের বাইরেও কর্মে ও বর্জনে অনুকরণকে আরবীতে ‘ইত্তিবা’ বলা হয়। ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ও দাবি হলো কর্মে ও বর্জনে হুবহু তাঁর অনুকরণ করা। তিনি যা নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করা এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন করার সাথে সাথে মুহাম্মদ (ﷺ)-কে রাসূল হিসেবে বিশ্বাসকারী প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হলো জীবনের সকল পর্যায়ে কর্মে ও বর্জনে তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ করা। তিনি যা যেভাবে করেছেন তা করা এবং তিনি যা বর্জন করেছেন তা বর্জন করা। কর্মে ও বর্জনে তাঁর সুন্নাত বা জীবনাদর্শই মুসলিমের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। মহান আল্লাহ বলেন:

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

‘‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য।’’[1]

এ থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, শুধু যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে না, অর্থাৎ শুধুমাত্র কাফিররাই তাঁর আদর্শ গ্রহণ করে না বা পূর্ণাঙ্গ মনে করে না। শুধু কাফেরদের জন্যই অন্য কারো আদর্শের প্রয়োজন হয়। মুমিনদের জন্য তাঁর আদর্শই পরিপূর্ণ আদর্শ। আর হুবহু তাঁর আদর্শে জীবন পরিচালনাই ঈমানের আলামত।

তাঁর আদর্শের অনুসরণ ও জীবন গঠনই আল্লাহর প্রেম, ক্ষমা ও মুক্তি লাভের একমাত্র পথ। মহান আল্লাহ বলেন:

قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمْ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ. قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ

 ‘‘বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদেরকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।  বল, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্ত্তত যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফিরদিগকে ভালবাসেন না।’’[2]

এভাবে আমরা দেখি যে, ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বিশ্বাসের অর্থ হলো, চূড়ান্ত ও অলৌকিক ভক্তি বা ভয় ও আশা মিশ্রিত অলৌকিক ভক্তি ও বিনয় একমাত্র আল্লাহর জন্য। আর ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বিশ্বাসের অর্থ হলো প্রশ্নাতীত ও সামগ্রিক আনুগত্য ও অনুসরণ একমাত্র মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর জন্য। কাজেই যদি কেউ বিশ্বাস করে যে, পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ আছে যে তাঁর আনুগত্যের ঊর্দ্ধে বা সে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যেখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্য ও অনুসরণ না করলেও তার চলে, অথবা তাঁর আনুগত্য-অনুকরণ ছাড়াও আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব তাহলে সে ব্যক্তি মুসলিম বলে গণ্য হবে না, যদিও সে কোনো বিষয়ে তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করে।

[1] সূরা (৩৩) আহযাব: ২১ আয়াত।
[2] সূরা (৩) আল-ইমরান-৩১,৩২ আয়াত।